হিসাববিজ্ঞান কি - হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
আমরা যারা কমার্সের স্টুডেন্ট রয়েছি তাদের জন্য অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট হচ্ছে হিসাব বিজ্ঞান। তাই হিসাববিজ্ঞান কি এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর এ সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ এই আর্টিকেলে হিসাববিজ্ঞান কি এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনে আলোচনা কর এর উত্তর তুলে ধরা হয়েছে।
আপনি যদি হিসাববিজ্ঞান কি এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর এর
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ হিসাববিজ্ঞান কি - হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
- ভূমিকা
- হিসাববিজ্ঞান কি
- হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
- হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
- হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য
- শেষ কথাঃ হিসাববিজ্ঞান কি - হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
ভূমিকা
হিসাব ও বিজ্ঞান এ দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ হলো হিসাববিজ্ঞান। আভিধানিক অর্থে
হিসাব বলতে ‘গণনা করা” বুঝায়। পক্ষান্তরে, বিজ্ঞান বলতে কোনো বিষয় সম্পর্কে
সুশৃঙ্খল জ্ঞানকে বুঝায়। কাজেই হিসাববিজ্ঞান হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে যে
সকল আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হয় ঐ সকল লেনদেন সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধ করা, ফলাফল
নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করে তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর নিকট প্রতিবেদন আকারে
উপস্থাপনের ব্যবস্থা বিশেষ।
প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ
হিসাব তথ্য জানার জন্য সর্বদাই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। হিসাববিজ্ঞান এই অগ্রহ
পূরণ করার জন্য আর্থিক লেনদেনসমূহ সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে লেনদেনের প্রভাব
ও ফলাফল নির্ণয় করে বিভিন্ন পক্ষকে প্রতিবেদন আকারে অবহিত করে, যা তাদের
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক হয়। হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়ের আর্থিক লেনদেন
লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ ও ব্যাখ্যাকরণের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।
আরও পড়ুনঃ
ফাইবারে কোন কাজের চাহিদা বেশি
যার ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন নির্ণয় করা যায় এবং এ
সংক্রান্ত তথ্যাবলি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে
সহায়তা করে। হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে হিসাবের বিভিন্ন বিবরণী ও
প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়- যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়।
সুতরাং বলা যায়, হিসাববিজ্ঞান হলো আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন পরিমাপক একটি
ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনকারী
লেনদেনসমূহ সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনসমূহ বিশ্লেষণের
মাধ্যমে আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা নিরূপণের জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
হিসাববিজ্ঞান আর্থিক অবস্থানর বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ের
পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে
গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
হিসাববিজ্ঞান কি
হিসাব শব্দের অর্থ- আর্থিক লেনদেনসমূহের গণনা আর বিজ্ঞান বলতে বুঝায় লেনদেনসমূহ
লিপিবদ্ধকরণ, আর্থিক ফলাফল নির্ণয় ও বিচার-বিশ্লেষণে বিশেষ জ্ঞান। অতএব,
হিসাববিজ্ঞান বলতে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের
লেনদেনসমূহের গণনা, হিসাব শ্রেণিবিন্যাস, আর্থিক ফলাফল নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করার
কাজকে হিসাববিজ্ঞান বলে।
আরও পড়ুনঃ
মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, হিসাববিজ্ঞান হলো একটি ব্যাবহারিক জ্ঞান, যা
কোনো বাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লিপিবদ্ধকরণ,
শ্রেণিবদ্ধকরণ, সংক্ষিপ্তকরণ, আর্থিক ফলাফল নির্ণয়, হিসাব বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট
সকলকে তথ্য প্রদান করা বুঝায়। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে হিসাববিজ্ঞান একটি
