ড্রাগন ফলের উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

আপনি কি ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের পোষ্টের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা এছাড়াও ড্রাগন ফল সম্পর্কে আরও বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং এর অপকারিতা সহ নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ভূমিকা

ড্রাগন ফল, যা অনেকের কাছে পিতায়া নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের ক্যাকটাস প্রজাতির ফল। ড্রাগন ফলটি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে তবে লাল রংয়ের ড্রাগন ফলটি বেশি দেখা যায়।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান, মেসোআমেরিকার সহ বিশ্বের বিভিন্ন গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। এর উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং এর নানা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

আমরা অনেকেই আছি যারা ড্রাগন ফল খেতে ভালোবাসি। অনেকেই এটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবগত নই। ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক এটির মূল কারণ হচ্ছে এটিতে অবস্থিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপাদান।

ড্রাগন ফল হচ্ছে ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল।এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের ড্রাগন ফলের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাই এটির উৎপাদনও বাড়ছে। এক কাপ ড্রাগন ফলে রয়েছে ১৩৬ গ্রাম ক্যালরি, ৩ গ্রাম প্রোটিন, শূন্য গ্রাম ফ্যাট, ৭ গ্রাম ফাইবার এছাড়াও এটিতে অবস্থিত ভিটামিন সি এর মাত্রা ৯ শতাংশ, ভিটামিন ই এর মাত্রা ৪ শতাংশ, আয়রনের মাত্রা ৮%, ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা ২৮%।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

প্রথমে একটি পাকা ড্রাগন ফল নির্বাচন করুন। ড্রাগন ফলের ওপর আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলেই বুঝবেন এটি পাকা নাকি কাচা। একটি ছুরি দিয়ে ড্রাগন ফল মাছ বরাবর কেটে নিন।তারপর চামচ দিয়ে ফলের ভেতরের সাদা অংশ উঠিয়ে খেতে পারেন। অথবা এটি পাকা আমের মতো খসা উঠিয়েও খেতে পারেন। ড্রাগন ফল বিশেষ করে ঠান্ডা স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। এটি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে খেতে আরো বেশি ভালো লাগে। ড্রাগন ফলের ভেতরের সাদা অংশটি খাবেন ওপরের রঙিন খোসা খাবেন না।আশা করি ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম বুঝতে পেরেছেন।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ইতিমধ্যে আপনারা ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনেছেন। বিভিন্ন পুষ্টিগনের সাথে সাথে ড্রাগন ফলের রয়েছে অনেক উপকারিতা। নিচে ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে-
ড্রাগন ফলে উপস্থিত ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি পাকস্থলী পরিষ্কার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।

ওজন কমাতে সাহায্য করে-
ড্রাগন ফলে ফ্যাটের পরিমাণ শূন্য তাই এটি খাওয়াই ওজন বাড়ার কোনো ভয় নেই। ওজন কমানো অথবা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ড্র্যাগন ফল একটি আদর্শ খাবার।

হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে-
ড্রাগন ফলে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম হারকে মজবুত রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ড্রাগন ফলে যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়, অন্যান্য ফলগুলোতে তা এত পরিমাণে পাওয়া যায় না। হাড়কে মজবুত রাখার ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের গুরুত্ব অনেক।

চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে-
আমরা অনেকেই চুল পড়া রোধে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করে থাকি। তবে আপনি কি জানেন চুল পড়া রোধে ড্রাগন ফল কতটা উপকারী। ড্রাগন ফলের রস ভালোভাবে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু পড়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুল পড়া রোধ সহ চুলের কোষগুলোকে পুনরাবৃত্তি করে এবং চুল মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে-
ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি আমাদের রক্তে শর্করা মাত্রা কম এবং চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে-
আমরা সকলেই জানি কিডনি আমাদের শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ড্রাগন ফলে উপস্থিত পটাশিয়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে নিয়মিত খাবার তালিকায় ড্রাগন ফল রাখুন।

ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে-
ড্রাগন ফল আমাদের রক্তে খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ড্রাগন ফল হার্ট সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী-
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আমাদের শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। তাই ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে-
ড্রাগন ফলে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে যেমন চোখে ছানি পড়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খুবই উপকারী একটি ফল। এটিতে থাকা ফোলেট এবং ভিটামিন বি বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলে থাকা ক্যালসিয়াম ভ্রুনের হাড়ের বিকাশের জন্য বেশ কার্যকরী। এছাড়াও ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা মহিলাদের পোস্টমেনোপজাল এর সমস্যা থেকে বাচাই।

ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা

ড্রাগন ফল খেতে সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি অনেক পুষ্টি গুণসম্পন্ন একটি ফল। ত্বক উজ্জ্বল করা এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের কার্যকারিতা ব্যাপক। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বকে ড্রাগন ফলের রস লাগিয়ে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আপনার ত্বক যদি রোদে পুড়ে গিয়ে থাকে তবে এতে চিন্তার কোন কারণ নেই। ড্রাগন ফলের মাধ্যমে রোদে পুড়ে যাওয়ার ত্বক অনেকটাই উজ্জ্বল করতে পারেন। ড্রাগন ফলের চারভাগের একভাগ কেটে নিয়ে তার সঙ্গে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মতো ত্বকে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করে দেখুন উপকার মিলবে।
অনেকেরই অকালে ত্ব কুঁচকে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। ড্রাগন ফলকে কাজে লাগিয়ে আপনি এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। এক টেবিল চামচ ড্রাগন ফলের রসের সাথে এক টেবিল চামচ দই মিশিয়ে কুচকে যাওয়া ত্বকে গারো করে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর এটি ধুয়ে ফেলুন।

    ড্রাগন ফলের অপকারিতা

    আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। তবে উপকারিতা পাওয়া যাবে বলে কোন জিনিসই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। নিয়মিত ড্রাগন ফল যদি আপনি পরিমাণ মতো খান এতে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিবে না।

    ড্রাগন ফল আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম আমাদের শরীরের প্রবেশ করে ব্লাড প্রেসার কে অনেক কমিয়ে দিতে পার। এর ফলে বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ডিপ্রেশন, জ্ঞান হারানো এমন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। তাই কোন জিনিসই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া ঠিক নয়।

    ড্রাগন ফল খেলে কি প্রস্রাব লাল হয়

    পরিমাণ মতো ড্রাগন ফল খেলে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে না। তবে এটি অতিরিক্ত খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ড্রাগন ফল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সহজে হজম হয় না। ড্রাগন ফল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে বিশেষ করে লাল ড্রাগন ফল অতিরিক্ত খাওয়ার পর প্রস্রাবের রং লাল হতে পারে।

    শেষ কথা

    প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম ড্রাগন ফলের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা এছাড়াও নানা বিষয়ে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং এর অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
    আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url