চর্মরোগ কেন হয় - চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা ফুসকুড়ি এলার্জি একজিমা বা চুলকানি ইত্যাদি নানা ধরনের চর্ম রোগে কম বেশি ভুগতে থাকি। তবে আপনি কি জানেন চর্মরোগ কেন হয়। চর্ম এমন একটি রোগ যা প্রথমে অল্প থেকে আস্তে আস্তে বেশি আকার ধারণ করে। অনেকেই চর্মরোগ কেন হয় এবং চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় না জানার ফলে দীর্ঘদিনের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। চর্মরোগ কেন হয় এবং এর থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করেছি চর্মরোগ কেন হয়
এবং চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই-
সুচিপত্রঃ চর্মরোগ কেন হয় - চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
চর্মরোগ কি
চর্মরোগ কেন হয় এবং এটি থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে আমাদেরকে আগে জানতে
হবে চর্মরোগটি আবার কি।
আমাদের শরীর বা ত্বকের উপর কোন ধরনের রোগ তৈরি হলে তাকে আমরা সাধারণত
চর্মরোগ বলে থাকি। আমাদের দেহের চামড়া বা ত্বক আমাদের শরীরের সবথেকে বেশি
সুরক্ষা দায়ক অঙ্গ। শরীরের ত্বক বা চামড়ার উপর যে কোন ধরনের প্রভাবকেই
চর্মরোগ বলা হয়ে থাকে।
চর্মরোগ হওয়ার নানা ধরনের কারণ থাকে ত্বকে চরমোনাই সৃষ্টি হওয়ার কারণ হচ্ছে
ছত্রাকের আক্রমণ অথবা কেরাটির নামক এক ধরনের আমিষ শরীর থেকে ধ্বংস হয়ে গেলে
তোকে চর্মরোগ দেখা দেয়।
চর্মরোগ কত প্রকার
চর্মরোগ বিভিন্ন ধরনের আছে তবে অধিকাংশ চর্মরোগের লক্ষণ একই দেখা যায় তাই
সেগুলোর মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। চর্ম রোগ
কত প্রকারের হয়ে থাকে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ব্রণঃ ব্রণ হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ চর্মরোগ যা কমবেশি প্রায় সবারই হয়ে থাকে। ব্রণ
সাধারণত আমাদের ত্বকে উপস্থিত তেল গ্রন্থিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
আমাদের ত্বকে ছোট ছোট গর্ত উপস্থিত থাকে যা আমাদের ত্বকের নিচের তেল গ্রন্থির
সাথে সংযুক্ত থাকে।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা খাবার উপকারিতা
আমাদের ত্বকের এই তেল গ্রন্থি থেকে শিবাম নামক একটি পদার্থ ক্ষরিত হয়। যখন
এই পদার্থ ক্ষরিত হতে বাধা প্রাপ্ত হয় তখনই ব্রণ দেখা দেয়। ব্রণ সাধারণত
এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যায় তবে ত্বকে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্রণ দেখা দিলে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ক্যানডিডিয়াসিসঃ আমাদের দেহের ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স ছত্রাকের অতিরিক্ত বৃদ্ধি হওয়ার
কারণে ক্যান্ডিডিয়াসিস চর্মরোগটি দেখা দেয়। এই চর্ম রোগের ফলে বগল, ত্বকের
বিভিন্ন অংশে ভাঁজ হয়ে যাওয়া, হাঁটুতে দাগ ইত্যাদি হয়ে থাকে। সঠিক
স্বাস্থ্যবিধে মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
একজিমাঃ একজিমা হচ্ছে একটি দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ। একজিমার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে
তবে একজিমা রোগ নির্ণয় করার নির্দিষ্ট কোন পরীক্ষা নেই। চিকিৎসক এই রোগটি
নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের কারো এই রোগ ছিল কিনা তা বিশ্লেষণ করে দেখতে
পারেন। একজিমার লক্ষণ গুলি হলো-
- মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া
- শুষ্ক এবং চুলকানি যুক্ত ত্বক
- কনুইয়ের মধ্যে ফুসকুড়ি বা চুলকানি
- হাঁটু হাত ও পায়ের পিছনে ফুসকুড়ি বা চুলকানি হওয়া
ইম্পেটিগোঃ ইমপিটিগো চর্মরোগটি সাধারণত দুই থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদের ত্বকে দেখা
দেয়। ইমপিটিগো রোগটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে মূলত হয়ে থাকে। শরীরের কোন কাটা
অংশ দিয়ে দেহের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে ত্বকে সংক্রমণ ঘটায়।
এটি হলে মুখ হাত-পায়ের লাল রং ব্রণের মত দেখা যায়। এ রোগ নিরাময়ের
মাধ্যম হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক।
বলিরেখাঃ আমাদের বয়সের সাথে সাথে আমাদের মুখ পাল্টাতে থাকে। আমাদের এই পরিবর্তনের
মধ্যে থাকতে পারে বয়স জনিত দাগ ছোপ শুষ্কতা বলে রেখা। বলে লেখা বিভিন্ন
কারণে হতে পারে যেমন ধূমপান করা সূর্যের আলো ইত্যাদি। চিকিৎসা গ্রহণ করে
আপনার ত্বকের বলিরেখা কমাতে পারেন।
পাঁচড়াঃ পাঁচড়া এমন এক
ধরনের চর্মরোগ যা একজনের থেকে আরেকজনের সংক্রমিত হতে পারে। এটি হলে প্রচন্ড
চুলকানি হয়। এটির প্রভাব রাতে বেশি বাড়তে থাকে পাঁচড়া হলে তোকে ছোট ছোট লাল
লাল ফুসকুড়ি উড়তে থাকে। এ রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
রোসেসিয়াঃ রোসেসিয়া হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ যা আমাদের ত্বকের চামড়ার
স্তরকে পাতলা করে তোলে। এর ফলে মুখে ব্রণ বের হয় তকে লালচে দাগ দেখা যায়।
রোসেসিয়া হওয়ার ফলে চোখেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
আমবাতঃ আমবাত সাধারণত
এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। আপনার যদি কোন খাবারে এলার্জি থাকে তাহলে সেটির
