অর্থায়ন কাকে বলে - ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
অর্থায়ন কাকে বলে, ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে আপনি কি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। এই আর্টিকেলে ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে এছাড়াও বিভিন্ন অর্থায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি উক্ত আর্টিকেল এর মাধ্যমে ব্যবসায় অধ্যায়ন কাকে বলে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অর্থায়ন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে এছাড়া অর্থায়ন সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ অর্থায়ন কাকে বলে - ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
- ভূমিকা
- অর্থায়ন কাকে বলে
- ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
- ব্যবসায় অর্থায়নের গুরুত্ব
- পারিবারিক অর্থায়ন কাকে বলে
- সরকারি অর্থায়ন কাকে বলে
- আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কাকে বলে
- শেষ কথাঃ অর্থায়ন কাকে বলে - ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
ভূমিকা
অর্থায়নের ক্ষেত্র বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক,
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রেই অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থ
ছাড়া যেমন আমাদের জীবনের অর্থনৈতিক কার্যসমূহ কল্পনা করা যায় না ঠিক তেমনি
প্রতিটি ব্যবসায় বা অব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড়া চলতে পারে না। অর্থাকে
ব্যবসায়ের জীবনীশক্তি Life blood বলা হয়। সাধারণত অর্থ বলতে নগদ অর্থ বা
ব্যাংকে জমা অর্থকে বুঝানো হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
কিন্তু ব্যবসায়িক পরিভাষায় অর্থ বলতে শুধুমাত্র নগদ অর্থকে বুঝায় না,
অর্থাকারে প্রকাশিত যেমন চেক, শেয়ার, বন্ড বা ঋণপত্র, প্রাপ্য বিল, প্রাইজবন্ড
ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়ও এর মধ্যে পড়ে। এই অর্থের সংগ্রহ, ব্যবহার, সংরক্ষণ ও এর
সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যাবলিকে অর্থায়ন বলা হয়ে থাকে। আর্থিক ব্যবস্থাপকগণ
অর্থায়নের বিভিন্ন কলাকৌশল ও নীতি প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানের সঠিক উদ্দেশ্য
অর্থাৎ সম্পদ সর্বাধিকরণ অর্জনে সচেষ্ট থাকেন।
অর্থায়ন কাকে বলে
অর্থায়ন মূলত অর্থ বা তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। অর্থকে
ব্যবসায়ের জীবনী শক্তি বলা। হয়। একটা ব্যবসা পরিচালনা করতে কী পরিমাণ মূলধন
প্রয়োজন, কোন কোন উৎস হতে সেই মূলধন সংগ্র করলে এবং কীভাবে বিনিয়োগ করলে
ব্যবসায়ের মুনাফা সবচেয়ে বেশি হবে, সে সকল বিষয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
বাস্তবায়ন কার্যকেই অর্থায়ন বলা হয়ে থাকে। একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের
ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থের আগমন ঘটে।
আরও পড়ুনঃ অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
কিন্তু এই উৎপাদনের জন্য দরকার মেশিন, কাঁচামাল, শ্রমিক ইত্যাদি। মেশিন জন্ম,
কাচামাল ক্রয় এবং শ্রমিকের মজুরি ইত্যাদি প্রদানের জন্য মূলধনের প্রয়োজন হয়।
এগুলো অর্থ বা মূলধনের ব্যবহার। সুতরাং অর্থায়ন বলতে অর্থ বা মূলধন সংগ্রহ,
বিনিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বুঝায়। অর্থায়ন তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে
কাজ করে। কোন উৎস থেকে কি পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করে কিভাবে বিনিয়োগ করা হলে
ব্যবসায় সর্বোচ্চ মুনাফা হবে, অর্থায়ন সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করে।
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে মালামাল বিক্রয় থেকে অর্থের আগমন হয়।
ব্যবসায়ের মালামাল প্রস্তুত ও ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের তহবিলের প্রয়োজন
হয় যেমন মেশিনপত্র, কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকদের মজুরি প্রধান ইত্যাদি। এগুলো
তহবিলের ব্যবহার। তহবিলের এই প্রয়োগ অনুযায়ী পরিকল্পনামাফিক তহবিল সংগ্রহ করতে
হয়, যেন উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। অর্থায়ন তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবহার
সংক্রান্ত এই প্রক্রিয়াকে বুঝায়।
ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
কোন একটি ব্যবসা ভালোভাবে পরিচালনা করতে কী পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন হবে, মূলধন
সমূহ কোন কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং উক্ত মূলধন কোন কোন খাতে তা বিনিয়োগ
করা হবে এ সকল প্রক্রিয়াকেই একত্রে ব্যবসায় অর্থায়ন বলা হয়ে থাকে। ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে তহবিল সংগ্রহ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
