রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি - রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি? রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানবো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি এছাড়াও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানব। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি এছাড়াও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে সহায়তা করবে।
প্রিয় পাঠক রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে হলে আমাদের
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না
বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি - রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
- ভূমিকা
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য কী
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের সুবিধা সমূহ বণনা কর
- শেষ কথাঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি - রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা
যে কোনো সমাজেই রাষ্ট্র একটি শক্তিশালী সংস্থা। জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত
করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র জনগণের প্রয়োজনে যেমনি রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন
সাধন করে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে তেমনি জনস্বার্থে প্রয়োজন হলে
নিজে ব্যবসা-বাণিজ্যও পরিচালনা করে থাকে। পৃথিবীর সকল দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক
কার্যত রাষ্ট্রের মালিকানাধীন।
আরও পড়ুনঃ অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের অধিকার কার্যত সবদেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। কারণ
এ সকল ক্ষেত্র সরাসরি জনস্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। অবশ্য একটা আধুনিক রাষ্ট্রকে
অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। যে কারণে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গড়ে তোলা হলে জনগণ তদ্বারা বেশি উপকৃত হয়ে থাকে। ব্যবসায়
শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের এরূপ ব্যবসায় সম্পর্কেও ধারণা থাকা উচিত।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি
রাষ্ট্র কর্তৃক গঠিত বা পরবর্তীতে জাতীয়করণকৃত কোনো ব্যবসায়ের মালিকানা,
পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের অধীনে থাকলে তাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। এরূপ
ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ বা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সাধন করা। বেসরকারি
বা ব্যক্তি পর্যায়ে যে সকল ব্যবসায় গড়ে ওঠে তার মূল উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা
অর্জন। এরূপ মুনাফা অর্জনচিন্তা অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল হলে সেক্ষেত্রে
ক্রেতাসাধারণ বা জনগণের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া এমন অনেক ক্ষেত্র থাকে
যেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলে রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা
থাকে। ঢাকা শহরে ওয়াসা পানি এবং তিতাস গ্যাস কোম্পানি গ্যাস সরবরাহ করে।
আরও পড়ুনঃ একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণাবলী
এরূপ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। আমাদের
মতো দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো প্রতিষ্ঠান
সম্পূর্ণ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া সমীচিন নয়। যে কারণে রাষ্ট্রের স্বার্থ
বিবেচনায় সরকার কোনো ক্ষেত্রে একচেটিয়াভাবে আবার কোথাও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনা করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি ও
বেসরকারি যৌথ মালিকানায়ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
সরকার আবশ্যক বিবেচনা করলে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেও রাষ্ট্রের মালিকানায় নিয়ে আসতে পারে। উল্লেখ্য,
আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ে অদক্ষতা বিরাজমান। যে কারণে রাষ্ট্রকে
অনেকক্ষেত্রেই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি বহন করতে হয়। কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানীসহ
অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে দক্ষতার
সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
বর্তমানকালে কম-বেশি সকল দেশেই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বেশ কিছু ব্যবসায় পরিচালিত
হতে দেখা যায়। নানাভাবে সমালোচনা করা হলেও অদ্যাবধি এরূপ ব্যবসায় ভিন্ন ধরনের
ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে যথেষ্ট আলোচনার দাবি রাখে। এ ধরনের ব্যবসায়ের যে সকল
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
- স্বতন্ত্র গঠন প্রণালীঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সরকারি নিয়ম-কানুন পালন করে সরকারি উদ্যোগে মূলত গঠিত হয় । রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে বা দেশের আইনসভার বিশেষ আইনবলে অথবা বেসরকারি ব্যবসায় জাতীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠিত হতে পারে।
