বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

প্রিয় পাঠক আপনি কি বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি খুজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা এই ব্লক পোষ্টে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি জানবো। আশা করি বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি আপনার উপকারে আসবে।
বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা
প্রিয় পাঠক বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি পড়তে আমাদের ব্লগ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

  • ভূমিকাঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা
  • বেকার সমস্যার স্বরূপ
  • নানা রকমের বেকারত্ব
  • বেকার সমস্যা সমাধানের উপায়
  • উপসংহার
  • আমাদের শেষ কথাঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

বেকার সমস্যা বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। কাজ করার শারীরিক-মানসিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কোনো কাজ পায় না তাদের বলা হয় বেকার। বেকার থাকার সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় বেকারত্ব। বেকারত্ব একটি দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। বেকারত্ব মানবজীবনের জন্য যেমন অভিশাপস্বরূপ, তেমনই জাতীয় জীবনের জন্য বিরাট বোঝা। বেকার মানুষ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।

বেকার সমস্যার স্বরূপ

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল কৃষিনির্ভর দেশ। শিল্পায়নের সুযোগ এখানে সীমিত। তাই অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর একটি বড়ো কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা মোটেও কর্মমুখী নয়।


দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের শিক্ষিত, তরুণরা শিক্ষা লাভের পর পিতৃপেশায়, যেমন- কৃষি, চাষাবাদ, কুটিরশিল্প ইত্যাদি কাজে ফিরে যেতে চায় না। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কার, অনেকের হাতের কাজ একজনকে দিয়ে করার মতো প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে একদিকে অশিক্ষিত বা শিক্ষাবঞ্চিত তরুণ, অন্যদিকে শিক্ষিত অথচ অদক্ষ যুব সমাজ এ দুই বিপরীতমুখী স্রোতধারা বেকারত্বের সমস্যাকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে, দেশের ভবিষ্যৎকে করে তুলছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে কর্মক্ষম অথচ কর্মহীন জনগোষ্ঠী কি অর্থনীতির ওপর মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

নানা রকমের বেকারত্ব

বাংলাদেশে কয়েক ধরনের বেকারত্ব রয়েছে। এদের সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় স্থায়ী বেকারত্ব, অস্থায়ী বেকারত্ব, সাময়িক বেকারত্ব, ছদ্মবেশী বেকারত্ব ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশে মূলধন ও পুঁজির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে আমাদের দেশে বড়ো ধরনের কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ও আমাদের দেশের নানা আর্থসামাজিক ও রাজনীতিক কারণে মার খায়। ফলে কর্মসংস্থানের তীব্র অভাবে দেশের যুবশক্তির বিরাট অংশ দীর্ঘকাল বেকারত্বের দায়ভার কাঁধে নিয়ে ধুকে ঠুকে দিন কাটাচ্ছে।

নির্দিষ্ট কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রম বিনিয়োগই প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব। বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে এই বেকারত্ব রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরের মাত্র কয়েক মাস কাজ থাকে, বাকি সময় কাজ থাকে না। এ ধরনের বেকারত্বকে সাময়িক বেকারত্ব বলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ছদ্মবেশী বেকার দেখা যায় বেশি। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়, কিন্তু পরোক্ষভাবে তাদের অবদান আছে। এ ধরনের বেকারত্বকে ছদ্মবেশী বেকারত্ব বলে।


আমাদের দেশে এক-এক মৌসুমে এক এক রকম কাজের বা লোকের চাহিদা থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশেষ ধরনের কাজের কোনো সুযোগ থাকে না। এরকম বেকারত্ব মৌসুমি বেকারত্বের পর্যায়ে পড়ে। বেকারত্ব যে ধরনের হোক না কেন, তা কখনো কাঙ্ক্ষিত নয়। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উচ্চ শিক্ষিত তরুণ যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাচ্ছে না, কিংবা পছন্দের পেশায় চাকরি হচ্ছে না।

এরকম বেকার সবচেয়ে বেশি। চাকরি দ্বারা বেকার সমস্যা সমাধানের সুযোগ যে অল্প, তা কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। প্রতিযোগিতার এই মার্কেটে যোগ্য ও দক্ষ লোকের অভাব নেই। সবাই চায় নির্ঝঞ্জাট আকর্ষণীয় চাকরি। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। তাই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বেকার সমস্যা সমাধানের উপায়

বেকার সমস্যা বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রথম প্রয়োজন সমাজ কাঠামোর সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয়। জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে, যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। দেশে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রযুক্তি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করে সেখানে যুবশক্তিকে নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের বেকারত্ব ঘোচাতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করা দরকার। বড়ো, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে দক্ষ, অদক্ষ তরুণ-তরুণীদের সেখানে কাজে লাগাতে হবে।


দেশের শিক্ষিত যুব সমাজকে গ্রামমুখী করে গড়ে তোলা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চাকরির মানসিকতা পরিহার করে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজের প্রতি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং শর্তহীন বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সরকার চালু করেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের কার্যক্রম চালু করেছে।

যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর শিক্ষিত যুবক স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়েছে। দেশের যুব শক্তিকে কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, কৃষি খামার, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি কাজে উৎসাহী করে তুলতে হবে। এর জন্য গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শনী, পোস্টার প্রদর্শন এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

উপসংহার

বেকার সমস্যা যেহেতু বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা সেহেতু এর থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। শিল্পায়নই এর অন্যতম পথ। দেশের কৃষিব্যবস্থা আধুনিকায়নের পাশাপাশি দ্রুত শিল্পায়নের দিকেও নজর দিতে হবে। এর জন্য দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও রাজনীতিক সদিচ্ছা।


তাছাড়া শিক্ষিত তরুণদের শুধু চাকরির সোনার হরিণের পেছনে ছোটার মানসিকতা পরিহার করে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজের কথা ভাবতে হবে। যুবসমাজকে বেকারত্বের অভিশাপ ও অপবাদ ঘোচাতে হলে এবং জাতির কাঁধ থেকে বেকারত্বের বিশাল বোঝা নামাতে হলে সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনই জনগণকেও সমবেত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

আমাদের শেষ কথাঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি সম্পর্কে। আমরা এই ব্লগ পোস্টে অনেক সংক্ষিপ্ত ভাবে রচনাটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যাতে আপনাদের মুখস্থ করতে সুবিধা হয় এবং অতিরিক্ত পয়েন্টগুলো উল্লেখ না করে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট টা উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এমন বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url