তথ্যভান্ডার বা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
পৃথিবীতে হিসাববিজ্ঞানের যাত্রা কখন প্রথম শুরু হয় তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে
মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতো-ই হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাস অতি প্রাচীন। বর্তমান যুগের
হিসাববিজ্ঞান শুরুতে এ অবস্থায় ছিল না। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে
বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এই বর্ধিত চাহিদার প্রয়োজনের তাগিদে হিসাব ব্যবস্থাও ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়ে
বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও
হিসাবের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন যে হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি প্রায় চার
হাজার বছর আগে। হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাসকে নিম্নলিখিত চার
ভাগে ভাগ করা যায় :
- আদি যুগ
- তৃতীয় যুগ
- দ্বিতীয় যুগ
- বর্তমান যুগ
- আদি যুগঃ আদি যুগে হিসাব ব্যবস্থার উৎপত্তি শুরু হয়। আদি যুগে মানুষের জীবনযাত্রার পর্যালোচনা করলে হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। মানব সভ্যতার শুরু থেকে ১৪৯৪ সাল পর্যন্ত সময়কে আদি যুগ হিসেবে ধরা হয়। হিসাববিজ্ঞানের আদি যুগকে আবার নিম্নলিখিত চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
- প্রস্তর যুগ
- প্রাচীন যুগ
- বিনিময় যুগ
- মুদ্রা যুগ।
- প্রস্তর যুগঃ এ যুগে মানুষ বনে-জঙ্গলে বা গুহায় বাস করত। তারা ফলমূল সংগ্রহ ও বন্য পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। সে সময় গণনার কাজে তারা পাথর ব্যবহার করত। কে কয়টা পশু শিকার করেছে বা কতটি ফলমূল সংগ্রহ করেছে গুহার অভ্যন্তরে পাথরের সাথে তা দাগ কেটে হিসাব রাখত। মনে করা হয় এ থেকে হিসাব ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা শুরু।
- প্রাচীন যুগঃ এ যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহা ছেড়ে সমভূমিতে বসবাস শুরু করে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে মানুষের সমাজবন্ধ হয়ে বসবাস করার ভিত্তিপ্রস্তর হয় এ যুগে। হিসাবরক্ষণের কৌশলের পরিবর্তনও সূচিত হয় এ যুগে। মানুষ এ যুগে দেয়ালে খোদাই করার পরিবর্তে দেয়ালে দাগ কেটে, রশিতে গিঁট বেঁধে, মাটির টিলা গণনা করে এবং আঙ্গুলের ছাপ রেখে গণনা আরম্ভ করে।
- বিনিময় যুগঃ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য গ্রহণের প্রথা চালু হওয়ায় এ যুগকে পণ্য বিনিময় যুগ বলে। একজন মানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় সবকিছু যোগাড় করা বা উৎপাদন করা অসম্ভব। কাজেই সমাজে শুরু হয় পণ্য দ্বারা বিনিময়ের লেনদেন। বিনিময় যুগে মানুষ দরজার কপাটে বিভিন্ন রঙের দাগ দিয়ে হিসাব রাখত।
- মুদ্রা যুগঃ বিনিময় যুগে দ্রব্য বিনিময় প্রথা মানুষের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হলেও পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতে লাগল। যেমন- একটা গরুর বিনিময়ে কয় কেজি চাল পাওয়া যাবে তা নির্ধারণ করা যেত না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন হয়। তখন বণিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং লিখন ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়। হিসাবরক্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রণালি চালু না থাকায় তখন মানুষ ব্যবসা সংক্রান্ত নানাবিধ তথ্য পশুর চামড়ায় কিংবা গাছের পাতায় নোট আকারে লিখে রাখত। বর্তমানে যা একতরফা দাখিলা পদ্ধতি নামে পরিচিত।
- দ্বিতীয় যুগঃ ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম হতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এ পর্ব বিস্তৃত। এসময় বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার লাভ করে। এ সময় ছাপাখানার প্রচলন হওয়ায় হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের অনেক বই প্রকাশিত হয়। ১৪৯৪ সালে ইতালির ভেনিস শহরে লুকা প্যাসিওলি নামক একজন গণিত শাস্ত্রবিদ তার 'Summa - De Arithmetica Geometrica Proportionet Proportionalita' নামক গ্রন্থে সুত্তরকা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের প্রণালি উল্লেখ করেন। এই সূত্র ধরে বর্তমানে আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছে।
