বইমেলা রচনা - বইমেলা রচনা class 9

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বইমেলা রচনাটি খুঁজছেন তাহলে একজন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকালে বইমেলা রচনাটি খুব সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি যা আপনি সহজে মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে পারবেন।
বইমেলা রচনা
আশা করি রচনাটি আপনার উপকারে আসবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি বইমেলা রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয় হয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বইমেলা রচনা - বইমেলা রচনা class 9

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, "দিবে আর নিবে, মেলাবে মিলিবে'- এটাই হলো সংস্কৃতির ধর্ম এবং সভ্যতার বিকাশ। বইমেলাও মানুষে মানুষে, দেশে দেশে, সংস্কৃতিতে সংস্কৃতিতে মিলিয়ে দেয়। চিনিয়ে দেয় একটা জাতির শিল্প-সংস্কৃতি-সমাজকে। তাই তো বইমেলায় জ্ঞানপিপাসু কৌতূহলী জিজ্ঞাসুদের ঢল নামে। সংবেদনশীল ব্যক্তিবর্গের বিচরণে ভিড় জমে বইমেলায়।

একই সঙ্গে বইমেলা লেখক-পাঠক- প্রকাশকের মিলন কেন্দ্র। বিশ্বের সভ্য জাতিগুলোর আত্মিক মিলন ঘটাতে গ্রন্থমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রন্থমেলা জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে দেশের মানুষের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

বইমেলার তাৎপর্য

বই জ্ঞানের প্রতীক, আনন্দের প্রতীক। বই জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়। দেশে সুনাগরিক গড়ে তোলার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো সুলিখিত, সৃষ্টিশীল ও মননশীল বই। আর এ সকল বইয়ের সমাহার হলো বইমেলা। বইমেলা হলো জ্ঞানের ভান্ডার। জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বইমেলার ভূমিকা অপরিসীম।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন যে, মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে। কাজেই বইমেলা যুগের সেতুবন্ধন। বইমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য সম্পর্কে হৃদয়কে জাগিয়ে তোলা। দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ও সমৃদ্ধিতে বইমেলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বইমেলার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো পাঠককে শুধু বই পড়া নয়, পাশাপাশি বই কেনার প্রতিও আগ্রহী করা।

বইমেলার ইতিবৃত্ত

১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে নিউইয়র্ক শহরে প্রথম বইমেলার আয়োজন করা হয়। ১৮৭৫ সালে একশ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করলেন বড়ো এক বইমেলার। ত্রিশ হাজার গ্রন্থ এই মেলায় প্রদর্শিত কি হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় বিশ্ববিখ্যাত ফ্রাংকফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা সূচিত হয়।

আন্তর্জাতিক বইমেলা

সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার বইয়ের মেলাকেই বলা হয় আন্তর্জাতিক বইমেলা। এ ধরনের মেলার অভিজ্ঞতা বড়োই আকর্ষণীয়। এ ধরনের মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকরা অংশগ্রহণ করেন। কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক দেশ থেকে অতিথি নির্বাচন করে তাদের মেলায় আমন্ত্রণ জানান। আন্তর্জাতিক বইমেলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে।
আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জাপান, চীন, ভারতসহ আরও অনেক দেশেই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বইমেলা হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের দেশের খ্যাতিমান কবি-লেখকগণসহ অনেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হন। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কয়েকজন সাহিত্যিকও এ ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করেন।

অমর একুশে বইমেলা

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে আমাদের দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের মেলার আয়োজন করে মুক্তধারা। পরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মাত্র সাত দিনের জন্য এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। ইতোমধ্যে বইমেলার প্রতি প্রকাশক ও পাঠকের বিপুল উৎসাহ লক্ষ করা যায়। আশাতীত সার্থকতায় ১৯৭৮ সালে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।

এই উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। এরপর বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির যৌথ সহযোগিতায়। ১৯৮৫ সালে বইমেলার নাম দেওয়া হয় 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'। ১৯৮৫ সালের অমর একুশে বইমেলাই প্রথম একটি বইমেলার পূর্ণাঙ্গ আয়োজনে সম্পন্ন হয়। বইমেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যৌথভাবে।
এ মেলায় প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল স্থান লাভ করে। এর আগে সর্বোচ্চ ৭০/৮০টি স্টল ছিল। ধীরে ধীরে অমর একুশের বইমেলায় আরও লোক সমাগম হতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাস এলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতি, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। মেলা উপলক্ষ্যে বের হয় গান ও আবৃত্তির ক্যাসেট। বইমেলায় ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার উপস্থিতি।

মেলায় কিছু খাবারের স্টলও বসে। মেলার আয়তন বাড়তে থাকে স্টল সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে। এক পর্যায়ে বাংলা একাডেমির বাইরে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি মোড় পর্যন্ত মেলার আয়তন বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে মেলার স্থান সম্প্রসারিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ জুড়ে। বইমেলা এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির সাংস্কৃতিক মেলায় ।

উপসংহার

একুশের বইমেলা জাতির মনন ও কৃষ্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ মেলার সঙ্গে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও মননের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা ও জাতীয়তাবোধের উজ্জ্বল এক মিলন ক্ষেত্র অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ বইমেলা যাতে বারোয়ারি মেলায় পরিণত না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত।

অমর একুশে বইমেলা আন্তর্জাতিক মানের বইমেলায় রূপান্তরিত হোক। বইমেলা আমাদের গ্রন্থমনস্ক করে তুলুক। সকল প্রকার বৈষম্য দূর হোক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে- বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url