মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনাটি খুজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমারা এ ব্লগ পোস্টে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনাটি তুলে ধরেছি। আশা করি ব্লগ পোস্টে উল্লিখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের এই
ব্লগ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মূল বিষয়ে
যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
- ভূমিকাঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শিল্প-সাহিত্য
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কবিতা
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে উপন্যাস
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে ভাস্কর্য ও চিত্রকলা
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে প্রণোদনাদানকারী গান
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক চলচ্চিত্র
- উপসংহারঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
ভূমিকাঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
আলো ছাড়া যেমন পৃথিবী জাগে না, স্রোত ছাড়া যেমন নদী টেকে না, স্বাধীনতা ছাড়া
তেমনই জাতি কখনো বাঁচতে পারে না। সেই চিরন্তন সত্যের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে এক
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ, লোমহর্ষক তেমনই ত্যাগের
মহিমাব্যঞ্জিত ও বীরত্বপূর্ণ ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শিল্প-সাহিত্য
যে বোধকে কেন্দ্র করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বলে অভিহিত করা হয়। সেই চেতনা কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়। সেই চেতনা হলো বাঙালি
জাতীয়তাবাদী চেতনা। বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ এবং গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের
ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই সেই চেতনার
সারাৎসার।
আমাদের সংস্কৃতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা বিকাশে উপাত্ত হিসেবে যেসব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের
সরকারি বেসরকারি দলিলপত্র, দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের
স্মৃতিচারণ, সাক্ষাৎক বধ্য ভূমি গণকবর, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা অন্যতম।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর, স্মৃতি সংগ্রহশালা, পোস্টার, আলোকচিত্র,
অডিও- ভিডিও ও ডাকটিকিট মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে মুক্তিযুদ্ধের অনেক মান কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প
রচিত এবং অনেক চিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, শিল্পী, কবি,
সাংবাদিক, নাট্যকার, সাংস্কৃতিক কর্মী, চিত্রশিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কবিতা
কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে প্রতিফলন ঘটেছে নানাভাবে। কবি সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন
একজন রাজনীতি সচেতন কবি। 'বাংলা ছাড়ো কবিতা রচনা করে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট
তৈরিতে তিনি প্রণোদনা দান করেন। বর্বর পাক হানাদারদের আক্রমণে বাংলাদেশের
ছায়াঘন, স্নিগ্ধ গ্রামগুলো কীভাবে দক্ষ হয়েছে তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে
জসীমউদ্দীনের 'দগ্ধগ্রাম' কবিতায়। কবি শামসুর রহমানকে বলা হয় যুদ্ধকালীন কারা
ভাষ্যকার। তাঁর রচিত 'তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা কবিতায় মুক্তির চেতনা
তীব্র ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই' কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সম্প্রদায়
নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও জনগণের ঐক্যবদ্ধতার আহ্বান ব্যক্ত হয়েছে কবি নির্মলেন্দু
গুণের 'রাজদণ্ড কবিতায়। এভাবে সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ, মহাদেব
সাহা প্রমুখ কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে উপন্যাস
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূলত সার্বিক স্বাধীনতার সঙ্গে আদর্শ মানুষ ও উন্নত
সমাজ বা রাষ্ট্র গড়ার চেতনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস এই চেতনাকে
আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে। সামাজিক ও রাজনীতিক বক্তব্য নিয়ে কথাশিল্পীরা একাধিক
উপন্যাস রচনা করেছেন। এর মধ্যে শওকত ওসমানের 'জাহান্নাম হইতে বিদায়', 'নেকড়ে
অরণ্য', আনোয়ার পাশার 'রাইফেল রোটি আওরাত', সৈয়দ শাসসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান',
রাবেয়া খাতুনের 'ফেরারী সূর্য', রশীদ হায়দারের 'নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য',
