তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
প্রিয় পাঠক আপনি কি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমরা আমাদের এই ব্লগ পোস্টে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল সহ আরো ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার সহ তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো বিভিন্ন তথ্য জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকন তাহলে আমাদের ব্লগ
পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
- ভূমিকা
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা ব্যাখ্যা কর
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার
- শেষ কথাঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্ব এত উন্নত হয়ে উঠেছে যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজেই তথ্য
ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে
আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে আগের থেকে অনেক সহজ এবং উন্নত। বর্তমান সময়ে তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে না এমন কোন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ খোলার নিয়ম
একবার কল্পনা করলে পারবেন সকালে ঘুম ভাঙ্গা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে সমস্ত
কার্যক্রম করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আমরা সকলেই তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
করে থাকি। আর যদি আমাদের মাঝে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যে অনুপস্থিত থাকতো তাহলে
স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত।এটি আমাদের জীবন যাপনের
উন্নতির পাশাপাশি কোন বিশ্বের জাতিসমূহের সহযোগিতা প্রদান সহ আমাদেরকে পরিচয়
করিয়ে দিয়েছে একটি আধুনিক বিশ্বের সাথে।
সময়ের সাথে সাথে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আরো উন্নত হচ্ছে এবং এর ব্যবহার ও
ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, যোগাযোগ, সৃজনশীলতা এবং
বিনোদন সহ ইত্যাদি তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে। তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি বর্তমানে আমাদের জীবনে মানসম্পন্ন কর্ম সম্পাদনের একটি শক্তিশালী
হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মূলত এমন এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা কে বোঝায় যা
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তৎসম্পর্কিত এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার, মিডলওয়্যার তথ্য
সংরক্ষণ এবং ভিডিও-অডিও ইত্যাদি সিস্টেমের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা
যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীগন খুব সহজেই তথ্য বিশ্লেষণ, তথ্য সঞ্চালন, তথ্য সংরক্ষণ,
তথ্য গ্রহণ, তথ্য স্থানান্তর, একাকীকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, এক ডেটা অন্যের কাছে
স্থানান্তর করতে পারে। এ সকল প্রক্রিয়াকে একত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা
হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ পিসির জন্য সেরা ৫টি স্ক্রিন রেকর্ডার
প্রযুক্তিতে আইসিটি শব্দ অর্থাৎ যার পূর্ণরূপ হচ্ছে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন
টেকনোলজি এ শব্দটি ১৯৮০ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। ওই সময় এটি তেমন জনপ্রিয়
ছিল না তবে ১৯৯৭ সাল থেকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমান সময়ে
কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি সহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে আইসিটি কাজ
সম্পন্ন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের
জীবনযাত্রাকে গড়ে তুলেছে আগের থেকে আরো সহজতর এবং আরো উন্নত। আজকে ইন্টারনেটের
মাধ্যমে পুরো বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটা মুহূর্তেই
প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে সব উন্নত টেকনোলজি আমাদের পুরো জগৎটাকেই
পাল্টে দিয়েছে।
এক সময় যা স্বপ্ন ভাবা হতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা আজ বাস্তবে
পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই তথ্যযুগে ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ইত্যাদি
সকল ক্ষেত্রেই তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো লক্ষ্য করলে
দেখতে পাবেন তাদের মাঝে প্রযুক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশও আজ ধীরে ধীরে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত
হয়েছে এসবই সম্ভব হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির দ্বারা। আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর
পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিশেষ দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন কেননা প্রযুক্তিগত
বিষয়ে ভালো জ্ঞান না থাকলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলা
অসম্ভব।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
বর্তমান বিশ্বে যতগুলো ক্ষেত্রে রয়েছে সবগুলো ক্ষেত্রেই প্রায়ই তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। সবগুলো ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয় তাই আমরা
আপনাদের মাঝে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য ১০ টি ব্যবহার তুলে করেছি
এবং সকল কিছু অনেক সহজ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি যাতে আপনার বুঝতে কোনো
রকম সমস্যা না হয়। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
দশটি ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
১) চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে আসছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে চিকিৎসা খাতকে পরিবর্তন করে
আরো উন্নত করে তুলেছে। এমন এক সময় ছিল যে সময় এক্স-রে, ই সি জি,
আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি করার কোনো রকম প্রযুক্তি ছিল না।
চিকিৎসকরা নিজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে রোগীদেরকে চিকিৎসা প্রদান করত। কিন্তু
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ সনাক্ত করার মাধ্যমে
রোগীদেরকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। মায়া অ্যাপের নাম হয়তো অনেকেই শুনেছেন
এই অ্যাপটিতে বিনা খরচে চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এছাড়াও বর্তমানে ইউটিউব
ব্যবহার করে বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ শুনে নিজেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা
যাচ্ছে।
কোন ঔষধের প্রয়োজন হলে ঘরে বসেই আরোগ্য এক ব্যবহার করে যেকোনো ওষুধ সংগ্রহ করা
যাচ্ছে।পেছনে খেয়াল করলে দেখা যায় আগের থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্র কতটা উন্নত
হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্বারা। তাই বলা বাহুল্য যে
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
২) শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
ব্যবহারঃ
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যমে প্রতিটা ক্লাসরুমে নিয়ে আসা
হয়েছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে সিসি
ক্যামেরা। একসময় কালো বোর্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদেরকে শিক্ষা প্রদান
করা হতো কিন্তু বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা
করা হচ্ছে এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। শিক্ষা
ক্ষেত্রে বর্তমানে সমস্ত কার্যক্রম প্রায়ই অনলাইনে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া, এডমিশন ফর্ম পূরণ, কলেজ চয়েজ দেওয়া, ডিজিটাল আইডি
কার্ড তৈরি ইত্যাদি সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান
সময়ে ভিড়ের মধ্যে রেজাল্ট না দেখে খুব সহজেই ঘরে বসে পরীক্ষার রেজাল্ট দেখা
যাচ্ছে। এ ছাড়াও আরো রয়েছে অনলাইন কোর্স, স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা
দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি ক্লাসরুমে প্রায় মাল্টিমিডিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে
প্রজেক্টর, কম্পিউটার, লাউড স্পিকার, মাইক্রোফোন ইত্যাদি। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার
করে ছাত্রীদের কোন কিছু প্র্যাকটিক্যালি খুব সহজেই বোঝানো সম্ভব হয়ে উঠেছে।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের ছবি, ভিডিও,
অ্যানিমেশন, সাউন্ড ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সবকিছু শিক্ষা দিয়ে থাকেন
এবং শিক্ষার্থীরাও আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য
ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান অতুলনীয়।
৩) ব্যাংকিং ক্ষেত্রে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে গ্রাহকদের অনেক সহস্তর এবং উন্নত করে
তুলেছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাপ এর মাধ্যমে তাদের সেবা প্রদান করে
থাকে। নগদ, বিকাশ, রকেট তাদের মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গুলোর ব্যবহার ব্যাপক হারে
বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে আগে নির্দিষ্ট ব্যাংকে যে টাকা উত্তোলন
করা লাগতো কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন স্থানে এটিএম বুথ
রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই টাকা উত্তোলন করে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ফাইবারে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি
এছাড়াও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনলাইন এর মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন সেবা
প্রদান করে আসছে। এখন ঘরে বসে অ্যাপ বা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে টাকা উত্তোলন বা ডিপোজিট করা যাচ্ছে। তবে সবগুলো
ব্যাংকেই অ্যাপের সেবাটি চালু হয়নি কিন্তু আশা করা যায় খুব শীঘ্রই আমরা প্রতিটা
ব্যাংকেই অ্যাপ এর সেবাটি ব্যবহার করতে পারব।
৪) কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি কাজ হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে অনেক সহজ।
বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের বেশি কাজের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে প্রযুক্তি। আগে জমি
চাষ করতে লাঙ্গল এবং গরু ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি কৃষি
ক্ষেত্রে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে খুব
সহজেই জমি চাষ করা যাচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মরা কৃষিতে আগ্রহী ছিল না কিন্তু বর্তমানে কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির
ব্যবহার এবং আধুনিকায়ন যন্ত্র যুক্ত হওয়ার ফলে তাদের এখন কৃষির প্রতি ধীরে ধীরে
আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ পানি সেচ দেওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের অনুপস্থিতিতেও
জমিতে সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া হয়ে যায়।
ফসলে কোন প্রকার রোগ ব্যাধি জন্মালে একসময় ধারণার উপর ভিত্তি করে ঔষধ প্রয়োগ
করা হতো যার ফলে অনেক জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিত। কিন্তু
বর্তমানে সবকিছু প্রযুক্তি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে ফসলের সঠিক ঔষধ
প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কৃষিভিত্তিক কোন ধরনের তথ্য জানতে ইন্টারনেটের
