জাবেদা কাকে বলে - বিশেষ জাবেদা কাকে বলে

হিসাববিজ্ঞান খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট। হিসাব বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাবেদা। আপনি নিশ্চয়ই জাবেদা কাকে বলে এই সম্পর্কে জানতে চান। এই আর্টিকেলে জাবেদা কাকে বলে, বিশেষ জাবেদা কাকে বলে এবং বিভিন্ন প্রকার জাবেদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
জাবেদা কাকে বলে
প্রিয় পাঠক জাবেদা কাকে বলে এই সম্পর্কে আপনি যদি জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ জাবেদা কাকে বলে - বিশেষ জাবেদা কাকে বলে

  • ভূমিকাঃ জাবেদা কাকে বলে
  • জাবেদা কত প্রকার
  • বিশেষ জাবেদা কাকে বলে
  • প্রকৃত জাবেদা কাকে বলে
  • শেষ কথাঃ জাবেদা কাকে বলে - বিশেষ জাবেদা কাকে বলে

ভূমিকাঃ জাবেদা কাকে বলে

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবচক্রের দ্বিতীয় ধাপ বা পর্যায় হলো জাবেদা। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লেনদেন সংঘটিত হওয়া মাত্রই দ্বৈতসত্তায় বিশ্লেষণপূর্বক ডেবিট-ক্রেডিট বিন্যস্ত করে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এর ফলে ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসায়ের প্রতিটি লেনদেন সম্পর্কে ধারণা নিতে পারে এবং লেনদেনের প্রকৃতি জাবেদা থেকে জানতে পারে। জাবেদার ইংরেজি হলো Journal যা ফরাসি Jour শব্দ হতে উদ্ভব হয়েছে। Tour-এর ফরাসি অর্থ হলো দিন।


এ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো "Day Book" বা "হিসাবের দৈনিক বই”। সুতরাং Journal বা জাবেদা হচ্ছে এমন একটি হিসাব বই যেখানে দৈনন্দিন লেনদেনগুলোকে (Day-to-Day transactions) প্রাথমিক পর্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়তই অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক লেনদেনগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো প্রথমে জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় ও পরবর্তীতে সেগুলো খতিয়ানে স্থানান্তর করা হয়।

অর্থাৎ দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনসমূহের প্রত্যেকটিকে সংশ্লিষ্ট দুইটি হিসাব খাতে একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে সমপরিমাণ অর্থে ক্রেডিট বিন্যস্ত করে। সংগঠনের তারিখ ও সাল পরস্পর অনুসারে (Chronologically) সর্বপ্রথমে একটির পর একটি জাবেদায় লেখা হয়। এটি হিসাবের প্রাথমিক বই আবার প্রত্যেকটি লেনদেন কীভাবে সংঘটিত হয়েছে তার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা জাবেদায় লেখা হয়। এর ফলে ব্যবসায়ের সংশ্লিষ্ট সকলেই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করে রাখা প্রতিটি লেনদেনের কি ধরনের ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।


জাবেদা হিসাবরক্ষণের প্রাথমিক বই, যা হতে পাকা বই খতিয়ানে হিসাবসমূহ স্থানান্তর করা হয়। খতিয়ানে হিসাব লেখার কাজ সর্বদাই সম্পূর্ণ, সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। ব্যবসায়ের লেনদেনের হিসাব জাবেনাভুক্ত না করে সরাসরি খতিয়ানে লেখা হলে সম্পূর্ণ, সংক্ষিপ্ত ও নির্ভুল হিসাব সংরক্ষণে অসুবিধা দেখা দেবে এবং খতিয়ান হিসাে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এসকল অসুবিধা দূর করার জন্য ভালোভাবে খতিয়ান হিসাব সংরক্ষণের জন্য জাবেদার প্রয়োজন পড়ে।

