বিজয় দিবস রচনা - বিজয় দিবস রচনা class 9

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনি কি বিজয় দিবস রচনাটি খুলছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা বিজয় দিবস রচনাটি সম্পূর্ণ তুলে ধরেছি। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি বিজয় দিবস রচনাটি পড়ে উপকৃত হবেন।
বিজয় দিবস রচনা
প্রিয় পাঠক বিজয় দিবস রচনাটি পড়তে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বিজয় দিবস রচনা - বিজয় দিবস রচনা class 9

  • সূচনাঃ বিজয় দিবস রচনা
  • বিজয় দিবসের পটভূমি
  • বিজয় দিবসের তাৎপর্য
  • বিজয় দিবস উদযাপন
  • বিজয় দিবস ও বর্তমান বাস্তবতা
  • উপসংহার

সূচনাঃ বিজয় দিবস রচনা

বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবজনক দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর এই দিনে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ফলে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তাই বিজয় দিবস' আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

বিজয় দিবসের পটভূমি

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে এ উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান নিয়েই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত। কিন্তু শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকবর্গ পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার প্রতি নানাবিধ। শোষণের চক্রান্তে মেতে ওঠে। এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাজনীতি, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদসহ সর্বত্রই প্রচণ্ড বৈষম্যের মধ্য দিয়ে।

অবশেষে ১৯৫২ সালে তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার গভীর চক্রান্তে মেতে ওঠে। তাই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, আযাদসহ অনেকে জীবন দেয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে। শুরু হয় বাঙালির অস্তিত্বের সংগ্রাম স্বাধিকার আন্দোলন।


বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বর্বর হায়েনা পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের ঘুমন্ত-নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মর্মান্তিক আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় বীর বাঙালি।

শুরু হয় এদেশে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা- মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তিসেনাদের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙালি জীবন বিসর্জন দেয়। দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায়। অবশেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সূচিত হয়। এই দিনে ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ঘটে ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় ঘটনা- পাকিস্তানি হানাদার আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য

ত্রিশ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। অনেক রক্ত ও অশ্রুর বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে চলেছে বিজয়ের পতাকা, গাইছে বিজয়ের গৌরবগাঁথা। তাই বিজয় দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি বছর দিনটি পালনের মাধ্যমে বিশ্বকে মনে করিয়ে দিই আমাদের বীর শহিদদের কথা। আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। উদ্বুদ্ধ হই অগ্রগতি আর প্রগতির পথে সোনার বাংলা গড়তে।

বিজয় দিবস উদযাপন

বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয় মহাসমারোহে। এদিন সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজের সাজে। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাড়ির সামনে, স্কুল-কলেজে, এমনকি রিকশার হ্যান্ডেলেও শোভা পায় লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা। প্রতিটি শহরে পরিলক্ষিত হয় উৎসবের আমেজ। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আয়োজন করে গণমুখী নানা অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আবেগে উদ্বেলিত নর-নারী উৎসবের সাজে সেজে সেখানে জমায়েত হন।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বকোষ রচনা

স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই দিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও অন্যরা এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্প অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চট্টগ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ৭ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়।

বিজয় দিবস ও বর্তমান বাস্তবতা

শোষণযুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে আজ ছিন্নভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনেক কিছুই এখন চলে গেছে আড়ালে। স্বাধীনতার শত্রুদের গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছে। গণতন্ত্রের পরিবর্তে বারবার সামরিক শাসন এসেছে। আর্থনীতিক মুক্তি অর্জন এখনও সম্ভব হয়নি। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়েছে পরিত্যক্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা বিভেদ ও সংঘাতে পর্যবসিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিজয় দিবসের তাৎপর্য থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

উপসংহার

'স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন' এই সত্য বাক্যকে বক্ষে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। বিজয় দিবস বাঙালি জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত গৌরবের। দিবসটি আনন্দের হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে শহিদদের স্মৃতি, স্বজন হারানোর আর্তনাদ আর যুদ্ধাহত ও ঘরহারা মানুষের দীর্ঘশ্বাস। দিনটি শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনাকেও শানিত করার দিন।

সূত্রঃ উক্ত রচনাটি ডঃ হায়াৎ মাসুদ এবং ডঃ মোহাম্মদ আমিন এর লেখা পুস্তক থেকে সংগৃহীত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url