বাংলাদেশের নদ নদী রচনা

বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য দিয়ে বিষয়গুলো রয়েছে এর মধ্যে রচনা অন্যতম। পরীক্ষায় বিভিন্ন রকম রচনা এসে থাকে। তাই আমরাই আর্টিকেলে বাংলাদেশের নদ নদী রচনাটি তুলে ধরেছি। রচনার পাশাপাশি আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ নদী সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। আশা করি আমাদের উল্লিখিত রচনাটি আপনার পরীক্ষায় আসলে খুব সহজেই আপনি এটি লিখে ভালো নম্বর পেতে পারেন।
বাংলাদেশের নদ নদী রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের নদ নদী রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের নদ নদী রচনা

ভূমিকা

বাংলাদেশে বয়ে চলেছে অসংখ্য ছোটো-বড়ো নদী। নদ-নদী এদেশকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে। তাই নদীর সঙ্গে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষের গভীর মিতালি। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এদেশের বুকে অসংখ্য নদ-নদীর সমাবেশ দেখে একে বলেছেন, 'জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা'। পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ দেশটি নদ-নদী বিধৌত পলিমাটি দ্বারা নিজেকে উর্বর করে তুলেছে এবং ফুলে-ফসলে এদেশের মানুষকে করেছে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী। বাংলাদেশে নদ-নদীর অবস্থান এবং অপরূপ সৌন্দর্য বাংলাদেশকে করে তুলেছে সুজলা- সুফলা এত মনোমুগ্ধকর পরিবেশের অধিকারী এবং শস্য-শ্যামল।

বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী

বাংলাদেশে প্রায় সাতশ নদ-নদী রয়েছে। এসব নদীর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি প্রভৃতি প্রধান নদ-নদী। এগুলোর উপনদী ও শাখা নদীগুলো সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। নিচে কয়েকটি প্রধান নদ-নদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলো-

পদ্মা নদী

পদ্মা এদেশের প্রধান নদী।হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে গঙ্গা নামে পদ্মা নদীর উৎপত্তি। ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহী জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে এসে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা নদী রাজশাহী জেলার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দের নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আবার এ মিলিত স্রোত পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরে মেঘনার সঙ্গে মিশেছে। পদ্মার প্রধান উপনদী মহানন্দা ও পুনর্ভবা। এর শাখানদীগুলো হলো- কুমার, মাথাভাঙা, ভৈরব, গড়াই, মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁ।

মেঘনা নদী

বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান নদী হলো মেঘনা। মেঘনা নদী নাগা-মণিপুর জলবিভাজিকা থেকে উৎপন্ন হয়ে সিলেট সীমান্তের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মিলিত স্রোত আজমিরিগঞ্জের কাছে এসে 'কালনী' নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এরপর ময়মনসিংহ জেলার ভৈরববাজারের কাছে এসে এ নদী মেঘনা নাম ধারণ করেছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার তিতাস ও চাঁদপুরের ডাকাতিয়া মেঘনার দুটি প্রধান শাখা নদী। মেঘনার প্রধান উপনদীগুলো হলো- সোমেশ্বরী, কংস, গোমতী প্রভৃতি। মেঘনাকে বলা হয় বাংলাদেশের চিরযৌবনা নদী।

যমুনা নদী

হিমালয় পর্বত হলো যমুনা নদীর উৎপত্তিস্থল। তিব্বতের সানপু নদীটি আসামের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দেওয়ানগঞ্জের কাছে এ নদীটি একটু পূর্ব দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে এবং অপর শাখাটি দক্ষিণ দিক দিয়ে যমুনা নামে প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দের কাছে এসে যমুনা নদী পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনা নদীর পূর্ব নাম ছিল জোনাই। যমুনা নদীর প্রধান উপনদীগুলো হলো : তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, আত্রাই, সুবর্ণশ্রী প্রভৃতি। যমুনার দীর্ঘতম এবং বৃহত্তম উপনদী হলো করতোয়া যমুনার শাখানদী হলো ধলেশ্বরী।

কর্ণফুলি নদী

কর্ণফুলি বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান নদী। এটি বাংলাদেশের অন্যতম খরস্রোতা নদী। কর্ণফুলি নদীর জন্ম আসামের লুসাই পাহাড়ে। রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এ নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এ নদীর উপরে বাঁধ দিয়েই কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। আবার, এ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে কর্ণফুলি কাগজ ও রেশম শিল্প-কারখানা। কর্ণফুলি নদীর উপনদীগুলো হলো : চেঙ্গি, কাসলং, মাইনী, রাখিয়াং, হালদা, বোয়ালখালী, কাসালং প্রভৃতি।

ব্রহ্মপুত্র নদী

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবরে এ নদের উৎপত্তি। তিব্বতের পূর্ব দিক ও আসামের পশ্চিম দিক দিয়ে এ নদ প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর একটি শাখা দক্ষিণ দিকে যমুনা নামে প্রবাহিত হয়ে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং অপর শাখাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান শাখানদী হলো : যমুনা। ব্রহ্মপুত্রের উপনদীগুলো হলো : দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা, করতোয়া প্রভৃতি। এ নদের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য।

নদ-নদীর অবদান

আবহমান বাংলায় নদ-নদীগুলোর অবদান অপরিসীম। নদ-নদীর শীতল জলের প্রবাহ এদেশের মাটিতে যেমন প্রাণরস সঞ্চার করে ফসলের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে তেমনই প্রাত্যহিক জীবনকে জীবিকা সন্ধানের জন্য করে তোলে কর্মচঞ্চল । বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অসংখ্য মানুষ জীবিকার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল। জেলে আর মাঝিদের জীবিকার প্রধান উৎস নদ- নদী।
নদী থেকে নানা প্রজাতির মাছ আহরণ করে এদেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করা হয়। সহজে ও সপ্তায় পণ্য পরিবহণের জন্য নৌপথের ব্যবহার এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারসহ যোগাযোগ ও পরিবহনে নদীর গুরুত্ব এই আধুনিক যুগেও একটুও কমেনি। বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নদীগুলোর রয়েছে বিশেষ অবদান। বর্ষাকালে নদীবাহিত পলি এদেশের গুলো উর্বর করে তোলে। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করার জন্য নদীর পানির প্রয়োজন হয়।

নদ-নদীর ক্ষতিকর প্রভাব

বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নদ-নদীর অপরিসীম ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও অনেক সময় এগুলো বড়ো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদেশের প্রধান দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ— নদীভাঙন ও বন্যার জন্য নদ-নদীগুলোই বেশি দায়ী। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে উঠে দুকূল ছাপিয়ে ফসলের জমি ও লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে মারাত্মক বন্যার কবলে পড়ে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।

উপসংহার

এদেশের মানুষের জীবনে নদী এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদ-নদী বিধৌত পলিমাটি দ্বারাই গড়ে উঠেছে এদেশের ভূ-অস্তিত্ব। আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে নদীগুলোর রয়েছে বিশিষ্ট অবদান। তাই ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও নদ-নদীগুলো আমাদের দেশ ও জাতির স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নদীগুলোর নাব্যতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। গ্রহণ করা জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url