আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য যে সকল বিষয়গুলো রয়েছে এর মধ্যে রচনা অন্যতম। রচনার মধ্যেও অনেক রচনা রয়েছে তবে বলা বাহুল্য যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। আমরা এই আর্টিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাটি তুলে ধরেছি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

ভূমিকা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।
সত্যি একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভোলা যায় না। বাঙালি জাতির এক গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক দিনটি। মাতৃভাষার প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধায় বাংলা মায়ের ছেলেরা বুকের রক্তে সেদিন রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, দেশ ও জাতির কাছে মাতৃভাষা এক পরম সম্পদ। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ।
প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর তাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি বিশ্ব-ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব সেই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা। তদানীন্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার করার পথ বেছে নেয়।

তারা ঘোষণা করে- বাংলা রাষ্ট্রভাষা হবে না, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাবে উর্দু, যা কিনা ছিল মাত্র ৭ শতাংশ লোকের মাতৃভাষা। এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয় সমগ্র পূর্ববাংলা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ন্যায্য দাবি নস্যাৎ করার জন্য আন্দোলনরত ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায়।
আরও পড়ুনঃ সংবাদপত্র রচনা
এতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে। আন্দোলন আরও প্রচণ্ড হয়, গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে শহিদের স্মরণে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট

২১শে ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এই সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়,

'১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সেদিন যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' ঘোষণা প্রস্তাব হচ্ছে।' আজ ভাষা দিবস কেবল আমাদের দেশেই নয়, বরং সারা বিশ্বে পালিত হয় দিবসটি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

কানাডার প্রবাসী বহুভাষী জনের সংগঠন 'মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দা ওয়ার্ল্ড' প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর পেছনে যে দুজন প্রবাসী বাঙালির অবদান রয়েছে তাঁরা হলেন আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম।
ভাষাপ্রেমিক ঐ সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখা হয়। কফি আনান ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ জানালে ইউনেস্কোতে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়। ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রস্তাব গ্রহণের অপরাগতার কথা জানান।

পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। ২৭টি দেশ এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য

ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ অনুষঙ্গ। ইউনেস্কোর সম্মেলনে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হলো সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুধাবন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য হলো প্রতিটি মাতৃভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া, বিশেষ করে দুর্বল মাতৃভাষাগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা,
আরও পড়ুনঃ বিজয় দিবস রচনা
দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা না করা। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালোবাসবে তেমনই অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ।

উপসংহার

আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। প্রতিটি বাঙালির জন্য এ এক গৌরবের বিষয়। সারাবিশ্ব আজ আমাদের একুশ চেতনায় একাকার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই সেই শহিদদের যারা আমার চেতনাকে রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছে। কবি শামসুর রহমানের ভাষায়-
শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ; স্মৃতি গল্পে ভরপুর
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url