- রাষ্ট্রীয় মালিকানাঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিক হলো সরকার বা জনগণ এর সকল সম্পদ রাষ্ট্রের এবং এর কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়। অবশ্য এরুপ ব্যবসায় সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানায়ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
- স্বাধীন আইনগত মর্যাদাঃ এরূপ ববসায় বিশেষ আইনবলে গঠিত হয় বিধায় এটি পৃথক আইনগত সত্তা বা মর্যাদার অধিকারী। এ ব্যবসায় নিজ নামে পরিচিত হতে ও নিজস্ব সীলমোহর ব্যবহার করে পরিচালিত হতে পারে।
- জনকল্যাণের উদ্দেশ্যঃ এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জনকল্যাণ সাধনই মূল লক্ষ্য হিসেবে গণ্য। দেশের অর্থনীতির উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ন্যায্য মূল্য উন্নতমানের পণ্য ও সেবা সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই মূলত এরূপ ব্যবসায় গঠিত হয়।
- রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হয়। সরকার বিভাগীয় সংগঠন- সরকারি বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বিধিবদ্ধ কর্পোরেশন-সরকার নিযুক্ত নির্বাহী ও পরিচালকমণ্ডলীর অধীনে পরিচালিত হয়। সরকারি কোম্পানিতে সরকার পরিচালক নিয়োগ করে এর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।
- বৃহদায়তন প্রকৃতিঃ এ ধরনের ব্যবসায় সাধারণত বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে উঠে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে যে সকল খাতে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে অথচ বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় না সেক্ষেত্রেই এরূপ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হতে দেখা যায়।
- চিরন্তন স্থায়িত্বঃ এরূপ ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব অনেকটা চিরন্তন প্রকৃতির। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে ও অন্যবিধ কারণে সরকার ইচ্ছে করলেও বৃহদায়তন এ ব্যবসায় সহজে ওটাতে পারে না। জনকল্যাণের উদ্দেশ্য বলতে জনগণের কল্যাণে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার আগ্রহ বা অভিপ্রায়সকে বুঝায়।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য কী
প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসায় ব্যক্তি মালিকানাধীনে পরিচালিত হয়ে আসলেও
শিল্পবিপ্লবের পর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য্যবাদ ( Laissez faire) নীতির কারণে সমাজে
মারাত্মক ধন-বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই মূলত রাষ্ট্রীয়
ব্যবসায়ের উৎপত্তি। সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠনের পিছনে যে সকল উদ্দেশ্য
রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
- জনকল্যাণঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ। জনকল্যাণের উদ্দেশ্য বলতে জনগণের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার অভিপ্রায়কে বুঝায়। তাই এরূপ ব্যবসায় এতে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মী হতে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি ব্যক্তি যাতে ব্যবসায়ের সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করে। তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। সরকার এক্ষেত্রে মুনাফার চাইতে জনকল্যাণকে গুরুত্ব দেয়ায় কমমূল্যে গৃহস্থালীতে এবং সার ও বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। যা বেসরকারি পর্যায়ে সম্ভব ছিল না।
- অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনঃ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা খুশিমতো চলতে দেয়ার নীতির কারণে ধনবাদী সমাজে ধনবৈষম্যের সৃষ্টি হয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। তাই এ অবস্থা পরিবর্তন করে সমাজতান্ত্রিক বা মিশ্র অর্থনীতি গড়ে তুলে কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে।
- সম্পদের সুষম বণ্টনঃ সম্পদ যেন সমাজের বিশেষ একটা শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত না হয় তা নিশ্চিত করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াসকেই সম্পদের সুষম বন্টন বলে। দেশের সম্পদ যাতে কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে তা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঞ্চালিত হতে পারে তজ্জন্যও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন করা হয়। পুঁজিবাদী সমাজে কিছু পরিবারের মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা অনেক সময়ই বৃহদায়তন জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃহদায়তন ব্যবসায় পরিচালিত হলে এর সুযোগ কমে যায়।
- একচেটিয়া ব্যবসায় রোধঃ একচেটিয়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকগণ যাতে সমাজে অশুভ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে বা স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ না পায় তা রোধের উদ্দেশ্যেও অনেক সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশে বেসরকারি বাস কোম্পানির পাশাপাশি সরকারি বাস ও বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানির পাশাপাশি টেলিটক এ উদ্দেশ্যেই পরিচালনা করা হচ্ছে।
