যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে - যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

আপনি কি জানেন যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য কি? আমরা আজকে জানবো যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্যসহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে খুব সহজেই আমাদের এই ব্লক পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য সমূহ এছাড়াও এর ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে - যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

  • ভূমিকাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে
  • যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য
  • যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব
  • যৌথ মূলধনী কোম্পানির সুবিধা
  • যৌথ মূলধনী কোম্পানির অসুবিধা
  • শেষ কথাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে - যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

ভূমিকাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে

কোম্পানি আইনের অধীনে গঠিত ও পরিচালিত কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী সীমিত দায়বিশিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি সংগঠন বা যৌথ মূলধনী কোম্পানি বলে। কোম্পানি সংগঠন আইনের অধীনে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বিধায় এ ব্যবসায় সহজে ভাঙ্গে না এবং তা চিন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা লাভ করে। এটি নিজ নামে পরিচিত ও পরিচালিত হয় বিধায় ব্যক্তিক স্বার্থ ও কর্তৃত্ব এখানে মুখ্য হতে পারে না।


সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ ও বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সহজ হয়। সদস্যদের দায় সীমিত হওয়ায় এর সদস্য বা শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ার ক্রয়ে এবং পরিচালকগণ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগেও স্বচ্ছন্দবোধ করে। বাংলাদেশে বহাল ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী এরূপ প্রতিষ্ঠান গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ধারা অনুযায়ী, কোম্পানি বলতে অত্র আইনের অধীনে গঠিত ও নিবন্ধিত কোন কোম্পানি অথবা বিদ্যমান কোন কোম্পানিকে বুঝায়।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে কোম্পানি সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন। আইনের সাথে ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকায় ও অন্যান্য দিক বিচারে এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা একে স্বতন্ত্র রূপ প্রদান করেছে। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  1. আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠানঃ এটা একটা আইনসৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন। আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বলতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রতিষ্ঠান গঠনকে বুঝায়। দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় অথবা সরকারের বিশেষ অধ্যাদেশবলে এ ব্যবসায় গঠিত হয়। যে কারণে একপ ব্যবসায়ের গঠন পদ্ধতি বেশ আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ ও জটিল ।
  2. কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তাঃ কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা বলতে ব্যক্তি না হয়েও কোনো কিছুর ব্যক্তির ন্যায় মর্যাদা ও অধিকার লাভকে বুঝায়। কোম্পানি সংগঠন ব্যক্তি না হলেও এটি আইন অনুযায়ী কৃত্রিম ও স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা ভোগ করে। ফলে এরূপ প্রতিষ্ঠান নিজ নামে অন্যের সাথে চুক্তি করতে, লেনদেন করতে এবং প্রয়োজনে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। অন্যরাও একইভাবে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে।
  3. চিরন্তন অস্তিত্বঃ চিরন্তন অস্তিত্ব বলতে সহজে বিলুপ্ত হয় না এমন অস্তিত্বকে বুঝায়। কোম্পানি সংগঠন অন্যান্য ব্যবসায়ের ন্যায় সহজে বিলুপ্ত হয় না বিধায় আইন অনুযায়ী এ ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা ভোগ করে। পৃথক ও স্বাধীন সত্তার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব, শেয়ার হস্তান্তর ইত্যাদি এ ব্যবসায়ের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে না। আইনগত আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই এরূপ ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে।
