রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

 

আপনি কি রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। একজন মানুষের বিভিন্ন কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তবে রক্তশূন্যতা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে এ সমস্যা থেকে এড়িয়ে থাকতে পারেন। তাই রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলে আমরা রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়, রক্তশূন্যতার কারন, এর লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করেছি। চলুন তাহলে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ভূমিকা

রক্ত যার ইংরেজি শব্দ হচ্ছে ব্লাড। রক্ত হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণী সংবহনতন্ত্রের একটি দৈহিক তরল। রক্ত আমাদের শরীরে পুষ্টিদায়ক পদার্থ ও অক্সিজেন সরবরাহ এবং কোষ থেকে বিপাকীয় বজ্র পদার্থ দূরে বহন করে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন রক্ত আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। রক্তশূন্যতার সমস্যা যেকোনো সময়ই দেখা দিতে পারে।
কোন কারনে যদি আপনার রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় তার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই এই আর্টিকেল দ্বারা রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ রক্ত সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা তথ্য জানতে পারবেন। তাই আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রক্তশূন্যতা কি

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলা হয়ে থাকে। রক্তের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থ। হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের রক্তের লোহিত কণিকার ভেতর অবস্থিত। শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করাই হচ্ছে প্রধান কাজ। যেহেতু রক্তের লোহিত কণিকার ভেতর হিমোগ্লোবিন থাকে সেক্ষেত্রে লোহিত রক্ত কণিকা কমে গেলেও শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

রক্তশূন্যতার লক্ষণ

রক্তশূন্যতাকে কোন রোগ বলা যেতে পারে না কারণ এটি হচ্ছে রোগের লক্ষণ। রক্তশূন্যতা বলতে সাধারণত আমরা বুঝি রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থের ঘাটতি। বয়স অথবা লিঙ্গ ভেদে রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার নিচে থাকলে তখন তাকে আমরা অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলে থাকি। বিশ্বের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতার সমস্যায় ভুগে থাকে। আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণের মাধ্যমে আপনি তা বুঝতে পারবেন। রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • স্বল্প পরিশ্রমে শরীর ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
  • অবসাদ ও ক্ষুধামান্দ্য সমস্যা দেখা দেওয়া।
  • শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
  • ক্রমাগত ঠান্ডা অনুভব করা।
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হওয়া।
  • মাথা ঘোরা।
  • মাথার চুল এবং হাতের নখ ফেটে যাওয়া।
  • ঠোঁটের কোণে ক্ষত দেখা দেওয়া
  • জিহ্বায় ঘা সৃষ্টি হওয়া।
  • চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • বেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট হওয়া।

রক্তশূন্যতার কারন

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া সবার কাছেই একটি পরিচিত নাম। শরীরে যখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তখন সেই অবস্থাকে আমরা রক্তশূন্যতা বলে থাকি। পুলিশের চেয়ে নারীদের রক্তশূন্যতার সমস্যা বেশি দেখা দেয় কারণ পুরুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রার থেকে নারীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিছুটা কম। রক্তশূন্যতার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে সাধারণত আমরা রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যায় ভুগতে থাকি। রক্তশূন্যতা হওয়ার কারণসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • খাদ্যের পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন না থাকলে।
  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
  • পাইলসের সমস্যা থাকলে।
  • পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
  • অপর্যাপ্ত লোহিত কণিকা তৈরি হলে।
  • শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা দিলে।
  • আয়রন এবং ফলিক এসিডের অভাব হলে।
  • সন্তান জন্মের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে।
  • শরীরে লোহার ঘাটটি দেখা দিলে।

