রাতে ঘুম না হলে করণীয় - ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায়

আপনি কি ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। রাতে ঘুম না হলে করণীয় কি, ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে আপনি কি জানতে ইচ্ছুক। রাতে ঘুম না হলে করণীয় এবং ঘুম সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
রাতে ঘুম না হলে করণীয়
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকালের মাধ্যমে ঘুম না আসার কারণ, ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায়, রাতে ঘুম না হলে করণীয় সহ আরো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায় - রাতে ঘুম না হলে করণীয়

ভূমিকাঃ পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা

ঘুম হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘুম আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে থাকে। এছাড়াও আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ককে সতেজ করে তোলে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। ভালো অনুভূতি এনে দেয়। সুস্থ থাকতে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। তাই বলা যেতে পারে সুস্থ থাকতে ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘুম না আসার কারণ

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের রাতে ঘুম না আসা অথবা বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে থাকে। রাতে ঘুম না আসা বা ঘুম এসেও বারবার ভেঙে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ। ইনসমনিয়া রোগের ফলেই মানুষ ঘুম না আসা এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবারই এই অনিদ্রা অথবা ইনসমনিয়া দেখা দিতে পারে।
তবে বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুম পাতলা হয়ে যাওয়া বা আগের চেয়ে ঘুমের হার কমে যাওয়া এমন নানা সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমান যুগে বেশিরভাগ মানুষেরই অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। এ অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া দেখা দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। বর্তমান যুগে মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কারণে ইনসমনিয়া অনিদ্রায় ভুগছেন। এছাড়াও ঘুম না আসার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিচে ঘুম না আসার কারণ গুলি উল্লেখ করা হলোঃ
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান করলে।
  • ডিপ্রেশন বা অবসাদ অথবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে।
  • ধূমপান বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন করলে।
  • শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হলে।
  • শারীরিক কোন সমস্যা থাকলে।
  • কোন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
  • নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে।
  • কোন রোগের কারণে।
  • এছাড়াও পরিবেশগত কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কি হয়

আমরা সকলেই জানি সুস্থ থাকতে ঘুম কতটা প্রয়োজনীয়। আমাদের সারা দিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি ঘুমের মাধ্যমে দূর হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। অনিয়মিত ঘুম যে সব রোগের ঝুঁকি বাড়ায় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • স্বাভাবিকের তুলনায় ঘুম কম হলে অথবা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম হার্টের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
  • ঘুম কম হলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন ব্যাহত হয় এর ফলে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • প্রতিদিন অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
  • মাথাব্যথা বা মাথা ঝিমঝিম করা।
  • স্মরণশক্তি কমে যাওয়া।

রাতে ঘুম না হলে করণীয় - ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায়

আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুম না হলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকি। তবে আপনি কি জানেন এটি আপনার স্বাস্থ্যকে আরো ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। ঘুমের ঔষধ খেতে একসময় এমন অভ্যাসে পরিণত হয় যে ঘুমের ঔষধ না সেবন করলে স্বাভাবিকভাবে ঘুম আসে না। ঘুমের ঔষধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে ঘুম না আসার সমস্যা দূর করতে ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। রাতে ঘুম না হলে করণীয় বা ঘুম না হওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন-
প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের ঘুমানোর সময় কালকে নিয়মিত রাখতে সহায়তা করে এবং আমাদেরকে সঠিক এই সময়ের সাথে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করে।

চা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা-
চা-কফি খেলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে ঘুমানোর ১২ ঘন্টা আগে কোমল পানীয়, চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম।

রাত জেগে কোন কাজ না করা-
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা রাত জেগে বিভিন্ন কাজ করে থাকে এবং মনে করে সকালে ঘুমিয়ে তা পোষায় নেবে। একটি কথা মনে রাখবেন দিনে ঘুমানো কখনোই রাতের ঘুমের মতো উপকারী এবং কার্যকরী হয় না। তাই রাত জেগে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

ঘুমানোর সময় ফোন এবং ল্যাপটপ কাছে রাখবেন না-
আমরা অনেকেই ঘুমানোর আগে মোবাইল অথবা ল্যাপটপে ফেসবুক, টিক টক, ইনিস্টাগ্রাম ইত্যাদি দেখা, গেম খেলা এছাড়াও মুভি দেখার অভ্যাস রয়েছে। এসব আপনার মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে ঘুম নষ্ট করে। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপ কাছে রাখবেন না এবং এইসব দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করবেন না।

নিয়মিত মেলাটোনিন যুক্ত খাবার খান-
মেলাটোনিন যুক্ত খাবার ঘুম আসা সহ ঘুম দীর্ঘস্থায়ী করতে বেশ কার্যকরী। মেলাটোনিনযুক্ত খাবারগুলি হচ্ছে টমেটো, ব্রকলি, শসা, আখরোট, সরিষা, বেদানা ইত্যাদি। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মেলাটোনিন যুক্ত খাবার রাখুন।

কলা-
কলাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। কলার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম ঘুম
আনতে সহায়তা করে।

মধু-
মধু ঘুমের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। ঘুমের সমস্যা এড়াতে মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

রাতে দেরিতে ঘুমালে কি হয়

অনেকে রাত জেগে থাকা এবং দেরি করে ঘুমানো কে অভ্যাসে পরিণত করেছেন তবে আপনি কি জানেন তাতে দেরি করে ঘুমালে কি কি ক্ষতি হয়। রাতে দেরি করে ঘুমালে কি হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • স্ট্রেস বৃদ্ধি পায়।
  • রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কম হতে থাকে।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা

  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অকারণে দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেস এর মত মানুষের সমস্যা দেখা দেয় না।
  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে হজম প্রক্রিয়া সতেজ থাকে এবং আমাদের খাবার ভালোভাবে হজম করতে সাহায্য করে।
  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে ত্বক সতেজ এবং উজ্জ্বল থাকে।
  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং আলস্য ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ঘুম আসার ব্যায়াম

ঘুমের সমস্যা দূর করতে ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। দৌড়ানো, সাইকেলিং, জোরে হাটা, সাঁতার কাটা, ইত্যাদি ব্যায়াম গভীর ঘুম আনতে সাহায্য করে। আমরা সকলে এটি জানি ব্যায়াম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। আপনি নিয়মিত যতটুকু সময় পারেন ব্যায়াম করতে পারেন। এতে গভীর ঘুম আনার পাশাপাশি মানসিক চাপও কমাতে সহায়তা করবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম রাতে ঘুম না হলে করণীয় - ঘুম হওয়ার ঘরোয়া উপায় সহ আরও ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে রাতে ঘুম না হলে করণীয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url