নেটওয়ার্ক কাকে বলে - নেটওয়ার্ক টপোলজি কি

নেটওয়ার্ক কাকে বলে? নেটওয়ার্ক টপোলজি কি? আপনি কে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে নেটওয়ার্ক কাকে বলে এবং নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। আশা করি উক্ত আর্টিকেলটি আপনাকে নেটওয়ার্ক কাকে বলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে সহায়তা করবে।
নেটওয়ার্ক কাকে বলে
প্রিয় পাঠক নেটওয়ার্ক কাকে বলে আপনি যদি এ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ নেটওয়ার্ক কাকে বলে - নেটওয়ার্ক টপোলজি কি

ভূমিকাঃ নেটওয়ার্ক কাকে বলে

দুই বা দুইয়ের অধিক কম্পিউটারকে যোগাযোগের কোন মাধ্যম ব্যবহার করে একসাথে কানেক্ট করলে যদি কম্পিউটার সমূহ ভেতর তথ্য উপাত্ত আদান-প্রদান করা সম্ভব হয় তাহলেই আমরা সেটিকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে পারি। দুই তিনটি কম্পিউটার একত্রে নেটওয়ার্ক বিষয়টি এমন নয় সাধারণত অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে সংযুক্ত থাকাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা যেতে পারে। বর্তমানে নেটওয়ার্ক ছাড়া কম্পিউটার অচল।
আমরা যতক্ষণ একটি কম্পিউটার কি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত না করি ততক্ষণ পর্যন্ত কম্পিউটার ব্যবহার করার মজাটাই বুঝতে পারি না। কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে নেটওয়ার্কের প্রয়োজন অপরিসীম। একজন ইউজার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার কাছে না থাকা রিসোর্স খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। নেটওয়ার্কের ধারণা পুরোপুরি ভাবে পেতে হলে আমাদেরকে কিছু নেটওয়ার্ক সংলগ্ন যন্ত্র সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। নিচে এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
  • সার্ভারঃ সার্ভার কথাটি শুনলেই হয়তো আপনার অনেকে বুঝতে পারছেন যে এটি সার্ভ করে। সার্ভার বলতে এমন একটি শক্তিশালী কম্পিউটার কে বোঝায় যা নেটওয়ার্কের অনেক কম্পিউটার কে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। একটি নেটওয়ার্কে একটি সার্ভার নয় বরং অনেকগুলো সার্ভার কানেক্টেড থাকতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
  • ক্লায়েন্টঃ যদি কেউ কারো কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করে থাকে তাহলে ওই সেবা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে ক্লায়েন্ট বলা যেতে পারে। নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও কথাটি ঠিক এমনই। কম্পিউটার সার্ভারে অনেক ধরনের তথ্য থাকে আরে তথ্য যারা নিয়ে থাকে তাদেরকেই ক্লায়েন্ট বলা হয়। ভাষায় বলতে গেলে ধরুন আপনি কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কাউকে কোন ইমেইল পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারটি ক্লাইন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। আর ইমেইল পাঠানো কাজটি সম্পন্ন করে দেবে সার্ভার।
  • মিডিয়াঃ যে সকল বস্তু ব্যবহার করে কম্পিউটার গুলোকে একসাথে কানেক্ট করে দেওয়া হয় সেটিই হচ্ছে মিডিয়া। যেমন বৈদ্যুতিক তার, অপটিক্যাল ফাইবার, কো এক্সিয়াল তার ইত্যাদি সকল বস্তুকে মিডিয়া বলা যেতে পারে। বর্তমানে মিডিয়া ব্যবহার না করেও ওয়ারলেস পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা যায়। এটি সম্ভব হয় ওয়াই ফাই এর মাধ্যমে।
  • নেটওয়ার্ক এডাপ্টারঃ একটি কম্পিউটারকে সরাসরি নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দেওয়া সম্ভব নয় এটি করার জন্য কম্পিউটারের সাথে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারেস্ট কার্ড লাগাতে হয়। নেটওয়ার্ক ইন্টারেস্ট কার্ড লাগানোর পর এই কার্ডগুলো মিডিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান এবং সংগ্রহ করে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারকে দিতে পারে। এছাড়া এটি কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিতে পারে।
  • রিসোর্সঃ ক্লায়েন্ট এর কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয় তাকেই বলা হয় রিসোর্স। ধরুন আপনার কম্পিউটারের সাথে একটি প্রিন্টার অথবা একটি ফ্যাক্স মেশিন লাগানো আছে তাহলে ওইটি হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটারের মাধ্যমে কেউ যদি সার্ভারে থাকা কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে সেটিও এক ধরনের রিসোর্স। আপনার কম্পিউটারে থাকা কোন ছবি, ভিডিও বা ফাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যরাও যদি ব্যবহার করতে পারে তাহলে আপনার কম্পিউটারটি একটি রিসোর্স।
  • ইউজারঃ সার্ভার থেকে যে ক্লায়েন্ট রিসোর্স ব্যবহার করে তাকেই ইউজার বলা হয়ে থাকে।
  • প্রটোকলঃ কম্পিউটার কে একসাথে সংযুক্ত করতে হলে একটি কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারে যোগাযোগ করার জন্য বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় এ সকল নিয়ম মেনে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা আগে এ বিষয়টি ঠিক করে নেয় যে কোন ভাষায় কোন ধরনের নিয়ম মেনে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে। এ সকল নিয়মগুলো কেই প্রটোকল বলা হয়ে থাকে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব পেজ ব্যবহার করার জন্য প্রটোকল হলো http অর্থাৎ হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল এবং https অর্থাৎ হাইপারটেক্স ট্রান্সফার প্রোটোকল সিকিওর।

