কর্মমুখী শিক্ষা রচনা - কর্মমুখী শিক্ষা রচনা ক্লাস 8

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি নিশ্চয়ই কর্মমুখী শিক্ষা রচনাটি খুঁজছেন। আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে কর্মমুখী শিক্ষা রচনাটি তুলে ধরেছি। এই রচনাটি অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণীর সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই প্রযোজ্য।
কর্মমুখী শিক্ষা রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি কর্মমুখী শিক্ষা রচনাটি পড়তে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি আমাদের উল্লেখিত রচনাটি আবদার পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে সহায়তা করবে। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ কর্মমুখী শিক্ষা রচনা - কর্মমুখী শিক্ষা রচনা ক্লাস 8

ভূমিকা

বৃত্তিমূলক শিক্ষা হলো জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের সহায়ক শিক্ষা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হওয়া দরকার। বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়।

সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। উন্নত বিশ্বে বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা কর্মমুখী শিক্ষাই আদর্শ শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন।

প্রচলিত পদ্ধতি বনাম বৃত্তিমূলক শিক্ষা

প্রকৃত শিক্ষাই জীবনকে আলোকিত করে। যে শিক্ষা মানুষকে আচার-আচরণ, মান-সম্মান আর শিষ্টাচার শিক্ষা না দেয় সে শিক্ষায় কোনো লাভ নেই। পার্থিব জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই আমাদের দরকার শিক্ষা। প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থায় বাস্তব জীবনভিত্তিক কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না। সেখানে পাঠ্যপুস্তকই একমাত্র বিষয়।

এ ধরনের সনদ সর্বস্ব শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পায় না। ফলে তারা বেকার বসে থাকে। আমাদের দেশের বেকার সমস্যাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। যে হারে দেশে শিক্ষিত লোক বাড়ছে সেই অনুপাতে চাকরির ব্যবস্থা সরকারের পক্ষে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরূপ প্রেক্ষাপটে বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও দেওয়া হয়। ফলে লেখাপড়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে। ফলে চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে আর ছুটতে হয় না। প্রচলিত শিক্ষায় প্রযুক্তিগত কোনো ধারণা থাকে না বলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে মাছিমারা কেরানি হওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না।

বৃত্তিমূলক শিক্ষার পদ্ধতি

এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিশ্ব আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে। শিল্প- বাণিজ্য ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করলে পেশাগত প্রশিক্ষণের কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হয় না। বৃত্তিমূলক শিক্ষার কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক-

কৃষি

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপর আমাদের দেশ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কৃষিকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে নতুন চিন্তাভাবনার উদ্ভব হবে। কৃষির উন্নতি হলে দেশের উন্নতি সম্ভব। কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ ফুলের চাষ করতে পারে।

কারিগরি শিক্ষা

বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণকালে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। কারিগরি শিক্ষা অর্জনের জন্য একটি কাজ বেছে নিতে হবে। পড়াশুনার পাশাপাশি সেই কাজ শিখতে হবে। কারিগরি শিক্ষা মানে যন্ত্রের ও হাতের কাজ শেখা। এছাড়াও ইস্পাতের কারখানা, সিমেন্টের কারখানা, নদীর বাঁধ নির্মাণ,
আরও পড়ুনঃ অধ্যবসায় রচনা
কলকারখানায় যন্ত্রপাতি নির্মাণ, টেইলারিং ও সেলাই শেখা, ফাস্ট ফুডের দোকান দেওয়া, চাইনিজ রেস্তোরাঁয় কাজ করা, হোটেল ম্যানেজমেন্ট শেখা, ড্রাইভিং শেখা, গাড়ি মেরামতের কাজ শেখা, টাইপরাইটিং শেখা, কম্পিউটার কোর্স করা, স্টেশনারি সাপ্লাইয়ের কাজ করা ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প

বৃত্তিমূলক শিক্ষার অংশ হিসেবে কুটিরশিল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজ শেখা যায়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা বা বিসিক— এ ধরনের কাজ শেখায়। যেমন- পুতুল তৈরি, বাটিকের কাজ, ফুল তোলার কাজ, এমব্রডারি, উলবোনা, বেত ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদি।

আমাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচিতে তাঁত শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটিকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এছাড়া সোনালি আঁশ বলে খ্যাত পাটের তৈরি জিনিসপত্র, যেমন শিকা তৈরি, পাটের ব্যাগ, ঝুলনা ইত্যাদি বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আনতে হবে।
বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে মাটির তৈরি খেলনা, ফুলদানি, কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, খেলনা, শিশু-কিশোরদের জন্য খেলনা তৈরির কাজ কাপড়ের ফুল তৈরির কাজ, পাদুকা বা চামড়া শিল্পের কাজও জনপ্রিয় করা। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন ।

বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলিটেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ। এছাড়া রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে কিছু কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার।
মাত্র কয়েকটি বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো হলো- কার্পেন্টিং বা কাঠের কাজ, টাইপ-রাইটিং ইত্যাদি শেখা। সারা দেশব্যাপী মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষা পর্যায়ে কম্পিউটার কোর্সসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।

উপসংহার

বৃত্তিমূলক শিক্ষার ফলে কর্মসংস্থান হবে, জীবিকা অর্জন সহজ হবে, উৎপাদন বাড়বে। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হবে। আর্থনীতিক স্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য মোচনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সৃষ্টি হবে। অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবন কাটাতে হবে না।
স্বাধীনভাবে পেশা নির্বাচন করা সম্ভব হবে। নারী সমাজের আর্থিক ভিত্তি মজবুত হবে। শিক্ষার মান বজায় থাকবে। যুব সমাজ হতাশামুক্ত মাদকাসক্তি এবং মাদকমুক্ত হবে। তাই আমাদের উচিত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যাপকভাবে প্রচলন করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url