- তৃতীয় যুগঃ ১৮০০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই দেড়শ বছরকে বিশ্লেষণ পর্ব হিসেবে আখ্যা দেয়া যেতে পারে। এ সময়ে যৌথমূলধনী কোম্পানির আবির্ভাব, বৃহদায়তন উৎপাদন, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের জটিলতা, অধিক মুনাফা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন বিশ্লেষণ করা হয়। ১৮০০ সালে আর্থিক হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে। ১৮৮৭ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিসাবরক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য আমেরিকায় বিভিন্ন পেশাদার হিসাব সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
- বর্তমান যুগঃ ১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়কে হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত কাজ ও তত্ত্বের উষায়নের আধুনিক কাল বলে অভিহিত করা হয় । বস্তুতপক্ষে এ পর্বে হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। উৎপাদন ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল হতে থাকে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এসবের প্রভাব অসীম। বর্তমানে হিসাবশাস্ত্র শুধু লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ ও ফলাফল নির্ণয়করণ ছাড়াও সমাজ ও কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রের শিল্প-বাণিজ্যের আর্থিক প্রশাসন ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষভাবে অবদান রাখছে।
এছাড়া বর্তমান শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি কী রকম হওয়া উচিত তা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি প্রচুর সমালোচিত হয়। অপরদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু মুনাফা অর্জনকারী সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, প্রতিষ্ঠানের সামাজিক মূল্যের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে। সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মেষ ঘটে।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে সহজে কাজ করার জন্য এখন কম্পিউটার অগ্রণী ভূমিকা পালন
করে চলেছে। অদূর ভবিষ্যতে হিসাববিজ্ঞান সমাজের আরও অনেক কাজে যথা- জাতীয় আয়
নির্ণয়, সামাজিক উপযোগ নির্ধারণ, মানব সম্পদ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজেও
ব্যবহৃত হতে পারে। জ্ঞান যেমন প্রতিনিয়ত সচল অবস্থায় চলতে থাকে, কোথাও
দাঁড়িয়ে থাকে না, তেমনি হিসাববিজ্ঞানও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নতির
পথে অগ্রসর হবে- এটাই আশা করা যায়।
হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
বর্তমান আধুনিক যুগে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের, সামাজিক জীবনের, অর্থনৈতিক জীবনের
গতি-প্রকৃতি দ্রুত উন্নত হচ্ছে; আর সকল ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যফল নিরূপণ, গতি-
প্রকৃতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে
হিসাববিজ্ঞান নানাভাবে সাহায্য করে। হিসাববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষসমূহকে
আর্থিক তথ্য সরবরাহ করে থাকে তাই হিসাববিজ্ঞানকে বলা হয় আর্থিক তথ্যভান্ডার।
নিম্নে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলোঃ
- স্থায়ী হিসাব সংরক্ষণঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। মানুষের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত সীমিত বলে কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষেই এ সমস্ত লেনদেন দীর্ঘদিন মুখস্থ করে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু লেনদেনগুলো সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই যদি এগুলো হিসাবের বইতে ঠিকমতো রেকর্ড করে রাখা হয় তবে ব্যবসায়ী প্রয়োজনমতো যে কোনো সময় হিসাবের বই খুলে সেগুলো দেখতে পারেন।
- নগদ টাকার অবস্থা অবগত হওয়াঃ হিসাবকালে কত টাকা আদায় হলো, কত টাকা খরচ হলো এবং হিসাবের সমাপ্তি দিনে কত টাকা হাতে রইল ইত্যাকার তথ্যাদি নগদান বই হতে সঠিকভাবে অকাত হওয়া যায়।
- লাভ-লোকসান নিরূপণঃ হিসাবকালে কত টাকা লাভ হয়েছে অথবা কত টাকার ক্ষতি সংঘটিত হয়েছে, বিশদ আয় বিবরণী তৈরি করে তা নিরূপণ করা যায়।
- আর্থিক অবস্থা নিরূপণঃ হিসাবের সমাপ্তি দিনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কী কী সম্পত্তি আছে এবং এদের পরিমাণ কত, মূলধনের পরিমাণ কত- অর্থাৎ এক কথায় কারবারের আর্থিক অবস্থা কিরূপ, আর্থিক অবস্থার বিবরণী তৈরি করে তা নিরূপণ করা যায়।
- পরিকল্পনা ও পরিচালনায় সহায়তাঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং পরিচালনার জন্য যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হয়, হিসাবরক্ষণের মাধ্যমেই সেগুলো পাওয়া যায়।