নেটওয়ার্ক টপোলজি কি

কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়, যেন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। জুড়ে দেওয়া কম্পিউটারগুলোর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
  • PAN (Personal Area Network)
  • LAN (Local Area Network)
  • MAN (Metropolitan Area Network)
  • WAN (Wide Area Network)
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে নেটওয়ার্ক (ব্লু-টুথ এর মাধ্যমে) তৈরি করা হয় তা হলো PAN। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়, এগুলো সবই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN । সচরাচর একটি শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো MAN। দেশ জুড়ে বা পৃথিবী জুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো WAN এই নেটওয়ার্কের অন্তর্গত কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপোলজি।

বাস টপোলজি কাকে বলে

বাস টপোলজিতে একটা মূল ব্যাকবোন বা মূল লাইনের সাথে সবগুলো কম্পিউটারকে জুড়ে দেওয়া হয়। বাস টপোলজিতে কোনো একটা কম্পিউটার যদি অন্য কোনো কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে সব কম্পিউটারের কাছেই সেই তথ্য পৌঁছে যায়। তবে যার সাথে যোগাযোগ করার কথা কেবল সেই কম্পিউটারটি তথ্যটা গ্রহণ করে। অন্য সব কম্পিউটার তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করে। এরূপ টপোলজিকে বাস টপোলজি বলা হয়।

রিং টপোলজি কাকে বলে

রিং টপোলজি এই নামটি শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন, রিং টপোলজি হবে গোলাকার বৃত্তের মতো। এই টপোলজিতে প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। এই টপোলজিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য যায় একটা নির্দিষ্ট দিকে। তবে মনে রেখো, রিং টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে কিন্তু বৃত্তাকারে থাকার দরকার নেই; সেগুলো এলোমেলোভাবে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সব সময়েই কম্পিউটারগুলোর মাঝে বৃত্তাকার যোগাযোগ থাকে, তাহলেই সেটি রিং টপোলজি। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে।

স্টার টপোলজি কাকে

কোনো নেটওয়ার্কের সবগুলো কম্পিউটার যদি একটি কেন্দ্রীয় হাব (Hub)/সুইচ (Switch)-এর সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে বলে স্টার টপোলজি। এটি তুলনামূলকভাবে একটি সহজ টপোলজি এবং অনুমান করা যায়, কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়, তাহলে সে স্টার টপোলজি ব্যবহার করবে। এই টপোলজিতে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও বাকি নেটওয়ার্ক সচল থাকে। কিন্তু কোনোভাবে কেন্দ্ৰীয় হাব/সুইচ নষ্ট হলে পুরো নেটওয়ার্কটিই অচল হয়ে পড়বে।

ট্রি টপোলজি কাকে বলে

ট্রি টপোলজি ট্রি মানে হচ্ছে গাছ। এই টপোলজিটাকে গাছের দেখতে মনে হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ট্রি টপোলজি দেখতে একটি গাছের কান্ড থেকে ডাল গজায় এবং ওই ডাল থেকে আরও বেশ কয়েকটি ডাল বের হয় এটিও দেখতে ঠিক এমনই। এই টপোলজিতে একটি মজার বিষয় হলো এখানেই। এটি দেখতে কাছের মত মনে হয় তাই এটিকে ট্রি টপোলজি বলা হয়ে থাকে।

মেশ টপোলজি কাকে বলে

মেশ টপোলজি এই টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত থাকে এবং একাধিক পথে যুক্ত হতে পারে। এখানে কম্পিউটারগুলো শুধু যে অন্য কম্পিউটার থেকে তথ্য নেয় তা নয় বরং সেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারের মাঝে বিতরণও করতে পারে। যদি এমন হয় যে একটি নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটারই সরাসরি নেটওয়ার্কভুক্ত অন্য সবগুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে বলে কমপ্লিট মেশ।

শেষ কথাঃ নেটওয়ার্ক কাকে বলে - নেটওয়ার্ক টপোলজি কি

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম নেটওয়ার্ক কাকে বলে, নেটওয়ার্ক টপোলজি কি, বাস টপোলজি কাকে বলে, রিং টপোলজি কাকে বলে, স্টার টপোলজি কাকে বলে, ট্রি টপোলজি কাকে বলে এবং মেশ টপোলজি কাকে বলে ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি উত্তর আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা এবং নেটওয়ার্ক টপোলজি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।
আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এমন বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আমি বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সাথে থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url