নারীর ক্ষমতায়ন রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি নিশ্চয়ই নারীর ক্ষমতায়ন রচনাটি খুঁজছেন এই কারণে আমাদের পোস্টটিতে ক্লিক করেছেন। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য যে সকল রচনা গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে এর মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন রচনাটি অন্যতম। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
নারীর ক্ষমতায়ন রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি নারীর ক্ষমতায়ন রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ নারীর ক্ষমতায়ন রচনা

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় হলো নারীর ক্ষমতায়ন। আর্থনীতিক, সামাজিক, রাজনীতিক ক্ষেত্রে নারীকে স্বাবলম্বী ও মর্যাদাবান করার জন্য নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক ও আর্থনীতিক উন্নয়নে নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নারী জাতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, মর্যাদা, ভক্তি, অধিকারের দাবিদার হলেও পরিবারে, সমাজে, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার। এতে নারীর উন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত, ক্ষমতায়ন হচ্ছে সুদূরপরাহত। তবে সমৃদ্ধ দেশ ও জাতিগঠনে নারীর ক্ষমতায়ন তথা উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন।

নারীর ক্ষমতায়ন

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর স্বাধীন ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন এবং মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ। কিন্তু বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে রয়েছে বহুবিধ সীমাবদ্ধতা, তথাপি সাংবিধানিক নিশ্চয়তাসহ রাষ্ট্রীয় শাসনসহ সকল স্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই হলো প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন।

বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়ন

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথ প্রতিনিয়ত প্রশস্ত হচ্ছে। সত্তরের দশকে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘের অধিবেশনে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালকে জাতিসংহ "বিশ্ব নারী বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৭৫-১৯৮৫ পর্যন্ত নারী দশক পালনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
জাতিসংঘের সহায়তায় ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে শুরু করে ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেন, ১৯৮৫ সালে নাইরোবি এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং-এ যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সারা বিশ্বে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়, যা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নের এক প্রামাণিক দলিল হিসেবে গণ্য করা যায়।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন

বাংলাদেশ তার সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। ১৯৭৮ সালে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়মূলক কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর গঠন করা হয়।

১৯৯৪ সালে শিশু বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে 'মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়"- এ রূপান্তর করা হয়। আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী সকলেই নারী। বাংলাদেশে এ ধরনের দৃষ্টান্ত সত্যি আশাব্যঞ্জক।

প্রতিবন্ধকতা

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়নে যেমন বহুবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তেমনই বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের একটি বড়ো বাধা হচ্ছে নারীদের আত্মসচেতনতার অভাব। পরিণত বয়সে পদার্পণের পূর্বেই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই উচ্চশিক্ষা লাভ করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয় না।
নারীর ক্ষমতায়নের অন্তরায় হিসেবে ধর্মীয় গোঁড়ামিও বহুলাংশে দায়ী। এক শ্রেণির কুসংস্কারাচ্ছন্ন আত্মকেন্দ্রিক মানুষ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তারা নারীকে ভোগের পণ্য আর সেবাদাসী হিসেবে ঘরের মাঝে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। হিন্দু বিধবা নারীরা এখনও ধর্মীয় কঠোর অনুশাসনে নিপীড়িত। পিতৃসম্পত্তি থেকে এখনও তারা বঞ্চিত।

অবশ্য সাম্প্রতিক সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সকল ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং হিন্দু নারীদের বিবাহোত্তর পিতৃসম্পত্তির অংশ প্রাপ্তির আইন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা বাংলাদেশের নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে গণ্য। তাছাড়া নারীরা এখন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনীতিক কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশগ্রহণ করছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নারী

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ অপ্রতুল হলেও এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ষাটের দশক থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নারী।
দৃষ্টান্তস্বরূপ- ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো; ফিলিপাইনের কোরাজন একুইনো, গ্লোরিয়া অ্যারোইয়া; শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে ও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা; ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ; নরওয়ের গ্রো হারলেম ব্রান্টল্যান্ড; ইসরাইলের গোল্ডামায়ার; আর্জেন্টিনার ইসাবেলা পেরন; জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ইন্দোনেশিয়ার মেঘবতী সুকর্নপুরী প্রমুখ। এছাড়াও বর্তমানে প্রশাসনেও নারীর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

বাংলাদেশের সংবিধান ধর্ম, বর্ণ, স্থান ও জন্মের কারণে নারীদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছে। সরকার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য নারী পুনর্বাসন বোর্ড, পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন, জাতীয় নারী সংস্থা, নারীবিষয়ক অধিদপ্তর, স্বতন্ত্র নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। মহিলা অধিদপ্তর বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় এবং ১৩৬টি থানায় শাখা খুলেছে। জাতীয় নারী সংস্থা ২৩৬টি থানায় শাখা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছে।

উপসংহার

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদায় মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। আদর্শ নারীর ওপর একটি দেশ ও জাতি নির্ভর করে। কেননা আদর্শ মা মানেই আদর্শ সন্তান এবং আদর্শ সন্তান মানেই আদর্শ জাতি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url