- সম্পত্তি ও দায়-দায়িত্বের উপর নিয়ন্ত্রণঃ সুষ্ঠুভাবে কারবার চালাবার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান নানাবিধ সম্পত্তি অর্জন ও ভোগ-দখল করে থাকে। আর সম্পত্তি অর্জন করতে গিয়ে কারবারটিকে বড় দায়-দেনার সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য সুষ্ঠুভাবে হিসাবরক্ষণ করলে উপরিউক্ত সম্পত্তি ও দায়-দায়িত্বের সঠিক অবস্থা জানা যায়।
- খরচপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণঃ হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমেই একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়িক দৈনন্দিন অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন এবং যথাসময়ে তিনি তার খরচপত্র সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। একটি কারবার প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন বায় নির্বাহ করতে হয়, পণ্যের উৎপাদন খরচ, বিক্রয় ও কণ্টন খরচ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল বায় সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কারবার প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির দিকে ধাবমান হতে থাকে। সেজন্য একজন দক্ষ হিসাববিজ্ঞানী অপব্যয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেষ্ট হয়।
- জালিয়াতি প্রতিরোধঃ হিসাববিজ্ঞানের আরো একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো, ঠিকমতো হিসাব রাখা হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত অসং কর্মচারীদের পক্ষে ব্যবসায়ের টাকা-পয়সা বা মালামাল তছরুপ করার তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। আর কোনো প্রকারে যদি কোনো কর্মচারী জালিয়াতি করার তেমন কোনো সুযোগ পায়ও তবে হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে পরবর্তীকালে তা সহজেই ধরা পড়ে।
- আয়কর ও বিক্রয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্যতাঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লাভ হলে আয়কর দিতে হয়। অনেক সময় একে বিক্রয়করও দিতে হয়। আয়কর কর্তৃপক্ষ ও বিক্রয়কর কর্তৃপক্ষ কর নির্ধারণ করার সময় স্বীকৃত এবং আইনানুগ নীতি এবং পদ্ধতিমাফিক রক্ষিত হিসাববিজ্ঞানের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। সুষ্ঠুভাবে হিসাব না রাখা ইচ্ছামাফিক কোনো হিসাব তৈরি করলে তারা সেগুলো বিশ্বাস করেন না এবং সেগুলো গ্রহণও করেন না।
- আদালতে প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপনঃ ব্যৱসায় ক্ষেত্রে বাকিতে মালামাল বিক্রয় করা একটা স্বাভাবিক রীতি। অনেক সময় খরিদ্দারদের নিকট বাকিতে মাগ বিক্রয় করে সময়মতো প্রাপ্য টাকা আদায় করা যায় না তখন আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু আদালতের আশ্রয় নিতে হলে তখন বিচারকের নিকট সুষ্ঠুভাবে রক্ষিত হিসাবের খাতাপত্র প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করতে হয়। শৃঙ্খলার সাথে হিসাবপত্র রাখলেই প্রয়োজনের সময় এগুলো প্রমাণস্বরূপ বিচারকের নিকট উপস্থাপন করা যায়।
- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণঃ সঠিকভাবে হিসাব রাখলে ভবিষ্যতে গোটা ব্যবসায় অথবা এর অংশ বিশেষ বিক্রয় করার প্রশ্ন উঠলে তাদের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা অনেকটা সহজসাধ্য হয়।
- দেউলিয়ার সহায়কঃ যথানিয়মে হিসাব রাখলে হিসাবপত্রের বইগুলো দেউলিয়ার (Insolvent) ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়। কারণ হিসাবের বই হতে আদালত দেউলিয়ার বিভিন্ন সম্পত্তি ও সায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলি জানতে পারেন।
- বিরোধ এড়ানোঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি একাধিক হন তাহলে হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। যথানিয়মে হিসাব রাখলে অংশীদারদের মধ্যে সৃষ্ট অনেকঝগড়া-বিবাদ এড়ানো যেতে পারে।
- তুলনামূলক বিচারঃ সুষ্ঠুভাবে হিসাবপত্রের বই রাখা হলে চলতি হিসাবকালের ব্যবসায়িক ফলাফল এবং সম্পত্তি ও দায়সমূহকে পূর্ববর্তী এক বা একাধিক হিসাবকালের অনুরূপ বিষয়ের সাথে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
