সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আমরা সকলে এটি জানি যে বাংলা পাঠ্য বইয়ের
অন্যান্য বিষয় গুলোর মধ্যে রচনা অন্যতম। আপনি যদি সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন
রচনাটি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে
সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনাটি তুলে ধরেছি।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন
তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন
তাহলে আর বেশি সময় নষ্ট না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা
ভূমিকা
'যতদিন না শিক্ষিত প্রাণবন্ত বাঙ্গালিরা বাঙ্গলা ভাষায় আপন উক্তি সকল বিন্যস্ত
করিবেন, ততদিন বাঙ্গালির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নাই।' সাহিত্য সম্রাট
বঙ্কিমচন্দ্রের এই উক্তিকে সামনে রেখে আজকে আমাদের বলতে হয়, লিখতে হয় যতদিন
পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা বাংলা সর্বস্তরে চালু না হবে ততদিন
পর্যন্ত বাংলা এবং বাঙালির উন্নতির শিখরে আরোহণ করার সম্ভাবনা নেই। কেননা মা,
মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা একই সূত্রে গাঁথা। মানবজীবনে এর কোনোটারই বিকল্প নেই।
কোনোটাই অবহেলার নয়।
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা
মায়ের সঙ্গে যেমন আমাদের নাড়ির যোগ তেমনই মাতৃভাষার সঙ্গে আমাদের প্রাণের যোগ।
জন্মের পর মানব সন্তান প্রথম যে বুলি আওড়ায় তা মায়ের বুলি; প্রথম যে কথা বলে তা
মায়ের কথা। সুতরাং মায়ের কথা, মায়ের ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা। এ ভাষা আমাদের
অস্তিত্বের, আমাদের গর্বের। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।
বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর আমাদের প্রিয়। আমরা জন্মের পর এ ভাষার
সাথেই পরিচিত হই। এই ভাষায় কথা বলি, গান শুনি, ভাবের আদান-প্রদান করি। মাতৃভাষা
ব্যতীত অন্য কোনো ভাষা আমাদের মুক্তবুদ্ধির এবং মুক্তচিন্তার দ্বার খুলে দিতে
পারে না। আমাদের কথাবার্তার, প্রেম ভালোবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা।
আরও পড়ুনঃ অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট
মাতৃভাষা বাংলা ব্যতীত আর কোনো ভাষা কানের ভেতর দিয়ে মর্মে পৌঁছে পরান আকুল করে
না। মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোনো ভাষার ধ্বনির জন্য প্রবাসীর কান পিয়াসী থাকে না।
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা - যায় মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত, মাতৃভাষার
শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি কখনো বড়ো হতে পারেনি।
যতদিন পর্যন্ত জার্মানিতে জার্মান ভাষা প্রতিষ্ঠা পায়নি ততদিন পর্যন্ত জার্মানির
জাতীয় জীবনের বিকাশ হয়নি। কাজেই আমাদের বেলায়ও বলা যায় যতদিন পর্যন্ত আমাদের
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু না হবে, যতদিন পর্যন্ত বাংলায় জ্ঞান চর্চা শুরু না হবে
ততদিন পর্যন্ত বাঙালির জাতীয় জীবনে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
মাতৃভাষার অতীত ও বর্তমান
বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছিল খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে। বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন
চর্যাপদের গীতিগুলো ছিল বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন পদ্ধতিমূলক গান। সেই প্রাচীন যুগ
হতে শুরু করে মধ্যযুগ পেরিয়ে শত শত বছর অতিক্রম করে বাংলা ভাষা আধুনিক যুগে
পদার্পণ করলেও কখনো রাজভাষার মর্যাদা পায়নি। হিন্দু আমলে সংস্কৃত এবং মুসলমান
আমলে ফারসি ছিল রাজভাষা।
বাংলা ভাষা যাঁরা শিখতেন তাঁরা অন্তরের তাগিদে শিখতেন। কাব্য লিখতেন ধর্মের
ছায়াতলে অর্থাৎ দেব-দেবী এবং অবতারকে আশ্রয় করে। এমনি করে বাংলা ভাষা ধীরে ধীরে
এগিয়ে এসেছে এবং মুসলমান আমলে বাংলা ভাষা রাজভাষার মর্যাদা না পেলেও রাজদরবারের
না পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে।
মুসলমানগণ বাংলা জয়ের পর যখন বুঝতে পারলেন, এদেশ ছেড়ে যাবার দেশ নয়, এদেশ ভোগের
জন্য, এদেশ জীবনের জন্য, এদেশ মরণের জন্য; তখন থেকেই বাংলার পাঠান বাদশাহগণ বাংলা
এবং বাংলা ভাষাকে আদর করতে লাগলেন। যে ভাষা দেশের উচ্চশ্রেণির অবজ্ঞাত ছিল সে
ভাষা বাদশাহের দরবারে ঠাঁই পেল।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বকোষ রচনা
বাদশাহের দেখাদেখি আমির ওমরাঙ্গণ বাংলাকে খাতির করতেন এবং তাদের দেখাদেখি সাধারণ
মানুষও বাংলা ভাষাকে ভালোবাসল। এভাবে বাংলা ভাষা বিকশিত হলো। হিন্দু-মুসলমান উভয়ে
সমানভাবে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করল। উনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত ছিল কাব্য
সাহিত্যের যুগ।
গদ্য সাহিত্যের সূচনা হয় ইংরেজ আগমনের পর উনিশ শতকে। ইংরেজের আমলে ফারসির বদলে
ইংরেজি হয় রাজভাষা। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি বিশেষ মর্যাদার
আসন পায়। ইংরেজি শেখা এবং জানা ছিল তখন গৌরবের।
বাংলা ভাষা অবহেলিতই থেকে যায়। শুধু ভাষা শেখার জন্য কিছু সাহিত্য বিষয়ক পুস্তক
এবং কিছু স্কুল শিশু পাঠ্যপুস্তক ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায় থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে
বাংলা ভাষা চর্চার কোনো সুযোগ ছিল না, তবে পাশ্চাত্য সাহিত্যের সংস্পর্শে এসে
বাংলা সাহিত্য নতুন রূপে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা চালু
১৯৪০ সালের পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা চালু হয়।
কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও ইংরেজির দাপট। ১৯৪৭-এর পর দেশ বিভাগোত্তর কালে
পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তে মেতে উঠলে এদেশের ছাত্র-
জনতা এর প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে
এদেশের অকুতোভয় দামাল ছাত্র সমাজের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। রক্ত
দিয়ে ছিনিয়ে আনে মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা। ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার
মর্যাদা পায়।
উপসংহার
সাধারণ শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা চালু হলে
বাংলা এবং বাঙালি জাতি জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অভাবিত
সাফল্য লাভ করবে নিঃসন্দেহে। আসুন শিক্ষাসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার
নিশ্চিত করে একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url