মাধ্যমে সকল তথ্য খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায়। সবকিছুর উপর ভিত্তি করলে দেখা যায়
কৃষিক্ষেত্রে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অনাবিল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
৫) ব্যক্তি বা সামাজিক কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
এমন এক সময় ছিল যে সময় চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হতো। কিন্তু
বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে কারো সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি
ব্যবহার করে তা যে কোন সময়ই করতে পারে। এখন প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল
মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন facebook, instagram, whatsapp ইত্যাদি ব্যবহার করে
চাইলে অনেক জনের সাথে একসাথে কথা বলতে পারে।বর্তমান সময়ে বিনোদনের জন্য গেম
খেলা, গান শোনা, মুভি দেখা ইত্যাদি ঘরে বসেই করা যায়।
এখন কোন কিছু খেতে মন চাইলে অনলাইন এর মাধ্যমে অর্ডার করে ঘরে বসেই ডেলিভারি
পাওয়া যায়। আগে মানুষ কাগজের পত্রিকা ক্রয় করে পড়তো কিন্তু বর্তমান সময়ে
হাতে থাকা মোবাইলে যে কোন সময় যেকোনো সংবাদ ইচ্ছামত পড়া যায়। তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ব্যক্তি ব্যক্তি বা সামাজিক কাজের ক্ষেত্রে চারিদিক থেকে জড়িয়ে আছে।
সকালে ঘড়ির অ্যালারামে ঘুম ভাঙ্গা ভেঙে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আমরা
প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকি। প্রযুক্তির সাথে আমাদের বসবাস।
৬) গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
আজ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি যতটা উন্নত হয়েছে তার সবই গবেষণার ফল। তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি নিয়ে যদি কোন বিজ্ঞানী গবেষণা না করতো তাহলে আমরা কখনো প্রযুক্তিই
পেতাম না। আমাদের জীবন যাত্রার মান এত আধুনিক বা উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্নও হতো
না। আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে গড়ে তোলার অন্যতম একটি ক্ষেত্র হচ্ছে গবেষণা।
বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কার থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু তৈরি হয়েছে গবেষণার
মাধ্যমে। বর্তমানে আমরা ঘরে বসে পৃথিবীর বাইরের খবর জানতে পারছি এটি একমাত্র
সম্ভব হয়েছে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা এবং উন্নত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোন তথ্য যেকোনো সময় খুঁজে পাচ্ছি। প্রতিটি গবেষণার
ফলাফল আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে পেয়ে থাকি তাই উপরের আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা
যায় যে গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
৭) পরিবেশ ও আবহাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আগে থেকেই আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত হতে পারছি।
আগামী দিন রোদ হবে নাকি বৃষ্টি হবে তা দুইদিন আগে থেকেই জেনে নিতে পারছি। যারা
উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাস করে তাদের জন্য আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোথায় কার আবহাওয়া
কেমন। আগে থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যায় ফলে উপকূলবর্তী এলাকার
মানুষদেরকে আগে থেকে বিপদ সংকেত দেওয়ার মাধ্যমে সতর্ক করা সম্ভব হয়।
৮) প্রচার এবং গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
ব্যবহারঃ
বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার এবং গণ মাধ্যম ব্যবস্থা আরো
উন্নত হয়ে উঠেছে। একসময় আমরা এক স্থানে থেকে আরেক স্থানের খবর জানতে পেতাম না
একটু বর্তমানে কোন জায়গায় কিছু ঘটার সাথে সাথে তা খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে জেনে নিতে পারছি।
প্রচার ব্যবস্থা এত দূরত্ব তার সাথে হয় যে সেকেন্ডের উক্ত খবর বা লাইভ সবকিছু
দেখতে পারি আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটির মাধ্যমে। পুরো বিশ্বকে আমাদের হাতের
মুঠোয় এনে দিয়েছে এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এখন ইউটিউব, ফেসবুক এবং google
এর এর মাধ্যমে প্রচার এবং গণমাধ্যমগুলো হয়ে উঠেছে অনেক সহজ। যেগুলোর মাধ্যমে
আমরা অতি দ্রুত যেকোন স্থানের খবর যেকোনো সময়ই পেয়ে যায়।
৯) ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম।
এখন মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে খুব সহজেই তার ক্যারিয়ার গঠনে সক্ষম হচ্ছেন।
বর্তমান সময়ে ভালো একটি চাকরি পাওয়া যেমন দুর্লভ হয়ে গেছে এর কারণে অনেক মানুষ
অনলাইনে তার ক্যারিয়ার বেছে নিচ্ছেন। ঘরে বসেই ব্লগার, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির
মাধ্যমে লাখ টাকা আয় করছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন মানুষ স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ফাইবার, আপ
ওয়ার্ক এর মত ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে লাখ টাকা উপার্জন করছেন।
ই-কমার্স সাইটগুলো তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য অন্যের কাছে খুব সহজে পৌঁছে দিতে
পারছেন এবং তা থেকে আয় করছে। বর্তমানে বেশিরভাগ যুবকরা চাকরি না করে
ফ্রিল্যান্সার হওয়াতে আগ্রহী হচ্ছেন। তাই বলা যায় ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবদান অনেক বেশি।
১০) বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানুষের মানুষের বিনোদন ব্যবস্থার ও পরিবর্তন করেছেন।
এক একসময়ে মানুষ মঞ্চে নাটক বা অভিনয় করে মানুষকে বিনোদন প্রদান করত কিন্তু
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়াতে মানুষ সহজেই বিনোদন পেতে এবং প্রদান করতে