- সুষম শিল্পায়নঃ এক ধরনের ব্যবসায় গড়ে না তুলে বা দেশের একটা অঞ্চলে শিল্প কেন্দ্রীভূত না করে সর্বত্র সকল ধরনের শিল্প গড়ে তোলাকে সুষম শিল্পায়ন বলে। বেসরকারি মালিকরা কেন্দ্রীভূত ব্যবসায় অঞ্চলে ব্যবসায় গড়তে পছন্দ করে। এ ছাড়া যে ব্যবসায় ভালো করছে সেখানেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়। এতে সুষম শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থা উত্তরণে দেশের সকল অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ এবং সকল ধরনের শিল্পের উন্নয়নের উদ্দেশ্যেও অনেক সময় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে এরূপ একটি উদাহরণ।
- মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণঃ দেশের অর্থনীতির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেও সকল দেশেই নেতৃত্ব প্রদানকারী কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি মালিকানায় পরিচালনা করা হয়। পৃথিবীর সকল দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে-এ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়ে থাকে। সোনালী ব্যাংকের মতো ব্যাংক এ উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করে।
- দেশরক্ষা শিল্প পরিচালনাঃ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেও প্রতিরক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় গঠন ও পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়াও উন্নত মারাণাস্ত্র যাতে কখনই বৈরী শক্তির হাতে না পৌঁছে তজ্জন্য এর বাণিজ্যও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
- গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ, ভেষজ ও ক্ষতিকারক পণ্য নিয়ন্ত্রণঃ গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ও ক্ষতিকারক পণ্যের উৎপাদন ও বণ্টন বেসরকারি খাতে অর্পণ করলে তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন- জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, আফিম, মদ ইত্যাদি। তাই যাতে এ সকল পণ্যের অন্যায় উৎপাদন ও বণ্টন হতে না পারে তজ্জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এরূপ পণ্যের ব্যবসায় করা যেতে পারে।
- ভারী ও মৌলিক শিল্প প্রতিষ্ঠাঃ মূলধন সংস্থানের সীমাবদ্ধতা, অধিক ঝুঁকি এবং মূলধন প্রত্যাবর্তনে বা মুনাফা প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে ব্যক্তিমালিকগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌলিক ও ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করতে চান না। অথচ শিল্পের বুনিয়াদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এরূপ খাতে বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য। তাই এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন করা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সরকার ভারী ও মৌলিক শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করে সুবিধামতো পরবর্তীতে শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজি প্রত্যাহারের চেষ্টা করে। যা দেশে মৌলিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়ে থাকে।
- কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিঃ দেশে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বেকারত্ব হ্রাসের প্রচেষ্টাতেও অনেক সময় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গড়ে তোলা হ্যা। M.C. Shukla এ সম্পর্কেই বলেছেন “রাষ্ট্রীয় মালিকানায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে এর মাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করা যায়। যা দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত অবস্থা এড়াতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার
পিছনে অনেক মহৎ উদ্দেশ্য লক্ষণীয়। সততা, আন্তরিকতা ও যোগ্যতার সাথে এ ধরনের
ব্যবসায় পরিচালনা করা হলে তা আরো সুফল দিতে সক্ষম । অবশ্য রাষ্ট্রীয়
ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার কারণে এরূপ ব্যবসায় প্রায়শই সমালোচিত হয়।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের সুবিধা সমূহ বণনা কর
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের সুবিধা সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- সামাজিক ন্যায়বিচারঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সমাজের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করে এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
- জনকল্যাণ সাধনঃ এরূপ ব্যবসায় জনকল্যাণের উদ্দেশ্যেই মূলত গঠিত ও পরিচালিত হয়। জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন খাত; যেমন- ওয়াসা, রেলওয়ে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আমাদের দেশে এ ব্যবসায় জনগণের অশেষ উপকার সাধন করে।
- অধিক কর্মসংস্থানঃ এ ব্যবসায় শ্রমিক -কর্মীদের শোষণ না করে বরং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকনিয়োগ করে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
