শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - শ্বাসকষ্টের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

আপনি কি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। এই আর্টিকালে আমরা শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - শ্বাস কষ্টের প্রতিকার এছাড়াও আরো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছি। শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
প্রিয় পাঠক এ আর্টিকালের মাধ্যমে আমরা শ্বাসকষ্ট কেন হয়,শ্বাসকষ্টের লক্ষণ,শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়, শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে এছাড়াও ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন তাহলে আর দেরি না করে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - শ্বাস কষ্টের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

শ্বাসকষ্ট কিঃ ভূমিকা

শ্বাসকষ্ট রোগটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। অনেকে শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারে তাদের ক্ষেত্রে বলে রাখি সহজ ভাষায় বলতে গেলে শ্বাসকষ্ট এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যখন মানুষ স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারেনা। শ্বাসকষ্ট হলে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হওয়া, অক্সিজেনের অভাব রয়েছে এমন অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইংরেজিতে ডিসপ্নিয়া ( Dyspnoea) বলা হয়ে থাকে।

শ্বাসকষ্ট কেন হয়

শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে চাপ লাগা, শ্বাসের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এবং ঘন হওয়া, অক্সিজেনের প্রভাব রয়েছে এমন অনুভূতির সৃষ্টি হওয়া এমন উপসর্গ দেখা দিলে আমরা এটিকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে মনে করি তবে মনে রাখবেন শ্বাসকষ্ট নিজে কোন রোগ নয় বরং এটি অন্যান্য রোগের উপসর্গ। শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমনঃ
  • রক্তে পি এইচ এর মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে নিউমোনিয়া বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ধরনের রোগ বিদ্যমান থাকলে শ্বাসকষ্ট হয়।
  • হৃদপিন্ডে রোগের ফলে যখন হৃদপেশীর সংকচন করার ক্ষমতা কমে গিয়ে ফুসফুসে রক্ত জমে ফুসফুসকে অনমনীয় করে তোলে এর ফলেও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
  • হাঁপানি রোগের ফলে ফুসফুসের বাতাস ঢোকার নল সরু হয়ে যায় এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় যার ফলেও শ্বাসকষ্ট হয়।
  • বংশগতভাবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • ধূমপান করার ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • পূর্বে টিবি অথবা ক্যান্সার থাকলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও কোন কোন মানুষের উৎকণ্ঠায় ও ভয় পেলে শ্বাসকষ্টের অনুভূতি দেখা দিতে পারে। নারীরা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। শ্বাসকষ্টের মাত্রা যেমনই হোক না কেন শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

শ্বাসকষ্টের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক চলুন শ্বাসকষ্টের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
  • খাদ্যের তৃপ্তি কমে যাওয়া।
  • নাক দিয়ে সব সময় অনবরত পানি ঝরা।
  • ধুলাবালির মধ্যে গেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে চাপ লাগা।
  • অনবরত একটানা হাঁচি হতে থাকা।
  • অধিক ঠান্ডা বা গরমে শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেওয়া।
  • বুকের মাঝে মাঝেমধ্যে আটকে যাওয়া।
  • দীর্ঘমেয়াদী কাশি।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কি করা উচিত এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। তাই শ্বাসকষ্ট হলে কি করা উচিত বা শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি এ বিষয়ে না জানার ফলে আমরা উক্ত সময়ে কি করতে হবে তার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি না। তাই হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় এবং শ্বাসকষ্টের প্রতিকার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

উত্তেজিত না হয়ে শান্ত থাকুন-
শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। আতঙ্ক বা উদ্বেগ এর ফলে শ্বাসকষ্টের প্রভাব আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট হলে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।

শ্বাসকষ্টের পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখুন-
শ্বাসকষ্টের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করুন। আপনার শ্বাসকষ্টের তীব্রতা এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করুন যদি এটি হঠাৎ গুরুতর এবং অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে জরুরী পরিষেবা গুলিতে যোগাযোগ করতে পারেন।

একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন-
শ্বাসকষ্ট হলে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে শ্বাস নিতে কিছুটা হলেও আরাম পাওয়া যায়। তাই শ্বাসকষ্ট হলে আপনার কিভাবে থাকলে কিছুটা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহজ হচ্ছে ওই অবস্থায় সোজা হয়ে থাকার চেষ্টা করুন।

ঘরে বাতাস সঞ্চালন বৃদ্ধি করুন-
ঘরের জানালা দরজা খোলা রেখে বাড়ি সঞ্চালন বাড়ান। আপনার যদি অক্সিজেনের অভাব বোধ হয় সে ক্ষেত্রে ঘরের জানালা দরজা বন্ধ থাকলে তা খুলে দিন যাতে বায়ু সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বায়ু প্রবাহ বাড়াতে ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনে নির্ধারিত ইনহেলার ব্যবহার করুন-
হাঁপানির সমস্যা থাকলে একটি নির্ধারিত রেসকিউ ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ইনহেলার অবশ্যই নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন।

আরামদায়ক পরিবেশে থাকুন-
যদি আপনি মনে করেন যে কোনো পরিবেশে আপনার শ্বাসকষ্ট বা বিরক্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি করছে তাহলে ওই পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন-
যদি আপনার শ্বাসকষ্ট না কমে অব্যাহত থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসার সাহায্য নিন। শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা বা প্রচুর চাপ অনুভব করা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি এবং ঘন হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

শ্বাসকষ্টের প্রতিকার

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় সম্পর্কে। এর সাথে আমাদের শ্বাসকষ্টের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে রাখাও জরুরী। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু অভ্যাস এবং পদক্ষেপের দ্বারা শ্বাসকষ্টের সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। নিচে শ্বাসকষ্টের প্রতিকার গুলি উল্লেখ করা হলোঃ
  • শ্বাসকষ্ট এড়াতে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
  • ধুলাবালি যাতে নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • বাইরে বের হলে মাক্স ব্যবহার করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন।
  • অধিক গরম অথবা ঠান্ডা থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
  • বংশের কারো শ্বাসকষ্ট থাকলে অর্থাৎ বংশগত ভাবে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে

শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এর ফলে শ্বাসকষ্টে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করে ফেলেন যা এর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের শ্বাসকষ্ট হলে কি খেতে হবে এর সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপেল, টমেটোর রস, বেদানা, সবুজ বিনস, পালং শাক, আদা এবং ক্যাপসিকাম এইসব খেতে পারেন।
এই খাবারগুলি অধিক পুষ্টিগণে ভরপুর। এই খাবারগুলি আপনার শরীরে সঠিক সঠিক মাত্রায় পুষ্টি যোগান দেওয়ার পাশাপাশি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এছাড়াও এই খাবারগুলি শ্বাসকষ্ট রোগের জন্য বেশ কার্যকরী। আপনি শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে এই খাবারগুলি আপনার খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। এক কথায় শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই খাবারগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা জানলাম শ্বাসকষ্ট হলে খেতে হবে এর পাশাপাশি আমাদের শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবেনা এ বিষয়ে জেনে রাখাও প্রয়োজন। শ্বাসকষ্ট হলে কি খাওয়া যাবেনা এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, দই, ঠান্ডা দুধ, পনির শ্বাসকষ্ট হলে এইসব না খাওয়াই ভালো।
  • অনেকেরই চিংড়ি মাছে এলার্জি থাকে। এছাড়াও চিংড়ি মাছে রয়েছে সালফাইট যা ফুসফুসের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট হলে চিংড়ি মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • ওমেগা ৬ ফাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কেননা ওমেগা ৬ ফাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার হাঁপানির সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • যে খাবারে অ্যালার্জি হয় যেমন ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কাঁকড়া ইত্যাদি খাবারে আপনার যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে শ্বাসকষ্ট অবস্থায় এইসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - শ্বাস কষ্টের প্রতিকার এছাড়াও আরও ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি এর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url