  4. সদস্য সংখ্যাঃ আইন অনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুইজন এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশজন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে সাতজন এবং সর্বোচ্চ শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ পরিমাণ সদস্য থাকতে পারে। উল্লেখ্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে একাধিক ব্যক্তি মিলে শেয়ার গ্রহণ করলে আইনানুযায়ী তা একজন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে প্রথম ব্যক্তি অধিকার প্রয়োগ ও দায় বহনে বাধ্য থাকে।
  5. সাধারণ সীলমোহরঃ কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে সকল কাজেই তাকে প্রতিনিধির ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিনিধির বৈধতা কোম্পানির সাধারণ সীলমোহর দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কোম্পানির সকল কাগজপত্রে এরূপ সীলের ব্যবহার আবশ্যক। এজন্য কোম্পানির সাধারণ সীলমোহর কিভাবে সংরক্ষিত ও ব্যবহৃত হবে সে বিষয়ে কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলিতে প্রয়োজনীয় বিধানের উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
  6. শেয়ার মূলধনঃ আইনগতভাবেই কোম্পানির মূলধনকে কতকগুলো সমান অঙ্কের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হয়। এরূপ প্রত্যেকটি একককে শেয়ার বলে। এগুলো বিক্রয় করে কোম্পানি নিজস্ব মূলধন সংগ্রহ করে। শেয়ারে বিভাজিত থাকার কারণেই এর মূলধনকে শেয়ার মূলধন বলা হয়। সাবালক যোগ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ অর্জন করতে পারে।
  7. শেয়ারের হস্তান্তরযোগ্যতাঃ কোম্পানি আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী শেয়ার অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য এবং যা কোম্পানির সংঘবিধির বিধান অনুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য হলেও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য নয়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হলে এর সদস্যরা এই বাজারে সহজেই শেয়ার হস্তান্তরের সুযোগ পায়।
  8. সীমাবদ্ধ দায়ঃ অসীম দায়সম্পন্ন কোম্পানি ছাড়া সকল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের দায় স্মারকলিপির বর্ণনা অনুযায়ী শেয়ার বা নিশ্চয়তা মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। যার অধিক দায় বহনে তাদেরকে বাধ্য করা যায় না। অবশ্য আমাদের দেশে অসীম দায়সম্পন্ন ও নিশ্চয়তা মূল্য দ্বারা দায় সীমাবদ্ধ কোম্পানি নেই। অর্থাৎ যদি কেউ শেয়ার মূল্য দ্বারা দায় সীমাবদ্ধ কোম্পানির ১০০ টাকা মূল্যমানের ১০টা শেয়ার ক্রয় করে তবে তার দায় ১,০০০ টাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। যদি এই মূল্যমানের কোনো অংশ বকেয়া থাকে তবে প্রয়োজনে ঐ পরিমাণ অর্থ পরিশোধে তাকে বাধ্য করা যায়।
  9. বিধিবদ্ধ দায়িত্বঃ কোম্পানি আইন অনুযায়ী এরূপ ব্যবসায়কে বেশ কিছু বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করতে হয়; যেমন- খাতাপত্র সংরক্ষণ, হিসাব তৈরি, হিসাব নিরীক্ষণ, সভা আহ্বান, পরিচালক পর্ষদ পুনর্গঠন ইত্যাদি। এরূপ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানি নিবন্ধক (RJSC) আইনানুযায়ী। জরিমানা আরোপ এমনকি এর নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। অবশ্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে কিছু কিছু বিধিবদ্ধ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
  10. বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানঃ সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এ ব্যবসায়ে তুলনামূলকভাবে অধিক মূলধন সংগ্রহ করা যায়। একমালিকানা ব্যবসায়ে একক মালিকের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা, অংশীদারি ব্যবসায়ে সদস্যদের অসীম দায় ও সদস্য সংখ্যার স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠানকে খুব বড় করে গঠন ও পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু কোম্পানি সংগঠনে সদস্য সংখ্যার আধিক্য, প্রতিষ্ঠানের পৃথক সত্তা ও চিরন্তন অস্তিত্ব এবং সদস্যদের সীমিত দায়ের কারণে সহজেই বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে উঠতে পারে। আর এ কারণেই সারা বিশ্বে এ ধরনের ব্যবসায় বৃহদায়তন প্রকৃতির ব্যবসায় সংগঠন।
  11. স্বতন্ত্রধর্মী ব্যবস্থাপনাঃ কোম্পানি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা মালিকানা থেকে ভিন্নতর। পরিচালকরা এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কর্তৃত্বশালী হলেও দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা কার্য বেতনভুক্ত তৃতীয় পক্ষের উপর ন্যস্ত থাকে। দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাৎ এমডি/ সিইও বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বোতভাবে দায়ী হয়। অন্যদিকে পরিচালনা পর্ষদ তাদের কাজের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের নিকট দায়ী হয়ে থাকে।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব

বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে কোম্পানি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন। যে সকল ভূমিকার কারণে এরূপ যৌথ মূলধনী কোম্পানি বা সংগঠন ব্যাপকতা লাভ করেছে তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
  1. বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠাঃ বৃহদায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনায় কোম্পানি সবচেয়ে উপযোগী সংগঠন। বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয় এবং দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে সহজেই কোম্পানি এ ধরনের ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে ।
  2. উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্রঃ এরূপ ব্যবসায় সংগঠন সারা বিশ্বেই উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। শেয়ারের মূল্যমান কম হওয়ায় সকল ধরনের মানুষ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করতে পারে। লভ্যাংশ ছাড়াও শেয়ারের মূল্যমান বৃদ্ধি, রাইট শেয়ার প্রাপ্তি ইত্যাদি সুবিধা থাকায় তা সবার নিকট আরও অধিক আকর্ষণীয়।
  3. সঞ্চয়ে উৎসাহদান ও মূলধন গঠনঃ শেয়ারের কম মূল্যমান, শেয়ারমালিকদের সীমিত দায়, বাজার হতে সহজেই শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ, শেয়ারের মূল্যমান বৃদ্ধির সম্ভাবনা ইত্যাদি কারণে অনেকেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে আকৃষ্ট হয়। ফলে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা শেয়ারে বিনিয়োগ হয়ে মূলধনে পরিণত হয়।
  4. ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টিঃ একক মালিকানা বা অংশীদারির ভিত্তিতে কখনই বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খাতে অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। অথচ কোম্পানি সংগঠনে ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ থাকায় এতে অর্থ বিনিয়োগের সহজ সুযোগ সৃষ্টি হয়। কোম্পানি যত বড় হয় বিক্রীত শেয়ারের সংখ্যাও ততই বৃদ্ধি পায়। ঝুঁকিও তত বেশি বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
  5. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিঃ সারা বিশ্বে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোম্পানি সংগঠন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি বৃহদায়তন কোম্পানি সংগঠনকে ঘিরে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কর্মরত থাকে। ফলে বেকার সমস্যারই শুধু সমাধান হয় না মানুষের মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পায়।
  6. উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশলের ব্যবহারঃ কোম্পানি সংগঠন সকল দেশেই উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশলের ব্যবহার করে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এরূপ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সঙ্গতি বেশি থাকায় তা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। ফলে দেশ উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করে।
  7. সামাজিক দায়িত্ব পালনঃ সারা বিশ্বেই কোম্পানি সংগঠন সামাজিক দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর্থিক সামর্থ্য থাকায় এরূপ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শিক্ষা, দাতব্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করে। শ্রমিক-কর্মী, ভোক্তা, সরকার ইত্যাদি পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেও এ সংগঠন সমাজকে প্রভূত সেবা প্রদান করে থাকে।
  8. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাঃ বর্তমানকালে বহুজাতিক কোম্পানি সংগঠন সারা বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের দেশে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি যেমন-বাটা সু লিমিটেড, ইউনিলিভার, রেকিট এন্ড কোলম্যান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এভাবে এক দেশের কোম্পানি অন্য দেশে শাখা খুলে কাজ করায় ব্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
  9. ব্যবস্থাপনা পেশার উন্নয়নঃ এরূপ সংগঠনের ব্যবস্থাপনা কার্য পেশাদার ব্যবস্থাপক দ্বারা পরিচালিত হয়। এরূপ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক নিয়োগের সময় ব্যক্তির ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না তা বিশেষভাবে দেখা হয়ে থাকে। এছাড়া এতে কর্মরত ব্যবস্থাপকগণের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ব্যবস্থাপনা পেশার মনোন্নয়ন ঘটে। উপসংহারে বলা যায়, উপরোক্ত গুরুত্বের কারণেই সারা বিশ্বে কোম্পানি সংগঠন ব্যাপকতা লাভ করেছে।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির সুবিধা

বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে কোম্পানি সংগঠন সবচেয়ে উত্তম ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে সকল দেশেই সমাদৃত । নিচে যৌথ মূলধনী কোম্পানির সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
  1. অধিক মূলধনঃ সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার সুযোগে এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ থাকায় এক্ষেত্রে সহজেই অধিক মূলধন সংগ্রহ করা যায়। ফলে এ ধরনের ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ অনেক সহজ।
  2. সীমিত দায়ঃ এরূপ ব্যবসায়ে শেয়ারহোল্ডারদের দায় সাধারণত ক্রয়কৃত শেয়ারের আঙ্কিক মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে শেয়ার মালিকগণ নিশ্চিন্তে এর শেয়ার ক্রয় করতে পারে। এ ছাড়া শেয়ারমালিকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলে তার ঝুঁকি অনেকের মধ্যে বণ্টিত হয়।
  3. চিরন্তন অস্তিত্বঃ কোম্পানির পৃথক আইনগত সত্তা একে চিরন্তন অস্তিত্বের মানে উন্নীত করেছে। ফলে কোনো শেয়ার মালিকের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব বা অন্য কোনো কারণে এর অস্তিত্ব সহজে বিপন্ন হয় না। ফলে এ ব্যবসায়ের ওপর জনগণের আস্থা অনেক বেশি থাকে।
  4. স্বাধীন সত্তাঃ আইনগতভাবে এ ব্যবসায় স্বাধীন কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা ভোগ করে। যার কারণে এ ব্যবসায় সংগঠন নিজস্ব নাম ও সীলমোহর ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষের সাথে যেকোনো চুক্তি বা লেনদেন সম্পাদন করতে পারে।
  5. শেয়ারের হস্তান্তরযোগ্যতাঃ এ ব্যবসায়ের বিশেষত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য। ফলে কেউ ইচ্ছে করলেই শেয়ারবাজার হতে সহজেই এর শেয়ার ক্রয় ও প্রয়োজনে তা বিক্রয় করতে পারে।
  6. বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধাঃ এরূপ ব্যবসায় বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে ওঠার কারণে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা যেমন- একসাথে অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়, কম খরচে পণ্য উৎপাদন, সুদক্ষ কর্মচারী নিয়োগ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা অর্জন ইত্যাদি সুবিধা ভোগ করে।
  7. সুদক্ষ পরিচালনাঃ এ ব্যবসায়ের পরিচালনার ভার পরিচালনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকে। পরিচালকগণ যোগ্যতার ভিত্তিতেই শেয়ারহোল্ডারগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। অপরপক্ষে আর্থিক সঙ্গতি থাকায় যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপকদের এক্ষেত্রে নিয়োগ করা যায়। ফলে এর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দক্ষ হয়।
  8. আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্রঃ চিরন্তন অস্তিত্ব, সীমিত দায়, আইনানুগ নিয়ন্ত্রণ, স্বল্পমূল্যে শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগকারীদের নিকট এটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র বিবেচিত হয়। এ ছাড়া শেয়ারমূল্য বাড়ার সুযোগ থাকায়ও বিনিয়োগকারীরা অধিক আকর্ষিত হয়ে থাকে।
  9. ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ সামর্থ্যঃ কোম্পানির শেয়ার মালিক ও পরিচালকবর্গের দায়-দায়িত্ব সীমিত হওয়ার কারণে এবং ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ থাকায় এরূপ সংগঠনের পরিচালকগণ সহজেই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অংশ নিতে পারে। যা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ের জন্য লাভজনক বিবেচিত হয়।
  10. ব্যাপক প্রচারঃ শেয়ার মালিকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণে প্রত্যেক শেয়ারমালিক এর প্রচারে সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বিবরণপত্র প্রচার, বিভিন্ন সভা আহ্বান, তথ্য পরিবেশন ইত্যাদি প্রয়োজনে প্রদত্ত বিজ্ঞাপনেও আপনা-আপনি প্রতিষ্ঠানের প্রচার সুবিধা পাওয়া যায়।

