বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা জানি বাংলাদেশের অন্যান্য যে সকল সমস্যাগুলো রয়েছে এর মধ্যে জনসংখ্যা সমস্যাটি অন্যতম। আমরা এই ব্লগ পোস্টে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি তুলে ধরেছি।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ম্যাকনোমারা বলেছিলেন, 'পারমাণবিক শক্তির পরে বিশ্ববাসীর জন্য যে সমস্যাটি সবচেয়ে ভয়াবহ, তা হলো অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমস্যা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জনসংখ্যা সমস্যাই হবে এক নম্বর সমস্যা।' বস্তুত এরই মধ্যে এ মন্তব্যের যথার্থতা বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা

জনসংখ্যার ঘনত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অষ্টম। এদেশে প্রতি ১১ সেকেন্ডে জন্ম নিচ্ছে একটি শিশু। আর প্রতি মিনিটে জন্মাচ্ছে গড়ে ৮টি শিশু। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫০টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নিচ্ছে ৯টি শিশু। সরকারি এক হিসেব অনুসারে দেশে প্রতি বছর ৩০ লাখের বেশি শিশু জন্ম নিচ্ছে।
আর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে পাঁচ বছর ধরে বছরে ৩২ লাখের বেশি শিশু এদেশে জন্মগ্রহণ করে। দেশের সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও অনেক বেড়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের ভাষ্যমতে প্রতিবছর বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ছে ২৫ লাখ করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৩৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে ২১ কোটি। এ তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে আছে কম বয়সে বিয়ে, প্রজননক্ষম বিবাহিত নারীর উচ্চ হার, মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি এবং অনাকাঙ্কিত গর্ভধারণ। বস্তুত কিশোরী বিবাহ এবং কিশোরীদের মা হওয়াই জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এখনও এদেশে ৬৬ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়। কিশোরী বয়সে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির আরও যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অশিক্ষা, ভৌগোলিক প্রভাব, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, বহু বিবাহ, পুত্র সন্তান কামনা, জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনীহা, স্ত্রীর ওপর স্বামীর আধিপত্য ইত্যাদি।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা

জনসংখ্যা বাড়ার ফলে কৃষিজমির একটা বিরাট অংশ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তৈরিতে দখল হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে চাষযোগ্য জমির ওপর। কৃষিজমি কমতে থাকায় মানুষ শহরের দিকে ছুটছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের সব প্রধান শহরে এর চাপ পড়েছে।

ফলে শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শহরে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঢাকায় মানুষ এতটাই বেড়েছে যে, রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে হাঁটাচলার উপায় নেই। মানুষের জন্য নতুন কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত জনগণের জীবনমান নিম্নমুখী হচ্ছে। রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। 
নতুন প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা: করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক এতদিন ছিল, তা ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। দেশে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, বেকারত্ব ও অপরাধ প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি জরুরি-
  • পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি সফল করাঃ আমাদের দেশে নারীর অনগ্রসরতা ও নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলার কারণে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই মা ও শিশু স্বাস্থ্যভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি সফল করতে হবে। জন্মহার কমানোর প্রতি বিশেষ জোর দিতে হবে।
  • বাল্যবিবাহ রোধ করাঃ বাল্যবিবাহ রোধকল্পে আইনের প্রয়োগে আরও কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৬৬ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় কিশোরী বয়সে। কিশোরীদের মা হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বাল্যবিবাহ রোধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জোরদার করাঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি হ্রাস করার অন্যতম উপায় জন্মনিয়ন্ত্রণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে জনগণকে জন্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। 'ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট'- এই স্লোগানকে বাস্তবে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
  • শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অধিকাংশ মানুষের অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। শিক্ষার মাধ্যমে এ অজ্ঞতা দূর করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে প্রতিনিয়ত সতর্কতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে অশিক্ষিত জনগণকে সচেতন করা যায়।
  • সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণঃ আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা রয়েছে যে, 'মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি'। এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকেন। এ ধরনের কুসংস্কার ও সামাজিক ট্যাবু থেকে জনসাধরণকে মুক্ত করা দরকার। সচেতন মানুষ মাত্রই এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

উপসংহার

যেকোনো জাতীয় সমস্যা নিরসনের জন্য সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারসহ দেশের প্রতিটি নাগরিকের সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ, বাল্যবিবাহ রোধ ও বহুবিবাহ বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি অবশ্যই হ্রাস পাবে। অন্যথায় জনসংখ্যা-বিস্ফোরণ থেকে জাতির রক্ষা নেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url