হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এ আর্টিকেলে হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনাটি তুলে ধরেছি। মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী।
আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনা এবং জীবনী জানতে
সহায়তা করবে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি একজন আদর্শ জীবনী সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হন
তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। চলুন তাহলে শুরু করা
যাক।
সূচিপত্রঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনা
ভূমিকা
আরবজাতি যখন কুসংস্কার, কুপ্রথা, অন্যায়, অত্যাচার, আর বিশৃঙ্খলার পঙ্কিলতায়
আচ্ছন্ন ছিল, তখন ওই অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে দিশেহারা, পথভ্রষ্ট, আদর্শভ্রষ্ট
মানুষকে সত্যের আলোতে মুক্তি দিতে যিনি সত্যের জ্যোতিতে বিশ্বলোক উদ্ভাসিত করে এই
ধরাধামে এলেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হজরত মুহম্মদ (স.)।
আরও পড়ুনঃ পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য রচনা
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারক, মানবজাতির মুক্তির দূত এই মহামানব মরুচারী
আরবজাতির এক চরম বিপর্যয়ের সময়ে আবির্ভূত হয়ে তাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
মানুষের পারলৌকিক মুক্তি, জ্ঞানের বিকাশ ও শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য তিনি জীবনব্যাপী
সাধনা করে গিয়েছেন।
জন্ম ও বংশপরিচয়
আরবের মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার মক্কার অভিজাত
কুরাইশ বংশে হজরত মুহম্মদ (স.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব
ছিলেন একজন সম্মানিত ও বয়োবৃদ্ধ ধর্মীয় নেতা। আবদুল মুত্তালিবের অন্যতম পুত্র
আবদুল্লাহর ঔরসে ও আমিনার গর্ভে হজরত মুহম্মদ (স.) জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের
পূর্বেই তাঁর পিতা পরলোকগমন করেন।
শৈশবকাল
বৃদ্ধ পিতামহ এবং পিতৃব্য আবু তালিবের স্নেহ ও যত্নে তিনি লালিত-পালিত হন।
দুঃখ-কষ্টে তাঁর বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। পিতৃব্যের অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। তাই
তাঁকে বিশেষ কষ্টের মধ্য দিয়ে বাল্যকাল কাটাতে হয়।
তিনি পুথিগত বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারেননি। বিশ্ব প্রকৃতি ও সৃষ্টি
বৈচিত্র্য তাঁর চোখের সামনে অফুরন্ত জ্ঞানভান্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। অল্প
বয়স হতেই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও পরোপকারী। তাই লোকে তাঁকে আল-আমিন বলে ডাকত।
যৌবন ও সাধনা
যৌবনেই হজরত মুহম্মদ (স.) বহু দেশ পর্যটন করেন। দেশে-বিদেশে পরিভ্রমণ করে তিনি
অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি দার পরিগ্রহ করেন। বিবি খাদিজা (রা.)
