শেয়ার কাকে বলে - অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন শেয়ার কাকে বলে এবং অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে। আজকে আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানবো অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শেয়ার সম্পর্কে। তাই আপনি যদি অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে এবং বিভিন্ন ধরনের শেয়ার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের শেয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক হন
তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না
বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ শেয়ার কাকে বলে - অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
- শেয়ার কাকে বলে
- শেয়ার কত প্রকার ও কি কি
- সাধারণ শেয়ার কাকে বলে
- অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
- বোনাস শেয়ার কাকে বলে
- বিলম্বিত শেয়ার কি
- শেষ কথাঃ শেয়ার কাকে বলে - অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
শেয়ার কাকে বলে
কোম্পানির মোট মূলধনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশ গুলো কে শেয়ার বলে ।
নিয়মানুযায়ী কোম্পানি সংগঠনের মোট মূলধনকে নির্দিষ্ট সমমূল্যের ক্ষুদ্র সমান
এককে ভাগ করা হয়। এরূপ প্রতিটা একক শেয়ার মূলধনের অংশ হওয়ার কারণে এটা ক্রয়ের
মাধ্যমে প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির আংশিক মালিকানা লাভ করেন। যিনি শেয়ার
ক্রয় করেন তাকে শেয়ারহোল্ডার এবং শেয়ার বিক্রয় হতে সংগৃহীত অর্থকে শেয়ার
মূলধন বলে।
শেয়ার মূল্য কম হওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয়
করে কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শেয়ার
মার্কেটে তালিকাভুক্ত থাকলে তার শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীরা অধিক স্বচ্ছন্দবোধ
করে। কারণ যে কোনো সময় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার বিক্রয় করে বিনিয়োগ অন্যত্র
সরানো যায় । এক্ষেত্রে বাজারে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেলে শেয়ারমালিকগণ তার সুফলও
পেয়ে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ার ও স্টককে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
তবে বাংলাদেশের আইনে এক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে । স্টক হলো সম্পূর্ণ মূল্য
পরিশোধিত প্রতিটা শেয়ারের আইনানুগভাবে ভাগ করা একেকটা অংশ। শেয়ারের ন্যায়
প্রতিটা অংশ সমমল্যের হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন- ১০০ টাকার প্রতিটা পরিশোধিত
শেয়ারের বিপক্ষে আইনগত অনুষ্ঠানিকতা পালন করে কোম্পানি তিনটি ২০.০০ টাকা ও চারটি
১০.০০ টাকার স্টক ইস্যু করেছে। এতে সুবিধা হলো একটা পুরো শেয়ার বিক্রয় না করে
সুবিধাজনক পরিমাণ স্টক বিক্রয় করা যায়।
শেয়ার কত প্রকার ও কি কি
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কোম্পানির মোট মূলধনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান
অংশ গুলোর নামই হলো শেয়ার। শেয়ারের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। শেয়ার সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে আমাদেরকে শেয়ারের প্রকারভেদ গুলোও জানা উচিত। সমাজের বিভিন্ন
শ্রেণির বিনিয়োগকারীর পছন্দ ও সুবিধা, কোম্পানির স্বার্থ ও মূলধন বৃদ্ধির বিষয়
বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার কোম্পানি কর্তৃক বর্তমানকালে ইস্যু করতে দেখা
যায়। শেয়ার সাধারণত চার প্রকার এগুলো হলঃ
- সাধারণ শেয়ার
- অগ্রাধিকার শেয়ার
- বিলম্বিত শেয়ার
- অন্যান্য শেয়ার
সাধারণ শেয়ার কাকে বলে
আইনানুযায়ী যে শেয়ারের মালিকগণ অধিকার দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিভিন্ন দিক বিচারে
অধিক সুবিধা ও মর্যাদাভোগ করলেও লভ্যাংশ ন্টিনেও কোম্পানি তিলোপের সময় মূলধন
প্রত্যাবর্তনে অগ্রাধিকার পায় না তাকেই সাধারণ শেয়ার বলে । এরূপ শেয়ারের
মালিকগণ পরিচালক নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে, নির্বাচনে ভোট দিতে পারে ও
শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মতামত
প্রদান করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিভাবে
এতে লভ্যাংশের হার পূর্বনির্দিষ্ট থাকে না। পরিচালকদের সভার সিদ্ধান্তমনে মুন্যার
মিশেবিশেষ লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করা হয়। তবে কোম্পানিতে অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার
থাকলে তাদেরকে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ প্রদানের পর মুনাফা অবশিষ্ট থাকলে তা
সাধারণ শেয়ার মালিকগণ গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেয়ে থাকে । কোম্পানি বিলোপের
সময় অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার মালিকদের মূলধন ফেরত প্রদানের পরই এ ধরনের শেয়ার
মালিকদের অর্থ প্রদান করা হয়।
অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
যে শেয়ারের মালিকগণ লভ্যাংশ প্রাপ্তিতে ও মূলধন প্রত্যাবর্তনে অন্যান্য শেয়ার
মালিকগণের চেয়ে অগ্রাধিকার পায় তাকেই অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার বলে। কোম্পানিতে
মুনাফা হলে এরূপ শেয়ার মালিকগণ অবশ্যই নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ প্রাপ্ত হয়ে
থাকে। তবে এরা পরিচালক হতে বা পরিচালক নির্বাচনে ভোট দিতে পারে না এবং নিজস্ব
স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত দেয়ার
সুযোগ পায় না। যে কারণে কোম্পানির সাধারণ সভায় এরূপ শেয়ারহোল্ডারগণ থাকতে পারে
না।
আরও পড়ুনঃ একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণাবলী
সাধারণভাবে এদেরকে শেয়ারহোল্ডার বলা হলেও এরা অনেকটা বিনিয়োগকারী
পাওনাদার।উল্লেখ্য, কোম্পানি আইনের তফসিল-১ এ বলা হয়েছে কোম্পানির স্মারকলিপিতে
উল্লেখ থাকলে বিশেষ সিদ্ধান্তক্রমেই এরূপ শেয়ার কোম্পানি বিলি করতে পারে। এ
ধরনের শেয়ার বিলি করলে আর শর্ত কী হবে তাও বিশেষ সিদ্ধান্তের মধ্যেই উল্লেখ করা
হয়ে থাকে। লভ্যাংশ বণ্টন, বিতরণ পদ্ধতি, অর্থ প্রত্যর্পণ ও রূপান্তরের দৃষ্টিকোণ
হতে একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় এগুলি হলঃ
- সঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে শেয়ারের মালিকগণ প্রতিবছর মুনাফা হতে একটা নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পায় এবং কোনো বছর মুনাফা না হলেও উক্ত নির্দিষ্ট হার অনুযায়ী লভ্যাংশ সঞ্চিতি হিসেবে জমা থাকে ও পরবর্তী সময়ে মুনাফা অর্জিত হলে বকেয়া সঞ্চিতিসহ লভ্যাংশ প্রাপ্ত হয় তাকে সঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার বলে । আইন অনুযায়ী ছয় বছর পর্যন্ত এরূপ লভ্যাংশ সঞ্চিত রাখা হয় ।
- অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে শেয়ার মালিকগণ মুনাফা হলেই শুধুমাত্র তা হতে নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পায় কিন্তু মুনাফা অর্জিত না হলে ঐ বছরের কোনো লভ্যাংশ সঞ্চিতি আকারে পরবর্তী সময়ে পায় না তাকে অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার বলে ।
- অংশভাগ অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে অগ্রাধিকার শেয়ারের মালিকগণ মুনাফা হতে প্রথমত নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ প্রাপ্ত হলেও পরবর্তী সময়ে সাধারণ শেয়ার মালিকদের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টনের সময় পুনরায় তাতে অংশ পায় তাকে অংশভাগ অগ্রাধিকার শেয়ার বলে ।
- অনাংশভাগ অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে জাতীয় শেয়ারের মালিকগণ মুনাফা হতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পায় কিন্তু সাধারণ শেয়ার মালিকদের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে পুনরায় অংশ পায় না তাকে অনাংশভাগ অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। সাধারণত অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার বলতে এ ধরনের শেয়ারকেই বুঝায় ।
- পরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে অগ্রাধিকার শেয়ারের মূল্য নির্দিষ্ট সময়াস্তে পরিশোধ করে কোম্পানি শেয়ার ফেরত নিতে পারে তাকে পরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। এ ধরনের শেয়ার বিজন কোম্পানির পক্ষে খুব সুবিধাজনক না হওয়ায় এরূপ ফেরতের বিষয়টি পূর্ব হতেই বিবরণপত্রে উল্লেখ করা হতে পারে।
- অপরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে শেয়ারের মালিকগণ লভ্যাংশ প্রাপ্তি ও মূলধন প্রত্যাবর্তনে অগ্রাধিকার পেলেও কোম্পানি বিলোপের পূর্বে কোম্পানি হতে শেয়ারের মূল্য ফেরত পায় না বা ফেরত নিতে পারে না ওই সকল শেয়ারকেই অপরিশোধ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলা হয়।
- পরিবর্তনযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ারঃ শেয়ার বিক্রয়ের শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়াক্তে যে অগ্রাধিকার শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ দেয়া হয় তাকে পরিবর্তনযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে।
- অপরিবর্তনযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ারঃ যে অগ্রাধিকার শেয়ারকে কখনই সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর বা বিনিময় করা যায় না তাকে অপরিবর্তনযোগ্য অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। সাধারণভাবে অগ্রাধিকার শেয়ার পরিবর্তনযোগ্য নয়।
বিলম্বিত শেয়ার কি
যে শেয়ারের মালিকগণ লভ্যাংশ বণ্টন ও মূলধন প্রত্যাবর্তনে সকলের শেষে অংশগ্রহণ
করে তাকে বিলম্বিত শেয়ার বলে। কোম্পানি গঠনের বা বহন বা অন্য কোনো প্রাথমিক
ব্যয় নির্বাহের জন্য অথবা পরিশ্রমের প্রতিদান হিসেবে প্রবর্তকদের নগদ অর্থ অন্য
কোনো শেয়ার না দিয়ে অনেক সময় এ ধরনের শেয়ার দেয়া হয় বিধায় একে প্রবর্তকদের
শেয়ারও বলা হয়ে থাকে। এরূপ শেয়ার সাধারণ্যে বিক্রয়ের প্রশ্ন আসে না। ফলে তা
হস্তান্তরযোগ্য নয়।
বোনাস শেয়ার কাকে বলে
শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে নগদে লভ্যাংশ না দিয়ে লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ার বণ্টন করা
হলে ঐ শেয়ারকে বোনাস শেয়ার বলে। এটি কার্যত কোনো আলাদা শেয়ার নয়। সাধারণ
শেয়ার এখানে বণ্টন করা হয় এবং তাকেই এরূপ নামকরণ করা হয়ে থাকে। কোম্পানির
অর্জিত মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন না করে অংশবিশেষ এর সংরক্ষিত
তহবিলে জমা রাখা হয় । এরূপ তহবিলে সঞ্চিতির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেলে উক্ত তহবিল
গুলোকে মূলধনে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বোনাস শেয়ারগুলোকে বন্টন করে দেওয়া হয়।
রাইট শেয়ার কি
অধিকারযোগ্য শেয়ার বা রাইট কোনো কোম্পানি মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নতুন শেয়ার
বিলির সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তার সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্রয়ের অধিকার আনুপাতিক
হারে পুরাতন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সংরক্ষণ করলে তাকে অধিকারযোগ্য শেয়ার বা রাইট
শেয়ার বলে। কোনো কোম্পানি যখন ভালো অবস্থায় থাকে তখন শেয়ার বাজারে তার শেয়ারের
দামও বেশি থাকে। সে অবস্থায় নতুন ইস্যুকৃত শেয়ারে পুরাতন শেয়ার মালিকগণ তাদের
স্বার্থ দাবি করতে পারেন। এরূপ দাবি পূরণের জন্যই কার্যত এ ধরনের শেয়ার বণ্টন
পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এটাও নতুন কোনো শেয়ার নয়, সাধারণ শেয়ার।
শেষ কথাঃ শেয়ার কাকে বলে - অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে
প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম শেয়ার কাকে বলে, শেয়ার কত প্রকার,
অগ্রাধিকার শেয়ার কাকে বলে, বোনাস শেয়ার কাকে বলে, রাইট শেয়ার কাকে বলে
ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি উক্ত আর্টিকেলটির মাধ্যমে শেয়ার সম্পর্কে ভালোভাবে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভাল লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন
মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট এ নতুন নতুন আর্টিকেল
পাবলিশ করে থাকি। আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url