বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনি কি বাংলাদেশের ফুটবল রচনাটি খুঁজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা আর্টিকালের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল রচনা টি তুলে ধরেছি। রচনাটির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাকে বাংলাদেশের ফুটবল রচনাটি পড়ে পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের ফুটবল রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের ফুটবল রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

  • ভূমিকাঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা
  • আধুনিক ফুটবলের ইতিহাস
  • বাংলাদেশে ফুটবলের যাত্রা
  • বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন
  • অন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ফুটবল
  • স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
  • বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল
  • বিদেশি লিগে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়
  • ফুটবল খেলার মাঠ
  • উপসংহারঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

ফুটবল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের গ্রামে, গঞ্জে, শহরে সর্বত্র ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এর প্রতি মানুষের আগ্রহের মাত্রা বোঝা যায় বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হলে। তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত দেশগুলোর পতাকা উড়তে দেখা যায়। অনেকের গায়ে দেখা যায় পছন্দের দলের জার্সি। ফুটবলের প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসা ক্রমে এই খেলার প্রতি তাদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে। ছড়ায় ছড়ায় বলা যায়-

ফুটবল গুডবল বলে ভাই লোকেরে

কেউ হারে কেউ জেতে কেউ কাঁদে শোকেরে।

শোক পেয়ে তবু দেখে বয়ে যায় বেলারে

কাজ ফেলে দিন-রাত তবু দেখে খেলারে ।

আধুনিক ফুটবলের ইতিহাস

প্রতি দলে এগারো জন করে দুটি দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলতে হয়। একটি বায়ুপূর্ণ চামড়ার বলকে হাত ও বাহু ছাড়া শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের মধ্যে প্রবেশ করাতে হয়। পৃথিবীতে ফুটবল ধরনের বেশ কয়েকটি খেলা প্রচলিত আছে। যেমন, রাগবি অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। তবে এখন ফুটবলের যে রূপটি দেখা যায়, তা ১৮৬৩ সালে প্রবর্তিত। মূলত এ সময়ে ইংল্যান্ডে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় এবং তারা ফুটবল খেলার কতকগুলো নিয়ম জারি করে।


এই নতুন নিয়মের ফুটবল খেলা দ্রুত অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য ইংল্যান্ডকে আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হয়। ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রবর্তিত হওয়ায় ফুটবলের আরেক নাম 'অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল' আমেরিকায় একে বলা হয় 'সসার' বা 'সকার'। এটিকে অ্যাসোসিয়েশন শব্দের বিকৃত রূপ বলে মনে করা হয়। রাগবি ফুটবল কেবল রাগবি নামে অধিক পরিচিত হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল শুধু 'ফুটবল' নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বাংলাদেশে ফুটবল বলতে অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলকেই বোঝায়। ফুটবল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে মে প্যারিসে গঠিত হয় ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনালে ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা)। সংস্থাটি প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম বিশ্বকাপ আসরে শিরোপা অর্জন করে উরুগুয়ে। বর্তমানে ফিফার সদস্য সংখ্যা ২১১।

বাংলাদেশে ফুটবলের যাত্রা

ব্রিটিশদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে ফুটবল খেলার আগমন হয়। এরপর বিভিন্ন মানুষ যেমন ইংরেজ বণিক, খেলোয়াড় ও সৈনিকরা ফুটবল খেলত। এ সকল লোকদের মধ্যে দিয়েই উপমহাদেশে ফুটবল খেলা এত পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশে উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে ফুটবল বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর পর ১৯৪৮ সাল থেকে ঢাকা লিগ পাকিস্তানে ফুটবলের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টি ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারি ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়াচক্র, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র প্রভৃতি ক্লাব বাংলাদেশে লিগ খেলাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশে ফুটবল একটি নতুন মাত্রায় আবির্ভূত হয়।


মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বিশ্বকে অবগত করতে তখন গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল'। তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ১৬টি ম্যাচ খেলেছিল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালে ঢাকায় ফুটবল লিগ শুরু করে। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয় জাতীয় ফুটবল। এক বছর পর থেকেই অর্থাৎ ১৯৭৪ সাল থেকে খুব ফুটবল যাত্রা শুরু করে। ফেডারেশন কাপ শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে নিম্নোক্ত ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো চালু রয়েছে-
  • বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগঃ এটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্তৃক আয়োজিত একটি টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয় ২০০৭ সালে।
  • বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগঃ এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রেণির ফুটবল লিগ। ২০১২ সালে এটি যাত্রা করে।
  • ফেডারেশন কাপঃ এটি বাংলাদেশের প্রিমিয়ার নকআউট প্রতিযোগিতা। ১৯৮০ সাল থেকে এটি আয়োজিত হয়।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন

বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন, খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যা, জাতীয় দল গঠন ও নিয়ন্ত্রণ তথা ফুটবলের যাবতীয় উন্নয়নে কাজ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। বাফুফে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল ও বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলকে তত্ত্বাবধান করে।

অন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ফুটবল

বাফুফে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন), ৯১৭৬ সালে ফিফা (ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনালে ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) ও ১৯৯৭ সালে সাফ (সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন) বাংলাদেশকে সদস্য করে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ১৯৭৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯৮০ সালে 'এএফসি এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে এবং ১৯৮৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নেয়। ফুটবলে বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয় ২০০৩ সালে। ওই বছরই বাংলাদেশ প্রথম সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপ-এ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ একটি ফুটবল দল সংগঠিত হয় এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জন্মতর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে ফুটবল খেলায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটি অংশ নিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি।

বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল কমিটি। বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্য। ২০১০ সালের ২৯শে জানুয়ারি দলটি সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমস-এ নেপালের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল ২০১০ সালের সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে কক্সবাজারে ভুটানের বিপক্ষে ৯-০ ব্যবধানে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়েরা বড়ো ভূমিকা রাখছে। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মেয়েরা।

বিদেশি লিগে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়

আনোয়ার উদ্দিন ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগে খেলতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম খেলোয়াড়। শাহেদ আহমেদ (স্পোর্টিং বেঙ্গল ইউনাইটেড) সাবেক ওয়াইকম্ব ওয়েল্ডার্স প্লেয়ার।

ফুটবল খেলার মাঠ

স্থানীয় মাঠ ছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের ফুটবল মাঠ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়াম, রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম, শহিদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়াম, গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়াম, ফেনীর শহিদ সালাম স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম উল্লেখ্যযোগ্য।

উপসংহারঃ বাংলাদেশের ফুটবল রচনা

ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও ফুটবলের জনপ্রিয়তা কম নয়। তবে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য জাতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য নিয়ে আসতে পারেনি। এক সময়ে ঘরোয়া ফুটবল সারা বাংলাদেশে যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারত, তাও এখন আবেদন হারিয়েছে। বয়ষভিত্তিক ফুটবল দলগুলো মাঝে মাঝে যে সাফল্য দেখাচ্ছে, তা আবার হারিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর নীতিমালা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের সন্ধান অব্যাহত রাখা উচিত।

ফুটবল নিয়ে যাতে আজ সারা বিশ্ব,

আমাদের ছেলেগুলো কেন আজও নিঃস্ব?

কোন সালে ওয়ার্ল্ডে কাপে তারা ঘুরে দাঁড়াবে?

আমাদের পতাকাও আনন্দ ছড়াবে।

সূত্রঃ রচনাটি ডঃ হায়াৎ মাহমুদ এবং ডঃ মুহাম্মদ আমীন এর লেখা পুস্তক থেকে সংগৃহীত

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url