বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। রচনা তো আমাদের কমবেশি প্রত্যাক ছাত্র-ছাত্রীদেরই
পড়তে হয় কেননা বাংলা পাঠ্য বই এর অন্যান্য বিষয় গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এ রচনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। আমরা এই আর্টিকেলে
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনাটি তুলে ধরেছি।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন
তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন
তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এর রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা
ভূমিকা
বাংলার মসলিন যোগদাদ রোম চীন
কাঞ্চন মূল্যেই কিনতেন একদিন।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দতের পতিদ্বয় প্রাচীন বাংলার বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক চাহিদা ও
পরিচিতির কথাই ঘোষণা করে। কিন্তু ব্রিটিশদের চক্রান্তে সাময়িকভাবে তা থেমে
গিয়েছিল। আবার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ শিল্পই বৃহদায়তন শিল্প হিসেবে স্বদেশের
চাহিদা মিটিয়ে আজ বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে। ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এর
রপ্তানির পরিমাণ। বর্তমানে দেশের আর্থনীতিক উন্নয়নে এ খাতের অবদান বেশ উৎসাহজনক।
পোশাকের বাজার
বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৩০টিও অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করছে। তন্মধ্যে
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। শুধু এদেশ থেকেই পোশাক
রপ্তানি করে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৬% অর্জিত হয়।
দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি,
কানাডা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ ই. সি. ভুক্ত দেশগুলো। পোশাক শিল্পে বর্তমানে
প্রায় ৮৪টি ক্যাটাগরি আছে। তন্যধ্যে বাংলাদেশ ৩৬টি ক্যাটাগরি উৎপাদন করে থাকে,
যার মধ্যে ১৮টি ক্যাটাগরি কোটাভুক্ত এবং বাকি ১৮টি ক্যাটাগরি কোটা বহির্ভূত।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের কুটির শিল্প রচনা
নতুন বাজার হিসেবে যুক্ত হয়েছে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া,
রাশিয়া, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি,
উরুগুয়ে, পর্তুগাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্তত আরো ২৫টি দেশ। তবে বিশ্বের
প্রায় অধিকাংশ দেশেই কম-বেশি বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।
অর্থনীতিতে অবদান
দেশের উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি বিশেষ করে মহিলা শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে পোশাক শিল্প
দেশের সার্বিক শিল্পায়নে গতি সৃষ্টি করেছে। এ শিল্পের দ্রুত ক্রমবর্ধমানতার
কারণে দেশে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে যারা আর্থনীতিক উন্নয়নে বিশেষ
অবদান রাখছে।
এ শিল্প জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের আর্থনীতিক জোগান দিচ্ছে। পোশাক শিল্পের
পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় বিবিধ দ্রব্যসামগ্রী, যেমন প্রসাধনী, জুতা, খাদ্য
ইত্যাদির শিল্প ও বাজার তৈরি হচ্ছে। এ শিল্পের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো
তরল অর্থ। তাই ব্যাংকিং ব্যবসায়ে ক্রমশ খুলে যাচ্ছে বিস্তৃত দ্বার।
আরও পড়ুনঃ কর্মমুখী শিক্ষা রচনা
শিল্পের বিকাশের কারণে সড়ক ও বিমান পথের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল
দিগন্তের। বর্তমানে অনেক স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান পোশাক শিল্পের সহায়ক শিল্প
যেমন- কার্টুন, সুতা, পলিব্যাগ, লেবেল, নেকবোর্ড ইত্যাদি উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে।
ফলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে যা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য
ইতিবাচক।
পোশাক শিল্পে সমস্যা
বর্তমানে ১০০% রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প পড়েছে গভীর সংকটে। গার্মেন্টস
শিল্পে এ অনিশ্চিয়তা প্রথমত শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে এমএফএন কার্যকরী ও জিএসপি
বন্ধের কারণে। এর ফলে গোটা শিল্পে নেমে আসে হতাশার ছায়া। ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েন
উদ্বিগ্ন।
তাছাড়া ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে
অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী মন্দা, বাজার সংকুচিত হওয়া, পণ্যমূল্য কমে যাওয়া,
উপর্যুপরি কয়েকটি দুর্ঘটনার অজুহাতে আমেরিকা কর্তৃক জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার
ইত্যাদি কারণে গার্মেন্টস শিল্প কিছুটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের মূল্য নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। বাজারে প্রবল
প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ওভেন পোশাকের মূল্য কমে গেছে। গার্মেন্টস শিল্পে অপচয়ও
একটি বড়ো সমস্যা। অদক্ষতা এবং অপচয় রোধ করার মতো কারিগরি জ্ঞানের অভাবে এসব
শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে মার খেয়ে যায়।
সমাধানের পথ
বর্তমানে এই অনিশ্চয়তা থেকে আমাদের উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। সরকারি নগদ
সহায়তার ১০০ ভাগ অবমুক্তকরণ এবং তা সময়মত উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছাতে হবে।
ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে তুলা, সুতা ও বন্ধু উৎপাদনে
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের উদ্যোগ নিতে হবে। বাণিজ্যনীতি ও শিপিং খাত সংস্কার করতে
হবে।
সার্ক কিউমুলেশন বাস্তবায়ন ও দেশে সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যার হাউস চালু করতে হবে।
পণ্যের মান বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় কমিয়ে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে
হবে। কারিগরি জ্ঞান ও বাণিজ্য নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়াতে হবে। কোটা বরাদ্দ
কমিটিতে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারি প্রতিনিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ সহায়তা সংক্রান্ত রীতিনীতি শিল্প উদ্যোক্তাদের অনুকূলে
নিয়ে আসতে হবে। লিড-টাইম কমিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমেরিকার
জিএসপি সুবিধা পুনরায় পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। গার্মেন্টস
শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
রুগ্ণ শিল্প পুনরুজ্জীবনে সহায়তা এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ
নিতে হবে। সর্বোপরি, রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ অর্জনকারী এ শিল্পের এখন প্রয়োজন
সার্বিক সংস্কার। সরকার, উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে যদি সময়মতো সিদ্ধান্ত
না নেন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এটিও পাট শিল্পের মতো হারিয়ে যেতে পারে।
উপসংহার
পোশাক শিল্প প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে
পোশাক শিল্প সুদূরপ্রসারি অবদান রেখে চলেছে। বহু বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এ শিল্পের
অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। গার্মেন্টস শিল্প গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ
ব্লাডে পরিণত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাশাপাশি গার্মেন্টস খাত
প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান করছে।
আর পরোক্ষভাবে আরও এক থেকে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখছে। তাই
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ শিল্পকে আরও বিকশিত করতে হবে। আর সকল প্রকার হীন
রাজনীতি থেকে এ শিল্পকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url