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

আমরা ইতিমধ্যে রক্তশূন্যতার কারণ এবং লক্ষণ গুলি সম্পর্কে জেনেছি এর সাথে রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় সম্পর্কেও জেনে রাখা প্রয়োজন। নিচে রক্তশূন্যতা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলোঃ
  • খাদ্যের পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন না থাকলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে তাই খাবার তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। মাছ, মাংস, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, কচু, বাদাম ইত্যাদি তে প্রচুর পরিমাণে আইরন পাওয়া যায়।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে কেননা ভিটামিন সি খাদ্য থেকে আয়রন শোষণে সহায়তা করে থাকে। টক জাতীয় ফল, টমেটোলেবু, ক্যাপসিকাম এগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
  • প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মধুতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে, মেঙ্গানিজ, আয়রন এবং কপার যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী উপাদান। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন মধু খেতে পারেন।
  • ভিটামিন বি ১২ এবং ফোলেটের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি ১২ এবং ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করুন। কলা, মটরশুঁটি, ডিম, কমলা ও দুগ্ধ জাত খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ এবং ফলেট পাওয়া যায়।
  • আপেল এবং টমেটোর জুস অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরী। তাই রক্তশূন্যতার সমস্যা এড়াতে আপেল এবং টমেটোর জুস খেতে পারেন।
  • হাত-পা ম্যাসাজ করুন। যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি ঘরোয়া চিকিৎসাও বলা যেতে পারে। অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য ম্যাসাজ বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। হাত-পা মাসাজ করার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত সঠিক উপায়ে চলাচল করতে পারে।
  • কলা এবং মধু কতটা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। রক্তশূন্যতা এড়াতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব অনেক। নিয়মিত পাকা কলার সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে।

কি খেলে রক্ত বাড়ে

রক্তশূন্যতা থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে এমন কিছু খাবার খাওয়া যেসব খাবারে রক্ত বাড়ে। তবে কোন খাবারগুলো খেলে রক্ত বাড়ে এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। নিজে কিছু এমন খাবারের তালিকা দেয়া হলো যেসব খাবার আপনার রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

ডিমঃ ডিম কতটা পুষ্টিকর খাবার তা আমরা সকলেই জানি। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এছাড়াও নানা নানা পুষ্টি উপাদান। ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজ। এ কারণেই যাদের শরীর দুর্বল তাদেরকে নিয়মিত সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।

ফলঃ ভিটামিন সি খাদ্য থেকে আয়রন শোষণে সহায়তা করে এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি করে। টক জাতীয় ফল, টমেটোলেবু, ক্যাপসিকাম এগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

শুকনো ফলঃ খেজুর এবং কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আশ এবং আয়রন যা আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

বাদামঃ যেকোনো ধরনের বাদাম যেমন কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, হিজলী বাদাম এবং আখরোট ইত্যাদি খাওয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বাদাম রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে।

সবজিঃ সবজি কতটা উপকারী তা আমরা সকলেই জানি। সবজি আমাদের শরীরে ভিটামিন, খনিজ ও আয়রন সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। টমেটোকুমড়া, ব্রকলি, আলু সকল সবজি শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে বেশ কার্যকরী।

শস্য জাতীয় খাদ্যঃ জাতীয় খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত চাল, গম, বার্লি এবং চিড়া ইত্যাদি বুঝি। তবে আপনি কি জানেন রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য এসব শস্য জাতীয় খাদ্য কতটা উপকারী। জাতীয় খাদ্য প্রচুর পরিমাণে আয়রন সহ কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে থাকে।

গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়

রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়ার অনেক কারণ আছে তবে আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়ের রক্ত শূন্যতা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন সুষম খাদ্য না খাওয়া, আয়রন যুক্ত খাওয়ার না খাওয়া, রক্তে লোহিত কণিকা কম তৈরি হওয়া এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগের কারণেও গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে নিচে এর কিছু প্রতিকার উল্লেখ করা হলোঃ
  • গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা শতকরা ১০ গ্রাম কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে।
  • বেশি বেশি করে ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলি খেতে হবে যেমন সবুজ শাকসবজি, মটরশুঁটি, কলা, পেয়ার, কলিজা, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
  • গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত চেকআপ করা থেকে শুরু করে প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়, কোন খাবার খেলে রক্ত হয় ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url