বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনাটি খুঁজছেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনাটি তুলে ধরেছি। বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোর মধ্যে এ রচনাটি অন্যতম।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনাটি পড়ে পরীক্ষায় ভালো
নম্বর আনয়ন করতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ
পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা
ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রবণ দেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিভিন্ন
ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের জনজীবনে নানারকম দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। প্রায়
প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে
বিপর্যন্ত করে দেয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বন্যা,
সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝা, খরা, নদীভাঙন, ভূমিকম্প,লবণাক্ততা ইত্যাদি।
বন্যা
প্লাবন বা বর্ষার ভয়াল রূপ হলো বন্যা। বন্যার করাল গ্রাসে মানুষের স্বাভাবিক
জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়। এতে অসংখ্য মানুষ ও গৃহপালিত পশু প্রাণ হারায়, ঘরবাড়ি ও
কৃষিফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। বিগত চার দশক থেকে বন্যা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত
দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানিসহ ফসল ও সম্পদের প্রচুর ক্ষতি
সাধিত হয়।
আরও পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয় ১৯৯৮ সালে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দেশের
বহু খেতের ফসল, ঘরবাড়ি ও মূল্যবান সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বর্তমান শতাব্দীর
সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হলো ২০০৪ সালের বন্যা। এ বন্যায় দেশের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির
পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।
সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস
সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগ প্রায় প্রতি বছরই
বাংলাদেশে কম-বেশি আঘাত হানে। বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ১৯৭০,
১৯৯১, ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সাইক্লোন
ও জলোচ্ছ্বাস ছিল খুবই ভয়াবহ। এসব সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসে ১৯৭০ সালে প্রায় ৫
লাখ, ১৯৯১ সালে প্রায় দেড় লাখ এবং ২০০৭ সালে প্রায় লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি
ঘটে।
আশ্রয়চ্যূত হয় লাখো লাখো নারী-পুরুষ। এ সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে ফসলের
ব্যাপক ক্ষতিসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, লন্ডভন্ড হয়ে যায়
সবকিছু। ফলে মানুষ পতিত হয় অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায়।
অনাবৃষ্টি বা খরা
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু প্রকৃতির হেয়ালিপনার শিকার এদেশ মাঝে মাঝে অনাবৃষ্টি বা খরার মতো
মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পতিত হয়। খরার প্রচণ্ড তাপদাহে মাঠঘাট ফেটে
চৌচির হয়ে যায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সংঘটিত খরার প্রকোপে ব্যাপক ফসলাদিসহ জনজীবন
অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। খরার হিংস্র খাবার ফলে দেখা দেয় খাদ্যাভাব ও বিভিন্ন রোগশোক ।
নদীভাঙন
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোটো-বড়ো হাজারও নদী। নদীর ধর্মই হলো-
এপার ভেঙে ওপার গড়া। কিন্তু নদীর সর্বনাশা ভাঙন এক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
প্রতি বছরই এদেশের প্রচুর সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ দুর্যোগের কবলে পড়ে
এদেশের বহু লোককে তাদের ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতে হয়।
ভূমিকম্প
প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়াবহ রূপ হলো ভূমিকম্প। বিভিন্ন কারণে এদেশে মাঝে মাঝে
ছোটো-বড়ো ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি হলে তাতে ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এতে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে, যোগাযোগ ব্যবস্থা
বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভূতাত্ত্বিকরা বাংলাদেশের
উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পার্বত্য
চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার আওতাভুক্ত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মোকাবিলা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। তাই সরকারের উচিত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে
ব্যাপক বনায়ন করা। প্রতিটি দেশে স্থলভাগের ২৫ শতাংশ বনায়ন করা। শিল্পোন্নত
দেশগুলোর শিল্পকারখানার উত্তপ্ত কালো ধোঁয়া নির্গমণ নিয়ন্ত্রণ করা। জনমনে পূর্ব
প্রস্তুতিমূলক সচেতনতা সৃষ্টি করা। জাতীয় ভিত্তিতে নীতিমালা, পরিকল্পনা ও
কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করা।
আরও পড়ুনঃ পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে যোগাযোগ ও
সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা। দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি ও চাহিদা নিরূপণের ব্যবস্থা করা। তথ্য
সরবরাহের ব্যবস্থা উন্নত করা। সামরিক বাহিনী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজে
সমন্বয় সাধন করা। উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি নিয়ে বিশেষ কর্মসূচি
গ্রহণ করা। দুর্যোগ মোকাবিলায় নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
করা। সর্বোপরি সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় যৌথ কার্যক্রম
গ্রহণ করা।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলি
দুর্যোগ মানব জীবনে বয়ে আনে অবর্ণনীয় দুঃখ-যন্ত্রণা। দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট
ক্ষয়ক্ষতিতে দেশের অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায়, অচল হয়ে যায় দেশের অর্থনীতির
চাকা। তাই বাংলাদেশেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় ভিত্তিতে বিভিন্ন
নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে একটি জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্য
পরিকল্পনা (NEMAP) গৃহীত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নদ নদী রচনা
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছেও সরকার প্রয়োজনে
সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৮৭, ৮৮ ও ৯৮'র বন্যা, '৯১-এর ঘূর্ণিঝড়
এবং ২০০৭-এর জলোচ্ছ্বাসে দুর্গতদের জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে ব্যাপক আকারে বৈদেশিক
সাহায্য এসেছে।
উপসংহার
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো দেশের মানুষের জন্য অভিশাপস্বরূপ। এটি জনজীবনকে
অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবর্ণনীয় দুঃখ- দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশের মতো একটি
সমতল ভূমিতে অবিরত দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে এদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে
দিচ্ছে, রুদ্ধ করছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। এ দুর্যোগ সৃষ্টিতে মানুষের কোনো হাত
না থাকলেও সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর ভয়াবহতা হ্রাস
করার প্রয়াস চালাতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url