কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া যায় বিস্তারিত জেনে নিন
অনেকেই জানতে চাই কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া যায়। তবে আমাদের মধ্যে অনেকে
আছে যারা মনে করি লম্বা হওয়া সম্পূর্ণ বংশগত একটি বিষয়। এটির কারণে কেউ চাইলেও
লম্বা হওয়ার জন্য অন্য কোন চেষ্টা করি না। আমাদের এই ধারণাটি একদমই ভুল কারণ
লম্বা হওয়ার জন্য সঠিক কিছু নিয়ম মেনে চললেই কিছুটা হলেও শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি
করা যায়। কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া যায় বা লম্বা হওয়ার উপায় খুব
সহজেই আমাদের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
প্রিয় পাঠক আমরা এই ব্লগ পোস্টে আলোচনা করেছি কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া
যায়। কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া যায় চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়া যায় বিস্তারিত জেনে নিন
গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধির উপায়
গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধি করার উপায় জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে গ্রোথ হরমোন টা
আসলে কি।
গ্রোথ হরমোন হচ্ছে আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গ্রোথ
হরমোনের অপর নাম সোমাটোট্রোপিন হরমোন। আমাদের শরীরের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এর
এন্টরিও লক থেকে এই হরমোন নিঃসরিত হয়। আমাদের দেহে এ হরমোন তৈরীর পরিমাণ সবচেয়ে
বেশি হচ্ছে বয়সন্ধিকালে। এটি আমাদের হাড়ের গঠন ও পিসির বিকাশে সহায়তা করে।
মানুষের যত বয়স বাড়ে বয়সের সাথে সাথে এই গ্রোথ হরমোনের পরিমাণও কমতে থাকে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধি জনিত নানা রকম সমস্যাতে ভুগি। এটির একমাত্র কারণ
হচ্ছে গ্রোথ হরমোনের কমতি। নিচে কিছু গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধির উপায় দেওয়া হলোঃ
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াঃ মেলাটোনিন যুক্ত খাবার গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই গ্রোথ হরমোন
বৃদ্ধির জন্য মেলাটনিন যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত যেমনঃ ডিম, মাছ, বাদাম,
সরিষা, আঙ্গুর, টমেটো ইত্যাদি।
চিনি কম খাওয়াঃ গ্রোথ হরমোনের প্রভাবে আমাদের লিভার ইনসুলিন নামক গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসরণ
করে। চিনি কম খেলে ইনসুলিন তৈরিতে একটা ভারসাম্য আসে যা পরবর্তীতে গ্রোথ হরমোন
তৈরিতে সহায়তা করে।
নিয়মিত ঘুমানোঃ ঘুম আমাদের শরীরকে সতেজ করে তোলে। এর ফলে আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোনের
পরিমাণও বাড়ে।
কি খেলে লম্বা হওয়া যায়
বিজ্ঞান থেকে জানতে পারি একজন মানুষ লম্বা হবে নাকি বেটে হবে তা নির্ভর করে জিনের
উপর।আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও উচ্চতা বাড়ার একটি নির্দিষ্ট বয়স থাকে। তবে অনেক
ক্ষেত্রে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলে শরীরের সঠিক বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এই অপুষ্টি
ঘাটতি পূর্ণ করা যাবে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে। নিচে এমন কিছু খাবারের
তালিকা দেওয়া হল যেগুলো আমাদের লম্বা হতে সাহায্য করে-
আপেলঃ আমরা সকলেই জানি আপেল একটি উপকারী ফল। আপেল আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে। আপেলে থাকা ফাইবার ও পানি লম্বা হতে সাহায্য করে থাকে। যাদের এখনো
লম্বা হওয়ার বয়স আছে তারা প্রতিদিন খাবারের আধা ঘন্টা আগে একটি করে আপেল খেলে
এর ভালো প্রতিফল দেখা দিবে।
বাদামঃ বাদাম অনেক উপকারী একটি খাবার। বাদামে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও প্রোটিন
দেহে বিভিন্ন পুষ্টির যোগান দেয় এবং এটি আমাদের শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য
করে থাকে।
ডিমঃ ডিম কতটা উপকারী তা আমরা সকলেই জানি। অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে
একটি হচ্ছে ডিম। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রোটিন। নিয়মিত ডিম খেলে
তা আমাদের দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অ্যাভাকাডোঃ বিদেশি ফল অ্যাভাকাডো শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির যোগান দেয়। বর্তমানে আমাদের
দেশেও বিভিন্ন সুপার শপ সহ ফলের দোকানগুলোতে একডোর দেখা মিলছে। অ্যাভোকাডো লম্বা
হতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকলেটঃ চকলেট খেতে সবাই পছন্দ করে। আমরা অনেকেই আছি যারা শিশুদেরকে চকলেট খেতে
দিতে চায় না। কিন্তু ডার্ক চকলেটে থাকা ক্যালরি কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডার্ক
চকলেট শিশুদের দ্রুত লম্বা হতে সহায়তা করে।
প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবেঃ পানির অপর নাম জীবন এটি আমরা সকলেই জানি। পানি আমাদের শরীরের জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। দিনে অন্তত আমাদের
৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।
কিভাবে ঘুমালে লম্বা হওয়া যায়
আমরা সকলেই জানি ঘুম আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। ঘুম আমাদের শরীরকে সতেজ করে