পারেন। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ইত্যাদি ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন ধরনের
বিনোদনমূলক ভিডিও সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যায়।
এছাড়াও অনেক মানুষ টিক টক অ্যাপ এ ভিডিও তৈরি করে মানুষকে বিনোদন প্রদান করে
থাকেন। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গেম রয়েছে যা পুরো বিশ্বে মানুষের সাথে খেলার
পাশাপাশি কথা বলাও সম্ভব। এখনকার বাচ্চারা খেলার মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল এ ধরনের
খেলা না খেলে মোবাইল গেমে আসক্ত। এক কথায় বর্তমানে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই নিজেদের ইচ্ছামতো বিনোদন পাচ্ছি। তাই বিনোদনের
ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা ব্যাখ্যা কর
নৈতিকতা হচ্ছে মানুষের কাজ- কর্ম, আচার- ব্যবহারের নেই মূলনীতি উপর ভিত্তি করে
মানুষ একটি কাজের ভাল বা দিক বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে । নৈতিকতা মানুষকে
সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে । কী করা উচিৎ, কী করা অনুচিত তা
নৈতিকতার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় । অনলাইন BusinessDictionary.com অনুসারে নৈতিকতা
হলো-" The introductory generalities and abecedarian principles of decent
mortal conduct অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে নৈতিকতা হলো জ্ঞানের একটি শাখা যা
মানুষের নীতি ও আদর্শ নিয়ে কাজ করে। তথ্য প্রযুক্তির নৈতিকতার মূলনীতিসমূহ নিচে
উল্লেখ করা হলোঃ
- কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি সাধন করা যাবে না।
- কারো প্রয়োজনীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না।
- অনুমতি ছাড়া কম্পিউটার সংক্রান্ত অন্যের রিসার্চ ব্যবহার করা যাবে না।
- অন্যের কাজ নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না।
- লাইসেন্স ছাড়া সফটওয়্যার ব্যবহার বা কপি করা যাবে না।
- বিনা অনুমতিতে কারো ব্যক্তিগত ফাইলে প্রবেশ করা যাবে না।
- তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে কারো উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে কিনা এটির ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
- অন্যের ভালোমন্দ বিবেচনা করে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নৈতিকতা না মেনে ব্যবহার করার ফলে বর্তমানে অনেক
অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হ্যাকিং, স্প্যামিং,
ফিশিং, প্লেজিয়ারিজম ইত্যাদি। তাই আমাদের সকলের উচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
নৈতিকতা মেনে এর ভালো ব্যবহার করা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জানলাম প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার এবং
প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করে তুলেছে
সহজ এবং আরামদায়ক। সমস্ত প্রযুক্তি এই তৈরি হয়েছে প্রায়ই মানব কল্যাণের জন্য
তবে এইসব প্রযুক্তি গুলোকে ব্যবহার করে অনেক মানুষ অন্যের ক্ষতি সাধন করে থাকে।
বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার প্রায়ই দেখা যায়। নিচে তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার তুলে ধরা হলোঃ
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্য কাউকে মিথ্যা সম্পর্কের ফাঁদে ফেলা, হুমকি দেওয়া, প্রতারণা করা, ব্যক্তিগত প্রশ্নের জন্য অন্তরঙ্গে মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
- হ্যাকিং এর মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি সাধন করা, স্পামিং করা, পুলিং করা, অন্যের অন্যের কাছে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি প্রযুক্তির অপব্যবহারের মধ্যে পড়ে।
- পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়া। বর্তমান সময়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ছেলে মেয়েই পর্নোগ্রাফিতে আসতো। এটিও হচ্ছে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফল।
- বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন গেম যেমন পাবজি, ফ্রী ফায়ার কল অফ ডিউটি ইত্যাদি গেম গুলোর প্রতি ছেলেমেয়েরা আসক্ত।
- অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের টাকার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। যেমন আপনি একটি সাইটে কাজের জন্য টাকা ইনভেস্ট করলেন কিন্তু আপনি সে টাকার বিনিময়ে কিছুই পেলাম না তারা আপনার সাথে প্রতারণা করে আপনার টাকা হাতিয়ে নিল। এটিও একভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার।
প্রযুক্তির সুফলের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অপব্যবহারও রয়েছে। প্রযুক্তি যেহেতু
মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত অপব্যবহার না করে
মানুষের কল্যাণে প্রতি ব্যবহার করা।
শেষ কথাঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি, তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার, তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা সহ আরো ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি এ ব্লক
পোষ্টের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে
জানতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ নগদ একাউন্ট পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয়
পোস্টটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই
কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন ধরনের ব্লক পোস্ট করতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন ব্লগ
পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি।
আমাদের সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url