ব্যবসায় অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থায়নের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ স্বরূপ বা ধরন হচ্ছে ব্যবসায় অর্থায়ন।
আরও পড়ুনঃ অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলতে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে লাভ-ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে গঠিত
সংগঠনকে বুঝায়। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার তহবিল সংগ্রহ ও বিনিয়োগের জন্য যে
অর্থায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, তাকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলে । উপর্যুক্ত
আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যবসায় অর্থায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া
যার মাধ্যমে তহবিলের সংগ্রহ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাতে প্রতিষ্ঠানের
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জন করা হয় । আইনগতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ ভাগে
ভাগ করা হয় এগুলো হলোঃ
- একমালিকানা ব্যবসা
- অংশীদারি ব্যবসা
- যৌথ মূলধনি ব্যবসা
একমালিকানা ব্যবসায়ের অর্থায়ন
যে ব্যবসায়ে একজন মাত্র মালিক তাকে এক মালিকানা ব্যবসা বলে। বাংলাদেশের অধিকাংশ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই সাধারণত ছোট প্রতিষ্ঠান, যা একমালিকানা বা অংশীদারি কারবার
হিসেবে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, গ্রাম-গঞ্জের হোটেল ও
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, মুদি দোকান, সেলুন, বুটিক শপ ইত্যাদি এই ধরনের ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান । একমালিকানা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের উৎস হল মালিকের নিজ মূলধন,
মুনাফা, আত্মীয়স্বজন থেকে গৃহিত ঋণ, ব্যাংক অথবা গ্রামীণ মহাজন থেকে সুদের
ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ। একমালিকানা প্রতিষ্ঠানে লাভ হলে মালিক তা একাই ভোগ করে। আবার
ব্যবসায়ে লোকসান হলে ক্ষতিপূরণের জন্য মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও ব্যবহৃত হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের অর্থায়ন
একাধিক ব্যক্তি চুক্তির ভিত্তিতে কোনো ব্যবসায় পরিচালনা করলে তাকে অংশীদারি
ব্যবসায় বলে। এরূপ ব্যবসায়ে সদস্য সংখ্যা থাকে সাধারণত দুই থেকে বিশ জন ।
অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারগণ মূলধন সংগ্রহ করে এবং সে
অনুযায়ী অংশীদারদের মধ্যে লাভ-লোকসান বণ্টিত হয়। এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
তহবিল সংগ্রহের উৎস মালিকের নিজস্ব তহবিল, মুনাফা, আত্মীয়স্বজন থেকে গৃহিত ঋণ,
ব্যাংক অথবা গ্রামীণ মহাজন থেকে প্রতিষ্ঠান গঠন ও সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ।
সুতরাং নিজস্ব তহবিল বিনিয়োগ করে এর যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করে মুনাফা অর্জন
করাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য।
যৌথ মূলধনি ব্যবসায়ের অর্থায়ন
যৌথ মূলধনি কোম্পানির অর্থায়ন প্রক্রিয়া একমালিকানা ব্যবসা ও অংশীদারি ব্যবসার
অর্থায়ন প্রক্রিয়া হতে ভিন্ন। যৌথ মূলধনি কোম্পানির মূলধনের প্রধান উৎস হলো
শেয়ার মূলধন। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান মূলধন সংগ্রহ
করে। শেয়ার ছাড়াও বন্ড ও ডিবেঞ্চার বিক্রয় করে যৌথ মূলধনি কোম্পানি সাধারণ
জনগণ থেকে ঋণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।
ব্যবসায় অর্থায়নের গুরুত্ব
বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক মুক্তবাজার ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিটি
সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে
পূর্ব পরিকল্পনামাফিক অর্থায়ন করতে হয়। সুচিন্তিত ও সুদক্ষ অর্থায়ন
ব্যবস্থাপনার ব্যবহারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং মুনাফা
বৃদ্ধি পায়। নিচে অর্থায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
ব্যবসায়িক মূলধন সংকট
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থায়ন সম্পর্কিত ধারণা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ বলে আর্থিক সংকট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য
একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই সংকটের জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুচারুরূপে
পরিচালনা করা একটি দুরূহ কাজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানের
কাঁচামাল কেনা প্রয়োজন কিন্তু অর্থসংকটের জন্য সে যদি যথাসময়ে উপযুক্ত পরিমাণে
কাঁচামাল। কিনতে অপারগ হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে
পারে। অর্থায়ন-সংক্রান্ত ধারণা তাকে পরিকল্পনামাফিক যথাসময়ে প্রয়োজনীয়
পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ ও তার যথার্থ ব্যবহারে সহায়তা করে।
অনগ্রসর ব্যাংক ব্যবস্থা
উপরন্তু উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সুসংগঠিত নয় বলে
ঋণের জন্য আবেদন করলেও কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে ঋণ পাওয়া যায় না। অনেক সময়
ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়, তার অপ্রতুলতার কারণে ব্যাংক
ঋণ উপযুক্ত সময়ে ও যথার্থ পরিমাণে পাওয়া যায় না। ফলে ব্যবসায়ীদের এ অর্থসংকট
হতে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য খুবই পরিকল্পিতভাবে অর্থের সংস্থান করতে
হয় এবং সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অর্থের লাভজনক ব্যবহার করার প্রয়োজন
হয়। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ীদের এ ধরনের সমস্যা
পূর্বানুমান করতে সাহায্য করে এবং যেসব পদ্ধতিতে তা মোকাবিলা করা যায় তার ধারণা
দেয়।
স্বল্পশিক্ষিত উদ্যোক্তা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা স্বল্পশিক্ষিত বলে তারা
একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না।
এতে করে অনেক লাভজনক প্রতিষ্ঠান আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে আর্থিক সংকটে সুষ্ঠুভাবে
চলতে পারে না এবং অবশেষে লাভের বদলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অথচ এই ক্ষতির কারণ
শুধু আর্থিক অব্যবস্থাপনা। অর্থায়ন স্থাপন সহজেই একজন ব্যবসায়ী পরিকল্পনামাফিক
স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ সংস্থান করে তা সঠিক উপায়ে বিনিয়োগ করার
মাধ্যমে ব্যবসায়ে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করতে পারে।
উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ ও জাতীয় আয়
একটি সফল বিনিয়োগ জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। অর্থায়নবিষয়ক
জ্ঞানের প্রয়োগে জ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভবিষ্যৎ
আয়-বায়ের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পটি বেছে নিতে পারে। এই
ধরনের লাভজনক বিনিয়োগ ব্যবসায়টির জন্য যেমন অর্থবহ, তেমনি সারা দেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়নের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পারিবারিক অর্থায়ন কাকে বলে
পারিবারিক অর্থায়ন হলো পরিবারের আয়ের উৎস ও পরিমাণ নির্ধারণ করা, সেই আয়
কীভাবে ব্যয় করলে পরিবারের সদস্যদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হয়, তা নির্ধারণ করাকে
বুঝায়। পরিবারের আয়ের ও ব্যয়ের খাত রয়েছে। পরিবারের প্রয়োজনীয় অসংখ্য
ব্যয়ের মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়গুলো পূরণ করা হয়।
পরিবারের আয় যদি ব্যয়ের জন্য যথেষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন,
পরিচিত ব্যক্তি, বন্ধু-বান্ধব থেকে অর্থ ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র
পরিবারিক অর্থায়নে নিয়মিত আয়ের সাথে সংগতি রেখে নিয়মিত ব্যয়সমূহ নির্ধারণ
করা হয়। স্থায়ী সম্পদ যেমন টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি, গৃহ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয়
অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। সংগৃহীত তহবিল সীমাবদ্ধ হওয়ায় এর উপযুক্ত
ব্যবহার প্রয়োজন। যদি পরিবারের সংগৃহীত তহবিল প্রয়োজনীয় ব্যয়ের তুলনায় বেশি
হয়, তবে সেটা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করা বা অন্য কোন সম্পদে বিনিয়োগ
করা হয়।
সরকারি অর্থায়ন কাকে বলে
অর্থায়ন বলতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় কোন কোন খাতে কী পরিমাণে হবে এবং সেই অর্থ
কোন কোন উৎস হতে সংগ্রহ করা হবে তা নির্ধারণ করাকে বুঝায়। সরকারি অর্থায়নে
সরকারের প্রেক্ষাপটে তার বার্ষিক ব্যয় কোন কোন খাতে কী পরিমাণে হবে এবং সেই অর্থ
কোন কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করা যাবে, তা আলোচনা করা হয়। সরকারের বিভিন্ন আয়ের ও
ব্যয়ের খাত রয়েছে।
সরকারি অর্থায়নে প্রথমে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী তহবিল
সংগ্রহ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে সরকারের বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত
বাজেটের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। সরকারি অর্থায়নের ব্যয়, আয় অপেক্ষা বেশি হতে
পারে। তখন তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। আবার সরকারি অর্থায়নে আয়, ব্যয় অপেক্ষা বেশি
হতে পারে। তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে। সরকারি অর্থায়নের মূল লক্ষ্য
সমাজকল্যাণ।
আরও পড়ুনঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে
সরকারকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অনেক খাতসমূহে অর্থ ব্যয় করতে হয়, যেমন
রাস্তাঘাট, সেতু, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি হাসপাতাল, আইন-শৃঙ্খলা ও
