পণ্য ডিজাইন কি - পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব

পণ্য ডিজাইন কি এবং পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? তাহলে একজন সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে পণ্য ডিজাইন কি এবং পণ্য ডিজাইনের ইত্যাদি বিষয় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পণ্য ডিজাইন কি এটি জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পণ্য ডিজাইন কি
প্রিয় পাঠক আপনি যদি পণ্য ডিজাইন কি এবং পণ্য ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য, পণ্য ডিজাইন প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ পণ্য ডিজাইন কি - পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব

ভূমিকা

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই পণ্য ডিজাইন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। পণ্যের গুণগতমান, আকার, রং, ওজন ইত্যাদি নির্ধারণ করাই হলো পণ্য ডিজাইন। ক্রেতাদেরকে পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট করা, পণ্যের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পণ্য ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

পণ্য ডিজাইন কি

ডিজাইনকৃত পণ্যের মাধ্যমে ক্রেতা বা ভোক্তাদের প্রয়োজন ও অভাবের সন্তুষ্টিবিধান হয়। তাই ক্রেতার বা ভোক্তার পছন্দ, অপছন্দ, অভ্যাস, রুচি, চাহিদা ও সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্যের ডিজাইন করা প্রয়োজন। মূলত পণ্য উৎপাদন করার পূর্বেই পণ্যের আকার-আকৃতি, মান, রং, ওজন, মোড়কসহ বিভিন্ন গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করাকে পণ্য ডিজাইন বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে Agarwal & Jain বলেন পণ্যের আকার-আকৃতি, মানদন্ড ও প্যাটার্ন নির্ধারণকে পণ্য ডিজাইন বলে আবার Gaurav Akrani বলেন, পণ্যের আকার নক্শায়ন, কার্যভিত্তিক নকশা, প্যাকেট নকশা, পণ্য গবেষণা এবং পণ্য উন্নয়নের সমহারকেই পণ্য ডিজাইন বলে। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং পণ্যের উন্নয়নমূলক কার্যের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। সাধারণত পণ্যের ডিজাইন প্রণয়নের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বা কারিগরি বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকে ।


পণ্যের মাধ্যমে ক্রেতা বা ভোক্তাদের প্রয়োজন ও অভাবের সন্তুষ্টিবিধান হয়। তাই ক্রেতার বা ভোক্তার পছন্দ, অপছন্দ, রুচি, চাহিদা ও সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্য ডিজাইন করা প্রয়োজন। মূলত পণ্য উৎপাদন করার পূর্বেই পণ্যের আকার- আকৃতি, মান, রং, ওজন, মোড়কসহ বিভিন্ন গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করাকে পণ্য ডিজাইন বলা হয়। একটি উত্তম পণ্য ডিজাইন ভোক্তার সন্তুষ্টিবিধানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই উত্তম বা ভাল পণ্য ডিজাইন হতে হলে অবশ্যই নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকতে হবেঃ
  • কম্পিউটার নির্ভরঃ একটি ভাল পণ্য ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য হলো এটি কম্পিউটার ভিত্তিক হতে হবে। কেননা কম্পিউটার ভিত্তিক পণ্য ডিজাইন সঙ্গত কারণেই নিখুঁত ও আকর্ষণীয় হয়। তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্যটি দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।
  • রক্ষণাবেক্ষণঃ পণ্য ডিজাইন এমনভাবে করতে হবে যাতে সহজেই এটি মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা হলে তাকে ভাল পণ্য ডিজাইন বলা যাবে না।
  • উপযোগ সম্পন্ন ও কার্যকরীঃ নির্দিষ্ট উপযোগ লাভের প্রত্যাশায় ভোক্তারা পণ্য ক্রয় করে। তাই পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে পণ্যটি যেন প্রত্যাশিত উপযোগ সম্পন্ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি পণ্যটি কার্যকরীও হতে হবে।
  • বিক্রয়োত্তর সেবাঃ কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের প্রয়োজন হয়। এসব পণ্যের ডিজাইন এমন হতে হবে যেন বিক্রয়োত্তর সেবার প্রয়োজন ন্যূনতম হয়। আবার ক্রেতার প্রয়োজন দেখা দেয়া মাত্র বিক্রয়োত্তর সেবা পেতে পারে। কেননা বিক্রয়োত্তর সেবার উপরই ক্রেতার সন্তুষ্টি নির্ভর করে।
  • নমনীয়তাঃ পণ্য ডিজাইনের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি নমনীয় থাকতে হবে। কেননা ভবিষ্যতে প্রয়োজনে পণ্যটি যাতে পুন ডিজাইন করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
  • পণ্য সংযোজনঃ পণ্য ডিজাইনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের সমন্বয়ে গঠিত হতে হবে। যার ফলে পণ্যের এক অংশ নষ্ট হয়ে গেলে সেটা সহজেই মেরামত করা কিংবা পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করা যায়।
  • উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকলে পণ্য ডিজাইন ক্রেতার নিকট আকর্ষণীয় হবে এবং প্রতিষ্ঠান সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

