ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমরা সকলেই জানি বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছে। আমরা এই আর্টিকেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটি তুলে ধরেছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা

বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন তত্ত্ব ও তথ্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে। ফলে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্ব প্রেক্ষাপট। এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বাংলাদেশও বিশ্বের কাছে নিজেকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও অগ্রগতির জন্য নানা কার্যক্রম নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

"ডিজিটাল বাংলাদেশ"-এর স্বরূপ

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থ হলো ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ; যা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্যহীন এবং সুখী-সমৃদ্ধিশালী জনগণের রাষ্ট্র। তথ্যযুগ বা ডিজিটাল যুগ গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সারা বিশ্বে যে দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে তারই অংশীদার হিসেবে বিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা

২০০৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে থাকবে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি- 
যা মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশের মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা এটি। স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার।

ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশের অনুন্নত জীবনধারাকে পরিবর্তন করা। এর জন্য এদেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কার্যপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য, উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও জনগণের সরকারসহ সকল স্তরের কাজকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করাই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য।

'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়ন কর্মসূচি

রূপকল্প অর্থাৎ ভিশন ২০২১ অনুযায়ী যেসকল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সেগুলোর মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা একটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে অর্থ ও শারীরিক শক্তির বদলে মেধা ও জ্ঞানের শক্তির প্রাধান্য থাকবে। কৃষিভিত্তিক সমাজের পরিবর্তে সৃজনশীল ও মেধাভিত্তিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবে।
এর জন্য সরকার 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ঘোষণার প্রথম বছরেই এর বাস্তবায়ন কর্মসূচি চালু করে দিয়েছেন। এই কর্মসূচিগুলোর মধ্যে আইসিটি নীতিমালা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, ই-কমার্স চালু করা, ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি চালু করাসহ নানারকম পদক্ষেপ। এছাড়াও 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়নের রয়েছে বহুবিধ সুবিধা ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা

অফিসগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় এনে এক স্থানে বসে প্রশাসনকে গতিশীল, কর্মমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ইন্টারনেটের সঙ্গে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সংযোগসাধন করে নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব। 

কেননা, দুষ্কৃতকারীরা কোনো অঘটন ঘটিয়ে সাময়িকভাবে পালিয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে ক্যামেরার মাধ্যমে ধরা পড়বে। এর জন্য তাদের যদি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়, তবে অন্যরাও এ কাজ থেকে দূরে সরে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তব্য ভিডিও করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেওয়ালে সাদা পর্দায় তা প্রদর্শন করা যায়।

এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এ পদ্ধতিতে ঘরে বসেও শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। প্রয়োজনীয় নিজস্ব বই না থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে নিয়ে তা পড়ে ফেলা যায়। এভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ বয়ে আনতে পারে। চিকিৎসাক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমে একদিকে যেমন আবিষ্কৃত হয়েছে নানা জটিল রোগের ঔষধ তেমনই চিকিৎসাপদ্ধতিও ক্রমে ক্রমে সহজতর হয়ে আসছে। তাই বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হলে ডাক্তারের কাছে সরাসরি উপস্থিত না হয়েও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেতে পারে। কম্পিউটার সিস্টেম ব্যাংক ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলেছে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে চালু হয়েছে অনলাইন সিস্টেম। এখন দূরদূরান্তের কোনো জেলায় নগদ টাকা বহন করে নিয়ে যেতে হয় না। কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইন ব্যাংক ব্যবস্থায় স্থানীয়ভাবে তা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আবার একজনের হিসেব থেকে আরেকজনের হিসেবে মুহূর্তের মধ্যে টাকা প্রেরণ করা যায়। তাই সকল ব্যাংকে এ ব্যবস্থা চালু হলে গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

উপসংহার

একবিংশ শতাব্দীর এই প্রযুক্তি নির্ভর যুগে সবাই এখন আধুনিক সমাজ নির্মাণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর জন্য প্রযুক্তি নির্বাচন ও বাস্তবায়নের সুসমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। আর এই পদক্ষেপের সফল বাস্তাবায়ন হবে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url