সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনাটি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনাটি পড়তে ইচ্ছে করে থাকেন
তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন
তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা
ভূমিকা
সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সমাজে বিপর্যয়
ডেকে আনে। সৃষ্টি করে মানুষের মনে বিষেষ ও ঘৃণা। তাই সাম্প্রদায়িকতা কোনো
শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটায় না। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িকতার ফলে হত্যা, দাঙ্গা,
লুণ্ঠন প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে, তাই সভ্যতার অগ্রগতিতে
সাম্প্রদায়িকতা আজ একটি কঠিন বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে।
কেন সাম্প্রদায়িকতা
'মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নাই।' সাম্প্রদায়িকতার ফলে এ নীতিবাক্য ধূলিসাৎ
হয়ে পড়েছে। নানা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সমাজের নেতৃস্থানীয় কিছু লোক সাধারণের
মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়। এর মধ্যে রাজনীতিক উদ্দেশ্যই প্রধান।
ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে নাড়া দিতে পারলেই তাদের সুপ্ত উদ্দেশ্য হাসিল
হয়।
আরও পড়ুনঃ দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনা
এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে শাসন করে অথবা শাসন করবে এটা কোনোভাবেই মেনে
নেওয়া যায় না। এটা হয়তবা তাদের উষ্কানিমূলক বক্তব্য। ফলে শুরু হয়ে যায়
গোলমাল, দাঙ্গা, মারামারি, খুনাখুনি প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কাণ্ডকারখানা। আর তখনই
কুচক্রীরা ঘোলাজলে মাছ ধরায় তৎপর হয়ে উঠেন। নিজেদের পাকাপোক্ত করে তোলেন।
উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা
পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মতো এ উপমহাদেশেও হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে
সাম্প্রদায়িকতা লক্ষণীয়। মোগল আমলে দোল খেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের
মধ্যে দাঙ্গা বেধেছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নানা জায়গায়
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে। ১৯২৭ সালের মধ্যে ১১২টি দাঙ্গার খবর জানা যায়।
এতে ৪৫০ জনের মৃত্যু ঘটে। ১৯৩০- ১৯৪৬ পর্যন্ত প্রতি বছর ভারতে দাঙ্গা সংঘটিত
হয়েছে। ১৯৪৬-১৯৯০ পর্যন্ত নানা ছোটোখাটো দাঙ্গা হয়েছে। বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র
করে সাম্প্রদায়িকতার যে দাঙ্গা শুরু হয়েছে তা অবর্ণনীয়। এ দাঙ্গায় হাজার
হাজার লোক প্রাণ দিয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতার ছোবল
সাম্প্রদায়িকতা মানব সমাজে কোনো সময় সুফল বয়ে আনে না। বরং মানুষের মধ্যে বিভেদ
সৃষ্টি করে। অশান্তির বিষবাষ্প ছড়ায়। দেশের আর্থনীতিক উন্নতি, রাজনীতিক
স্থিতিশীলতা ইত্যাদি মুখ থুবড়ে পড়ে। মানুষজন নিরাপত্তাহীনতার কবলে পড়ে।
সাম্প্রদায়িকতার যুগে বহু কিশোর, যুবক, শিশু,বৃদ্ধ বলি হচ্ছে। পৃথিবীকে স্বর্গ
করার প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে তা দিন দিন শ্মশানে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতার প্রসার
বর্তমান বিশ্বের প্রতি তাকালেই সাম্প্রদায়িকতা চোখে পড়ে। যেমন ভারত, পাকিস্তান,
যুগোশ্লাভিয়া, প্যালেস্টাইন, সাইবেরিয়া, বসনিয়া হারজেগোবিনা, মায়ানমার
ইত্যাদি দেশে শুধু ভিন্ন ধর্মে নয় সেখানে এখন গোত্রে গোত্রে দাঙ্গা হচ্ছে।
ইসরাইলের ইহুদি সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে প্যালেস্টাইন মুসলমানদের নির্মূল
করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কর্মমুখী শিক্ষা রচনা
মায়ানমারে নির্যাতিত হচ্ছে সব রোহিঙ্গা মুসলমান। ভারতের দৃশ্যও তাই। পাকিস্তান,
মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নির দাঙ্গা তো লেগেই আছে। এভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
একের পর এক বেড়েই চলেছে। এজন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড়োই প্রয়োজন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপিত না হলে সে দেশে রাজনীতিক অস্থিরতা বিরাজ করে।
ফলে দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা
সম্ভব হয় না। দেশের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানোও সম্ভব হয় না। ফলে দেশপ্রেম
জনসাধারণের মধ্যে জাগ্রত হয় না।
বহিঃশক্রতার আক্রমণের তীব্র ভয় থাকে। দেশের মানুষের মনে তখন শুধু বিদ্বেষ গড়ে
ওঠে। হিংসামূলক কার্যক্রমের ফলে দেশের স্বাধীনতা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা
হয়ে দাঁড়ায়। দেশকে সুশৃংখল এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে
সাম্প্রদায়িক হিংসামূলক কার্যক্রম ত্যাগ করা প্রয়োজন।
সাম্প্রদায়িকতা প্রতিকারের উপায়
কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যারা এ সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে নিজ স্বার্থ সিদ্ধির
জন্য তৎপর হয়ে উঠে। এদের চিহ্নিত করে এদের চরিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরে এদের
মুখোশ খুলে দিতে হবে। একটি দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকার গঠনে প্রত্যেক
সম্প্রদায়ের মানুষদেরকেই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এভাবেই
সাম্প্রদায়িকতার প্রতিকার করা সম্ভব। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, সাম্প্রদায়িকতা বিশ্ব বিবেকের কাছে নিঃসন্দেহে একটা ঘৃণার
বিষয়। মানব কল্যাণ পরিপন্থি এবং সভ্যতা বিধ্বংসী এ সাম্প্রদায়িকতা কোনোক্রমেই
বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। দেশের জনগণ সম্মিলিতভাবেই এগিয়ে এলে এ হানাহানি,
খুনাখুনি সমাজ থেকে অবশ্যই নির্মূল করা সম্ভব হবে। এ বিষবাষ্প সমাজ থেকে অপসারিত
হলেই মানব সমাজে সম্প্রীতির শান্তির বাতাস লাগবে এবং এভাবেই একটি শান্তিময়
পৃথিবী গড়ে উঠবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url