হিসাবরক্ষণের জাবেদার প্রয়োজনীয়তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  1. লেনদেনের প্রাথমিক ও স্থায়ী দলিলপত্রঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনগুলো তারিখের ক্রমানুসারে জাবেদায় প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে এটি দু'পক্ষের মধ্যে স্থায়ী দলিল হিসাবে সংরক্ষিত হয়।
  2. লেনদেনের বিস্তৃত, পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য কেন্দ্রঃ বর্তমান যুগের বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার অসংখ্য লেনদেন সরাসরি খতিয়ানে লিখতে গেলে ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিনকার লেনদেন প্রতিদিন অবিকলভাবে ব্যাখ্যাসহ জাবেদায় লেখা হয়ে থাকে। পরবর্তী ধাপে লেনদেনসমূহকে জাবেদা হতে খতিয়ানে স্থানান্তরিত করা হয়। এর ফলে হিসাব লিখনে ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং খতিয়ান বইটি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে। 
  3. লেনদেনের সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণঃ জাবেনায় লেনদেনগুলোকে তারিখ অনুযায়ী সাজিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। লেনদেনগুলো যেদিন সংঘটিত হয় সেদিনই পর পর সাজিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে, প্রত্যেক দিনের লেনদেনের সংখ্যা এবং অর্থের পরিমাণ জানা যায়।
  4. ভবিষ্যৎ রেফারেন্সঃ মানুষের স্মৃতিশক্তি দ্বারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অগণিত লেনদেন, এদের ধরন এবং কারণ মনে রাখা সম্ভব নয়। জাবেদায় এগুলো সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। ভবিষ্যতে লেনদেন সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য জাবেনা বই হতে পাওয়া যায়। এর ফলে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে জাবেদা ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসাবে কাজ করে।
  5. লেনদেন বাদ পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস করেঃ ব্যবসায়ে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে জাবেদায়ন করা হয়। যার ফলে লেনদেন বাদ পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
  6. ভুল সংশোধনঃ লেনদেনগুলো জাবেদায় লিপিবদ্ধ করে খতিয়ানে স্থানান্তর করার ফলে যদি কোনো তথ্যে ভুল হয় তাহলে অতি সহজে সংশোধন করা যায়।
  7. পরিচ্ছন্ন খতিয়ানঃ লেনদেনসমূহকে দ্বৈতসত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ জাবেদাভুক্ত করার পর একই লেনদেনের দ্বৈত ফলাফল দুটি পৃথক খতিয়ানের সংক্ষিপ্তাকারে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে খতিয়ান হয় নির্ভুল, পরিচ্ছন্ন ও সংক্ষিপ্ত।
  8. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্যের আদি উৎসঃ জাবেদায় কারবারের লেনদেন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ হওয়ায় ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণকার্যে সহায়ক সর্বোত্তম তথ্য জাবেদা থেকে পাওয়া যায়।
  9. ফলাফলঃ খতিয়ান প্রস্তুত করার অন্যতম সহায়ক হলো জাবেদা। তাই জাবেদার সাহায্যে খতিয়ান প্রস্তুত করে প্রত্যেক হিসাবের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ণয় করা যায়।
  10. জালিয়াতি হ্রাসঃ লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় বলে জালিয়াতি করা যায় না। জালিয়াতি হলেও উদ্ঘাটন করা যায়।
  11. খতিয়ানে স্থানান্তরঃ জাবেদায় লেনদেনগুলোকে ডেবিট-ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে লেখার ফলে হিসাবের পাকা বই বা খতিয়ানে স্থানান্তর সহজ হবে।
  12. ধারাবাহিকতা রক্ষাঃ জাবেদাকে কালানুক্রমিক হিসাবের বই বলা হয়। কারণ তারিখ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে জাবেদায় লেনদেনসমূহকে লিপিবদ্ধ করা হয় বলে প্রয়োজনে লেনদেনের তারিখ সম্পর্কে জানা যায়।
  13. হিসাবের শুদ্ধতা যাচাই ও চূড়ান্ত হিসাব প্রণয়নে সহায়তাঃ লেনদেনগুলো জাবেদা হতে হিসাবের খাতায় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করার পর তার জের বা ব্যালেন্সগুলো দ্বারা রেওয়ামিল প্রস্তুত করে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়। রেওয়ামিল প্রস্তুত করার পর ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য চূড়ান্ত হিসাব অর্থাৎ বিশদ আয় বিবরণী ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা যায়।
  14. খাতাপত্র ব্যবহারের সুবিধাঃ জাবেদা বইকে কাজের প্রকৃতি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন সহকারী বইতে বিভক্ত করা হয় বলে ঐ সহকারী বইগুলো ব্যবহার করা সুবিধা হয়।
  15. দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগঃ প্রত্যেকটি লেনদেনকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে একটি পক্ষকে ডেবিট এবং অন্য পক্ষকে সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা ক্রেডিট করে লিপিবদ্ধ করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই মোট ডেবিট-ক্রেডিট টাকার পরিমাণ সমান হয় এবং ব্যবসায়ী সংগঠিত সকল লেনদেনের পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে জানা যায়।
উল্লিখিত আলোচনা হতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, কারবারি জগতে জাবেদার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বলা বাহুল্য। সঠিকভাবে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য জাবেদার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।

