লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনাটি খুঁজছেন, তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনাটির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সহ সম্পূর্ণ রচনাটি তুলে ধরেছি।
আশা করি রচনাটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আপনি যদি রচনাটি পড়তে হয়ে থাকেন
তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে
আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
ভূমিকা
ধান, নদী এবং খালের জন্য বরিশাল খুবই বিখ্যাত। সেই বরিশালে ভ্রমণ করার একটি সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাও আবার লঞ্চে ভ্রমন। ছোটো খালার বাড়ি বরিশালে। গত মাসে যখন তাঁরা
সপরিবার সেখানে যাচ্ছিলেন, আমাকেও যাওয়ার জন্য প্রস্তাব করলেন। আমি রাজি হয়ে
গেলাম । কারণ, বাসে, ট্রেনে, এমনকি নৌকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে; কিন্তু
লঞ্চে ভ্রমণের সুযোগ হয়নি। খালাতো ভাই রাজীবের মুখে লঞ্চ ভ্রমণের মজার মজার অনেক
কথা শুনেছি। তাই আমি রাজি হতে মোটেও দেরি করিনি।
যাত্রার প্রারম্ভিকতা
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আমরা সদরঘাটে পৌঁছলাম। ঘাটের টিকিট কিনে প্রবেশ করলাম
জেটিতে। দেখলাম প্রকাও সব লঞ্চ জেটির সঙ্গে বাঁধা। প্রত্যেক অঞ্চলের লঞ্চ আলাদা
আলাদা করে রাখা। কর্মচারীরা নিজ নিজ লঞ্চে ওঠার জন্য যাত্রীদের জোর গলায় ঢেকে
চলেছে। জেটিতে প্রচুর মানুষ। নানা গন্তব্যের যাত্রীরা নিজেদের লঞ্চটি খুঁজে
নিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ স্বদেশ প্রেম রচনা
কেউ একা, কারো সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা। হকাররা তাদের পণ্য সাজিয়ে যাত্রীদের
মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। হকাররা শুধু জেটিতেই নয়, নৌকায় করেও বিক্রি করছে
তাদের জিনিসপত্র। নদীর ওপার থেকে ছোটো ছোটো নৌকায় যাত্রীরা এপারে আসছে।
লঞ্চের বিবরণ
প্রত্যেকটি লঞ্চই উজ্জ্বল আলোয় সজ্জিত। আমরা বড়ো একটি লঞ্চে উঠে পড়লাম। সিঁড়ি
দিয়ে দোতলায় উঠে। নির্ধারিত স্থানে ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস রাখলাম। লঞ্চটি ৪
তলাবিশিষ্ট। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ মিটার। বেশ কৌতূহল
নিয়ে লঞ্চটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। দোতলা ও তিনতলায় সারবাঁধা বিলাসবহুল কক্ষ।
আরও পড়ুনঃ পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা
নিচতলার পুরোটাই ডেক। নিচতলার ডেকের মেঝেতে যাত্রীরা চাদর বিছিয়ে নিজের শোয়ার
ব্যবস্থা করছে। লঞ্চের পিছন দিকে ইঞ্জিনরুম, রেস্তোরাঁ ও একটি চায়ের দোকান। জানা
গেল জরুরি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল
দিচ্ছে আনসার সদস্যরা
লঞ্চ থেকে নদী ও আশেপাশের পরিবেশ দর্শন
রাত ৯টার দিকে লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। যদিও লঞ্চ ছাড়ার সময় ছিল
সাড়ে আটটা। ধীরে ধীরে জেটির মানুষগুলো ছোটো হতে হতে ঝাপসা হয়ে গেল। আমরা ঘাট
থেকে অনেক দূরে চলে এলাম। লঞ্চের সারেং একটু পরপর সাইরেন বাজাচ্ছেন আর সার্চলাইট