- সুষম শিল্পায়নঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সকল অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া দেশে যাতে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থাৎ সকল ধরনের শিল্পের উন্নয়ন ঘটে তার প্রতিও নজর দেয়া হয়। ফলে দেশের সুষম শিল্পায়ন ঘটে।
- বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠাঃ বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বৃহদায়তন শিল্প খাতে অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না বা অনেক সময় এরূপ অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় খাতে পুঁজির অভাব না থাকায় দেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য এর মাধ্যমে মৌলিক ও ভারী শিল্পে অর্থ বিনিয়োগ করা যায়।
- ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহঃ ব্যক্তিমালিকানাধীন। ব্যবসায়ে ফটকা ব্যবসায়ের যে প্রবণতা দেখা যায় বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা লক্ষণীয় রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মাধ্যমে তা দূরীভূত হয়। স্বাভাবিক সরবরাহের কারণেও এক্ষেত্রে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়।
- স্থিতিশীল সরবরাহ ও নিশ্চিত মানঃ কেন্দ্রীভূত, পরিকল্পনার আওতায় এক্ষেত্রে স্বাভবিক পণ্য উৎপাদন বজায় রাখা যায়। ফলে পণ্যের সরবরাহে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। এছাড়া অধিক লাভের আশায় পণ্যমান বিনষ্টের কোন সম্ভাবনা এক্ষেত্রে থাকে না।
- একচেটিয়া প্রভাব রোধঃ ব্যক্তিমালিকদের মধ্যে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টির অসৎ প্রবণতা লক্ষণীয়। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় নানান ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা বন্ধ করা যায়।
- নিরাপত্তা বিধানঃ অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশের নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠা ও এর বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে এরূপ নিরাপত্তা বিধান সহজতর হয়।
- অর্থ-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণঃ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থ ব্যবস্থার ওপর সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সরকার দেশের অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণঃ দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উপর সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। দেশের আমদানি-রপ্তানির উপরও সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে সরকার এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে।
- প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারঃ বেসরকারি খাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ছেড়ে দেয়া হলে ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে । রাষ্ট্রীয় মালিকানায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা হলে দেশের সকল মানুষ এর সুফল পায়।
- ক্ষতিকারক পণ্যের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণঃ সাধারণভাবে ক্ষতিকারক অথচ ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন হয় এমন পণ্য; যেমন- মদ, আফিম, প্যাথিড্রিন। ইনজেকশন ইত্যাদির উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ জাতীয় স্বার্থেই অপরিহার্য। রাষ্ট্রীয়ভাবে এরূপ পণ্য উৎপাদন ও বণ্টন করা হলে এদের নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
- জাতীয় আয় বৃদ্ধিঃ এ ধরনের ব্যবসায়ে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা থাকে না। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজস্বও এ ব্যবসায় সরকারকে যথাযথভাবে প্রদান করে। এর অর্জিত মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ফলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে দেশের সামাজিক ও
অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন ও কল্যাণ লাভ অনেকাংশেই সম্ভব। তবে তা অর্জনে দক্ষ
ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর তত্ত্বাবধান অপরিহার্য। এ ছাড়া
শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই এরূপ ব্যবসায় পরিচালনা করা হলে তা ভালো ফল দিতে
পারে।
শেষ কথাঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি - রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কি, রাষ্ট্রীয়
ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের
সুবিধা ইত্যাদি। আশা করি উক্ত আর্টিকেলটির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সম্পর্কে
ভালোভাবে ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার
কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে
আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন
আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায়
নিচ্ছি। আমাদের সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ। আরও পড়ুনঃ হিসাববিজ্ঞান কি
সূত্রঃ উপরোক্ত আরটিকালের বিষয়াদি NCTB এর ব্যবসায় সংগঠন ও
ব্যবস্থাপনা পুস্তক থেকে সংগৃহীত
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url