হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আপনি কি হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে একদম সঠিক
পোস্টে ক্লিক করেছেন। আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া
উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের দ্বারা হাই প্রেসার হওয়ার কারণ লক্ষণ এবং এটি
নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে হাই
প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ যা আমাদের খুব পরিচিত একটি সমস্যা। আমরা জানি
ভ্রমণের মাধ্যমে আমাদের হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ হতে থাকে যদি কোনো কারণে ধমনী সরু
হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এই রক্তের সরবরাহ প্রক্রিয়ায় চাপ পড়ে আর এই চাপকেই বলা
হয় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক মাত্রায়
রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ তবে রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর বেশি হলে তা হাই প্রেসার বা উচ্চ
রক্তচাপ হিসেবে ধরা হবে।
আরও পড়ুনঃ চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের মধ্যে অনেকে এমন আছে যাদের হঠাৎ হঠাৎ প্রেসার হাই হয়ে যাওয়ার সমস্যা
দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অবগত থাকলে খুব
সহজেই হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনতে সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে হাই প্রেসার কমানোর
ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে সবারই জেনে রাখা প্রয়োজন।
হাই প্রেসার কেন হয়
হাই প্রেসার উচ্চ রক্তচাপ যা আমাদের খুব পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা। আমরা অনেকেই
জানিনা হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়ে থাকে। হাই প্রেসার হওয়ার বিভিন্ন
কারণ রয়েছে এর মধ্যে প্রধান কারণ গুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাই প্রেসার হয়ে থাকে।
- পরিবারের কারো প্রেসারে আক্রান্তের সমস্যা থাকলে।
- অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খেলে।
- ব্যায়াম অথবা কায়িক পরিশ্রম না করলে।
- দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না হওয়ার সমস্যার কারণে।
- ধুমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে।
হাই প্রেসার এর লক্ষণ
হাই প্রেসার সাধারণত খুব আস্তে আস্তে আঘাত হানে। অনেকেই জানেনা হয় প্রেসারের
লক্ষণ গুলি সম্পর্কে অবগত নয়। অনেক ক্ষেত্রে হাই প্রেসারের লক্ষণ গুলি
সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। হাই প্রেসার এর লক্ষণ সমূহ নিচে
উল্লেখ করা হলোঃ
- শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
- তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
- ঘুম না হওয়া।
- বমি বমি ভাব দেখা দেওয়া।
- বুকে ব্যথা অনুভব করা।
- মাথা ঘোরানো।
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
- অস্থিরতা অনুভব করা।
- অল্পতেই রেগে যাওয়া।
- মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়
হাই প্রেসার এমন এক ধরনের সমস্যা যা থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এছাড়াও
শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আপনার হাই প্রেসার থাকলে
দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই হাই প্রেসার কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। নিচে হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার হওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মানসিক
চাপ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীরের বেশি গুলোকে চাপের মুখে ফেলে দেয় যার
ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মত ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই হাই প্রেসার কমাতে মানসিক
চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন শরীরে হাই প্রেসার সহ আরো বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। হাই
প্রেসার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন।
অতিরিক্ত ওজন ছাড়াও কোমরের চারপাশে থাকা অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাটের ফলেও উচ্চ
রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পুরুষ অথবা মহিলা যে কারোর ক্ষেত্রেই ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমাতে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার কম
খেতে পারেন।
নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা সকলেই জানি।
ওজন কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমানো ছাড়াও
নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম আমাদের হৃদযন্ত্রকে সতেজ করে তোলে এবং
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
আমরা অনেকে আছি যারা খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খেয়ে থাকি। তবে আপনি কি জানেন
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়
খাদ্যে সঠিক পরিমাণে লবণ ব্যবহার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী। তবে লবণ
অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ না
খেয়ে পরিমাণ মত লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
চা এর সঠিক ব্যবহার
আমাদের অনেকেরই চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে চা খাওয়া
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ২০১৯ সালে নিউট্রিয়েন্টস নামক জার্নালের
প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ব্ল্যাক টি এবং গ্রিন টি দুটির মধ্যেই রক্তচাপ
কমানোর সক্ষমতা রয়েছে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক টি খেতে
পারেন।
কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
সুষম খাদ্য খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী। তবে আপনি কি
জানেনকোলেস্টেরল যুক্ত খাবার শরীরে রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি
বিশিষ্ট খাবার শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে আর ওজন বৃদ্ধি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির প্রধান
কারণগুলির মধ্যে একটি। তাই হাই প্রেসার এরাতে খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
হাই প্রেসার হওয়ার অন্যতম কারণগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না
হওয়া। ঘুম আমাদের শরীরকে সতেজ এবং মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে তোলে। ঘুম আমাদের
শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। অন্য বয়স্ক
মানুষের দিনে ৭ - ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তাই হাই প্রেসার এড়াতে পর্যাপ্ত
পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
প্রতিবারের ধূমপান কয়েক মিনিটের জন্য অস্থায়ীভাবে রক্তচাপকে বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিনিয়ত ধূমপান করার ফলে দীর্ঘস্থায়ী হাই প্রেসার দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে
অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই
সুস্থ থাকতে ধূমপান ও মধ্যপানের বদ অভ্যাস ত্যাগ করায় উত্তম।
প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে
অনেকেই জানতে চান প্রেসার হাই হলে অথবা প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি খাবার
খাওয়া উচিত। কেননা যাদের হাই প্রেসারের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যভাসেও নজর দেওয়া দরকার। প্রেসার হাই
হলে কি কি খেতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারেন যেমন আপেল, পেয়ারা, আমলকি, বেদানা, নাশপাতি, লেবু, কমলালেবু, পেঁপে ইত্যাদি।
- সকালে খালি পেটে ভেজানো বাদাম, আখরোট, কাজু, আমন্ড ইত্যাদি খেতে পারেন।
- ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি রাখুন যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, কলমিশাক, পালংশাক, শসা, লাউ, মটরশুঁটি, কুমড়া, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো।
- পটাশিয়াম যুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে খাবার তালিকায় পটাশিয়াম যুক্ত খাবার রাখতে পারেন যেমন টমেটো, কলা, ডাবের পানি ইত্যাদিতে পটাশিয়াম রয়েছে।
- মাছ খেতে পারেন তবে তৈলাক্ত মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত না
আমরা উক্ত পোস্টের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানলাম হাই প্রেসার হলে কি কি খেতে হবে। তবে
এর পাশাপাশি হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত না এটি জানাও অনেক প্রয়োজন। হাই
প্রেসার হলে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের কফি খাওয়া উচিত নয়।
- লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- অতিরিক্ত যিনি যুক্ত খাবার না খাওয়া।
- ডিমের কুসুম খাওয়া যাবেনা।
- আচার এবং সহজ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- মুরগির চামড়া খাওয়া যাবে না।
- অ্যালকোহল এবং কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওপরে উল্লেখিত সব খাবারগুলি হাই প্রেসার বা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে থাকে। তাই যাদের
হাই প্রেসার রয়েছে তাদের এসব খাবার এড়িয়ে চলায় উত্তম।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া
উপায়, প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে। আশা করি উক্ত পোষ্টের
মাধ্যমে হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন
পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন
এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url