যৌথ মূলধনী কোম্পানির অসুবিধা

কোম্পানি সংগঠন বা যৌথমূলধনী ব্যবসায়ের অনেকগুলো সুবিধা থাকলেও বিভিন্ন দিক বিচারে এর বেশ কিছু অসুবিধাও দেখা দেয়। নিচে যৌথ মূলধনী কোম্পানির অসুবিধা গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
  1. জটিল গঠন প্রণালীঃ কোম্পানি সংগঠন একটি আইনসৃষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। যে কারণে এর গঠন বেশ সময়সাপেক্ষ, আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। যার ফলে অনেকেই এরূপ ব্যবসায় গঠনে নিরুৎসাহ বোধ করে।
  2. পরিচালকদের স্বার্থসিদ্ধিঃ পরিচালকগণ শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে অনেক সময় তারা সম্মিলিতভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ফলে ব্যবসায় ও শেয়ারমালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  3. আমলাতান্ত্রিকতাঃ পরিচালকগণ ব্যবসায়ের পক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করে বেতনভূক তৃতীয় পক্ষ। যার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে ধীর গতি পরিলক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে ব্যবস্থাপনা আমলাতান্ত্রিকতার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে।
  4. স্বজনপ্রীতিঃ কোম্পানির বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি ইত্যাদি কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব পরিচালকমণ্ডলীর ওপর ন্যস্ত থাকে। ফলে এ সকল বিষয়ে পরিচালকগণ অনেক সময় স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় গ্রহণ করে। এতে ব্যবসায় অদক্ষ হয়ে পড়ে।
  5. পরিচালনা ব্যয়ের আধিক্যঃ এ ব্যবসায়ে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠানাদি পালন, দলিল ও খাতাপত্র সংরক্ষণ, হিসাব নিরীক্ষা ইত্যাদি কার্যে যথেষ্ট উপরিখরচ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মুনাফার পরিমাণ হ্রাস পায়।
  6. ক্ষমতা ও দায়ের মধ্যে অসঙ্গতিঃ পরিচালকগণ শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেও তাদের দায়-দায়িত্ব অনেকাংশে অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের মতো। পরিচালক হিসেবে ক্ষেত্রবিশেষে দায়ের সৃষ্টি হলেও ক্ষমতার তুলনায় তা একান্তই কম। এরূপ অসঙ্গতি তাই অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে।
  7. শেয়ার মালিকদের উপেক্ষাঃ শেয়ারহোল্ডারগণ সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বিবেচিত হলেও কার্যত পরিচালকগণ নিজেদের স্বার্থেই শেয়ার মালিকদের এরূপ ভূমিকা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত করে। ফলে শেয়ারহোল্ডারগণ পরিচালকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ও উপেক্ষিত হন।
  8. আইনের কড়াকড়িঃ এরূপ কোম্পানি গঠন হতে শুরু করে বিলোপ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই আইনের কড়াকড়ি অনুসরণ করতে হয়। যার ফলে ভালো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ-আগ্রহও অনেকক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়। অবশ্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এ কড়াকড়ি কিছুটা কম।
  9. গোপনীয়তা প্রকাশঃ শেয়ারমালিকদের সংখ্যাধিক্য, বার্ষিক সাধারণ সভায় সকল হিসাবপত্রাদি পেশ, নিবন্ধকের নিকট হিসাবপত্রাদি জমাদান ইত্যাদি অনেক আইনগত কারণেই এতে গোপনীয়তা রক্ষা করা যায় না। ফলে অনেক সময় ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শেষ কথাঃ যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে - যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম যৌথ মূলধনী কোম্পানি কাকে বলে, যৌথ মূলধনী কোম্পানির গুরুত্ব এবং এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে। আশা করি উক্ত ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে যৌথ মূলধনী কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।


আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url