- আয়-বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তাঃ সঠিক হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির পথ সুগম হয়। কোনো অঞ্চলে কখন বিক্রয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে হিসাবের খাতা হতে তার সত্যতা যাচাই করা যায়। কোনো সময় কোনো অঞ্চলে পরিকল্পিত বিক্রয়ের পরিমাণ হতে প্রকৃত বিক্রয় কম হলে গবেষণা দ্বারা এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়। পরবর্তীকালে সে সমস্ত কারণ বা অসুবিধা দূর করে সংশোধিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কারবারের বিক্রয় বৃদ্ধি পায়। এভাবে প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির পথ সুগম হয়। হিসাবের বাতা হতে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারি বলে পরবর্তী পর্যায়ে সংশোধিত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়।
- হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইঃ হিসাবের খাতা দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় বলে প্রতিটি লেনদেনের যথাযথ বিশ্লেষণ সম্ভব হয়। অর্থাৎ প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট পক্ষ এবং ক্রেডিট পক্ষ নির্ধারণ করা যায়। এভাবে প্রতিটি লেনদেন নির্ভুলভাবে হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ করা যায়। দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী লেনদেন হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ করে শুধু এদের গাণিতিক শুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয় না। হিসাবের খাতায় কোথাও কোনো ভুলত্রুটি হয়ে গেলে পরবর্তী পর্যায়ে রেওয়ামিল প্রস্তুত করে সে সমস্ত ভুল বের করা যায় এবং এদের সংশোধন করা সম্ভব হয়।
- পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির অবসানঃ সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবপত্র তৈরি করা হলে মালিকগণের মধ্যে অথবা মালিক-কর্মচারীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে। যেখানে মুনাফা হতে কর্মচারীদেরকে 'বোনাস' হিসাব করে দিতে হয় সেখানে কারবারের হিসাব খাতা নির্দিষ্ট নীতি-পদ্ধতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করতে হয়। তা হলে মালিক এবং কর্মচারীদের মধ্যে কোনো প্রকার বিরোধ ঘটতে পারে না।
- আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যতাঃ সুষ্ঠু পন্থায় হিসাব রাখা হলে কারবারের ভায়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা রক্ষা পায়। আয় অনুযায়ী বায় করা হলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সফলতা অনিবার।
- হিসাব পদ্ধতিঃ দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি একতরফা দাখিলা পদ্ধতির তুলনায় একটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণাঙ্গ হিসাব ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা সকল প্রকার কারবার প্রতিষ্ঠানের জন্যই মঙ্গলজনক, বিশেষ করে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য।
- বকেয়া আদায় ও দেনা পরিশোধঃ সঠিক হিসাব পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে দেনাদার ও পাওনাদারদের তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় বকেয়া আদায় ও দেনা পরিশোধ উভয় কাৰ্যই যথাসময় সম্পাদন করা সম্ভব হয়। উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটি প্রতীয়মান হয় যে, একটি সুষ্ঠু, নির্ভরযোগ্য এবং পূর্ণাঙ্গ হিসাব ব্যবস্থা একটি কারবার প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য অপরিহার্য।
হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য
সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে তার ব্যবসায়িক ফলাফল জানতে
চায়। কেননা ফলাফল আশানুরূপ না হলে তার কারণ খুঁজে বের করে করণীয় পদক্ষেপ নিতে
হয়। পক্ষান্তরে, ফলাফল আশানুরূপ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে আরো ভালো ফলাফল করা যায়
তার চেষ্টা করতে হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সেই ফলাফল
সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করাই মূলত হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। হিসাববিজ্ঞানের
উদ্দেশ্য প্রধানত নিম্নোক্ত দুভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হলোঃ
- মৌলিক উদ্দেশ্য
- সহায়ক উদ্দেশ্য
মৌলিক উদ্দেশ্য
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত যে অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয় তার সবগুলো মনে
রাখা সম্ভব হয় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য হিসাববিজ্ঞানের একটি প্রধান উদ্দেশ্য
হলো লেনদেনগুলো স্বীকৃত পদ্ধতি মোতাবেক স্থায়ীভাবে হিসাবের বইতে সংরক্ষণ করা।
আর্থিক ফলাফল নির্ণয় ছাড়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অবনতি বুঝা সম্ভব
নয়। আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হিসাববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে ব্যবসায়ের। জন্য
