বাংলাদেশের দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলাদেশের দুর্নীতি ও তার প্রতিকার
রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একজন সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন।
বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো দুর্নীতি। আমরা এই
আর্টিকেলে বাংলাদেশের দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনাটি তুলে ধরেছি।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক
হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত
পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা
ভূমিকা
দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি সামাজিক সমস্যা। এটি দেশ ও জাতির উন্নতির প্রধান
অন্তরায়। বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো দুর্নীতি।
কারণ, দুর্নীতিই আজ একশ্রেণির মানুষের কাছে প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয়
প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরে
দুর্নীতির কালো ছায়া বিস্তার লাভ করেছে।
দুর্নীতির কারণে জাতীয় উন্নয়ন যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই অগ্রগতির চাকাও অচল
হয়ে পড়েছে। আমাদের এই সামাজিক সমস্যা দূর করতেই হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে
জাতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হবে।
দুর্নীতির সর্বগ্রাসী রূপ
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ
পরপর পাঁচবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল।
এদেশের দুর্নীতি সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করে
ফেলা, অবৈধভাবে সম্পত্তি দখল, গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ প্রদান না করা,
খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদি আত্মসাৎ করা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস চুরি, আয়কর ফাঁকি
দেওয়া, শুল্ক ফাঁকি দেওয়া, এছাড়াও চোরাচালান, কালোবাজারি, শেয়ারবাজারে
কারচুপি, প্রকৃত অপরাধের অভিযোগে থানায় মামলা না নেওয়া, কোথায় নেই দুর্নীতি?
এমনকি দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত গম, এতিমদের বস্ত্র, দুর্গত মানুষের জন্য ঢেউ
টিন ও খয়রাতি সাহায্য বণ্টন নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার
উন্নয়নের নামে টেন্ডারবাজি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরিতে নিয়োগ, যোগাযোগ, এমনকি
বিচারব্যবস্থায়ও দুর্নীতির আছর পড়েছে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ আজ
দিশেহারা। মূল্যবোধ, ন্যায়নীতির প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। যে দেশের মানুষ
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, সে দেশের মানুষ কখনো দুর্নীতির
কাছে পরাজিত হতে পারে না।
বাংলাদেশে দুর্নীতির ভয়াবহ ছোবলে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন জর্জরিত।
রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সবকিছুকেই কলুষিত করেছে
সর্বগ্রাসী দুর্নীতি। চাঁদাবাজিকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছে, টেন্ডারবাজি, টোলবাজি
ইত্যাদির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজরা অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে।
দুর্নীতি জাতীয় অগ্রগতির অন্তরায়
দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি আজ সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে কুরে কুরে
খাচ্ছে। সাধারণ মানুষের শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য দুর্নীতির কারণে ম্লান হয়ে
যাচ্ছে। দেশপ্রেমহীন নেতৃত্ব এবং দলতন্ত্রের একচেটিয়া প্রভাবে দেশের উন্নয়ন
সার্বিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে; লুণ্ঠিত হচ্ছে দেশের মূল্যবান সম্পদ; ব্যক্তি ও দলের
স্বার্থে সেগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।
আরও পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা
জনগণের দুঃখ ও দারিদ্র্য বিমোচন তো দূরের কথা, ক্রমেই বেড়ে চলছে ভূমিহীন দরিদ্র
মানুষের সংখ্যা। সৃষ্টি হচ্ছে বিপুল ধনবৈষম্য। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংস্থা ও
দাতাদেশ দুর্নীতিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তাই দুর্নীতির লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে এবং একে সমূলে ধ্বংস করতে হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ করার উপায়
আমাদের উপলব্ধি করতে হবে- অনেক সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন
দেশকে এভাবে আমরা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। রাজনীতি, অর্থনীতি যেহেতু একটি
দেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক, তাই সর্বত্রই নীতি-নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা করতে হবে
এবং রাজনীতিক দুর্বৃত্তায়নকে প্রতিরোধ করতে হবে।
যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দুর্নীতি বিস্তার রাজনীতিক
দুর্বৃত্তায়নের পথ খুলে দিয়েছে, তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এসব ক্ষেত্রে
নৈতিকভাবে উন্নত লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার
ব্যবস্থা করতে হবে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা নববর্ষ অনুচ্ছেদ
সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়ের ভিত্তিকে মজবুত
করতে হবে। দুর্নীতির অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা,
জনপ্রতিনিধি, আমলা, পুলিশ, কর্মচারী, পেশাজীবীদের চিহ্নিত করে তাদের ক্ষমতাচ্যুত
করে সামাজিকভাবে নিন্দিত করতে হবে।
দিতে হবে উপযুক্ত শান্তি। সত্যিকার দেশপ্রেমিক জনদরদিকে নেতা নির্বাচিত করতে হবে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
দুর্নীতিবাজদের প্রতি সমাজের সব মানুষের ঘৃণা জাগিয়ে দিতে হবে। তাদের সামাজিকভাবে
বয়কট করতে হবে।
উপসংহার
দুর্নীতির সর্বগ্রাসী থাবা থেকে রক্ষা পাওয়া গেলে দেশের বর্তমান উন্নয়নের ধারা
অব্যাহত থাকবে। এর জন্য স্বাধীন দুর্নীতিদমন কমিশনকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে
হবে। এ কাজে সৎ, নির্লোভ ও দেশপ্রেমিক লোকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজের
সর্বস্তরের মানুষকে আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
গণমাধ্যম, এনজিও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করতে পারে। কালো টাকার মালিক ও রাজনীতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ রুদ্ধ করতে হবে। তাই
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রত্যাশিত উন্নয়নের জন্য আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url