জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

প্রিয় পাঠক আপনি কি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাটি খুজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমারা এ ব্লগ পোস্টে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাটি তুলে ধরেছি। আশা করি ব্লগ পোস্টে উল্লিখিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

  • সূচনাঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা
  • প্রিয় হওয়ার কারণ
  • জন্ম ও শিক্ষা
  • প্রতিভার স্ফুরণ ও সৃষ্টি
  • জন্ম ও শিক্ষা
  • প্রতিভার স্ফুরণ ও সৃষ্টি
  • নজরুল সাহিত্যে সমাজ চিত্র
  • সম্প্রদায়নিরপেক্ষ চেতনায় নজরুল
  • কবির শেষ জীবন
  • উপসংহারঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

সূচনাঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

বাংলার কাব্যগগন অসংখ্য জ্যোতিষ্কের আলোয় উদ্ভাসিত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান প্রমুখ স্বমহিমায় ভাব্বর। কিন্তু এঁদের সবার মাঝে যে নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকড়া চুলের এক যৌবনানন্দ মুখচ্ছবি আমাদের চেতনায় ভেসে ওঠে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি এবং আমাদের জাতীয় কবি। আমার প্রিয় কবি। ছোটোবেলায় তাঁর লেখা- 'আমি হব সকাল বেলার পাখি কবিতাটি মুখস্থ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই কবির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সেই আকর্ষণ কখনো ম্লান হয়নি।

প্রিয় হওয়ার কারণ

অসাধারণ প্রতিভাধর কাজী নজরুল ইসলাম দারিদ্র্য জর্জরিত সংসারে জন্ম নিয়েও স্বীয় মেধা ও প্রতিভাবলে আরোহণ করেছেন মর্যাদার স্বর্ণশিখরে। তিনি বাংলা কাব্যে বয়ে এনেছেন প্রেম আর বিদ্রোহের এক অনন্য আলোড়ন। পরাধীন জরাগ্রস্ত সমাজের বুকে সঞ্চারিত করেছেন তপ্ত শোণিত-ধারা। তাঁর কবিতাগুলো পরাধীন ভারতের অবদমিত জনগণের জন্য সঞ্জীবনী মন্ত্র। তাঁর সংগীতগুলো নিপীড়িত, শোষিত, সর্বহারার বেদনার বাণী।


কাব্যক্ষেত্র, যুদ্ধক্ষেত্র, রাজনীতি, সমাজনীতি, ব্যক্তিজীবন সর্বত্রই নজরুল তাঁর বিদ্রোহী সত্তা নিয়ে হাজির হয়েছেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবধান, কুসংস্কার, অন্ধ গোঁড়ামি, অলসতা ও জড়তাকে তিনি নির্মমভাবে আঘাত করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম নিদ্রামগ্ন বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করেছেন। তাই কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি।

জন্ম ও শিক্ষা

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (বাংলা ১৩০৬, ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। বাল্যকালেই নজরুল পিতাকে হারান। তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর অগ্রজদের মৃত্যু হয়। তাই তাঁর নাম রাখা হয় 'দুখু মিয়া'। গ্রামের মক্তব হতে তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা পাশ করে, জীবিকা নির্বাহের জন্য সে মক্তবেই শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে কবি রানীগঞ্জের সিরায়সোল রাজ উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৪ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে দশম শ্রেণির ছাত্র নজরুল পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন।

প্রতিভার স্ফুরণ ও সৃষ্টি

এগারো বছর বয়সেই নজরুলের কবি শক্তির স্ফুরণ হয়। গল্প রচনার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের লেখক জীবনের সূচনা। ১৯২২ সালে 'অগ্নিবীণা' কাব্য প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা কাব্য ও বাঙালির জীবনকে তুর্যনিনাদে কাঁপিয়ে নজরুল তাঁর আগমনবার্তা ঘোষণা করেন। ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে নজরুল অসংখ্য কাব্য, গান, উপন্যাস, ছোটোগল্প ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা • করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা- কাব্যগ্রন্থ।