পণ্য ডিজাইন কত প্রকার

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ভোক্তার প্রয়োজন ও অভাবের সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্যের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য, বাহ্যিক কাঠামো, স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে পণ্য ডিজাইন করে থাকে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে পণ্য ডিজাইনকে সাধারণত চারভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের চার ধরনের পণ্য ডিজাইন হলো-
  • ব্যবহারিক ডিজাইনঃ কোন পণ্যের ব্যবহারের উপযোগিতা এবং স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পণ্য ডিজাইন করাকে ক্রিয়াগত বা ব্যবহারিক ডিজাইন বলে। অধিকতর সচেতন ক্রেতারা সাধারণত পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে গুণগতমান, উপযোগিতা ও স্থায়িত্বের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে পাতে। কেননা এ ধরনের ক্রেতারা ব্যয়িত অর্থ থেকে সর্বোচ্চ উপযোগ পেতে চায়। যেমন- টেলিটক তালের বিক্রিত সিমে 3G সুবিধা প্রদান করায় এই সিমের উপযোগিতা ও মান প্রত্যক্ষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • নান্দনিক ডিজাইনঃ ক্রেতার পছন্দ-অপছন্দ অনুসারে পণ্যের উৎকর্ষসাধনের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন করাকে পণ্যের নান্দনিক ডিজাইন বলে। এক্ষেত্রে পণ্য ডিজাইনে ভোক্তার রুচি ও পছন্দের সাথে সাথে পণ্যের বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এসব পণ্য সুন্দর, আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে। নান্দনিক ডিজাইনের পণ্যের ক্রেতারা সাধারণত রুচিশীল ও সৌখিন প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে এসব পণ্য ক্রয়ে ক্রেতার কাছে পণ্যের বাহ্যিক সৌন্দর্য গুরুত্ব পেলেও পণ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও গুণগতমান পণ্য পছন্দের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হবে এমনটি নয়। যেমন- ওয়ালটন ও সনি ব্রাভিয়া টেলিভিশনের ক্ষেত্রে কাঠামোগত সৌন্দর্যের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
  • উৎপাদন ডিজাইনঃ কোন পণ্যের ডিজাইনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন ও উন্নত কৌশল ব্যবহার করাকে উৎপাদন ডিজাইন বলে। এক্ষেত্রে অপচয় হ্রাস, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যয় হ্রাসের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়। যেমন- পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংক্রিয় অথবা কম্পিউটারাইজড পদ্ধতির ব্যবহার।
  • প্যাকিং ডিজাইনঃ পণ্যের আবরণকে আকর্ষণীয় করার জন্য যে ডিজাইন প্রণয়ন করা হয় তাকে প্যাকিং ডিজাইন বলে। সাধারণত নতুন পণ্যের ক্ষেত্রে এধরনের পণ্য ডিজাইনের গুরুত্ব অনেক বেশি। যেমন- সঞ্জীব নুডলসের গ্লাস প্যাকিং। চিপ্‌স, মিমি, প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষত পারফিউম ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্যাকিং ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য প্যাকিং ডিজাইন আধুনিকীকরণের চেষ্টা করছে। এর ফলে তাদের পক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে কার্যকরভাবে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে।

পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব

পণ্য ডিজাইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্রেতারা উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে সক্ষম হচ্ছে। একইভাবে পণ্য ডিজাইনের প্রভাব সামাজিক ক্ষেত্রেও পড়ছে। নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্য ডিজাইনের গুরুত্ব উপস্থাপন করা হলোঃ