ফেলে পথটা দেখে নিচ্ছেন। অনেকক্ষণ চলার পর একটি বড়ো নদী দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
তীর দেখা যায় না। নদীটির নাম শুনলাম মেঘনা। এটি বাংলাদেশের গভীরতম ও প্রশস্ততম
নদী। রেলিং ধরে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোটো ছোটো
আলোকবিন্দু চোখে পড়ে। খালা জানালেন ওগুলো মাছধরা নৌকা। নৌকাগুলো দেখে 'পদ্মানদীর
মাঝি' উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেল।
লঞ্চের এগিয়ে যাওয়া
কিছুক্ষণ পরপর একটি দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভটভট আওয়াজ তুলে উলটো দিকে যাচ্ছে
কিংবা আমাদের লঞ্চ সেগুলোকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। আকাশের তারকারাজি আর নদীতে
ভেসে থাকা আলোকবিন্দুগুলো অপরূপ দৃশ্য তৈরি করেছে।
লঞ্চে রাতের আহার
একসময় রাতের খাওয়ার সময় হয়ে গেল। লঞ্চে রান্না করে ইলিশ মাছ ভাজা আর ডাল
দিয়ে রাতের খাওয়া সারলাম। খাওয়া শেষে বসলাম কেবিনের সামনে চেয়ারে। সবাই মিলে
রাতের নীরব সৌন্দর্য উপভোগ করছি আর গল্প করছি।
গল্পে গল্পে জ্ঞানীজনের তথ্য জানা
ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা। যাত্রীদের কেউ কেউ শুয়ে পড়েছে আবার কেউ কেউ আড্ডা
দিচ্ছে। ডেকে হকার তেমন দেখা যাচ্ছিল না। খালামণি বরিশালের বিখ্যাত ব্যক্তিদের
গল্প শোনাচ্ছেন। রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী অশ্বিনীকুমার দত্ত, অবিভক্ত বাংলার
মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর,
দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর,
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা
'মনসামঙ্গল' কাব্যের রচয়িতা বিজয় গুপ্ত, কুসুমকুমারী দাশ ও তাঁর পুত্র
জীবনানন্দ দাশ, সুফিয়া কামাল, কামিনী রায়, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, 'আমার
ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং গানটির সুরকার
আলতাফ মাহমুদসহ আরও অনেকের কথা জানলাম যাঁরা এই বরিশালেরই মানুষ। প্রিয় কবি
জীবনানন্দ দাশের শহরে যাচ্ছি ভেবে রোমাঞ্চ। অনুভব করলাম।
নৌপুলিশের টহল
হঠাৎ নৌপুলিশের একটি স্পিডবোট গতি কমিয়ে পাশ দিয়ে চলে গেল। যাত্রীদরে নিরাপত্তা
নিশ্চিতকরণ ও অবৈধ মালামাল পরিবহণ রোধে এই অন্ধকার রাতেও তারা টহল দিচ্ছে। দূরে
আরও কয়েকটি লঞ্চ দেখা যাচ্ছে। সারেং মাঝে মাঝে সাইরেন বাজাচ্ছে। একটু পরপরই
সার্চলাইট ফেলে পথ দেখে নিচ্ছে। সারেঙের কক্ষে গিয়ে দেখলাম কত রকমের প্রযুক্তি
তারা ব্যবহার করছে- রাডার, কম্পাস, জিপিএস ইত্যাদি।
উপসংহার
হয়তো প্রথমবার লঞ্চে চড়ছি বলে উত্তেজনায় ঘুম আসছিল না। তবুও খালামণির কথায়
শুয়ে পড়লাম। ভোর পাঁচটার দিকে খালামণি ডেকে তুললেন- 'এই তোরা ওঠ! আমরা বরিশালে
পৌঁছে গিয়েছি।' হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম। দেখলাম ঘাটে আরও কয়েকটি লঞ্চ বাঁধা।
যাত্রীরা নেমে যাচ্ছে। ভিড় কমলে আমরাও ব্যাগগুলো নিয়ে নেমে পড়লাম। গত রাতটি
আমার জীবনের স্মরণীয় একটি রাত হয়ে থাকবে। অসাধারণ একটি ভ্রমণের ভালো-লাগা নিয়ে
আমরা পা ফেললাম জীবনানন্দের শহরে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url