বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ - বাংলা নববর্ষ রচনা
আপনি কি বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ খুঁজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। প্রিয় পাঠক আমাদের এই আর্টিকালে বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদটি আপনাদের যেন মুখস্ত করতে সুবিধা হয় তাই খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদটি পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু
করা যাক।
বাংলা নববর্ষ
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বঙ্গাব্দের এই সূচনার দিনটি সারা পৃথিবীর বাঙালির কাছে
খুবই আনন্দের। এটি একটি উৎসবও। এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী
উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল
ঋতুনির্ভর।
এই কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০/১১ই মার্চ
বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে (৫ই
নভেম্বর ১৫৫৬)। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত
হয়। নতুন সনটি প্রথমে 'ফসলি সন' নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত
হয়।
নববর্ষ পালন ঘরে ঘরে আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে হয়ে থাকে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে
হালখাতা অনুষ্ঠান হয় আর এ উপলক্ষ্যে সমস্ত বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলা
কবে থেকে শুরু হয় তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে পহেলা বৈশাখে নানা ধরনের
অনুষ্ঠান, নাচ, গান, থিয়েটার, যাত্রা, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, ম্যাজিক, খেলাধুলা,
সার্কাস ইত্যাদি হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই দিনটি সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি
করে।
বাংলা নববর্ষে ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকে না। সব ধর্মের লোকেরা উৎসবে আনন্দের সাথে
যোগদান করে। এটি বাঙালির ঐতিহ্য হওয়ায় হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান
ইত্যাদি সব ধর্মের মানুষ এই উৎসব পালন করে থাকে। বাংলাদেশে এই উৎসব আড়ম্বর
পরিবেশে পালন করা হয়ে থাকে । এই দিনে বাঙালির কিছু সাধারণ রীতি আছে।
তারা খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠে। তারপর ভালো খাবার গ্রহণ, সুন্দর পোশাক পরিধান এবং
সত্য-সুন্দর বচনে কথা বলা-এভাবেই সারা দিন তারা কাটায়। পুরুষেরা পাঞ্জাবি আর
নারীরা শাড়ি পরিধান করে সারা দিন ঘোরাঘুরি করে। এই দিন নানা ধরনের খাবারের
আয়োজন করা হয়। ছোট ছেলেমেয়েরাও এই দিন খুব আনন্দ করে থাকে। ঢাকা শহরে এই দিনটি
বিশেষ ভাবে পালন করা হয়।
রমনার বটমূলে সবাই আনন্দের সাথে যায়। ছায়ানট ভোর থেকে 'এসো হে বৈশাখ, এসো
হে বৈশাখ' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠান পালন
করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনটি এক বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা আয়োজিত 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থানটি লাভ করে।
পহেলা বৈশাখে বাঙালি তাদের অতীতের সুখ দুঃখ ভুলে গিয়ে নুতনের আহ্বানে সাড়া
দেয়। উদ্দেশ্য থাকে মূলত আনন্দ উপভোগ। এটা মানুষের মধ্যে আন্তরিক প্রীতির সঞ্চার
করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করে। এ দিনটি
আমাদের কাছে মুক্তির বার্তা বয়ে আনে। মানুষের জীবনে হতাশা দূর হয়। এই দিন
মানুষের মাঝে মিলনের বন্ধন সৃষ্টি করে।
তাই তারা পুরনো বছরের জীর্ণতাকে বিসর্জন দেয়, প্রভাতের আলোয় নিজেদের জীবনকে
আলোকিত করার চেষ্টা করে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে শহরবাসী এই দিনটি উপভোগ করে থাকে।
বলা যায়, নববর্ষ বাঙালির মননে অনেক পরিবর্তন সাধন করে। এটাকে নিয়ে বাঙালিরা
গর্ব করে। এ সামাজিক বন্ধনের রীতি অনেক আগে থেকে চলে আসছে।
আগে জমিদাররা তাদের খাজনার টাকা নেওয়ার দিন প্রজাদের নানা ধরনের আপ্যায়নের
বন্দোবস্ত করেন। এটাকে পুণ্যাহ বলে, আবার এই দিন মহাজনরা প্রজাদের সাথে ভালো
ব্যবহার করতেন। এইভাবে এই পহেলা বৈশাখ মানুষের মধ্যে সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন
স্থাপন করেন। এটি মানুসের মনে উদারতা ও সম্প্রীতিবোধ জাগায়। বাঙালি জাতির একটি
সর্বজনীন উৎসব হলো বাংলা নববর্ষ।
এর মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পরিচয় ফুটে ওঠে। বাংলার নববর্ষ উদযাপন বিভিন্ন
আচার-অনুষ্ঠানে সুশোভিত। বাঙালির জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে এসব অনুষ্ঠানের যথেষ্ট
অবদান রয়েছে। এ অনুষ্ঠানগুলো অঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে।
নববর্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষ আশা-আনন্দের স্বপ্ন দেখে। বিচিত্র আশাকে বুকে
ধারণ করে এ দেশের নববর্ষ উদযাপন করে। এই দিন সারা বিশ্বের বাঙালিরা অদৃশ্য সুতোয়
নিজেদের গাঁথে।
আমাদের শেষ বক্তব্য
প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি
বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদটি পরীক্ষায় আসলে এটি লিখে ভালো নম্বর আনতে পারবেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দেবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে
অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন
আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায়
নিচ্ছি। আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url