জাবেদা কত প্রকার

জাবেদা হচ্ছে হিসাবের প্রাথমিক বই। প্রতিটি ব্যবসায়ের লেনদেন বা ঘটনা একসাথে সংগঠিত হয়ে থাকে। ব্যবসায় সংগঠিত লেনদেনেরই শুধু জাবেদা করা হয়ে থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর হিসেবের ডেবিট ক্রেডিক নির্ণয় করার পর তারিখ সহ যে প্রাথমিক বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলে। জাবেদা সাধারণত দুই প্রকার একটি হচ্ছে বিশেষ জাবেদা এবং আরেকটি হচ্ছে প্রকৃত জাবেদা।

বিশেষ জাবেদাকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে এগুলো হলোঃ
  1. ক্রয় জাবেদা
  2. বিক্রয় জাবেদা
  3. ক্রয় ফেরত জাবেদা
  4. বিক্রয় ফেরত জাবেদা
  5. নগদ প্রাপ্তি জাবেদা
  6. নগদ প্রদান জাবেদা
প্রকৃত জাবেদাকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে এগুলো হলোঃ
  1. সংশোধনী জাবেদা
  2. সমন্বয় জাবেদা
  3. সমাপনী জাবেদা
  4. প্রারম্ভিক জাবেদা
  5. অন্যান্য জাবেদা