ক্রেতা বা ভোক্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব-
  • নতুন পণ্যের আকর্ষণ সৃষ্টিঃ পণ্য ডিজাইন উন্নত মানের হলে ক্রেতারা নতুন পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট হয়। কেননা পণ্যের আকার, রং বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ক্রেতার মনে সহজেই স্থান দখল করতে সক্ষম হয়। যেমন- আসবাবপত্র, অলংকার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ডিজাইনের মাধ্যমে ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছে। তাই বলা হয়, ভাল পণ্য ডিজাইন ভোক্তাকে ঐ পণ্য ক্রয়ে আরো উৎসাহিত করে।
  • উপযোগ বৃদ্ধিঃ পণ্য ডিজাইন নানা ধরনের উপযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। কেননা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বা কারিগরি বিভাগ নতুন পণ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ডিজাইন প্রণয়ন করে। যেমন- মোবাইল ফোনের সাথে ক্যামেরা, ভিডিও, ঘড়ি, রেডিও, ক্যালকুলেটর এমনকি ইন্টারনেট সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এতে মোবাইল ফোনে কথা বলার সাথে সাথে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার কারণে মোবাইল ফোনের উপযোগিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই বলা হয়, পণ্য ডিজাইন পণ্যের উপযোগিতা আরো বৃদ্ধি করে।
  • কার্যকারিতা বৃদ্ধিঃ পণ্য ডিজাইনের মধ্যে পণ্যের উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত। ফলে এর মাধ্যমে পণ্যের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ে উৎসাহিত করা হয়। কেননা ভোক্তারা সবসময় আরো উন্নত ও কার্যকর পণ্য ভোগের আকাঙ্খা পোষণ করে।
  • পুন ক্রমে সহায়তাঃ পণ্য ভোগে সন্তুষ্টির উপর ভোক্তার পুন ক্রয় সিদ্ধান্ত নির্ভরশীল। ক্রেতা উন্নতমানের ডিজাইনকৃত পণ্য ক্রয় করে সন্তুষ্ট হলে পরবর্তীতে উক্ত পণ্যটি পুন ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ হয়। অর্থাৎ পণ্য পুন ক্রয়ে পণ্য ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • আত্ম-সন্তুষ্টিঃ কাঠামোগত দিক ও গুণগত মান বিবেচনায় পণ্যটি যদি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয় তাহলে গ্রাহকদের কাছেও ঐ পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের পণ্য ভোগ বা ব্যবহার করে ভোক্তারা এক ধরনের আত্ম-তৃপ্তি লাভ করে, যা পণ্যটি পুন ক্রয়ে ভোক্তাকে উৎসাহিত করে।
  • বিক্রয়োত্তর সেবাঃ পণ্য ডিজাইনের সময় ডিজাইনার চেষ্টা করেন যাতে পরবর্তীতে বিক্রয়োত্তর সেবার প্রয়োজনীয়তা যথাসম্ভব কম হয়। এতে ডিজাইনার পণ্যটিকে ত্রুটিমুক্ত ও সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। সে কারণে গ্রাহকরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হন । তবে প্রয়োজন দেখা দেয়া মাত্র গ্রাহকরা যেন বিক্রয়োত্তর সেবা পেতে পারে পণ্য ডিজাইনের সময় সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা বিক্রয়োত্তর সেবার উপরই ক্রেতার সন্তুষ্টি নির্ভর করে।
উৎপাদনকারী বা বিক্রেতার দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব-
  • উৎপাদন ব্যয় হ্রাসঃ পণ্য ডিজাইনের জন্য অনেক সময় প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন কৌশল বা পদ্ধতির মধ্যে পরিবর্তন আনতে হয়। বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারজাতকরণ পরিবেশে পণ্য ডিজাইন এমনভাবে করা হয় যেন তা উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে সহায়ক হয়। কেননা উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফাও বৃদ্ধি পায়।
  • বিক্রয় বৃদ্ধিঃ ক্রেতার পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পণ্য ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণীয় পণ্য ডিজাইন গ্রাহককে পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এতে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধি পায়। তাই বলা হয় পণ্য ডিজাইন বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • বাজার সম্প্রসারণঃ দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশে বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে উন্নতমানের পণ্য ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। পণ্যের নতুন ডিজাইন দ্বারা ক্রেতাদের চাহিদা আরও ভালভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়, ফলে নতুন নতুন ক্রেতা সৃষ্টি হয় এবং বাজার সম্প্রসারিত হয়।
  • ইমেজ বৃদ্ধিঃ উন্নতমানের পণ্য ডিজাইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ইমেজ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। কেননা সকল প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা নির্ভর করে ভালমানের পণ্য ডিজাইনের উপর।
  • প্রতিযোগিতা মোকাবেলাঃ আকর্ষণীয় পণ্য ডিজাইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব হয়। সম্প্রতি স্যামসাং (SAMSUNG) স্মার্ট ফোনে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত করে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অনেক বেশি সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই ভাল পণ্য ডিজাইন প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জনে সহায়তা করে।
সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব-
  • নতুন পণ্য প্রবর্তনঃ পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কার্যক্রমের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে পণ্য ডিজাইনে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়, যা পণ্যটিকে আরো আধুনিক ও কার্যকর পণ্যে রূপান্তর করে। ফলে ক্রেতা নতুন ও উন্নতমানের পণ্য ভোগের সুবিধা পায় ।
  • কর্মসংস্থানঃ পণ্য ডিজাইন সংক্রান্ত কার্যক্রমে বিভিন্ন লোকের কর্মসংস্থান হয়। উন্নত পণ্য ডিজাইন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সহায়ক হয় বলে বিভিন্ন স্তরে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় । সমাজ হতে কিছুটা হলেও বেকার সমস্যা দূর হয়। এতে সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়।
  • ভোগ বৃদ্ধিঃ পণ্যের আকর্ষণীয় ডিজাইন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। এতে ক্রেতারা উক্ত পণ্য অধিক পরিমাণে ভোগ বা ব্যবহার করে ।
  • জীবনযাত্রার মান উন্নয়নঃ পণ্য ডিজাইন উন্নয়ন করার মাধ্যমে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্রেতারা নতুন পণ্য বার বার ক্রয়ে উৎসাহিত হয়। এভাবে উন্নতমানের পণ্য ডিজাইনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

