ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আপনি কি জানেন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি? ডিপ্রেশন কেন হয় যদি এ
সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলে উক্ত আর্টিকালের মাধ্যমে জেনে নিতে
পারেন। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেল দ্বারা আমরা ডিপ্রেশন কি, ডিপ্রেশন কেন
হয়, ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সহ
আর ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন তাহলে আর দেরি না করে এই
সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ডিপ্রেশন কিঃ ভূমিকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন থেকে পাওয়া গাইডলাইন
অনুসারে আমরা জানতে পারি ডিপ্রেশনকে অনেক কয়টি বিষয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে
তার মধ্যে হচ্ছে মন থেকে আনন্দ হারিয়ে যাওয়া, নিজেকে মূল্যহীন লাগা, দুর্বল
মনোযোগী হয়ে ওঠা, ক্লান্তি অনুভব করা, দুঃখ, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, কোন কিছুতে
অপরাধবোধ মনে করা, ঘুম এবং ক্ষুধায় বিরক্তিভাব চলে আসা।
আরও পড়ুনঃ
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপাই
ডিপ্রেশন বা হতাশা হচ্ছে মেজাজ ডিসঅর্ডার যা নিজে থেকে সমাধান করতে পারে। তবে
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ সকল
ব্যক্তিদের সর্বদা দুঃখ, কোন কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মন থেকে আনন্দ চলে
যাওয়া, অপরাধবোধ, ক্রোধ এ সকল হতাশার চিরকালীন অনুভূতি থেকে যায় যা তাদের
প্রতিদিনের নিয়মিত ক্রিয়াকলাপ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
ডিপ্রেশন বা হতাশাগ্রস্থ এমন ধরনের অনুভূতি মানুষের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে
এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর দেওয়া তথ্য মতে জানতে পারি বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৪
কোটি মানুষ হতাশায় ভুগছেন এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী
মহিলাদের বেশি এই সমস্যা দেখা দেয়।
ডিপ্রেশন কেন হয়
একজন মানুষের ডিপ্রেশনে ভোগার অনেক কারণ রয়েছে এর মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য
কারণগুলি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ফলে-
কেউ দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগলে যেমন কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, একাধিক
স্ক্লেরোসিস, এইচ আইভি ইত্যাদি রোগ ডিপ্রেশনের সাথে যুক্ত।
ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে-
অনেক মানুষ আছেন যারা জীবনের বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যায় ভোগেন। কর্মস্থানে
অতিরিক্ত চাপ এছাড়াও বিবাহের ক্ষেত্রে দেখা দেওয়ার কারণে চাপ অনুভব করার ফলেও
অনেকের ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে-
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীরকে প্রভাবিত এবং হতাশার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা, মনোপজ ইত্যাদি সমস্যার ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং
হতাশার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
একটি নির্দিষ্ট বয়সে-
প্রবীণরা হতাশা বা ডিপ্রেশনের ঝুঁকিতে বেশি ভোগে থাকে। এর কারণ হচ্ছে সব সময় একা
থাকা, সামাজিক সহায়তার অভাব ইত্যাদি।
হরমোন হ্রাসের ফলে-
মানব মস্তিষ্কে সেরোটোনির নামক হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে এটি হতাশার মাত্রা
বাড়িয়ে দেয়।
লিঙ্গ-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এর তথ্য মতে জানা যায়
পুরুষদের তুলনায় মহিলারা হতাশায় বেশি ভোগেন। এটির কারণ মহিলাদের সারা জীবনে
হরমোনের পরিবর্তন এর কারণ কে মনে করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে কিছু ওষুধ সেবন-
কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিটা ব্লকার এর মত ঔষধ গুলি দীর্ঘস্থায়ী সেবনের কারণে
ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
সবার ক্ষেত্রে এই ডিপ্রেশন হওয়ার কারণগুলো যে একই হবে তা নয়। মানুষ অন্যান্য
বিভিন্ন কারণের ফলে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে যেমন বিবাহিত জীবনে অসুখী, কর্মস্থলে
অতিরিক্ত চাপ, প্রিয়জনকে হারানো বা প্রিয়জনের মৃত্যু, একাকীত্ব বসবাস এ সকল
কারণেও একজন মানুষ ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় ভুগতে পারে।
ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়
কোন একজন ব্যক্তি যে ডিপ্রেশনে ভুগছেন তা বোঝা যায় এর উপসর্গ দেখে। আসুন তাহলে
জেনে নেওয়া যাক ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়ঃ
- অস্থিরতা অনুভব করা।
- বিষন্ন বা খিটখিটে মেজাজ।
- ধৈর্য এবং দক্ষতার সাথে কাজ করতে না পারা।
- কোন কারনে অপরাধবোধ হওয়া।
- নিজেকে অযোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ মনে করা।
- আগের মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা।
- সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা।
- অতিরিক্ত ঘুম থেকে হঠাৎ অনিদ্রার মত সমস্যা দেখা দেওয়া।
- মাথা ব্যথা বা শরীরে ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেওয়া।
- ক্ষুধায় পরিবর্তন দেখা দেওয়া।
- মৃত্যু সম্পর্কে বারবার চিন্তাভাবনা করা।
- অ্যালকোহল সেবন করা।
- দ্রুত মন পরিবর্তন।
- মন থেকে আনন্দ হারিয়ে যাওয়া।
- মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হওয়া।
- পেশিতে ব্যথা অনুভব করা।
- নিজের ক্ষতি সম্পর্কে বার বার চিন্তা ভাবনা করা।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি
ডিপ্রেশন রোধের কোন নিশ্চিন্ত পদ্ধতি নেই তবে চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি
নিম্নে উল্লেখিত ব্যবস্থা গুলো নেওয়া যেতে পারেঃ
- আপনি যে জিনিসগুলোকে উপভোগ করেন এবং যা করতে আপনাকে আনন্দ লাগে তা করুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- আপনার মুড ভালো করার জন্য আপনার প্রিয় গান শুনুন।
- সময় মত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।
- নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
- মনকে শান্ত করার ক্ষেত্রে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে পারেন।
- সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করুন।
- একা না থেকে পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটান।
- ক্যাফিন যুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
- ধূমপান এবং নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহন থেকে বিরত থাকুন।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আমল
আমরা যারা মুসলিম তারা কোরআন এবং হাদিসের বাণী নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করে থাকি।
রাসুল সাঃ চিন্তা ও পেরেশানির সময় একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন দোয়াটি প্রত্যেক
মুসলিমের জেনে রাখা উচিত। আমরাও যারা চিন্তা ও পেরেশানিতে ভুগছি নিয়মিত দোয়াটি
পাঠ করা উচিত। দোয়াটি হচ্ছেঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি
ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ
দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে,
অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন।
(বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উক্ত পোস্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করলাম ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
এছাড়াও আরও ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আশা করি উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে
মুক্তির উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এমন নতুন নতুন পোস্ট পড়তে
আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
আরও পড়ুনঃ হাড় ক্ষয় রোধের উপায়
আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করে থাকি। নিয়মিত আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোস্ট গুলো ভালো লাগলে আপনাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন
এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url