বিশদ আয় বিবরণী তৈরি করা হয়, যা হতে ব্যবসায় লাভ-লোকসান নির্ণয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ
ঘরে বসে ইনকাম করার উপায়
আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা অর্থাৎ সম্পত্তি এবং দায় ও মূলধনের পরিমাণ জানা যে
কোনো ব্যবসায়ের জন্য অপরিহার্য। হিসাবকালের শেষ দিনে আর্থিক অবস্থার বিবরণী
প্রস্তুত করে সম্পত্তি এবং দায় ও মূলধনের চিত্র তুলে ধরা হিসাববিজ্ঞানের
উদ্দেশ্য।
আর্থিক অবস্থার চিত্রকে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং
সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে প্রয়োজনীয় দিক- নির্দেশনা প্রদান করা হিসাববিজ্ঞানের
অপরিহার্য উদ্দেশ্য।
সহায়ক উদ্দেশ্য
ব্যবসায়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যবসায়ীকে অকাত রাখা হিসাববিজ্ঞানের
একটি উদ্দেশ্য। এতে ব্যবসায়ী ব্যবসায়ের সম্পত্তি এবং খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ
রাখতে পারে।
ব্যবসায়ীকে নিট লাভের উপর আয়কর এবং উৎপাদিত পণ্যের উপর বিক্রয় কর ও আমদানি
শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ লক্ষ্যে সঠিকভাবে হিসাবপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে
উল্লিখিত করসমূহ সঠিক মাত্রায় পরিশোধে সহায়তা করা হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য।
বিভিন্ন জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধে হিসাববিজ্ঞান মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিভিন্ন প্রমাণপত্রের আলোকে হিসাবের বইসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ হলে জালিয়াতি ও
প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হয়।
বিভিন্ন পক্ষের নিকট ব্যবসাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হিসাববিজ্ঞানের অপর একটি
উদ্দেশ্য। সরকার, বিনিয়োগকারী, শ্রমিক-কর্মচারী এবং আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট
ইচ্ছামাফিক হিসাব পেশ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য
হিসাববিজ্ঞানের স্বীকৃত নীতি অনুসরণ করে হিসাব রাখতে হয়।
সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের যে সকল অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান জড়িত সেই
প্রতিষ্ঠান; যেমন- স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ক্লাব ও সোসাইটির অর্থের উৎস এবং অর্থ
বায়ের সঠিক হিসাব রাখা এবং আয়-ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করা
হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুনঃ
কিভাবে মেয়েদের প্রশংসা করতে হয়
মূল্যবোধ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যে সকল চিন্তা-চেতনা,
বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা কোনো মানুষ, সমাজ বা দল সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে শেখায় সেই
সকল চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস ও ধ্যানধারণাকে মূল্যবোধ বলে। মূল্যবোধ হলো মানুষের
ইচ্ছা নির্ভর মানদণ্ড যা দিয়ে ভালো ফল বিচার করে ভালোকে গ্রহণ এবং মন্দকে বর্জন
করতে পারে। একবার কারো মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে উঠলে তা আর সহজে পরিবর্তন হয় না।
ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি করা
হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
কোনো প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থার প্রচলন থাকলে অধীনস্থদের
কার্যাবলি মূল্যায়ন করা যায় এবং দায়ী ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।
জবাবদিহিতা হলো নিজের কাজের জন্য তৃতীয় পক্ষের নিকট দায়বদ্ধতা। দায়িত্ব
অনুযায়ী জবাবদিহিতার ব্যবস্থা হিসাব পদ্ধতিতে প্রচলন থাকলে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিবর্গের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়।
শেষ কথাঃ হিসাববিজ্ঞান কি - হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম হিসাববিজ্ঞান কি, হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি
ও ক্রমবিকাশ, হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা সহ আরো ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি উক্ত
আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি খুঁজে পেয়েছেন। আর্টিকেলটি
ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে
কমেন্ট করে জানাবেন। বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট
করুন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করে থাকি।
আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url