স্বদেশ প্রেম রচনা - স্বদেশ প্রেম রচনা class 7

স্বদেশ প্রেম বলতে বোঝায় নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসাকে। পরীক্ষায় প্রায়ই এ রচনাটি আসতে দেখা দেয়। অন্যান্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে এর মধ্যে স্বদেশপ্রেম রচনাটি অন্যতম। তাই আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে স্বদেশ প্রেম রচনাটি তুলে ধরেছি। আশা করি আমাদের আর্টিকেলে উল্লেখিত রচনাটি আপনাকে পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে সহযোগিতা করবে।
স্বদেশ প্রেম রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি স্বদেশ প্রেম রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ স্বদেশ প্রেম রচনা - স্বদেশ প্রেম রচনা class 7

ভূমিকা

সংস্কৃতে একটি শ্লোক আছে, 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'। অর্থাৎ মা-মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি। এদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন ত্রিশ লাখ মুক্তিকামী বাঙালি নরনারী। শহিদের লাল রক্ত মিশে আছে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে ভালোবাসার চেয়ে বড়ো কোনো মহৎ কাজ নেই এ পৃথিবীতে।

স্বদেশ চেতনা

দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি ভালোবাসা মানুষের জন্মগত। দেশপ্রেম ছাড়া মানুষের চেতনায় মা, মাটি ও মানুষের প্রতি স্নেহ ভালোবাসার মতো মহৎ মানবিক চিন্তার বিকাশ ঘটে না। প্রতিটি মানুষের মনের মণিকোঠায় গাঁথা থাকে তার দেশের আলো- বাতাস, বৃক্ষরাজি, ফল-মূল, নৈসর্গিক সৌন্দর্য, অফুরন্ত বৈচিত্র্য আর ঋতু বদলের স্মৃতি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবাসী না হলে বোঝা যায় না দেশেপ্রেম বা স্বদেশ-প্রীতি কী।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

দেশপ্রেম সম্পর্কে প্রাচীন ও মধ্যযুগে ছিল অস্পষ্ট আবেগ। আধুনিককালে তা একটি জীবন-দর্শনে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রতি অবিচল ভালোবাসা ও আনুগত্যই দেশপ্রেম। দেশের উন্নতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগের সাধনা হলো দেশপ্রেমের পরিচয়। দেশের প্রতি যারা মুখে মুখে আবেগ গাঁথা রচনা করেন তারা দেশপ্রেমিক নন, তারা দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে বড়ো করে দেখেন। স্যামুয়েল জনসন-এর মতে, 'একজন বদমায়েশ দেশপ্রেমকে তার শেষ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োগ করে।
কিন্তু প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশকে ভালোবেসে দেশের স্বার্থে জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। দেশপ্রেম কেবল দেশকে ভালোবাসার মধ্যেই সীমিত নয়। দেশপ্রেমিকরা দেশের বিপদে-আপদে, সংকটে দুর্যোগে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের সেবা করে। যারা দেশকে অপমান করে, অসম্মান করে তাদের মনে-প্রাণে সবারই ঘৃণা করা উচিত। দেশপ্রেমেই নিহিত থাকে একজন মানুষের প্রকৃত পরিচয়।

দেশপ্রেম ও আমাদের করণীয়

ইতিহাস, ঐতিহ্য, আর সংস্কৃতির সঙ্গে একই সুতোয় গাঁথা দেশপ্রেমের আকুলতা। বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতিতে দেশপ্রেমের রূপ ভিন্ন। কিন্তু প্রকৃতি একই রকম। স্বদেশপ্রেম প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে ভরিয়ে দেয় অনাবিল আনন্দে। আমাদের জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের চেতনাকে জাগিয়ে রাখতে হবে উজ্জ্বল শিখার মতো। অকৃত্রিম দেশপ্রেমই জাতিকে উপহার দিয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। যেকোনো মূল্যে আমরা দেশের স্বাধীনতা ও ভাষার মর্যাদা রক্ষা করব। বিনিময়ে আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত ।

দেশপ্রেম ও রাজনীতি

পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর দু'শ বছর ব্রিটিশ শাসন, ২৪ বছর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসনের নাগপাশ থেকে আমাদের মুক্তি মেলে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী আমাদের রয়েছে আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশপ্রেমিক বীরদের প্রাণ উৎসর্গের সেই মহিমান্বিত ইতিহাস আমরা আজও স্মরণ করি। যারা দেশকে ভালোবাসেন তারা দেশের জন্য প্রাণ দেন।
জীবনের ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হন। দেশের উন্নয়নে তাঁরা মেধাকে কাজে লাগান। সর্বস্তরের মানুষ— ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, কৃষক, শ্রমিক, মুটে, মজুর সবাই নিজ নিজ প্রচেষ্টায় দেশের সমৃদ্ধি আরও বাড়াতে পারেন। শুধু রাজনীতিবিদরাই দেশপ্রেমিক বা দেশসেবক তা নয়। দেশপ্রেমিক না হলে খাঁটি নাগরিক হওয়া যায় না।

আদর্শ দেশপ্রেমিক

পৃথিবীতে যুগে যুগে দেশপ্রেমিক মহামানব জন্মলাভ করেছেন। তাঁরা নিজেদের মেধা ও কর্ম দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। তাদের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে সভ্যতা, আধুনিক সমাজ বা রাষ্ট্র। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, মহামতি লেনিন, জর্জ ওয়াশিংটন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্শাল টিটো, ইন্টাসির আরাফাত, মাহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ দেশপ্রেমিকদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় স্বদেশপ্রেমের অমর বাণী উচ্চারিত হয়েছে বারবার। তাদের দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমে রূপ নিয়েছে। দেশপ্রেমিক না হলে বিশ্বপ্রেমিক হওয়া যায় না। দেশকে ভালোবাসা মানে দেশের মানুষকে ভালোবাসা। দেশের মানুষকে ভালোবাসলে পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালোবাসা যায়।

উপসংহার

দেশের উন্নতির জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমিক দরকার, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের পবিত্র দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণসাধনের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় ফুটে ওঠে। দেশপ্রেম মূলত একটি বিশেষ মানবিক প্রবৃত্তি যা দেশের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতাবোধের বহিঃপ্রকাশ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url