হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি জেনে নিন

পিরিয়ড যা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিটি মেয়েরই মাসে একবার করে পিরিয়ড হয়ে থাকে। নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া ভালো। পিরিয়ড নিয়মিত না হলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি এছাড়াও হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ ইত্যাদি। হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি তা জানতে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয়
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ এবং এটি হলে করণীয় কি চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

সূচিপত্রঃ হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি জেনে নিন

ভূমিকা

পিরিয়ড প্রতিট নারীর কাছেই পরিচিত একটি বিষয়। প্রত্যেক নারীরই প্রতিমাসে একবার করে পিরিয়ড হয়ে থাকে। পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এটি নিয়মিত হওয়া ভালো। তবে কোন নারীর যদি নিয়মিত পিরিয়ড না হয় তাহলে তা থেকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি তা জানতে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।

পিরিয়ড কী

পিরিয়ড একটি সাভাবিক প্রক্রিয়া। পিরিয়ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেননা একজন নারীর সঠিকভাবে ও নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া মানে সে নারী সন্তান ধারনে সক্ষম। আগে অনেকে পিরিয়ড কে নোংরা বা অপবিত্র মনে করতো কিন্তু এখন সময়ের বিবর্তনে মানুষের চিন্তাভাবনার অনের পরিবর্তন ঘটেছে।

মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে পিরিয়ড বা মাসিক বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি মেয়ের পিরিয়ড সাধারণত ১০-১৪ বছর বয়সে শুরু হয়ে থাকে এবং তা প্রতি মাসে একবার করে হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়া টি ৪৫-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে। পিরিয়ড প্রতি মাসে ৩-৭ দিন থাকে। পিরিয়ড হলে ভয়ের কোন কারন নেই এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

পিরিয়ড কেন হয়

প্রতিটি মেয়েরই একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে পিরিয়ড হতে থাকে। তবে অনেকেরই মনের প্রশ্ন থাকতে পারে যে পিরিয়ড কেন হয়। সহজ ভাবে বলি মেয়েদের গর্ভাশয়ের বাইরের যে আবরণ রয়েছে প্রতিমাসেই গর্ভাশয় তার বাইরের আবরণটিকে শক্ত করে থাকে। এটি করার কারণ হলো কোন নারী গর্ভবতী হওয়ার পর যেন বাচ্চাকে আশ্রয় দেওয়া যায়। 

কিন্তু যখন ভ্রুণ নিষিক্ত হয় না তখন অনিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর যে শক্ত আবরণ তৈরি হয় কে ছিড়ে ফেলে আবার পরের মাসের জন্য প্রস্তুত করা শুরু করে। এটি ফলে যে আবরণটি ছিঁড়ে যায় সেটি রক্তের মাধ্যমে মেয়েদের যোনিপথ দ্বারা বের হয়ে যায়। এটিই হচ্ছে পিরিয়ড হওয়ার কারণ। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

পিরিয়ড হলে কি খাওয়া উচিত

পিরিয়ড হলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে আয়রন কমে যাওয়ার ফলে পিরিয়ডের সময় ক্লান্তি অনুভব করা, শরীর ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা এমন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তাই পিরিয়ড চলাকালীন শরীরে আয়রনের ঘাটতি রোধ করতে অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি। আয়রনযুক্ত খাবারের পাশাপাশি ফাইবার যুক্ত খাবারও খাওয়া প্রয়োজন। পিরিয়ড হলে কি কি খাওয়া উচিত তা নিচে দেওয়া হলো-

আয়রন যুক্ত খাবারঃ
শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আয়রন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, মাছ, মাংস, কচু শাক, পাকা তেতুল, কলিজা, আমড়া, পুঁইশাক, ডাটা শাক, খেজুর ইত্যাদি খেতে পারেন।

ভিটামিন সি যুক্ত ফলঃ
পিরিয়ডের সময় ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া অনেক উপকারী। শরীরে আয়রনের ঠিকমতো শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অপরিসীম। পাকা পেপে, পেয়ারা, আমলকি, লেবু, মালটা, আমড়া, কামরাঙ্গা, জলপাই, পাকা টমেটো, আনারস এ জাতীয় ফল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

ডার্ক চকলেটঃ
আয়রনের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় ডার্ক চকলেট খাওয়া ভালো। কেননা ডার্ক চকলেটে আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ
পিরিয়ডের সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি আপনার খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি খাবারে প্রোটিন পাওয়া যায়।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারঃ
পিরিয়ডের সময় ভিটামিন এই সমৃদ্ধ খাবার অনেক উপকারে আসে এটি পিরিয়ডের ব্যথা হ্রাস করতে সহায়তা করে। গমের বীজ, কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি খাবার তালিকা রাখতে পারেন।

গ্রিন টিঃ
গ্রিন টি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি এক প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে গ্রিন টি বেশ কার্যকরী।

কলাঃ
পিরিয়ডের সময় শরীরের রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই পিরিয়ডের সময় কলা খাওয়া ভালো এতে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি পাওয়া যায়।

পিরিয়ড হলে কি খাওয়া উচিত নয়

পিরিয়ডের সময় নারীদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। তবে অনেক খাবার আছে যা পিরিয়ডের সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। পিরিয়ডের হলে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • পিরিয়ডের সময় ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
  • উচ্চ ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • দুগ্ধ জাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • কোন প্রকারের কোল্ড ড্রিংক খাওয়া যাবেনা।
  • অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ

একজন নারীর ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড হতে পারে এর পর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এর আগে যদি কোন নারীর পিরিয়ড হওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটি মোটেও স্বাভাবিক নয়। এটি কে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে। নিচে অনিয়মিত পিরিয়ড বা হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকার কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
  • হঠাৎ শরীরের ওজন কমে যাওয়ার ফলে।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে।
  • শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকার ফলে।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের ওষুধ খেলে।
  • যৌনাঙ্গে ত্রুটি দেখা দিলে।
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে।
  • পিটুইটারি গ্রন্থির কোন ধরনের সমস্যা হলে।
  • টার্নার সিনড্রোম রোগ থাকলে।
  • মেনোপজ এর ফলে তবে এটি হওয়ার নির্দিষ্ট বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর।
  • অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে।
  • গর্ভাবস্থায়ও পিরিয়ড বন্ধ থাকে।

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয়

একজন নারী প্রজননকাল ১০ থেকে ১২ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৪৫ থেকে ৫০ বছর অবধি হয়ে থাকে। অর্থাৎ ৪৫ থেকে ৫০ বছর কোন নারীর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তার আগে পিরিয়ড বন্ধ হওয়া বা অনিয়মিত পিরিয়ড এটি মোটেও স্বাভাবিক নয়। অনেকেই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় কি। 

এর উত্তর হচ্ছে হঠাৎ যদি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এতে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে যেমন গর্ভে সন্তান এসেছে কিনা তা পরীক্ষা করা, ভ্রুণ জরায়ুর সঠিক ছাড়া আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন। তাই হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় হল চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া।

মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

কোন নারী যখন কোন পুরুষের সাথে মিলন করে তখন পুরুষের শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণুর সাথে নিষিদ্ধ হয়ে গর্ভধারণ হয়। গর্ভধারণ হওয়ার ফলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত মাসিক বন্ধ থাকে। তবে গর্ভধারণ ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণেও মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয় ও পিরিয়ডের নানা বিষয় সম্পর্কে আশা করি পোস্টটি ভালো লেগেছে। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url