বন্যার সময় করণীয় - বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব
বর্তমানে বাংলাদেশে বন্যার প্রভাব ব্যবহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের সিলেটের বন্যা কতটা ভয়াবহ ছিল তা সম্পর্কে আমরা সকলেই প্রায় অবগত আছি। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। বন্যার সময় করণীয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব । বন্যার প্রভাত থেকে বাঁচতে বন্যার সময় করণীয় কি তা সম্পর্কে আমাদের সবারই জেনে রাখা প্রয়োজন।
প্রিয় পাঠক বন্যার সময় করণীয় এবং বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে আমাদের
এই ব্লগ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি ব্লগ পোস্টটি আপনারা যারা বন্যা প্রবণ
এলাকায় বসবাস করেন তাদের জন্য উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বন্যা থেকে বাচার উপায় - বন্যা প্রতিরোধে করণীয়
- ভূমিকাঃ বাংলাদেশে বন্যার কারণ
- বাংলাদেশের বন্যা প্রবণ এলাকা
- বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব
- বন্যার সময় করণীয়
- বন্যা পরবর্তী করণীয়
- শেষ কথাঃ বন্যা থেকে বাচার উপায় - বন্যা প্রতিরোধে করণীয়
ভূমিকাঃ বাংলাদেশে বন্যার কারণ
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকাল থাকে। বাংলাদেশ
বন্যা হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হচ্ছে নদী, উপনদী, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত,
হিমালয়ের বরফগলা এবং বাঁধের কারণে বাংলাদেশ বন্যার কবলে পড়ে থাকে। বাংলাদেশের
মানুষের কাছে বন্যা নতুন নয় অনেক আগে থেকে বন্যা বাংলাদেশে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ
চালিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ শিশুর জ্বর ও বমি হলে করণীয়
১৯৬৬, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৭ এবং ২০২২ এ সাল গুলোতে বাংলাদেশ বড় বড়
বন্যার কবলে পড়েছিল। ২০২২ সালে হওয়া সিলেটের বন্যার কথা তো সকলেরই মনে আছে।
২০২২ সালের বন্যায় সিলেট জেলার ৫৫ টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়ে যায়।
বন্যার প্রভাব থেকে বাঁচতে প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়
গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রায় চার লাখেরও বেশি পরিবার এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছিল।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ছোট বড় প্রায় ২৩০টির মত
নদী বয়ে চলেছে। বাংলাদেশ মূলত এ কারণে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায়
বন্যার প্রভাব বেশি দেখা দেয়। বন্যা দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সকলেরই বন্যার
সময় করণীয়, বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব, বন্যা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেনে রাখা
জরুরী।
বাংলাদেশের বন্যা প্রবণ এলাকা
অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশের বন্যা প্রবণ এই এলাকা কোনগুলো। বাংলাদেশ প্রায়
প্রতিবছর ছোট বড় বন্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম
অঞ্চল তীব্র বন্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে যার ফলে অনেক মানুষের জীবিকা, সম্পত্তি
ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের যে জেলাগুলির মধ্য দিয়ে মূলত নদী বয়ে
চলেছে বা যে জেলাগুলো সমুদ্রের কাছাকাছি ওইসব এলাকায় বন্যার প্রবণতা অনেক বেশি
যেমন জামালপুর, গাইবান্ধা, চাঁদপুর, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
কিশোরগঞ্জ, মাদারিপুর, বগুড়া, পাবনা, কুমিল্লা, জামালপুর, লক্ষীপুর, রংপুর,
নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, ঢাকা, সিলেট, শরীয়তপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর,
টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম,
বরিশাল ইত্যাদি এ সকল এলাকায় বন্যার প্রভাব ব্যাপক।অর্থাৎ বাংলাদেশের যে
এলাকাগুলো দিয়ে নদী বয়ে গেছে এবং যে এলাকাগুলো সমুদ্রের পাশাপাশি সংলগ্ন রয়েছে
ওই সকল এলাকা গুলোই বাংলাদেশের বন্যা প্রবণ এলাকা।
বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বড়
এবং ছোট নদী বয়ে চলেছে। প্রায় ২৩০ টি নদী বাংলাদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে। বাংলাদেশ
অন্যান্য একটি দুর্যোগের সম্মুখীন অতটা না হলেও বন্যার প্রকোপ অনেক বেশি দেখা
দেয়।
বৃষ্টিপাত, হিমালয়ের বরফ গলা, ভালো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, নদী
ইত্যাদির ফলে প্রতিবছরই প্রায় বাংলাদেশের কোন না কোন অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ দেখা
দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৬, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৭ এবং ২০২২ সালে বড়
বড় বন্যা হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষের জীবিকা, বাসস্থান সহ আরো অনেক ক্ষয়ক্ষতি
সৃষ্টি করেছিল।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৯৮ এবং ১৯৮৯ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল
সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ২০২২ সালে সিলেটে হওয়া বন্যা সবার কাছে স্মরণীয় থেকে
যাবে। ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যায়
বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বন্যার এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে
অবশ্যই আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাখা উচিত।
বন্যার সময় করণীয়
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ জানলাম বাংলাদেশে বন্যার কারণ এবং বন্যা প্রবণ এলাকা
সম্পর্কে। আমরা প্রায়ই অনেকেই বন্যা প্রায় অঞ্চলে বসবাস করছি। বাংলাদেশ দুর্যোগ
প্রবণ একটি দেশ। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এ দেশে বেশি না থাকলেও
