কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি কি জানেন কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়। আমরা সকলেই জানি কিডনি আমাদের দেহের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রক্ত ছেকে বর্জ্য পদার্থ এবং মূত্র পৃথকীকরণ কিডনির প্রধান কাজ। কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তা আমরা অনেকেই বুঝিনা অনেকেই কিডনির ব্যথাকে কোমর ব্যথা ভেবে থাকার ফলে সঠিক চিকিৎসা নেই না। কিডনির সমস্যা এবং কিডনি ব্যথা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করেছি কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়, কিডনি ব্যথা দূর করার উপায় এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-

সূচিপত্রঃ কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় বিস্তারিত জেনে নিন

সুস্থ কিডনির লক্ষণ

কিডনি যা আমাদের দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি আমাদের শরীরে ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে থাকে। শরীর থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ ছেকে বের করে দেওয়ায় হলো কিডনির কাজ। যখন এ দূষিত পদার্থ বার হাওয়াই কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তখনই কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে। কিডনির সমস্যা হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হাত, পা, মুখ, চোখ ইত্যাদি ফুলে যায়। 

এছাড়াও একটুতেই ক্লান্ত লাগা, খাবারের রুচি চলে যাওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি মূলত কিডনির সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তবে আপনার শরীরে যদি এইসব উপসর্গ না দেখা দেয় তাহলে ভাববেন আপনার কিডনি সুস্থ রয়েছে।

কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

কিডনিতে কোন সমস্যা হলে প্রথম প্রথম কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না তবে এটির উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। কিডনির কার্য ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে কিডনির সমস্যা গুলি বোঝার উপায় হচ্ছে এর লক্ষণ গুলির মাধ্যমে। কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণ গুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • একটু হাঁটা চলাতেই ক্লান্তি অনুভব করা।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি হওয়া।
  • প্রসাবের সঙ্গে রক্ত বার হওয়া।
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলে যাওয়া।
  • বমি ভাব হওয়া।
  • সব সময় শীত অনুভব করা।
  • মাঝেমধ্যেই মাথা ব্যথার সমস্যা হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি।
শরীরে এ সকল উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া উচিত কেননা কিডনির সমস্যা খুবই জটিল।

কিডনি রোগ কি ভাল হয়

কিডনি রোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগে চিকিৎসা করলে ভালো করা যায় তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভোগেন তাদের জন্য এটি অনেক ভয়াবহ। কিডনিতে সমস্যা হলে এর কার্য ক্ষমতা কমে গিয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। 

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের কিডনি বিকল হয়ে যায় এটির কারণে সংযোজন বা ডায়ালাইসিস করা ছাড়া উপায় থাকে না। কিডনির এই দুইটি চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। যার ফলে অনেকেরই চিকিৎসার অভাবে প্রাণহানি হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত কিডনির সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই আগেই চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া।

কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়

যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত তারাই বোঝে কিডনির ব্যথা কতটা অস্বস্তিকর। তবে কি কারনে কিডনি ব্যথা হয় এবং কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তা অনেকেরই অজানা। কিডনি আমাদের দেহের রক্ত ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ এবং মূত্র পৃথকীকরণের কাজ করে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইউরিন ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 
তবে কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। কেউ কেউ কিডনির ব্যথাকে কোমর ব্যথা ভেবে ভুল করে থাকি। কিডনি আমাদের শরীরের ডান এবং বাম পাশে  পাঁজরের ঠিক নিচ থেকে কোমরের হাড়ের মাঝ বরাবর অবস্থিত। তাই কিডনির ব্যথা সাধারণত পিঠের নিচের দিকে অথবা পেটের পাশে হয়ে থাকে। কিডনির সমস্যা হলে কিডনি ব্যথার পাশাপাশি নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যেমন জ্বর, বমি বমি ভাব, মূত্রনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি।

কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়

আমরা উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আগে জেনেছি কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তাও বলে রাখি। আমাদের শরীরের ডান এবং বাম পাশে বুকের পাঁজর এবং কোমরের হাড়ের মাঝখানে কিডনি অবস্থিত। এই জায়গায় ব্যথা হলে ধরে নেবেন কিডনির সমস্যা। সে ক্ষেত্রে আপনার উচিত অবশ্যই একটি ভালো কিডনি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া। 
অনেকেই কিডনির ব্যথায় ফলে ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়াই ঠিক না। সেক্ষেত্রে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায়ে কিডনির ব্যথা কমাতে পারেন। কিডনির ব্যথা দূর করার উপায় গুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবেঃ কিডনি ব্যথা কমানোই পানি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন একজন সুস্থ মানুষের ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।