তোলে। পরিমাণ মতো ঘুম আমাদের শরীরের গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধি করে যা আমাদের উচ্চতা
বৃদ্ধির কাজ করে থাকে। আমাদের সকলেরই উচিত পরিমাণ মত ঘুমানো। তবে ঘুমানোর ফলে
লম্বা হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম-নীতি মেনে ঘুমাতে হবে যেমনঃ
- পা বুকের কাছে নিয়ে ঘুমানো যাবে না।
- পা লম্বা ভাবে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
- উপুড় হয়ে ঘুমানো যাবে না।
- দিনে অন্তত ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এতে গ্রোথ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়াও অতিরিক্ত ঘুম বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপাই
লম্বা হওয়ার ব্যায়াম
আমাদের সবগুলো শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হল লম্বা হওয়া। তবে বিভিন্ন ধরনের
কারণ বসত আমাদের শরীরের বৃদ্ধি কম হতে পারে তবে এটিতে ভয়ের কোন কারণ নেই। লম্বা
হওয়ার জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই, তবে সকল ব্যায়াম আমাদের শরীরকে লম্বা করেনা।
লম্বা হওয়ার জন্য যে ব্যায়ামগুলো করতে হবে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
সাঁতারঃ লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে সাঁতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাঁতার আমাদের দেহের মেদ
কমাতে সাহায্য করে এবং পেশী সংকোচন রোধ করে। তাই লম্বা হওয়ার জন্য নিয়মিত
সাঁতার কাটা প্রয়োজন।
ঝুলে থাকাঃ মাটি থেকে ১ ফুট উঁচু করে আপনার থেকে ২ ফুট উচ্চতায় ঝুলে থাকুন। এইভাবে
নিয়মিত করুন যতক্ষণ আপনি ঝুলে থাকতে পারেন, পরে আসতে আসতে ঝুলে থাকার মাত্রা
বাড়িয়ে দিন, এটি লম্বা হওয়ার জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপায়।
বুক ডাউনঃ আমাদের সকলেরই একটি পরিচিত ব্যায়াম হচ্ছে বুক ডাউন। বুক ডাউন আমাদের
শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে এতে শরীরের উচ্চতা
ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হতে থাকে।
লেগ এক্সসেরসাইজঃ দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে লেগস এক্সসেরসাইজ অনেক কার্যকরী একটি ব্যায়াম।
সোজা হয়ে বসে দুই পা জোড় করে সামনে দিয়ে রাখুন এবং চেষ্টা করুন মাথাকে পায়ের
কাছে নিয়ে যাওয়ার এইভাবে ৩০ সেকেন্ড রেখে দিন। এটি নিয়মিত করার মাধ্যমে আস্তে
আস্তে দেহের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
লম্বা হওয়ার ভিটামিন
ক্যালসিয়াম প্রোটিন ও ভিটামিন এই সবগুলোই দেহের উচ্চতা বৃদ্ধির সহায়ক।
ভিটামিনের মধ্যে দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং
ভিটামিন ডি যা আমরা বিভিন্ন খাদ্য উপাদান থেকে পেয়ে থাকি। নিয়াসিন একটি
প্রাকৃতিক ভিটামিন নামক ভিটামিন বি থ্রি।বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় সাধারণ
মানুষের থেকে ৫০০ গ্রাম নিয়াসিন নেওয়া মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধি বেশি হয়ে থাকে।
লম্বা না হওয়ার কারণ
লম্বা না হওয়ার প্রধান কারণ গুলো হলো সঠিক পুষ্টির অভাব, শরীরের গ্রোথ হরমোনের
ঘাটতি, এছাড়াও মানুষের লম্বা না হওয়া তার জিনের ওপর নির্ভর করে। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে এমনও হয় মানুষ লম্বা হওয়ার জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরেও
তার কিছু অভ্যাসের কারণে লম্বা হতে পারেনা, লম্বা না হওয়ার কারণগুলো নিচে দেওয়া
হলোঃ
অতিরিক্ত ঘুমঃ পরিমাণ মতো ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে এবং গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের গ্রোথ শক্তি নষ্ট করে দেয় এবং দেহে মেদ জমে
যার কারণে অতিরিক্ত ঘুমালে লম্বা না হয়ে উল্টা মোটা হয়ে যায়।
দিন ভর বসে থাকাঃ দিনভর বসে থাকার ফলে আমাদের হাত-পা সংকোচন হয়ে আসে, একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে
থাকা উচিত নয়। বসার সময় সোজা হয়ে বসতে হবে।
ভারী ওজন বহনঃ লম্বা হতে চাইলে ভারী ওজন বহন করা বাদ দিতে হবে কারণ ভারী ওজন বহনের কারণে
আমাদের দেহের হাড় গুলোর গঠন বাধা প্রাপ্ত হয় এবং দেহের গঠন বৃদ্ধি পায় না, তাই
লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে ভারী ওজন বহন করা বাদ দিতে হবে।
কমপ্লেন খেলে কি লম্বা হওয়া যায়
আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অ্যাডভার্টাইজমেন্টে দেখতে পাই যে কমপ্লেন খেলে
তাৎক্ষণিক লম্বা হওয়া যায় আসলে বিষয়টা এমন না কমপ্লেন খেয়ে তাৎক্ষণিক লম্বা
হওয়া যায় না, কিন্তু কমপ্লেন খেলে দেহের খাবারের চাহিদা পূরণ হয় এবং খাবারের
চাহিদা পূরণ হওয়ার ফলে এটি গ্রোথ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কমপ্লেন খাওয়ার চেয়ে
ওপরের নিয়মাবলী মেনে চলুন শীঘ্রই ভালো ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম কিভাবে তাড়াতাড়ি লম্বা
হওয়া যায় সম্পর্কে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি লম্বা হওয়ার
উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে
আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন
এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url