বন্যা প্রায়ই দেখা যায়। .২০২২ এ সিলেটে বন্যার ফলে লাখ লাখ মানুষের মারাত্মক
পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।
১) বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায়
আমাদের সকলেরই আগে থেকে সতর্ক থাকা জরুরী। কেননা বন্যার সময় করণীয় সম্পর্কে
আপনি অবগত থাকলে খুব সহজেই আপনি বন্যার মোকাবেলা করতে পারবেন। বন্যার সময় করণীয়
কি এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
২) বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায়
প্রথম করণীয় হচ্ছে নিরাপদ স্থান বাছাই করে নিন। আপনার ঘরবাড়ি সংলগ্ন এলাকা যদি
নিচে স্থানে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার উচিত অন্য সময় নিরাপদ স্থানে চলে
যাওয়া। বন্যার সময় নিজের পরিবার পরিজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করার পাশাপাশি
অন্যান্য মানুষেরও সাহায্য করার চেষ্টা করুন।
৩) যত বেশি পারেন বিশুদ্ধ পানি
সরবরাহের ব্যবস্থা করুন কেননা বন্যার সময় পানিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু মিশে
যায় ওই পানি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন রকম রোগ দেখা দিতে পারে তাই বন্যার সময়
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করুন। সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান
করার চেষ্টা করুন। ভুল করেও দূষিত পানি পান করবেন না। দূষিত পানি আপনার শরীরে
মারাত্মক রোগ এবং অসুস্থতা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
৪) বন্যার সময় বেশিরভাগ খাদ্য
সংকট দেখা দেয় খাদ্য সংকট থেকে বাঁচতে শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখুন। খাবারগুলি
যাতে তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয় এর জন্য শুকনোস্থানে সংরক্ষণ করে রাখার চেষ্টা করুন।
কেননা দুর্যোগের সময় এই শুকনো খাবারগুলোই আপনার ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা
করবে।এছাড়াও বন্যার সময় অসুস্থ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারন অসুস্থ কর
খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা না পাওয়া যেতে পারে।
৫) বন্যার সময় পোকামাকড়ের
উপদ্রব বেড়ে যায়। বিশেষ করে বন্যার সময় সাপ বেশি দেখা যায়। সাপ ছাড়াও
অন্যান্য ধরনের পোকামাকড়ও রয়েছে। বন্যার সময় বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় আপনার
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তাই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পোকামাকড় থেকে
বাঁচতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। পোকামাকড় নিধনের ঔষধ ব্যবহার করুন।
৬) বন্যার সময় বিশেষ করে বৃদ্ধ
এবং শিশুদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করুন। বন্যার পানিতে ডুবে অনেক মানুষের মৃত্যুর
ঘটনা প্রায় শোনা যায়। এছাড়াও বন্যার দূষিত পানির মাধ্যমে শিশুর শরীরে রোগ
জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বন্যার সময় বিশেষ করে শিশুদের প্রতি খেয়াল
রাখুন। বন্যার পানি থেকে শিশুদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
৭) গবাদি পশুকে নিরাপদ স্থানে
নেওয়ার ব্যবস্থা করুন যদি না পারেন সে ক্ষেত্রে গবাদি পশুগুলোকে উঁচু স্থানে
থাকার জায়গা করে দিন। বন্যার সময় চলাফেলা করার ক্ষেত্রে নৌকা বা ভেলার ব্যবহার
করুন। কেননা দূষিত পানিতে চলাফেরা করলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ছড়াতে
পারে।
বন্যা পরবর্তী করণীয়
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জানলাম বন্যার সময় করণীয় সম্পর্কে। এর পাশাপাশি
আমাদের এটি জেনে রাখা প্রয়োজন বন্যা পরবর্তী সময়ে করণীয় কি। বন্যা পরবর্তী
সময়ে করণীয় গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বন্যার পরবর্তী সময়ে দূষিত পানিতে হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা বা গাড়ি চালানো থাকে বিরত থাকুন।
- বন্যার সময় আপনার বাড়িতে সাপ এবং বিভিন্ন পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে তাই বাড়িতে ঢোকার আগে এইসব থেকে সতর্ক থাকুন।
- ভেজা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
- বন্যায় দূষিত হওয়া প্রতিটি ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে শুকিয়ে নিন। জীবাণমুক্ত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু নাশক ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
- বন্যা পরবর্তী সময়ে গবাদি পশুকে মাঠের ঘাস খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। এ সময় গবাদি পশুকে খড় অথবা শুকনো খাবার খাওয়ান।
- বাড়িতে ঢোকার আগে ভালোভাবে দেখে নিন যে আপনার বাড়ির কাঠামোগত কোন ধরনের ক্ষতি হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে ওইটি কে ঠিক করার ব্যবস্থা করুন।
- সারভাইভাল কিট প্যাকে কিছু দিনের পর্যাপ্ত খাবার, পোশাক এবং প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ রাখুন।
- সব সময় সতর্ক থাকুন। জরুরি তথ্য পেতে সরকারি নির্দেশনাবলী, রেডিও ইত্যাদি শুনুন।
শেষ কথাঃ বন্যা থেকে বাচার উপায় - বন্যা প্রতিরোধে করণীয়
প্রিয় পাঠক আমরা এখন আলোচনা করলাম বাংলাদেশে বন্যার কারণ, বন্যার ক্ষতিকর
প্রভাব, বন্যার সময় করণীয় সহ ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে
বন্যার সময় করণীয় সহ বন্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন যা
আপনাকে পরবর্তী বন্যা মোকাবেলায় কিছুটা হলেও সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের ব্লগ পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আপনার কোন ধরনের
মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। পোস্টটি ভালো লাগলে সবার
সাথে শেয়ার করবেন। বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত
ফলো করুন। আমাদের সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url