মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
আপনি কি জানেন মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি? যারা মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন
তাদের মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। মানসিক রোগের
লক্ষণ, মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
প্রিয় পাঠক উক্ত আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সহ
মানসিক রোগ সম্বন্ধে আরো নানা ধরনের তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন তাহলে আর
দেরি না করে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
ভূমিকাঃ মানসিক রোগ কি
মানসিক রোগ ইংরেজিতে এটিকে Mental disorder বলা হয়ে থাকে। মানুষের মস্তিষ্কের
স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্ম ক্ষমতায় বিপর্যয় ঘটলে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানসিক রোগের কারণগুলি প্রায়ই অস্পষ্ট হয়ে থাকে। মানসিক রোগ সাধারণত একজন
ব্যক্তির অনুভূতি, আচার-আচরণ, মত নৈকট্যের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। মানসিক
রোগ হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের একটি দিক। সহজ ভাষায় বলা যায় যে যখন কোন ব্যক্তির
মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তখন এটিকে মানসিক সমস্যা বা
রোগ বলা যেতে পারে।
মানসিক রোগ কেন হয়
মানসিক রোগের একক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত
তথ্যের বিশ্লেষণ থেকে আমরা যা দেখছি যে মানসিক রোগ জেনেটিক এবং পরিবেশের একটি
মিথস্ক্রিয় আকর্ষণ। যদি কোন পরিবারের সদস্যের মধ্যে কারো মানসিক রোগ থাকে এর ফলে
তার থেকে পরিবারের কারো মানসিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়,
অর্থাৎ জেনেটিক জিন্স এবং ক্রোমোজোমের একটি বিষয়ের মধ্যে মানসিক রোগের ঝুঁকিটা
থেকে থাকে।তবে জিন বা ক্রোমোজোমের সমস্যার ফলেই যে মানসিক সমস্যা দেখা দিবে
বিষয়টা পুরোপুরি এমনটাও নয়। এর সাথে আরও বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে যেমন
মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের নিশ্রিত হরমোন ডোপামিন, সিরোটনিন এগুলোর স্বল্পতার
কারণেও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ হাড় ক্ষয় রোধের উপায়
কারো যদি দীর্ঘমেয়াদী কোন শারীরিক রোগ থাকে তা থেকে মানসিক রোগ সৃষ্টি হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও কোন শারীরিক রোগের লক্ষণের ফলেও মানসিক সমস্যা, বিষন্নতা,
ডিপ্রেশন সহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। কোন শিশু যদি গর্ভকালীন সময়ে বা জন্মের
সময় কোন ধরনের আঘাত, ইনফেকশন বা জেনেটিক ডিসঅর্ডারে ভোগেন তাদের মধ্যেও মানসিক
রোগ দেখা দিতে পারে।
কেউ যদি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক, মানসিক অথবা সেক্সচুয়াল হারেসমেন্ট এর শিকার হয়
এছাড়াও কেউ যদি তার পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, পেশাগত জীবনে ক্রমাগত
অতিরিক্ত পরিমাণে চাপের শিকার হয় সেক্ষেত্রে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। গাজা,
ঘুমের ওষুধ এগুলো ক্রমাগত সেবন করলেও মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।
মানসিক রোগের লক্ষণ
মানসিক রোগের লক্ষণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- ঘুমের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া অর্থাৎ ঘুম কম বা বেশি হওয়া।
- হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে ওঠা।
- খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া।
- বিভিন্ন ধরনের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
- নিজেকে নিয়ে সবসময়ই নেতিবাচক চিন্তা করা।
- অকারণে অন্যদেরকে সন্দেহ করা।
- কারো সাথে কথা বলতে না চাওয়া।
- দীর্ঘ সময় ধরে সবার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা।
- দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপের সমস্যা দেখা দেওয়া।
- গায়েবী আওয়াজ অথবা কোন কথা শুনতে পাওয়া।
- যেসব কাজে আগে আনন্দ অনুভব করতেন সেই সবে আনন্দ হারিয়ে ফেলা।
- সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করা।
মানসিক রোগ কত প্রকার
বিভিন্ন কারণে মানসিক রোগ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে নিচে মানসিক রোগ কত প্রকার
তা উল্লেখ করা হলোঃ
- Mental and behavioural disorders - এ মানসিক রোগটি মাদক গ্রহণের ফলে হয়ে থাকে।
- Behavioural syndromes associated - এ মানসিক রোগটি ব্যবহার সম্পর্কিত রোগ।
- Disorders of psychological development - এ মানসিক রোগটি মানসিক বিকাশের সম্পর্কিত রোগ।
- Unspecified mental disorder - এ মানসিক রোগটি অনির্দিষ্ট মানসিক রোগ।
- Disorders of adult personality and behaviour - এ মানসিক রোগটি ব্যবহার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধীয় রোগ।
- Organic, including symptomatic, mental disorders - এ মানসিক রোগটি জৈবিক কারণে হতে পারে।
- Behavioural and emotional disorders - এ মানসিক রোগটি আবেগজনিত রোগ।
- Neurotic, stress-related and somatoform disorders - মানসিক চাপ যুক্ত হওয়ার ফলে এটি হয়ে থাকে।
- Mental retardation - মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে এটি হতে পারে।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান-
ঘুম আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সকলেই জানি। মানসিক
রোগের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে নিয়মিত কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। কেননা পর্যাপ্ত
ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
অতীত অথবা ভবিষ্যতের চিন্তা না করে বর্তমান নিয়ে ভাবুন-
অনেকেই আছে যারা অতীত অথবা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভেতর থেকে মানসিক অস্থিরতায়
ভোগেন। অতীত কিংবা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে আমাদের মধ্যে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়।
এক্ষেত্রে অতীত অথবা ভবিষ্যতের কথা না ভেবে নিজের বর্তমান নিয়ে ভাবুন।
নিজেকে আনন্দদায়ক কোন কাজে ব্যস্ত রাখুন-
নিজেকে আনন্দদায়ক কোন কাজে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে শরীর এবং মনের স্ট্রেস কমবে।
অন্যান্য ভুল ভাল কোন চিন্তা মাথায় আসবেনা এবং মনের ভিতর উদ্বিগ্নতার সৃষ্টিও
হবে না। তাই নিজেকে কোন আনন্দদায়ক কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।
কোন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করা যাবে না-
অনেকেই চাপ মোকাবেলার কৌশল হিসেবে মাদক সেবন, ধূমপান, মাত্রাতিরিক্ত চা অথবা কফি
পান করে থাকে চাপ মোকাবেলার ক্ষেত্রে এগুলো মোটেও খাওয়া যাবে না কেননা এইসব
মানসিক রোগের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।
পরিবার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন-
পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ এতে মনের মধ্যে পজেটিভ শক্তি নিয়ে আসবে। এছাড়াও যতটুকু পারবেন
মানুষকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করুন মানুষের সাথে একাত্মতা বৃদ্ধি
পাবে।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়ঃ শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম মানসিক রোগ কি, মানসিক রোগ
কেন হয়, মানসিক রোগের লক্ষণ, মানসিক রোগ কত প্রকার, মানসিক রোগ থেকে মুক্তির
উপায় সহ আরও ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে মানসিক রোগ
থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমরা এই ওয়েবসাইটে
প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url