প্রতিরক্ষা, সামাজিক অবকাঠামো ইত্যাদি। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে বিভিন্ন
উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়, যেমন: আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক,
রপ্তানি শুল্ক, সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবও ও ট্রেজারি বিল বিক্রয় ইত্যাদি। অনেক সময়
সরকার বিভিন্ন উৎস হতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে।
যেমন- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এ.ডি.বি. (Asian Development Bank), বিশ্বব্যাংক,
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আই.এম.এফ., আই.ডি.বি. (Islamic Development Bank)
এবং বৈদেশিক সরকার থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্য ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, এসব
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানের সময় বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়, যা দেশের
উন্নয়ন ও ভাবমূর্তি সংরক্ষণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। এসব পরিস্থিতির
জন্য সরকার অনেক সময় দেশীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য উৎস থেকে অর্থের সংস্থান করতে
চায়।
আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কাকে বলে
আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বলতে একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়
হার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনাকে বুঝায়। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে সরকার ও বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের (ব্যবসায় ও অব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের) আমদানি ও রপ্তানি, বৈদেশিক
মুদ্রার বিনিময় হার, বৈদেশিক বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে বিচার-বিশেষণ করা হয়।
বাংলাদেশ প্রধানত আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ার কারণে প্রতি বছর মেশিনারি,
খাদ্যসামগ্রী, কাঁচামাল, ঔষধ, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ হতে আমদানি করা
হয়।
অপর পক্ষে বাংলাদেশ হতে রপ্তানি করা হচ্ছে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাতদ্রব্য,
কৃষিজাত দ্রব্য ইত্যাদি। আমাদের দেশে রপ্তানি হতে আমদানি বেশি করতে হয়। ফলে
প্রতিবছর বিরাট অংকের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি পূরণে প্রবাসী
বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স বিশেষ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে
আমদানি ও রপ্তানি খাতসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বাণিজ্য ঘাটতি কীভাবে
ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আলোচনা করা হয়। এছাড়াও বহুজাতিক ব্যবসা (Multinational
business) প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়।
আরও পড়ুনঃ
যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য
বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলতে বিভিন্ন মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান যেগুলো অনেক দেশে
ব্যবসায় করে সেগুলোকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ ইউনিলিভার, বাটা ইত্যাদি বহুজাতিক
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন দেশের মুদ্রা
ব্যবস্থা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ ও ভিন্ন ভিন্ন দেশে লাভজনকভাবে বিনিয়োগ করা।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উঠানামার কারণে প্রতিষ্ঠানে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তা
কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় তা আন্তর্জাতিক অর্থায়নে আলোচনা করা হয়।
শেষ কথাঃ অর্থায়ন কাকে বলে - ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে বলে
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম অর্থায়ন কাকে বলে, ব্যবসায় অর্থায়ন কাকে
বলে, ব্যবসায় অর্থায়নের গুরুত্ব, পারিবারিক অর্থায়ন কাকে বলে, সরকারি অর্থায়ন
কাকে বলে এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কাকে বলে এ সকল ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি উক্ত
আর্টিকেলটির মাধ্যমে অর্থায়ন সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো
লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে
জানাবেন। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন,
আমরা নিয়মিত নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে
আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
নোটঃ এই আর্টিকেলের আলোচিত বিষয় গুলো ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং পুস্তক থেকে সংগৃহীত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url