পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা

বনায়ন বলতে বোঝায় বন তৈরি করা অথবা সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগানোকে। আমাদের পরিবেশের জন্য বনয়নের গুরুত্ব অনেক বেশি কেননা গাছপালা যত বেশি থাকবে তত বেশি অক্সিজেন পাওয়া যাবে। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য টপিক গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। তাই আমরা এই আর্টিকেলে পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনাটি তুলে ধরেছি।
পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনাটি যেতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা

ভূমিকা

মানবসভ্যতা সৃষ্টির বহু আগে থেকেই পৃথিবীর স্থলভাগ ছিল বন আর বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ। মানুষ বুদ্ধি, কৌশল আর শক্তি দিয়ে হিংস্র বন্য প্রাণিকুলের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থেকেছে। ধীরে ধীরে গাছ কেটে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে গড়ে তুলেছে সমাজ সভ্যতা। বর্ণীভূত করেছে বনের জীবজন্তুসহ গোটা প্রকৃতিকে। মানবসমাজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবীব্যাপী। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে গ্রাম, শহর-বন্দর, নগর তৈরি করে পৃথিবীকে গড়ে তুলেছে মানুষের বাসযোগ্য করে। পরিবেশ- প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে স্থাপিত হলো নীরব বন্ধুত্ব, রক্ষিত হলো ভারসাম্য। সবুজে-শ্যামলে, ফুলে-ফলে আর ফসলে মানুষে পৃথিবী হয়ে উঠল সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় লীলাভূমি।

বাংলাদেশ হুমকির মুখে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে তাপমাত্রা দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়লে বাংলাদেশ সংলগ্ন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। এতে উপকূলের ১৫ ভাগ ভূমি সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। ৭৫০ কিলোমিটারের এই উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে গেলে ২ কোটি অধিবাসী উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। এছাড়া সারা দেশেই ঝড়, বন্যা, নদী ভাঙনসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ থেকে মুক্তির পথ এখনই উদ্ভাবন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে বনায়নই হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।

বনায়ন বা বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা

বৃক্ষ মানুষের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু। বৃক্ষ শুধু কলকারখানা আর যানবাহনের নিঃসরণকৃত কার্বন ডাইঅক্সাইডই শোষণ করে না, মানুষ তথা সমগ্র প্রাণিকূলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডও শোষণ করে নেয় এবং মানুষ ও প্রাণিকূল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে তার জোগান দেয় বৃক্ষ। এছাড়া বৃক্ষ প্রাণিজগৎকে খাদ্য দেয়। মানুষকে দেয় নানা স্বাদের ফল। বৃক্ষ নানা বর্ণের নানা গন্ধের ফুলে সুশোভিত করে রাখে পৃথিবীকে। আর ফুল থেকেই আমরা মধু পাই। বৃক্ষ আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি, দালান, অট্টালিকা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
নৌকা, জাহাজ, লঞ্চ, রেললাইন নির্মাণে এবং বাঁধ ও সেতু নির্মাণেও কাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ আমাদের জ্বালানির প্রয়োজনীয়তাও মিটিয়ে থাকে। আমাদের জীবন রক্ষার নানা ওষুধও আমরা পেয়ে থাকি বৃক্ষ ও বনাঞ্চল থেকে। বৃক্ষ প্রকৃতিকে শীতল রাখে, বৃক্ষের ছায়ায় আমরা শান্তির পরশ পাই। বৃক্ষ ও বনাঞ্চল ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের বাসগৃহকে রক্ষা করে। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে একটি দেশে মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে ১৬% বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে আছে ৯/১০ শতাংশ বনাঞ্চল। অর্থাৎ অর্ধেকের চেয়েও কম। আর ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে মাত্র ৫ ভাগ। ফলে প্রায় প্রতি বছর সিডর, নার্গিস, আইলা ইত্যাদি নামের ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদেশের উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। বিধ্বস্ত হচ্ছে লোকালয়, গাছপালা, ফসলের মাঠ।

বৃক্ষরোপণ অভিযান

বাংলাদেশে বনাঞ্চলকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং সারা দেশে নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের জন্য প্রতি বছর সরকার বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী এ অভিযান চলে। এ সময় জনগণ নিকটস্থ নার্সারি থেকে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারে। এ অভিযান চলাকালে মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও চার রোপণের পদ্ধতি সম্পর্কে টিভিসহ অন্যান্য প্রচার মাধ্যমেও শিক্ষা দেওয়া হয়। জনগণকে সচেতন করাই এর উদ্দেশ্য।

এ ব্যাপারে সরকারকে শুধু বর্ষাকালে সপ্তাহ বা পক্ষকালব্যাপী নয় বরং সারা বছরব্যাপী উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সারা বছরই প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যেক বাড়ির আঙিনা, বাড়ির পাশের জমিতে ফলদ গাছ এবং বন গাছের বাগান করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশের সমস্ত সড়কপথ এবং রেলপথের দুই পাশে পরিকল্পিত উপায়ে গাছ লাগাতে হবে এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় ৭৫০ কিলোমিটার এলাকায় বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে বাঁধের উপর এবং আশেপাশে ব্যাপক বনায়ন করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে উপকূলীয় জনগণ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে অনেকটা রেহাই পাবে। দেশের অভ্যন্তরে যেসব নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাঁধেও একইভাবে বনায়ন করতে হবে। ফলে বন্যার সময় বাধ ভাঙার আশঙ্কা থাকবে কম। বাংলাদেশে অনেক পাহাড়ি এলাকা আছে যেখানে বড়ো বড়ো বৃক্ষ তেমন একটা নেই। ওইসব অঞ্চলে বন বিভাগের উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করে বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

উপসংহার

বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করলেই বৃক্ষরোপণ অভিযান বা বনায়ন কর্মসূচি যে সফল হবে না একথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করতে হলে সরকারের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। বনবিভাগের পাশাপাশি সরকার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে বৃক্ষরোপণ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব দিতে পারে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে বৃক্ষরোপণ বা বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ধরনের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকলে বৃক্ষরোপণ অভিযান বা বনায়ন কর্মসূচি সাফল্যের পথে অগ্রসর হবে এবং সদর হবে আমাদের পৃথিবী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url