কারণে আপনার ত্বকে এই আমবাত রোগটি দেখা দিবে। এর উপসর্গগুলি হল কাউকে লাল
লাল গোটা ওঠা এবং চুলকানি হওয়া।
লাইক স্কলেরোসিসঃ এটি
হওয়ার কারণে যৌনাঙ্গে সাদা দাগ ছোপ দেখতে পাওয়া যায়। লাইক স্কলেরোসিসের
উপসর্গগুলি হচ্ছে চুলকানি, যন্ত্রণা ও রক্তপাত।
চর্মরোগ কেন হয়
চর্মরোগ কেন হয় এটি অনেকেরই অজানা। একটি মানুষের বিভিন্ন কারণে চর্মরোগ
দেখা দিতে পারে। চর্মরোগ হওয়ার পেছনে এক এক মানুষের একেক রকম কারণ থাকে।
যে কারণগুলোর জন্য মানুষের শরীরে বেশিরভাগ চর্মরোগ দেখা দেয় তা নিচে
উল্লেখ করা হলো-
- ত্বক অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার কারণে
- শরীরের কোন স্থানে পুড়ে যাওয়ার কারণে
- ছত্রাক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হলে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে এলার্জির কারণে
- বয়স অনুপাতেও কিছু কিছু চর্মরোগ দেখা দেয়
- কোন কোন পোকামাকড়ের কামড়ে চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে
- ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার কারণে চরমোরোগ সৃষ্টি হতে পারে
চর্মরোগ কি ছোঁয়াচে
চর্মরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে সব চর্মরোগ ছোঁয়াচে নয়। ছোঁয়াছে
আমরা সেগুলোকে বলতে পারেন যেগুলো একজনের মাধ্যমে অনেক জনের কাছে ছড়িয়ে
যেতে পারে। বিভিন্ন চর্ম রোগের মধ্যে একটি হচ্ছে পাঁচড়া যা একটি সংক্রামক
চর্মরোগ। পাঁচরা হওয়ার কারণে প্রচন্ড চুলকানি দেখা দেয় এছাড়াও ছোট ছোট
লাল লাল ফুসকুড়ি উঠতে থাকে। এটি সাধারণত ছোট ছোট মাইটসের কারণে হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়া জনিত চর্মরোগ
চর্মরোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে কিছু কিছু এমন আছে যেগুলি
হওয়ার পেছনে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণ থাকে।
ইমপেটিকো নামক চর্মরোগটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। শরীরের কাটা
ছেঁড়া অথবা পোকায় কাটা অংশের মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করে এই
রোগ দেখা দেয়। সাধারণত দুই থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদের ত্বকে সংক্রমিত
হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে আপনি চর্ম
রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন।
চর্ম রোগ থেকে মুক্তির উপায়
চর্মরোগ প্রতিকারের জন্য অনেকে অনেক ধরনের প্রচেষ্টা করে থাকেন তবে অনেক
সময় কেউ কেউ প্রচেষ্টা করেও সফল হতে পারেন না। অনেকেই চর্মরোগ দূর করার
জন্য অনেক রকম ঔষধ বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন তাতেও ভালো ফল পান না সে
ক্ষেত্রে আপনারা এসবের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
নিচে চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো তুলে ধরা হলো-
- গোসল করার সময় গোসলের পানির সঙ্গে নিম পাতা মিশিয়ে তো পানি হালকা গরম করে গোসল করতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে নিম পাতার গুরুত্ব অনেক। সেক্ষেত্রে আমরা ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় নিম পাতার রস অথবা নিম পাতা পিষে লাগিয়ে রাখতে পারি।
- চর্মরোগ কমাতে মুলা পাতার রস অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- চর্মরোগ দূর করার আরো একটি উপায় হল নিয়মিত আপেলের রস। ফল খাওয়া আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। আপেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা চর্মরোগ দূর করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন আপনি আপেল খেতে পারেন অথবা আপেলের রস তোকে লাগাতে পারেন।
চর্ম রোগের ঔষধের নাম
চর্মরোগ আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কে অনেকটাই ব্যাহত করে তোলে যার ফলে
স্বাভাবিক জীবন যাপনে আমাদের নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়। চর্মরোগ দূর
করার আমরা নানা রকম চেষ্টা করে থাকি। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি।
চর্মরোগ নিরাময় কিছু ওষুধের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-
- বেস্টামেসন (Bestameson)
- বায়োপ্লাজেন ২০ (Bioplagen 20)
- সেডনো (Sedno)
- অ্যালাট্রল (Alatrol)
- রুপাডিন (Rupadin)
- সালোবেট ওইন্টমেন্ট (Salobate Ointment)
- ফানজিডাল-এইচসি (Fungidal-HC)
- ড্রামা ৫০ (Drama-50)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যেকোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ
নিয়ে খেতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম চর্মরোগ কেন হয় -
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় এছাড়াও চর্মরোগ সম্পর্কে নানা বিষয়ে। আশা
করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে চর্মরোগ কেন হয় - চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত
আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার,
আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন
ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url