পণ্য ডিজাইন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান পণ্য ডিজাইনের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায় অনুসরণ করে থাকে। পণ্য ডিজাইনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিচে আলোচন করা হলো-
  • উদ্যোগঃ সময়ের পরিবর্তনে ভোক্তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যের আকার-আকৃতি, রং, ধরন, স্টাইল ইত্যাদি নির্ধারণের প্রচেষ্টা গ্রহণকে উদ্যোগ বলা হয়। পণ্য ডিজাইন প্রক্রিয়ার প্রথম স্তর বা পর্যায় হচ্ছে উদ্যোগ গ্রহণ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে পণ্য ডিজাইনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা নিজস্ব উদ্যোগ বা প্রেষণা না থাকলে কোন প্রতিষ্ঠানই পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। তাই প্রতিষ্ঠানকে পণ্য ডিজাইনের জন্য প্রথমেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
  • ধারণা উন্নয়নঃ পণ্য ডিজাইনকে আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ করার জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন বিকল্পসমূহ মূল্যায়ন করে একটি নির্দিষ্ট পণ্য ডিজাইন অনুসরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াকে ধারণা উন্নয়ন বলে। প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করার পর পরই ধারণা উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়-
  • বাজার গবেষণা তথা ভোক্তার রুচি, পছন্দ, চাহিদা ইত্যাদি পর্যালোচনা।
  • প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বিশ্লেষণ ।
  • প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগের সাথে পরামর্শ ইত্যাদি
  • সামর্থ্য বিশ্লেষণঃ পণ্য ডিজাইনের এ পর্যায়ে উৎপাদনের সামর্থ্য বিশ্লেষণ করতে হয়। সামর্থ্য বিশ্লেষণ বলতে বাজারের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বা কারিগরি দক্ষতা বিশ্লেষণকে বুঝায়। যে কোন প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঐ প্রতিষ্ঠানের কারিগরি দিক সম্পর্কে জানা যায়। আর সামর্থ্য নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও দক্ষ মানব সম্পদের উপর। যে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা যত ভাল এবং দক্ষ মানব সম্পদ আছে সে প্রতিষ্ঠান কারিগরি দিক দিয়ে তত শক্তিশালী। কাজেই বলা যায়, সামর্থ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার শক্তি ও সামর্থ্য, আর্থিক সক্ষমতা, কারিগরি দক্ষতা প্রভৃতি মূল্যায়ন করা যায়।
  • পরীক্ষামূলক উৎপাদনঃ নতুন ডিজাইনকৃত পণ্যটির উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নমুনা হিসেবে সীমিত পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করাকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন বলে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মাধ্যমে ডিজাইনকৃত পণ্যটি কতটুকু সফল হবে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি ও ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন ডিজাইনকৃত পণ্যটি ক্রেতাদের কাছে কতটুকু পছন্দনীয় ও গ্রহণযোগ্য হলো তার বাস্তব ফলাফল জানা যায়।
  • চূড়ান্ত উৎপাদনঃ পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যটির ডিজাইন সন্তোষজনক হলে উক্ত পণ্যটি বিক্রয়ের লক্ষ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য বলে বিবেচনা করাকে চূড়ান্ত উৎপাদন বলে। পরীক্ষামূলক পদক্ষেপের ফলাফল সন্তোষজনক হলে প্রতিষ্ঠানটি ডিজাইনকৃত পণ্যটি চূড়ান্তভাবে বা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, কোন কোম্পানি পণ্য ডিজাইনের পর্যায়টি পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পাদন করে চূড়ান্ত ডিজাইনকৃত পণ্যটি বাজারে উপস্থাপনের মাধ্যমে ভোক্তাদের সন্তুষ্টিবিধান করতে সক্ষম হয়।

শেষ কথাঃ পণ্য ডিজাইন কি - পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম পণ্য ডিজাইন কি, পণ্য ডিজাইন কত প্রকার, পণ্য ডিজাইন এর গুরুত্ব এবং পণ্য ডিজাইন প্রক্রিয়া সম্পর্কে। আশা করি উক্ত আর্টিকেলটির মাধ্যমে পণ্য ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান।


এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url