পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে - পরমতসহিষ্ণুতা রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমরা এই আর্টিকেলে পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে এবং পরমতসহিষ্ণুতা রচনাটি তুলে ধরেছি। আপনি যদি পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে এই সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে খুব সহজে আমাদের এই আর্টিকালের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে
প্রিয় পাঠক আপনি যদি পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে এবং পরমতসহিষ্ণুতা রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে - পরমতসহিষ্ণুতা রচনা

ভূমিকা

বিশাল কলকারখানায় দাঁতওয়ালা চাকা, সিলিকন চিপের বর্ণিল প্রদর্শন অথবা ঘড়ির টিকটিক শব্দ সভ্যতা নয়। বরং সভ্যতা এক অর্থে মানুষের মনোজাগতিক উৎকর্ষ-নির্ভর। আর প্রকৃত সভ্য মানুষ অপরকে সম্মান করতে শেখে সে জানে এই পৃথিবীতে তার মতোই অন্য দশজনের অধিকার আছে। তাই তো সে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়।

পরমতসহিষ্ণুতা কাকে বলে

পরমতসহিষ্ণুতা একটি আধুনিক ধারণা। অন্যের মনোভাব ও অভিমত, ধারণা বা বিশ্বাসের সাথে একমত পোষণ না করলেও তার প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা বা সহনশীলতা প্রদর্শনের নাম পরমতসহিষ্ণুতা। এই ধারণা মানুষের ধর্মীয়, রাজনীতিক, আর্থনীতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রসহ সকল বিষয়ে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতার মূল ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আধুনিক বিশ্ব অগ্রসর হচ্ছে বহু মত ও পথকে যুগপৎ ধারণ করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মত ও পথের নানা পার্থক্য নিয়ে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এটা অনেকেই মানছেন যে, প্রতিটি মানুষ তার চিন্তাকে প্রকাশ করার অধিকার রাখে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত শ্রেণির যতই প্রতিকূলে যাক না কেন।
আর এই স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া পরমতসহিষ্ণুতার নামান্তর। অবশ্য পরমতে শ্রদ্ধা করার মানে এই নয় যে নিজের চিন্তা বা বিবেকের প্রকাশ ঘটানো থেকে বিরত থাকা। নিজস্ব চিন্তা যদি যুক্তির মানাণ্ডে যাচাই করার পর পার পেয়ে যায় তবে তার পক্ষে দাঁড়ানো নিশয়ই কেবল সংগত নয়, অভিপ্রেতও।

কিন্তু তাই বলে যদি আপাতত কোনো ভিন্নমত স্বীকৃতি বা প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তবে তাকে মেনে নেওয়াই কাম্য। সেই সঙ্গে নিজস্ব যৌক্তিক মত প্রদর্শন ও প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামও অব্যাহত থাকতে পারে। আবার নিজের চিন্তার সঙ্গে অন্যের যুক্তিপূর্ণ চিন্তার অংশবিশেষ মিলে গেলে তাকে একীভূত করা চলে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, নিজস্ব ভিন্নমত কিছু থাকলেও বিসর্জন দিতে হবে।

পরমতসহিষ্ণুতার স্বরূপ

পরমতসহিষ্ণুতার প্রশ্ন আসলে অনেকেরই মনে পড়বে ভলতেয়ারের সেই অমর বাণীটি। তিনি বলেছিলেন, তোমার কথার সঙ্গে আমি একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। এখানেই পরমতসহিষ্ণুতার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। বস্তুত পৃথিবীতে মানুষের একক জ্ঞান কখনোই পরিপূর্ণ হতে পারে না।
একজন যা জানেন অন্যজন হয়তো তা জানেন না, আবার এ ব্যক্তি যা যানেন না অন্যে হয়তো তা জানেন। কাজেই তাদের পরস্পরের মতামতের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমৃদ্ধ হয়, ভুল ধারণার অপনোদন হয়, যথার্থ ধারণা গড়ে ওঠে। এই কারণে অন্যের মতামত শোনা, বুঝতে চেষ্টা করা ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে বিচার করার মানসিকতা আমাদের থাকা উচিত।

পরমতসহিষ্ণুতার প্রয়োগ

অবশ্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে পরমতসহিষ্ণুতার নামে আমরা যেন অসত্য, অন্যায় ও যুক্তিহীনতাকে স্বীকার করে না নিই। পরমতসহিষ্ণু হলেও সত্য-মিথ্যার সীমারেখা নির্ণয়ে আমাদের অবিচল থাকা জরুরি। পাশাপাশি এও ভুললে চলবে না যে, নির্বিচারে অন্যের মতামতে সম্মতি প্রদান নিছক চাটুকারিতার পর্যায়ে পড়ে।

কাজেই মতামতের ক্ষেত্রে চাই যৌক্তিক সহিষ্ণু আচরণ। তা যেমন মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় তেমনই সমাজের সুষ্ঠু, সুন্দর, ন্যায়ানুগ নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়। অন্যের অন্যায় মতামতের প্রতিবাদহীন আনুগত্য সবসময়ে কায়েমি স্বার্থের পক্ষে যায়।
অন্যায়কারী, অত্যাচারী, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী ও স্বার্থান্বেষী মহল এর সুবিধা নেয়। ফলে সাধারণ মানুষের অকল্যাণ হয়। সমাজে শোষণ ও বৈষম্য বাড়ে। সামাজিক ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হয়। বৃহত্তর ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতার ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। গণতান্ত্রিক সমাজে চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে পরমতে শ্রদ্ধাশীল থাকাটা জরুরি। তা প্রকারান্তরে ব্যক্তিস্বাধীনতারই নামান্তর।

সংবাদপত্রের এই স্বাধীনতা সমাজের কল্যাণ ও অগ্রগতির পথে সহায়ক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে যদি তার মাধ্যমে সমাজে সুস্থ ও মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটে। সমাজে চিন্তার সুস্থতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে সংঘাতের পথ পরিহার করাও সম্ভব হয়। এবং তা ব্যাপক পরিসরে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।

উপসংহার

কাজেই দেখা যাচ্ছে, সামাজিক অগ্রগতির ও চিন্তাধারার বিকাশে পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক গুণ। সমাজজীবনে সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরমতসহিষ্ণুতার মাত্রাও উন্নীত ও সম্প্রসারিত হচ্ছে এখন বিশ্ব পরিসরে। বিশ শতকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে,

পরমতসহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করে ন্যূনতম কর্মসূচি ও লক্ষ্যে ঐকমত্যে উপনীত হয়ে বিশ শতকের বিশ্ব অনেক সংঘাত এড়াতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায়, পরমতসহিষ্ণুতার পথ ধরেই বিশ্ব নানা ইস্যুতে বিরোধ ও মতপার্থক্য নিরসন করে একুশ শতকের যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে পারবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url