দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি খুঁজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি তুলে ধরেছি। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। আশা করি রচনাটি আপনার উপকারে আসবে।
প্রিয় পাঠক দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি পড়তে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
- ভূমিকাঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
- বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ
- বিজ্ঞানের আবিষ্কার
- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
- মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক প্রয়োগ
- মানবজীবনে বিজ্ঞানের নেতিবাচক প্রভাব
- উপসংহারঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকাঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
শাব্দিক অর্থে বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি Science শব্দটির
উৎপত্তি Scio থেকে। 'Scio' 'অর্থ শিক্ষা করা। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ বিশেষ জ্ঞান
শিক্ষা করে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে আধুনিক সভ্য জগতে। বিজ্ঞান বিচিত্র
বিস্ময় নিয়ে জীব ও জড় জগতের রহস্য উদ্ঘাটনে সদা নিয়োজিত। মানব কল্যাণে
বিজ্ঞানের অবদান ব্যাপক; তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়।
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ
মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন- 'বিজ্ঞানই বাস্তব, বিজ্ঞান-ই সত্য, বিজ্ঞান-ই
আমাদের পরম বন্ধু, বিজ্ঞান সর্বদাই সৃষ্টিশীল।' বিজ্ঞানের অসীম শক্তিতে মানুষ আজ
স্বেচ্ছাচারী প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানের মাধ্যমে
মানুষ এখন সমগ্র বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। বিজ্ঞান ছাড়া আর এক
মুহূর্তেও মানুষের চলে না। দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই বিজ্ঞানের দান। এ কারণেই
আজকের যুগকে বিজ্ঞানের যুগ বলা হয়।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার
বিজ্ঞানের বিচিত্র ও বিস্ময়কর আবিষ্কারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সুখের
হয়েছে। আজকে জীবনের সবদিকেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগেছে। সামান্য বলপেন থেকে শুরু
করে যেখানেই যাই না কেন সেখানেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া রয়েছে। বর্তমান ছুরি থেকে
কম্পিউটার, পরমাণু বোমা, রেলগাড়ি থেকে কনকর্ড বিমান, মাথাব্যথার ট্যাবলেট থেকে
হৃৎপিণ্ডের বাইপাস সার্জারি সবই বিজ্ঞানের অবদান। আজ মানুষ উপগ্রহের মাধ্যমে
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত খবরাখবর এক নিমিষে আদান প্রদান করতে
পারছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান
জড়িত। সকালে যে ঘড়ি দেখে ঘুম থেকে। উঠি, যে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করি তা
বিজ্ঞানের অবদান। তারপর ট্যাপের পানি, টয়লেটের ফ্লাশ, হাতমুখ ধোয়ার সাবান
বিজ্ঞানের উদ্ভাবন, রান্নার চুলায় ভূগর্ভের গ্যাস, প্রেসার কুকার, অফিস গমনে
যান্ত্রিক যান, হিসেবের ক্যালকুলেটর, দাপ্তরিক কাজে কম্পিউটার, বিনোদনের টিভি,
স্যাটেলাইট, তথ্য আদান-প্রদানে ইন্টারনেট, ফেসবুক। গরম থেকে রক্ষা পেতে ফ্যান,
এসি, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইলসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রাদি সচল রাখার প্রাণশক্তি
বিদ্যুৎ। সবকিছুই বিজ্ঞানের মহাকল্যাণকর অবদান।
মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক প্রয়োগ
মানবজীবন আর বিজ্ঞান একই সূত্রে গ্রথিত। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা ও বিনোদন,
চিকিৎসা, আবহাওয়াসহ মানবজীবনের সর্বত্রই বিজ্ঞানের অবদান। পরিবহন ও যোগাযোগের
ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয়েছে দ্রুতগামী যানবাহন, ট্রেন, উড়োজাহাজ। মানুষ আজ পৃথিবীর
এক প্রাপ্তে বসে অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে পারে। তাছাড়া,
টেলিগ্রাফ, টেলিপ্রিন্টার, মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট এসবই
বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের বদৌলতে কৃষিতে মানুষ এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
আরও পড়ুনঃ বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ
কলের লাঙল, ট্রাক্টর, রাসায়নিক সার, উন্নত বীজ, কীটনাশকসহ ফসল কর্তন ও মাড়াই
যন্ত্র আবিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। মুদ্রণ যন্ত্র,
সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র প্রভৃতি আবিষ্কারের দ্বারা শিক্ষা ও
বিনোদন বিস্তারে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চিকিৎসা জগতে অভূতপূর্ব
সাফল্য বয়ে এনেছে। স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, রেডিয়াম, এক্সরে, ইসিজি,
আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান প্রভৃতি আজ মৃত্যুপথযাত্রীকে দান করেছে নিশ্চিত
জীবনের আশা।
আবিষ্কৃত হয়েছে যক্ষ্মা, জলাতঙ্ক, হাম, পোলিও, ধনুষ্টংকারের টিকা। ফাইবার
অপটিকস, বাইপাসসহ মানবদেহের সূক্ষ্ম ও জটিল সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান যুগান্তকারী
পরিবর্তন এনেছে। রাডারের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যাচ্ছে। ভূ-উপগ্রহ
দ্বারা খনিজ সম্পদ, জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, যা সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ।
কিন্তু এরপরেও বিজ্ঞান কখনো কখনো মানুষের জীবনকে ঢেলে দিচ্ছে নিশ্চিত ধ্বংসের
মুখে।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের নেতিবাচক প্রভাব
বিজ্ঞান ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। মানুষের বিলাসী
জীবন-যাপন নির্বাহ করতে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন যা ব্যবহার করে। ফলে বায়ুমণ্ডলের
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে মেরু অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করেছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ, মালদ্বীপ
প্রভৃতি সমতল দেশগুলোর বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও বিজ্ঞানের নব
নব উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশগুলো এমন কিছু কিছু কাজ করছে যা পৃথিবীর ওজোন
স্তর দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস অন্যতম।
উপসংহারঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানবজীবনে সুখ-সমৃদ্ধি যেমন এসেছে তেমনই ভয়াবহ
মারণাস্ত্র মানবজীবনকে করেছে সংকটাপন্ন। বিজ্ঞানের অবদানকে অবশ্যই নেতিবাচক দিকে
নয় বরং ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ অবদানকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করে এক
শান্তিময় ধরিত্রী গড়ে তুলতে হবে। এজন্য বিশ্ববাসীর ঐকান্তিক প্রয়াস একান্ত
প্রয়োজন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url