বিশেষ জাবেদা কাকে বলে

অন্য ব্যবসায় লিপ্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিয়ত যে সমস্ত বিশেষ ধরনের লেনদেন যেমন ক্রয়, বিক্রয়, নগদ প্রদান, নগদ প্রাপ্তি, ক্রয় ফেরত বিক্রয় ফেরত ইত্যাদি সংগঠিত হয় সেগুলো বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে যে জাবেরায় লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বিশেষ জাবেদা বলে। বিশেষ জাবেদাকে ৬ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। নিচে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  1. ক্রয় জাবেদাঃ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ধারে পণ্য ক্রয় করা হলে যে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তাকে ক্রয় জাবেদা বলে। বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য নগদে ক্রয় ও ধারে ক্রয় উভয় হতে পারে। নগদে অথবা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সম্পত্তি ক্রয় করা হলে তা ক্রয় জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না। অন্যভাবে বলা যায়, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ধারে ক্রয় ব্যতীত অন্য কোনো ধরনের ক্রয়, ক্রয় জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয় না।
  2. বিক্রয় জাবেদাঃ শুধু ধারে পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন বিক্রয় জাবেনায় লিপিবদ্ধ করা হয়। নগদে পণ্য বিক্রয় অথবা নগদে বা ধারে সম্পত্তি বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন এই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না। ক্রয় জাবেলার মতো বিক্রয় জাবেদাও চালানের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়।
  3. ক্রয় ফেরত জাবেদাঃ ক্রয়কৃত পণ্য ত্রুটিপূর্ণ হলে, নির্ধারিত মূল্য ও ফরমায়েশ অনুযায়ী না হলে অথবা অন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে ক্রয়কৃত পণ্য বিক্রেতার নিকট ফেরত পাঠানো হলে তার জন্য যে জাবেদা লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে ক্রয় ফেরত জাবেদা বলে। নগদে ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত দেয়া হলে তার জন্য এ জাবেনা তৈরি করা হয় না। পণ্য ক্রয় করার সময় কারবারি বাট্টা বাদ দেয়া হলে পণ্য ফেরতের সময়ও মোট মূল্য থেকে কারবারি বাট্টা বাদ দিয়ে জাবেদা প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয়। পণ্য ফেরত পাঠানোর জন্য ক্রেতা একটি ডেবিট নোট প্রস্তুত করে এবং বিক্রেতার নিকট প্রেরণ করে। অতঃপর ক্রয় ফেরত জাবেদা প্রস্তুত করে।
  4. বিক্রয় ফেরত জাবেদাঃ বিক্রয়কৃত পণ্য ত্রুটিপূর্ণ হলে, ফরমায়েশ অনুযায়ী না হলে অথব অন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে ক্রেতার নিকট হতে পণ্য ফেরত আসলে উক্ত লেনদেন যে বিশেষ জাবেদায় লেখা হয় তাকে বিক্রয় ফেরত জাবেদা বলে। শুধু মাত্র ধারে বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত আসলেই এই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পণ্য বিক্রয়ের সময় যদি কারবারি বাট্টা বাদ দেয়া থাকে তাহলে বিক্রয় ফেরত লিপিবদ্ধ করার সময়ও মোট মূল্য থেকে কারবারি বাট্টা বাদ দেয়ার প্রয়োজন হয়। বিক্রেতা ক্রেতার ফেরতকৃত পণ্য বুঝে পেয়েছে এবং তাদের হিসাবকে ক্রেডিট করা হয়েছে এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্রেডিট নোট প্রস্তুত করে এবং তা ক্রেতার নিকট প্রেরণ করে। অতঃপর ফেরত পণ্যের লেনদেনটি বিক্রয় ফেরত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করেন।
  5. নগদ প্রাপ্তি জাবেদাঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট নগদ আন্তঃপ্রবাহ জানার উদ্দেশ্যে সকল নগদ ও নগদ সমতুলা প্রাপ্তির লেনদেন নিয়ে যে জাবেদা প্রস্তুত করা হয় তাকে নগদ প্রাপ্তি জাবেদা বলে। উৎপাদনকারী ও ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অথবা পেশাদারি প্রতিষ্ঠান উভয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রাপ্য হিসাব বা দেনাদারের নিকট হতে টাকা আদায় হয়। নগদ প্রাপ্তির প্রধান উৎস পেশাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সেবা আয় এবং উৎপাদনকারী ও ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের জন্য নগদ বিক্রয় এগুলো ছাড়াও নগদ প্রাপ্তির আরও উৎস হলো মূলধন বাবদ মালিক থেকে নগদ প্রাপ্তি, ঋণগ্রহণ, নগদে সম্পত্তি বিক্রয়, সুদ, কমিশন ও লভ্যাংশ বাবদ নগদ প্রাপ্তি।
  6. নগদ প্রদান জাবেদাঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট নগদ বহিঃপ্রবাহ জানার উদ্দেশ্যে সকল নগদ ও নগদ সমতুল্য প্রদানের লেনদেন লিপিবদ্ধ করার জন্য যে জাবেদা প্রস্তুত করা হয়, তাকে নগদ প্রদান জাবেদা বলে। বিভিন্ন প্রয়োজনে নগদ অর্থ প্রদান করতে হয়, সে কারণে নগদ প্রদান জাবেদাও বহুঘর বিশিষ্ট হয়ে থাকে। নগদ প্রদানের উদ্দেশ্যগুলো বিশ্লেষণ করে তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি দাখিলা সাধারণত নগদ প্রদান জাবেদায় দেয়া হয়।