গরম সেঁক দিতে পারেনঃ যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সেঁক দেওয়া অনেক ভালো একটি উপায়। গরম সেঁক রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই ব্যথার জায়গায় সেঁক দিতে পারেন।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবেঃ আমরা সকলেই জানি ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত বা ঘা শুকানোর ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি কিডনিতে অক্সালেটে পরিণত হয়ে কিডনিতে পাথরের সমস্যা দেখা দেয়। তাই কিডনির পাথরের সমস্যা দেখা দিলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া উচিত।

পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবেঃ কিডনির ব্যথা দূর করার ক্ষেত্রে বিশ্রাম অনেক উপকারী। বিশেষ করে কিডনিতে পাথর বা ইনজুরি জাতীয় সমস্যা হলে অতিরিক্ত থাকা চলা করা উচিত নয় সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিলে ভালো হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবেঃ কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তা নিয়ে বসে না থেকে অবশ্যই চিকিৎসকের বা কিডনি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত কেননা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা থেকে গেলে তা ভবিষ্যতে অনেক জটিল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত

কিডনি রোগে যে সকল খাবার খাওয়া উচিত তা নিচে দেওয়া হলো-

পেঁয়াজঃ কিডনি রোগ নিরাময় পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। পেঁয়াজের রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম এছাড়াও ভিটামিন বি এর সব উপাদান। পেঁয়াজ কিডনি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে থাকে।

ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশে রয়েছে ফসফরাস, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম কিডনি রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া ওর ডিমের সাদা অংশ ফেলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীরে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে ডিমের সাদা অংশ খেলতে পারেন এটি কিডনি রোগ নিরাময়ে সহায়তা করবে।

বাঁধাকপিঃ ভিটামিন বি এর সব উপাদান সহ ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি রয়েছে বাঁধাকপিতে। বাঁধাকপি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ। বাঁধাকপি কিডনি রোগ হওয়া থেকে নিরাপদ রাখে।

আনারসঃ আনারস কিডনির দুর্বলতা ভালো করতে সক্ষম। আনারসে রয়েছে ভিটামিন সি ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম। কিডনি রোগ নিরাময়ে আনারস বেশ উপকারী।

রসুনঃ আমরা কমবেশি সকলেই তরকারিতে রসুন ব্যবহার করে থাকি। আপনি কি জানেন রসুন কিডনির রোগ ভালো করতে সক্ষম। রসুনে রয়েছে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি ৬ যা কিডনি রোগ নিরাময়ে বেশ উপকারী। রসুন খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি রোগ নিরাময় করা সম্ভব।

কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার

মাংসঃ মাংস খেতে পছন্দ করো না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। তবে আপনি কি জানেন অতিরিক্ত মাংস খাওয়া আমাদের কিডনির জন্য বিপদ ডেকে আনে। অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কিডনির কোষগুলোকে দুর্বল করে দেয়। সে ক্ষেত্রে কিডনি ভালো রাখার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মাছ, মাংস, ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।

খাবারে অতিরিক্ত লবণঃ আমরা অনেকে আছি যারা খাবারে লবণ বেশি খায়। তরকারিতে স্বাভাবিক মাত্রায় লবণ থাকার পরেও আলাদা করে লবণ ভাতের সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকি। অতিরিক্ত লবণ আমাদের কিডনির ক্ষতি করে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

কলাঃ কলা কতটা ক্যালরি সম্পন্ন ফল আমরা সকলেই জানি। কিন্তু যাদের কিডনির সমস্যা আছে বা ছিল তাদের কলা খাওয়া উচিত নয়।

কমলালেবুঃ কমলালেবু খেতে কে না পছন্দ করেন। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কমলালেবু খাবেন না কেননা এতে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সফট ড্রিংকসঃ যেকোনো ধরনের সফট ড্রিংকস আমাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে সফট ড্রিংক খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

লেবু কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর

অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে লেবু কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এছাড়াও লেবু সাইট্রিক এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কিডনি রোগীদের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কোন কিছুই খাওয়া ঠিক নয় সব খাবারই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।

কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে

কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা যেসব ফল খেতে পারবে তা হলো আপেল, কমলা, আনারস, পাকা পেঁপে, বেল, নাশপতি, পেয়ারা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে পারবেন।

শেষ কথা- এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url