নারী শিক্ষা রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি কি নারী শিক্ষা রচনাটি খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে। নারী শিক্ষা রচনাটি খুব সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছি। পঞ্চম থেকে শুরু করে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য।
নারী শিক্ষা রচনা
প্রিয় পাঠক আমরা সকলেই জানি বাংলা পাঠ্য বইয়ে অন্যান্য যে সব বিষয়গুলি রয়েছে এর মধ্যে রচনা অন্যতম। তাই আপনি যদি নারী শিক্ষা রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ নারী শিক্ষা রচনা

ভূমিকা

যেহেতু নারী ও পুরুষ সমাজের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ সেহেতু সমাজ গঠনে উভয়েরই কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে যা তাদের জীবন ও কর্মকে অর্থবহ করবে।

এদেশে নারীর অবস্থা

আমাদের সমাজব্যবস্থায় নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে দেখা হয়নি। আমাদের এ পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ ও উদার মানসিকতা যতটুকু আছে নারীদের জন্য ততটুকু নেই। ফলে একই পরিবারে পুরুষের শিক্ষার সুযোগ থাকলেও নারীর ক্ষেত্রে তেমন নেই। তাদের আজ শুধু গৃহকাজের জন্য গৃহকোণে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে সৃষ্টি হয়েছে নানা সমস্যা, জাতীয় অগ্রগতি হচ্ছে ব্যাহত।

শিক্ষিত নারীর প্রভাব

একজন সুশিক্ষিত মাতা জন্ম দিতে পারে সুস্থ সন্তান, করতে পারে তাকে নিজের আদর্শে উজ্জীবিত। কারণ ছেলেমেয়েদের ওপর মায়ের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, আদবকায়দা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের প্রভাব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেপোলিয়ান বলেছিলেন, 'আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।'

স্বাবলম্বিতা অর্জনে নারীশিক্ষার ভূমিকা

স্বাবলম্বিতা অর্জনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে নারীরা সবকিছুর জন্য তাদের স্বামীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিত। গৃহের মধ্যেই তাদের কার্যাদি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ নারীরা শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, পুলিশ অফিসার এমনকি সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করছে। তারা আজ সম্পূর্ণরূপে স্বাবলম্বী। সুতরাং আজ আর নারীকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।

দেশগঠনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব

দেশগঠনেও নারীশিক্ষার গুরুত্ব অনেক। অতীতে দেশগঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। বর্তমানেও দেশগঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে এই পর্যন্ত যতটি আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেকটি আন্দোলনে নারীদের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। আর এ অবদান রেখেছে শুধু শিক্ষিত মেয়েরাই। তাই দেশগঠনে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীশিক্ষার অন্তরায়

বাংলাদেশে নারীশিক্ষার প্রধান অন্তরায় কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি। বিশেষ করে পর্দা প্রথার কড়াকড়ির কারণে অনেক মুসলিম নারী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারে না। এছাড়া শিক্ষার একটি বিশেষ বাধা হলো নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিভাবকই তাদের কন্যা সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এর সঙ্গে আছে চরম দারিদ্রদ্র্য।
দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে না পারলে শুধু শিক্ষাই নয়, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সর্বোপরি দেশের বিপুল নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জগতে নিয়ে আসার জন্য যে বিশাল উদ্যোগ, আয়োজন ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো দরকার তা আমাদের নেই। এ অবস্থায় সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে নারীশিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নারীশিক্ষা বিস্তারের উপায়

নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য কতিপয় কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। যেমন- দেশে নারীশিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বয়স্ক নারীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের উদারনীতি গ্রহণ ইত্যাদি।

নারীশিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলি

নারীশিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সরকার নারীশিক্ষা প্রসারে স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। এ উপবৃত্তির ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া বয়স্ক নারীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বয়স্ক নারীশিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি মহলও নারীশিক্ষা প্রসারে নানাভাবে অবদান রাখছে।

উপসংহার

কোনো কালে একা হয়নি ক' জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।
সুতরাং নারীকে পশ্চাতে রেখে উন্নতির প্রত্যাশা করা দুরাশারই শামিল। তাই অজ্ঞানতার অশুভ অক্টোপাস থেকে নারীকে মুক্ত করতে হবে। আর একমাত্র উপযুক্ত শিক্ষাই বাতলে দিতে পারে নারী মুক্তির পথ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url