ভূমিকম্প রচনা - ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমরা সকলেই জানি বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য বিষয়বস্তুর গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আমাদের সকলকেই পরীক্ষার জন্য বেশ কিছু রচনা পড়তে হয়। তাই আপনাদের জন্য আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রচনাটি তুলে ধরেছি।
ভূমিকম্প রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ অথবা ভূমিকম্প রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ ভূমিকম্প রচনা - ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ভূমিকা

প্রতিবছরই কোনো না কোনো দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে লভন্ড করে দেয়। বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ডে বিজ্ঞানীরা এসবের নাম দিয়ে থাকে। বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি ব্যাপক বিধ্বংসী এ সকল অনাহুত আপদ বা জঞ্জাল যেন বাংলাদেশের পিছু ছাড়ছেই না।

তারপর আবার বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভূমিকম্প। তাই আমাদের ভূমিকম্পজনিত ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার জন্য জাতীয় ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে, অন্যথায় যেকোনো মুহূর্তে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

ভূমিকম্প

ভূ-অভ্যন্তরে বিপুল শক্তি উদগিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। ভূপৃষ্ঠের কম্পন তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয় ভূমণ্ডলে তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
সমুদ্রের নিচে ভূগাঠনিক কারণে সুনামি সৃষ্টি হয় এবং গভীর সমুদ্রে অবস্থানকালে এর উপস্থিতি বোঝা যায় না বলে সতর্কীকরণে বেশি সময় পাওয়া যায় না। এই তরঙ্গ ভূগর্ভের কোনো একটি অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কম্পন মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে এক/দুই মিনিট স্থায়ী হয়।

ভূমিকম্পের কারণ

ভূপৃষ্ঠ অনেক প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনো প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থান চ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনো অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়- যা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।

ভূমিকম্পে ক্ষতি

ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই। যার কারণে মানুষ সতর্কতামূলক কোনো পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। ভূমিকম্পে বাংলাদেশের অসংখ্য ঘরবাড়ি ধসে পড়ে; রাস্তাঘাট, ব্রিজ ভেঙে পড়ে; মানুষসহ অসংখ্য প্রাণী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাছাড়া জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি কখনো বাংলাদেশে বড়ো ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে সারা দেশ একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি

ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন তা হলো: গবেষকদের প্রকাশিত তথ্যমতে আপনি কী পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আছেন তা জেনে নিন। আপনি যে ভবনটিতে আছেন সেই ভবনটি ভূমিকম্পরোধক কি না খোঁজ নিন। থাকলে কত মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় এবং না থাকলে এত দুর্বল ভবনে রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা নিন।

পরিবারের সবার সঙ্গে বসে আশ্রয়ের ব্যাপারে পরিবারের ইমার্জেন্সি প্ল্যান ঠিক করুন। বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারি ও জুতা রাখুন। প্রতি বছর পরিবারের সকলের সাথে ভূমিকম্পের করণীয় সম্পর্কে ট্রায়াল দিন।

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

ভূমিকম্পের সময় যা যা করণীয় তা হলো: ভূমিকম্প শুরু হলে ছোটাছুটি না করে স্থির থাকুন। বাইরে বের হওয়া, ছাদ বা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ভূমিকম্প শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন। তারপর কোনো ডেস্ক বা টেবিলের নিচে প্রবেশ করুন। ভবনে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকলে ভবন ধসের আশঙ্কা কম থাকে।
সুতরাং তখন ভবনে অবস্থান করাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফ্ট ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং এলিভেটর/লিফ্ট ব্যবহার পরিহার করুন। ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকুন। গাড়ির বাইরে বের হলে আহত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

'মেইন শক' বা মূল ভূমিকম্প হওয়ার আগে ও পরে মৃদু বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাকে বলা হয় 'ফোরশক' এবং 'আফটার শক'। এ সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। কেননা 'আফটার শক বা 'ফোরশক' থেকেও বড়ো ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথম ভূমিকম্পের সময় সম্ভব না হলেও পরে গ্যাস ও বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।

ধ্বংসস্তূপে অটিকে পড়লে করণীয়

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে যা যা করণীয় তা হলো: হাতে রুমাল, তোয়ালে বা চাদর থাকলে হালকাভাবে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন যাতে ধ্বংসস্তূপের ধুলাবালি নাকে, মুখে প্রবেশ করতে না পারে। হাতে টর্চ থাকলে জ্বালান, ম্যাচ জ্বালাবেন না।
কেননা গ্যাসের পাইপ লিক থাকলে আগুন লেগে যেতে পারে। কাউকে চিৎকার করে না ডেকে মুখে শিস বাজিয়ে, হাতে রেফারির বাঁশি থাকলে বাঁশি বাজিয়ে অথবা কোনোকিছুতে শব্দ করে বা ইশারায় ডাকুন। এতে মুখে ধুলাবালি প্রবেশ করবে না।

উপসংহার

ভূমিকম্প রেখার ঝুঁকিপূর্ণ সীমানার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। তাই আমাদের শক্তিশালী ভূমিকম্পের বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশে অনেকবার বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এতে তেমন কিছু হয়নি; কিন্তু যদি বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে সীমাহীন ক্ষতির আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url