বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ১০ পয়েন্ট
পরীক্ষায় একটি না একটি রচনা থাকবেই। এর মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনাটি অন্যতম। আপনি যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছে এ আর্টিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ১০ পয়েন্ট খুব সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হন
তাহলে আমাদের এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না
বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ১০ পয়েন্ট
- ভূমিকা
- ভাষা আন্দোলন
- ৭১ এর নির্বাচন
- ৭ ই মার্চের ভাষণ
- অপারেশন সার্চলাইট
- মুক্তিযুদ্ধের সূচনা
- মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা
- পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ
- বিজয় লাভ
- উপসংহার
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের হাজার বছরের
ইতিহাসে 'মুক্তিযুদ্ধ' সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই
অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ
শুরু হয় এবং ঐ বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে এর
পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভাষা আন্দোলনঃ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ
শাসনের অবসানের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর নানাভাবে বৈষম্য
সৃষ্টি করে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা
করে। অনেকে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে এই আন্দোলনের প্রভাব
বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামে রূপান্তর হয়। তারপর নানা আন্দোলনে অনেক শহিদ
হয়েছেন।
৭১ এর নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের
নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনেই
আওয়ামী লীগ বিজয়ী হন এবং আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হন। কিন্তু তাঁর হাতে ক্ষমতা
দেয়া হয় না। অন্যায়ভবে।
৭ ই মার্চের ভাষণঃ ১৯৭১-এর ৭ই
মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি
বাঙ্গালীদের কে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই
মার্চের ভাষণটি ১৮ মিনিট স্থায়ী হয় এবং এই ভাষণটি লিখিত আকারেও সবার কাছে বিতরণ
করা হয়েছিল। এরপর শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।
অপারেশন সার্চলাইটঃ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা 'অপারেশন
সার্চ লাইটে'র নামে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। আর তখন, অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম
প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর
বঙ্গবন্ধুকে আটক করে পাকিস্তানিরা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনাঃ ১৯৭১ সালের
২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের সব
এলাকায় স্বাধীনতার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান গড়ে ওঠে। এই অভ্যুত্থানে অংশ
নেয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী
নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ। পাকপাহিনীর আক্রমণ ও গণহত্যা মোকাবেলার জন্য
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো গড়ে তোলে প্রতিরোধ।
শত্রু সেনারা সংখ্যায় অনেক ও তারা ছিল অনেক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, তাই
মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায় এবং
যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেন। এদিকে ১০ই
এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে
উপরাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা
এর আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২৭শে মার্চ বাঙালিদের
মুক্তিসংগ্রামের প্রতি তাঁর সরকারের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং এর মধ্য দিয়েই
স্বাধীন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সমর্থনের সূচনা ঘটে। পাকিস্তানি সৈন্যদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ব্যক্তিনামে আরও
অনেক বাহিনী সংগঠিত হয়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত ও অনিয়মিত দুটি ভাগে
বিভক্ত ছিল। অনিয়মিত বাহিনী 'গণবাহিনী ' নামে পরিচিত ছিল। নিয়মিত বাহিনীর
অন্তর্ভুক্ত ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সৈন্যরা।
মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও
গণপ্রজাতন্ত্রী চিন দেশ এ যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে
পাকিস্তানকেই কৌশলগত সমর্থন দেয়। পক্ষান্তরে, ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের
মিত্র দেশসমূহ এবং জাপান ও পশ্চিমের অনেক দেশের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের পক্ষে
অবস্থান নেয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণঃ
দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি সশস্ত্র সৈন্যদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালির তীব্র
লড়াই চলে । সারা দেশের এই লড়াই এগারটি সেক্টরে বিভক্ত করে পরিচালনা করা হয়েছে।
যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ, তিন লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম প্রদান করে। পাকিস্তানি
বাহিনী ধীরে ধীরে এ লড়াইয়ে পরাজিত হতে থাকে। পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর
বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ এবং হত্যা করে।
কিন্তু তারা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য উদয়কে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না।
বিজয় লাভঃ ১৯৭১ সালের ১৬ই
ডিসেম্বর বিকেলে রমনা রেসকোর্সে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ কমান্ডের
পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয়
কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে
স্বাক্ষর করেন। তাই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর 'বিজয় দিবস' হিসেবে পালিত হয়।
কিন্তু ১৯৭১ সালেই ১৬ই ডিসেম্বরের দিন বাঙালি স্বাধীনতার স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ
করতে পারেনি। কারণ, ঐ দিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে আটকে রাখা হয়েছিল
পাকিস্তানের কারাগারে। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের গারদ ভেঙে বঙ্গবন্ধু
যখন স্বদেশের মাটিতে পদার্পণ করেন, তখনই বাঙালি লাভ করে স্বাধীনতার পরিপূর্ণ
স্বাদ ।
উপসংহারঃ মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি
জাতি তাদের উপেক্ষিত আমোঘ শক্তির উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এর ফলে বাঙালি জাতির
মধ্যে তৈরি হয় অসীম আত্মবিশ্বাস এবং গ্রহণ করে নেই হার না মানার শিক্ষা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিল যে প্রকৃত দেশপ্রেম
নিরস্ত্র জাতিকে কিভাবে বিজয় লাভ করায়। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে
অনেক গৌরবময়।
আমাদের শেষ বক্তব্য
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা, ভাষা
আন্দোলন, ৭ ই মার্চের ভাষণ, অপারেশন সার্চলাইট, মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সহ আরো
ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি উক্ত আর্টিকেলটি আপনাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা ১০
পয়েন্ট পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে সহায়তা করবে। পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে
শেয়ার করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আমাদের
সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url