আহমদ ছফার 'ওঙ্কার', সেলিনা হোসেনের হাঙ্গর নদী গ্রেনেড', হুমায়ূন আহমেদের
'আগুনের পরশমণি', মঈনুল আহসান সাবেরের 'পাথর সময়', মঞ্জু সরকারের 'তমস',
'প্রতিমা উপাখ্যান', ইমদাদুল হক মিলনের কালোঘোড়া' উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে ভাস্কর্য ও চিত্রকলা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ এবং স্মৃতিকে জগরুক করে রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন
স্থানে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ। এগুলো আমাদের স্মরণ
করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা, ইতিহাস ও নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মধ্যে
জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, শহিদস্মৃতি। শিখা অনির্বাণ, রায়ের
বাজার স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি অম্লান, সাবাশ বাংলাদেশ, দুর্জয় বাংলা, বিজয় বাংলা,
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, প্রজন্ম স্মারকরেদি গুরুত্বপূর্ণ।
ভাস্কর্যগুলো মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য বহন করে এবং চেতনা বিকাশে কাজ করে। চিত্রকলা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে প্রণোদনাকারী অন্যান্য উপাদানের মতো একটি অন্যতম
উপাদান। যে চিত্রকলাগুলো গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে কামরুল হাসানের পোষ্টার এই
জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে'; জয়নুল আবেদিনের মুক্তিযুদ্ধা রমনী ও বীরঙ্গনা'; এস
এম সুলতানের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দেয়ালচিত্র; রশীদ চৌধুরীর চে বাংলার বিদ্রোহ:
কাইয়ূম চৌধুরীর জয়বাংলা'; শাহাবুদ্দিন আহমদের 'মুক্তিযোদ্ধা' বিশেষ স্থান দখল
করে আছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে প্রণোদনাদানকারী গান
মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন গায়ক-গায়িকা ও মুক্তি সংগ্রাম
শিল্পী। সংস্থার কর্মীবৃন্দ শরণার্থী শিবিরে অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান পরিবেশন করেন। গানগুলো মুক্তিযুদ্ধে
নিয়োজিত সকল স্তরের মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণার সঙ্গী হিসেবে কাজ করে।
এ ধরনের গানের সংখ্যা প্রায় ৫০টির মতো হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রে
মাত্র ২৬টি পূর্ণাঙ্গ গানের তালিকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
হলো আমি এক বাংলার মুক্তিসেনা', 'বিচারপতি তোমার বিচার করবে যাবা', 'জনতার
সংগ্রাম চলবেই', 'নোঙর তোল তোল সময় হোল। হোল', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে',
'সালাম সালাম হাজার সালাম' প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক চলচ্চিত্র
১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে প্রামাণ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য
চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মানুষের
ক্ষোভ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। চলচ্চিত্রগুলো যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর ও
শান্তিকমিটির সদস্যদের মুখোশ উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রামাণ্যচিত্রগুলোতে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী ও তাদের
এদেশীয় দোসরদের নির্মম গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলন রচনা
চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে চাষী নজরুল ইসলামের 'ওরা ১১ জন', 'হাঙ্গর নদী গ্রেনেড',
সুভাষ দত্তের 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী', খান আতাউর রহমানের 'আবার তোরা মানুষ হ',
এখনও অনেক রাত', 'আলমগীর কবিরের 'ধীরে বহে মেঘনা', নারায়ণ ঘোষ মিতার 'আলোর
মিছিল', হুমায়ূন আহমেদের 'আগুনের পরশমণি' 5. বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
প্রামাণ্যচিত্রগুলোর মধ্যে- জহির রায়হানের 'স্টপ জেনোসাইড' ও 'এ স্টেইট ইন বর্ণ,
তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের 'মুক্তির গান' ও 'মুক্তির কথা' এবং তানভীর
মোকাম্মেলের স্মৃতি '৭১ উল্লেখযোগ্য।
উপসংহারঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নবতর
সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে
ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে গানে ও নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক
ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন
জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরূপভাবে
প্রতিফলিত না হলেও চিত্র পরিচালকদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা আমাদের শিল্প-সাহিত্যে আরও বেশি বিস্তার লাভ করুক এটাই আমার ঐকান্তিক
প্রত্যাশা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url