বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। বাংলা পাঠ্যসূচির অন্যতম অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা। আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পূর্ণ বিস্তারিত ভাবে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেছি এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরেছি।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনাটি পড়ে পরীক্ষায় ভালো নম্বর
আনতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা
- ভূমিকা
- পর্যটনের পরিচয়
- বাংলাদেশের আর্থনীতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও অবদান
- বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সম্ভাবনা
- পর্যটন কেন্দ্রগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকারি উদ্যোগ
- উপসংহার
ভূমিকা
পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের এক সম্ভাবনাময় খাত। এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক
দৃশ্য এবং জনগণের উদার আতিথেয়তা এ শিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। অথচ এ শিল্পের
আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। কিন্তু পর্যটন শিল্পে এদেশে অসংখ্যবেকারের কর্মসংস্থান হতে
পারে। অর্থনীতির ধারণা পালটে যেতে পারে।
পর্যটনের পরিচয়
পর্যটন বিষয়বস্তুর ধারণা অনেক প্রাচীন। প্রাচীনকালে মার্কোপোলো, ইবনে বতুতা,
ফাহিয়েন, হিউয়েন সাং-সহ বিশ্ববিখ্যাত পর্যটকরা ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে আছেন। সে
সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব কষ্টকর ও দুর্গম থাকা সত্ত্বেও ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে
বেড়িয়েছেন দেশে দেশে। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি এসব বিখ্যাত পর্যটকের অনেকেই
এ উপমহাদেশে এসেছিলেন। আজ পর্যটনের যে ধারণা পৃথিবীব্যাপী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তা
মূলত তখনকার ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশের আর্থনীতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও অবদান
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। খাতটি
নানাভাবে এদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ শিল্পের
অবদান অতুলনীয়। পর্যটন কর্পোরেশন মুনাফা অর্জনকারী সংস্থার মধ্যে একটি। বাংলাদেশ
পর্যটন কর্পোরেশন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে
মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ১৯৭৪ সালে জাতীয় হোটেল এবং পর্যটন প্রশিক্ষণ
ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। এ পর্যন্ত এখানে পরিচালিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে
কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই
দেশ-বিদেশে কর্মরত আছে।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশ প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজরাজড়াদের
পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দারুণভাবে উন্নতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের
প্রাচীন ঐতিহ্য মসলিন। পৃথিবীব্যাপী এদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সূক্ষ্ম বস্ত্র
মসলিনের মাধ্যমে। দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে
এদেশের আর্থিক সমৃদ্ধি এনেছে।
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা বর্তমান। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো
ম্যানগ্রোভ বন (সুন্দরবন) রয়েছে বাংলাদেশে, যা বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণে রাখতে
পারে ব্যাপক ভূমিকা। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। ছাপ্পান্ন হাজার
বর্গমাইলের আমাদের দেশটি যেন প্রাকৃতিক এক মিউজিয়াম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর
দৃষ্টিনন্দন এদেশটি যুগে যুগে তাই অনেক কবি-লেখক তৈরিতে সহায়ক হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা
বাংলাদেশের অনুপম নিসর্গ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পর্যটন শিল্প প্রসারের অনন্য
উপাদান। এ অনুপম নৈসর্গিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। উপভোগের জন্য বাংলাদেশ যুগে
যুগে হাতছানি দিয়েছে কাছের ও দূরের ভ্রমণ পিপাসুদের। তারা অবাক হয়ে এদেশের
নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। অনেকেই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় প্রশস্তি
গেয়েছেন বাংলাদেশের মনোলোভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের। তাই বাংলাদেশের রূপে মুগ্ধ
একজন পর্যটক বলেছেন- বাংলাদেশে প্রবেশের হাজার দুয়ার খোলা রয়েছে কিন্তু বেরুবার
একটিও নেই।
প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশে উৎসাহজনকহারে বিদেশি পর্যটক এবং পর্যটন খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়
পর্যায়ক্রমে বেড়ে চলেছে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'দ্য নিউ
সেভেন ওয়ান্ডার্স কাউন্ডেশন' অনলাইনে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন
প্রতিযোগিতায় শীর্ষ দশ স্থানের মধ্যে স্থান করছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত
'কক্সবাজার' ও বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট 'সুন্দরবন'।
পর্যটন কেন্দ্রগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকারি উদ্যোগ
দেশের পর্যটন শিল্পকে গতিশীল ও আকর্ষণীয় করার জন্য এবং স্থানীয় পর্যটন
কেন্দ্রগুলো সুপরিচিত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার এক্সকুসিভ জোন করার
পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আগামী ২০২১ সালের মায় দেশের পর্যটন শিল্পকে পূর্ণাঙ্গ
রূপ দেওয়ার জন্য একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর
উন্নয়নে সরকার প্রক্ষেপ নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ
অধ্যবসায় রচনা
ইনানী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পাশাপাশি সেন্টমার্টিন
দ্বীপের উন্নয়নে মাল্টার প্লানের কাজ চলছে। কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের রাজঘাট
উন্নয়নের জন্য ওই এলাকাকে পৌর এলাকা ঘোষণাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের পর্যটন শিল্প বিপুল
সমৃদ্ধি বয়ে আনবে ।
উপসংহার
পর্যটন শিল্প এক অভাবিত উন্নয়নের সোপান। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত
করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি
উদ্যোগে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারি। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এদশের
পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এটাই আজকের প্রত্যাশা।
নোটঃ রচনা টি নবম দশম-শ্রেণীর প্রমিত বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত বই হতে সংগৃহীত
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url