বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনাটি খুঁজছেন?
তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব
রচনাটি তুলে ধরেছি। আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে এছাড়াও আপনারা
বাংলাদেশের উৎসব সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনাটি পড়তে চান তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট
না করে রচনাটি পড়ে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব রচনা
ভূমিকা
উৎসব মানুষের প্রাণের স্পন্দন। বহুকাল আগে থেকেই আমাদের সমাজে নানা উপলক্ষ্যে
উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উৎসব আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম। এটি মানুষের মনকে প্রফুল্ল
করে। মানসিক বিকাশে এবং নিষ্কলুষ আনন্দের জন্য উৎসব অত্যাবশ্যক।
উৎসব
সাধারণভাবে 'উৎসব' কথাটির অর্থ হলো আনন্দ বা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। এটি হলো
মানুষের আনন্দ প্রকাশ ও উৎসব বলতে এমন অনুষ্ঠানকে বোঝায়, যা অত্যন্ত
জাঁকজমকপূর্ণভাবে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
সামাজিক উৎসব
সামাজিক উৎসব বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের ধারক। ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক উৎসবে সকল
সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ।
বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির
মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে।
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে মেলার সম্পর্ক সুনিবিড়। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে
বৈশাখী মেলা বসে। মেলায় আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প প্রদর্শনী, নাচ, গান, লাঠি
খেলা, পুতুল নাচ, সার্কাস প্রভৃতি দর্শকদের আনন্দ দেয়।
ধর্মীয় উৎসব
ধর্মীয় উৎসব সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয়
সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আবার নিজস্ব বিভিন্ন উৎসব
রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমান। মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসব
হলো ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহা।
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানরা ইদুল ফিতর উদ্যাপন করে। আর ইদুল আজহায় পশু
কোরবানি করা হয়। এছাড়াও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা মহররম, হিজরি নববর্ষ,
ইদ-ই-মিলাদুন্নবি (স), শবে বরাত, শবে কদর প্রভৃতি উৎসব সাড়ম্বরে উদ্যাপন করে
থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা।
আরও পড়ুনঃ সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলন রচনা
এছাড়াও রয়েছে দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, চৈত্রসংক্রান্তি, হোলি প্রভৃতি উৎসব। এসব
উৎসব অনুষ্ঠানে হিন্দুদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে চলে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে
বড়ো ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়ো উৎসব
যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন বা বড়োদিন। এছাড়া ইস্টার সানডেতেও খ্রিষ্টানরা উৎসব পালন
করে।
সাংস্কৃতিক উৎসব
বাংলা সংস্কৃতি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে যে সংস্কৃতির চর্চা করে তা বোঝা যায়
বাংলাদেশে পালিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব দেখে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রমনার
বটমূলে উদযাপিত ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত
হয়েছে।
একুশের বইমেলা, ঢাকা বইমেলা, রবীন্দ্র- নজরুল জয়ন্তী প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রধান
প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। এছাড়া আলোচনা সভা, জ্ঞানচর্চামূলক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা,
কবিতা আবৃত্তি প্রভৃতিও সংস্কৃতিকে দৃঢ় করে। সংস্কৃতিমনা লোকেরা এসব উৎসব থেকে
জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করে।
আরও পড়ুনঃ কর্মমুখী শিক্ষা রচনা
তাছাড়া জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, এশীয় চিত্রকলা
প্রদর্শনী, লালনোৎসব, পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন
মাত্রা যোগ করে। সাংস্কৃতিক এসব উৎসব বাংলা সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে দেশকে
উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম।
জাতীয় উৎসব
আমাদের জাতীয় উৎসব স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাঙালি জাতির জাতীয় উৎসব
হলো ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস আর ১৬ই
ডিসেম্বর বিজয় দিবস। দিবস অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে এদেশের মানুষ পালন করে। দল-মত
নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এসব দিবস উদ্যাপনে অংশ নেয়।
বাঙালি জাতির জীবনে এসব দিবস পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। এসব উৎসব উপলক্ষ্যে
বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনার, শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন
স্থানে মেলা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন থাকে। ২১শে
ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ ক্রিকেটে বাংলাদেশ রচনা
দিবসটি বাঙালি জাতির জন্য এক শোকবিধুর দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি
প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ বইমেলা আমাদের জন্য একটি জাতীয়
উৎসব। জাতীয় উৎসবগুলোতে দেশের সকল শ্রেণির মানুষ দলবেঁধে অংশ নেয়।
স্মরণোৎসব
মহান ব্যক্তি ও মনীষীদের কীর্তি ও জীবনী স্মরণ করে যে উৎসব পালন করা হয় তাকে বলা
হয় স্মরণোৎসব। মূলত প্রয়াত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, তাঁদের অবদান স্মরণ
করা এবং তাঁদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয় এসব স্মরণোৎসবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণোৎসব পালিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলন রচনা
এ উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে কয়েকদিন ব্যাপী বিভিন্ন উৎসব ও কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম রোকেয়া, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, লালন
শাহ, শিল্পী জয়নুল আবেদিন, হুমায়ূন আহমেদ, কায়কোবাদ প্রমুখ ব্যক্তিদের
জন্মবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
উপসংহার
যেকোনো উৎসবই আবহমান বাঙালি-সংস্কৃতি ধারণ করে। উৎসবের মধ্যেই আমরা খুঁজে পাই
বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তা। কাজেই সামাজিক উৎসব জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ
অধ্যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url