নামী এক ধনবর্তী মহিলার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গমন
করেন। তাঁর অতুলনীয় সততা ও বিশ্বস্ততায় বিবি খাদিজা (রা.) মুগ্ধ হলেন এবং তাঁর
সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব করলেন।
তাদের বিয়ে হলো। হজরত বিবি খাদিজা (রা.) ছিলেন ধর্মপরায়ণা আদর্শ পত্নী। বিয়ের
অব্যবহিত পরে হজরত মুহম্মদ (স.) পরম স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন হন। চারদিকে অন্যায়,
অত্যাচার ও ব্যভিচার দেখে তাঁর হৃদয় বাদিত হয়ে উঠল। কেমন করে পৃথিবীকে পাপমুক্ত
করা যায় এটাই তার একমাত্র চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াল।
আরও পড়ুনঃ ২০২৪ সালের রমজানের ক্যালেন্ডার
তিনি অধিকাংশ সময়েই মক্কা হতে কিছু দূরে হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে নির্জনে
ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকতেন। ৬১১ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে তিনি স্বর্গীয় দূত হজরত
জিবরাইল (আ.)-এর নিকট হতে আল্লাহর বাণী লাভ করেন। যা তিনি পরবর্তী সময়ে আল্লাহর
ঐশী বাণী হিসেবে কোরআন আকারে মানবসমাজে প্রচার করেন।
আল্লাহ্র এই ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআন তাঁর ওপর নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি আল্লাহর
প্রেরিত নবি বা রাসুল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সে সময়ে যারা হজরত মুহম্মদ
(স.)-এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে পবিত্র কোরআনকে স্বীকার করে নেন, তারা মুসলমান
হিসেবে পরিচিত হন। নবি এভাবেই আরবের পথভ্রষ্ট দিশেহারা মানুষকে ইসলাম ধর্মের পথে
শামিল করেন।
ইসলাম প্রচার
কোরআন লাভের পর এর প্রচারের জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তিনি পৃথিবীতে আল্লাহ
তাআলার বাণী প্রচারের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য
বা দেবতা নেই ইত্যাদি বাণী প্রচার করার জন্য তাঁকে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করতে
হয়েছিল।
আত্মীয়, বন্ধুর শত্রুতা, গোত্রের অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে সত্য প্রচার হতে বিরত
করতে পারেনি সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী এ বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে তিনি অগ্রসর
হয়েছিলেন। তাঁর প্রাণবধের ষড়যন্ত্রও চলতে লাগল। হজরত মুহম্মদ (স.) ৬২২
খ্রিষ্টাব্দে আবুবকর (রা.)-সহ মদিনায় হিজরত করলেন।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের ইসলামিক পূর্ণাঙ্গ নাম
মদিনায় তিনি সাদরে গৃহীত হলেন, ইহুদিগণ ছাড়া সকলেই তার ধর্ম গ্রহণ করুন। ইসলাম
প্রচার করতে গিয়ে বদর, ওহুদ, খন্দক প্রভৃতি স্থানে কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের
যুদ্ধ হলো। একমাত্র ওহুদের যুদ্ধ ছাড়া সর্বত্রই মুসলমানেরা বিপুল বিক্রমে জয়লাভ
করেছিল।
মক্কা গমন
হজরত মুহম্মদ (স.) ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে হজ করার জন্য মক্কায় গমন করেন। এরপর তাঁর
জীবনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা মক্কা বিজয়। বিনা রক্তপাতে এমন অপূর্ব
কার্য সমাধান করার কাহিনি মানুষের ইতিহাসে বিরল। হজরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবন খুব
দীর্ঘ ছিল না, কিন্তু এই স্বল্প পরিসর জীবনে তিনি আরববাসীদের অজ্ঞতার তমসা হতে
জ্ঞানের আলোকে টেনে নিয়ে আসেন।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবি (স.)
তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো সমাজ সংস্কারক। তিনি সেকালে নির্যাতিত
নারীসমাজকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন এবং নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দান
করেন। নারীর শাশ্বত মাতৃত্বের গৌরবের ঘোষণা করেন, 'মায়ের পদতলে সন্তানের
বেহেশত।'
মহানবির ওফাত
বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদ (স.) মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন ১২ই
রবিউল আউয়াল সোমবার ইহকাল ত্যাগ করেন। ওফাতের পূর্বে বিদায় হজের শেষ ভাষণে তিনি
ইসলামকে মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তিনি মুসলমানদের
উপদেশ দেন, মুসলমানগণ যাতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করেন। কারণ ধর্ম নিয়ে
পৃথিবীতে অনেক রক্তপাত হয়েছে। আর যেন রক্তপাত না হয়। তিনি বলেন, প্রত্যেকে যার
যার ধর্মে অধিষ্ঠিত থেকো। একের ধর্ম অপরের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না।
উপসংহার
হজরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য অনুকরণীয় চরিত্র,
ন্যায়পরায়ণতা, ধৈর্যশীলতা, সত্যনিষ্ঠা ও দানশীলতা যেকোনো মানুষকে গভীরভাবে
অনুপ্রাণিত করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url