প্রকৃত জাবেদা কাকে বলে

কোনো একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান প্রকৃত জাবেদায় কোন লেনদেন লিপিবদ্ধ করবে তা চূড়ান্তভাবে বলা যায় না। কারণ, বিশেষ জাবেদা রাখার ব্যাপারে কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। এক একটি প্রতিষ্ঠান তাদের লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জাবেদার শ্রেণিবিভাগ ব্যবহার করে লেনদেন লিপিবদ্ধ করার পরও তার বাইরে যে সকল লেনদেন থাকে ঐ সকল লেনদেন সাধারণত প্রকৃত জাবেদায় লেখা হয়। এ লেনদেনগুলোকে তাদের বিশেষ প্রকৃতির জন্যও কোনো জাবেদার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয় না। একটি প্রতিষ্ঠান প্রকৃত জাবেদায় সাধারণত যে সমস্ত বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয় তা লিখে উল্লেখ করা হলোঃ
  1. প্রারম্ভিক দাখিলাঃ প্রতিষ্ঠানের শুরুতে আনীত পূর্ববর্তী হিসাব সময়ের সম্পত্তি ও দায়সমূহ বর্তমান বছরে আনার জন্য যে দাখিলা দেয়া হয় তাই প্রারম্ভিক দাখিলা ।
  2. সমাপ্তি দাখিলাঃ চূড়ান্ত হিসাব তৈরির সময় ব্যবসায়ের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবসমূহের সমষ্টি বা জের প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে আয় বিবরণীতে স্থানান্তর করে উক্ত হিসাবসমূহে সমাপ্তি টানা হয়। সমন্বয়
  3. ভুল সংশোধনী দাখিলাঃ হিসাবে কোনো ভুলত্রুটি দেখা দিলে তা যে দাখিলার মাধ্যমে করা হয় তাকে ভুল সংশোধনী দাখিলা বলে। উক্ত দাখিলা প্রকৃত জাবেদায় দেখানো হয়।
  4. স্থানান্তর দাখিলাঃ এক হিসাব হতে অন্য হিসাবে স্থানান্তরের জন্য যে দাখিলা দেয়া হয় তাকে স্থানান্তর দাখিলা বলে। এ ধরনের স্থানান্তর দাখিলা প্রকৃত জাবেদায় দেখানো হয়।
  5. সমন্বয় দাখিলাঃ আর্থিক বিবরণী তৈরি করার সময় প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে সমন্বয় দাখিলা দ্বারা অলিখিত হিসাবগুলোর সমন্বয় সাধন করা হয়।
  6. বিলের প্রত্যাখ্যানজনিত দাখিলাঃ দেনাদার কর্তৃক প্রদত্ত প্রাপ্য বিল ও পাওনাদারের নিকট ইস্যুকৃত প্রদেয় লেনদেনসমূহ প্রকৃত বা সাধারণ জাবেদায় লেখা হয়।
  7. বিপরীত দাখিলাঃ একই হিসাবের একদিক হতে অন্যদিকে স্থানান্তরের জন্য যে দাখিলা প্রদান করা হয় তাকে পাল্টা দাখিলা বলে। বিগত বছরের সমন্বয়গুলোর চলতি হিসাব বছরে সমাপ্ত করার জন্য বিপরীত দাখিলার প্রয়োজন হয়।
  8. অন্যান্য দাখিলাঃ উপরোক্ত দাখিলা ছাড়াও ধারে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং মালিক কর্তৃক ব্যবসায় হতে পণ্য গ্রহণের দাখিলা প্রকৃত জাবেদায় লেখা হয়।

শেষ কথাঃ জাবেদা কাকে বলে - বিশেষ জাবেদা কাকে বলে

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম জাবেদা কাকে বলে, জাবেদা কত প্রকার, বিশেষ জাবেদা কাকে বলে, প্রকৃত জাবেদা কাকে বলে ইত্যাদি । আশা করি উক্ত আর্টিকেলটির মাধ্যমে জাবেদা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে। পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।আমরা নিয়মিত নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিক করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি।আমাদের সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ। আরও পড়ুনঃ হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url