আরও পড়ুনঃ বিজয় দিবস রচনা

অগ্নিবীণা, দোলন চাপা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয়-শিখা, সিন্ধু-হিন্দোল, সর্বহারা চক্রবাক, জিঞ্জীর । গানের বই বুলবুল, গানের মালা, চোখের চাতক, চন্দ্রবিন্দু, বনগীতি। উপন্যাস : বাধন হারা, মৃত্যু-ক্ষুধা। গল্পগ্রন্থে রিক্তের বেদন, শিউলিমালা। নাটক ঝিলিমিলি, আলেয়া, মধুমালা। প্রবন্ধ গ্রন্থ : যুগ-বাণী, রাজবন্দীর জবানবন্দী, দুর্দিনের যাত্রী। শিশুতোষ গ্রন্থ ঝিঙেফুল, নতুন চাঁদ, সাতভাই চম্পা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নজরুল সাহিত্যে সমাজ চিত্র

বস্তুত নজরুল সাহিত্যে একদিকে যেমন প্রেম ও বিদ্রোহ বিধৃত রয়েছে অন্যদিকে তেমনই রয়েছে সমাজচিত্র। প্রথম মহাযুদ্ধের শেষের দিক থেকে (১৯১৭) দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের গোড়ার দিক পর্যন্ত (১৯৪২) কয়টি বছর ছিল নজরুলের সাহিত্যিক জীবন। অথচ এই কয়েক বছরেই নজরুল সমগ্র দেশে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। পরাধীনতার গ্লানি, সমসাময়িক দুরাচার, রাজনীতিক হতাশা, বিদেশি শাসন-শোষণের নিষ্পেষণ, রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ ইত্যাদি নজরুল সাহিত্যে উপজীব্য হয়ে উঠেছে।


অগ্নিবীণা, বিশের বাঁশী, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণীমনসা, জিঞ্জীর, সন্ধ্যা ও প্রলয় শিখা প্রভৃতি কাব্যের মধ্যে কবির বিদ্রোহী রূপ প্রধানত পরিস্ফুট হলেও সামাজিক দিক তথা স্বদেশ ও স্বজাতির স্বাধীনতার সঙ্গে গণমানুষের শোষণ-বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও সংকল্প ভিন্নমাত্রায় রূপায়িত হয়েছে। কবি তাঁর চিরন্তন বিদ্রোহী সত্তা দিয়েই এগুলো মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন।

সম্প্রদায়নিরপেক্ষ চেতনায় নজরুল

ভারতীয় উপমহাদেশে আবহমান কাল ধরে হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ ছিল। আর হিন্দু- মুসলমানদের মৈত্রীর বাণী সার্থকভাবে প্রচার করেছেন যাঁরা তাদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। তাঁর বিখ্যাত কোরাস 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার" এর শ্রেষ্ঠ প্রমাণ-

হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?

কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র।

কবির শেষ জীবন

১৯৪২ সালে কবি মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। ১৯৫২ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কবিকে বিলেত পাঠিয়ে লাভ হয়নি- ডাক্তাররা জানিয়ে দেন এ রোগ নিরাময়যোগ্য নয়। ১৯৯৭ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রয়াসে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৭৬ সালে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট কবি পি.জি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসিজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

উপসংহারঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

এদেশে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয়ে যে বাংলা সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে নজরুল সেই সংস্কৃতির বরেণ্য কবি। মুসলমান ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা তাঁর কাব্যের অন্যতম মৌল সুর। নজরুল ইসলামি ভাবধারায় যেমন অসংখ্য কবিতা, গান ও গজল রচনা করেছেন তেমনই হিন্দু ভাবধারায়ও রচনা করেছেন অনেক কবিতা এবং শ্যামাসংগীত। তাই কাজী নজরুল ইসলাম শুধু মুসলমানের নয়, কিংবা শুধু হিন্দুর নয়, নজরুল হিন্দু-মুসলমানের কবি। আরও ব্যাপক অর্থে নজরুল মানুষের কবি। তাই কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url